পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, জিয়ার বহুদলীয় গণতন্ত্র মানে স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়া ও যুদ্ধাপরাধীদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া। এটা জনগণের গণতন্ত্র নয়, যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনেরই নামান্তর মাত্র। যে কারণে বাংলাদেশ এগোতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ যে সম্মান পেয়েছিল, সেটা ভূলুণ্ঠিত হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকের দিনে জাতির পিতার প্রতি আমরা সেই ওয়াদা দিচ্ছি, কথা দিলাম– বাংলাদেশকে তার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবো। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করবো। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্ব দরবারে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। সেই দেশ আমরা গঠন করবো, সেই ওয়াদা জাতির পিতার কাছে। এ সময় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে উন্নয়ন কাজ ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানান তিনি।
১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গতকাল বুধবার শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনকের হত্যাকান্ডের কথা স্মরণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যখনই একটু সুখের মুখ দেখতে পায়, তখনই ১৫ আগস্ট ঘটে। এই হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়েই গণতন্ত্রের কবর রচনা হয়। তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে প্রথমে মোশতাক তারপর জিয়া ক্ষমতায় আসে। মীরজাফরের বংশধর মোশতাকের মতো গাদ্দার এই মাটিতেই জন্মগ্রহণ করে। বাংলাদেশের মাটি এত উর্বর; জাতির পিতার নিজেরই কথা–এই উর্বর মাটি যেমন ফসলের জন্ম দেয়, তেমনি আগাছারও জন্ম দেয়। জাতির পিতা সবসময় এই কথা বলতেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণ আবার অন্ধকারে হারিয়ে যায়। জাতির পিতার নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। ৭ মার্চের ভাষণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও ইতিহাস বিকৃতি করে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়গাঁথা মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হয়। বাংলাদেশের মানুষকে একটা বিভ্রান্তিতে ফেলা হয়। প্রচার করা হয় বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছে জিয়া।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জিয়ার বহুদলীয় গণতন্ত্র মানে যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন করা, স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতির সুযোগ দেয়া, আর যুদ্ধাপরাধীদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া। এটা জনগণের গণতন্ত্র নয়। এটা যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনেরই নামান্তর মাত্র।
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা জনগণের কল্যাণ করতে পারে না। ৪৬ বছরের ২৮ বছরই তারা ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু কিছু করতে পারেনি। কারণ, তারা দেশের জন্য কিছু করতে চায়নি। তাদের হৃদয়ে ছিল পেয়ারে পাকিস্তান। পাকিস্তানের গোলামি করতে পছন্দ করে বলেই দেশের উন্নয়ন করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ আসলেই দেশের মানুষের কল্যাণ হয়, উন্নয়ন হয়।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভায় সেই দিনগুলো স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচিশে মার্চ মধ্যরাতে বন্দি হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পরও তিনি জীবিত না মৃত সেই খবর ছিল না। প্রায় সাড়ে নয় মাস পর লন্ডন থেকে টেলিফোনে যখন তিনি কথা বলেন, সেই সময় কী অনুভূতি হয়েছিল তা ভাষায় বর্ণনার অতীত। তিনি বলেন, আমরা খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম। আমার বাবাকে গ্রেপ্তারের পর আমার মাকে গ্রেপ্তার করে। সেখানে জামাল (শেখ জামাল), রেহানা (শেখ রেহানা), রাসেল, আমি, আমরা সকলেই বন্দি হই। ১৮ নম্বরের (ধানমন্ডির তৎকালীন ১৮ নম্বর সড়ক) একটি বাড়িতে আমাদের বন্দি করে রাখা হয়। আমরা তখন কোনো খবরই জানি না, তিনি বেঁচে আছেন না মারা গেছেন। কী অবস্থায় আছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ৮ তারিখে যখন লন্ডন থেকে প্রথম টেলিফোন আসে এবং বিবিসিতে খবর পাই, সেই মুহুর্তটা যে আমাদের জন্য কী ছিল! সেটা আমি ভাষায় বর্ণনা করতে পারব না। আমরা ফোনে কথা বলতে পারি নাই। ওই হ্যালো, আব্বা, এইটুকুই বোধ হয়, এর বেশি কোনো কথা বলা সম্ভব ছিল না তখন আমাদের পক্ষে। এমনই একটা অবস্থা আমাদের ছিল। তখন শুধু অপেক্ষার পালা কখন তিনি ফিরে আসবেন। তিনি ১০ তারিখে ফিরে এলেন। ফিরে এসে গেলেন কাদের কাছে? তার প্রিয় জনগণের কাছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ কীভাবে চলবে, কোন নীতিতে চলবে, কী তার লক্ষ্য, কীভাবে এই বাংলাদেশ গড়ে উঠবে; তার দিক নির্দেশনা তিনি দিয়েছিলেন। প্রতিটি মানুষ আশা নিয়ে আকাঙ্খা নিয়ে বসেছিল, কী হবে? তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে ফিরে পাবেন কি না। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসার মধ্য দিয়ে ‘আমাদের স্বাধীনতা পূর্ণতা পেয়েছিল’।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে যখন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং যার সুফল বাংলার জনগণ পেতে শুরু করেছিল, ঠিক তখনই ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঘাতকরা আঘাত হানল। হত্যার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করা হলেও তিনি কখনোই তা আমলে নেননি জানিয়ে তিনি বলেন, তিনি কখনও বিশ্বাস করতেন না যে, বাংলাদেশের মানুষ তার উপরে আঘাত হানতে পারে। অনেক আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ তাকে সাবধান করেছিলেন। অনেক খবরই আসত। তিনি বিশ্বাস করতেন না। বলতেন, না, এরা আমার ছেলের মতো, আমার সন্তানের মতো, ওরা আমাকে কেন মারতে যাবে? কিন্তু সেই বিশ্বাস রাখতে পারেননি।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও মোশাররফ হোসেন, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মারুফা আক্তার পপি ও রেমন্ড আড়েং, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান এবং দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।
খালেদার বক্তব্যকে পাগলের প্রলাপ বললেন প্রধানমন্ত্রী
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পদ্মা সেতু নিয়ে বক্তব্যকে পাগলের প্রলাপ বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। উনার দলের লোকজন যেন ওই সেতুতে না ওঠে তাও নিষেধ করেছেন। একটি সেতু তো জোড়া দিয়েই নির্মিত হয়। এছাড়া হয় না। তিনি জোড়াতালি বলতে কী বোঝালেন সেটা আমার বোধগম্য না। তবে বাংলাদেশে তো একটি প্রচলিত কথা আছে–‘পাগলে কী না কয়, ছাগলে কী না খায়।’ গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি ফজিলাতুনসেনা বাপ্পির সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
স¤প্রতি খালেদা জিয়া রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে বলেন, পদ্মা সেতু জোড়াতালি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। সেই সেতুতে কাউকে না ওঠার জন্য বলেন তিনি। সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বাপ্পি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য জানতে চান। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ পদ্মা সেতু আমরা প্রথমবার সরকার গঠনের সময় চিন্তা করেছিলাম। আমি সেই সময় জাপান সফরের করে তাদের পদ্মা সেতু নির্মাণে সহযোগিতার কথা বলি। আমরা জাপান সরকারের কাছে পদ্মা ও রূপসা সেতু নির্মাণ করতে সহায়তা চেয়েছিলাম। সেই হিসেবে তারা সমীক্ষাও করেন। আর সমীক্ষার পর যে জায়গাটা তারা নির্বাচন করেন সেখানে আমি ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করি। এরপর ২০০১ এ বিএনপি সরকার ক্ষমতার আসার পর সেই সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। ফলে সেই সেতু আর তখন নির্মিত হয়নি।’ ‘দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর আমরা পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করি। শুরুতেই একটা হোঁচট খাই। যেখানে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ আনে। আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম এরকম দুর্নীতি হয় নাই। সেটা আজকে প্রমাণিত। কানাডার আদালত বলে দিয়েছে কোনো দুর্নীতি হয় নাই। বিশ্বব্যাংক অর্থ প্রত্যাহার করে নেয়ার পর আমরা নিজস্ব অর্থায়নে এর কাজ শুরু করে দিয়েছি। এ সেতু নিয়ে বিএনপির নেত্রী বক্তব্য দিয়েছে। এটা নিয়ে আমি কী মন্তব্য করব’- প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার মন্তব্য একটায় এ ধরনের পাগলের কথায় বেশি মনোযোগ না দেয়া ভালো। কারণ কোনো সুস্থ মানুষ এ ধরনের কথা বলতে পারে না।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য জড়িত। এ কাজগুলো জনগণের স্বার্থে করা। এ সেতু হলে জিডিপি ১ শতাংশ বেড়ে যাবে। অথচ তিনি বলে দিলেন তার দলের কেউ যেন এ সেতুতে না ওঠে। আমি জানি না বিএনপির নেতা-নেত্রীরা যারা তার এ কথা শুনেছেন তারা সত্যিই পদ্মা সেতু হওয়ার পর উঠবেন কি-না। যদি তারা ওঠে তখন এলাকার লোকজন নজরদারি করতে পারবে সত্যিই তারা পদ্মা সেতুতে ওঠল কি-না সেটা আমরা দেখব। আমার মনে হয় এটাকে পাগলের প্রলাপ হিসেবেই নিয়ে নেয়া ভালো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।