পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শফিউল আলম : মাঝারি, ছোট আকারের জাহাজ নৌযানের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ এবং বিদেশে রফতানির জন্য জাহাজ নির্মাণের ইয়ার্ড গড়ে উঠেছে চট্টগ্রাম, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল ও খুলনায়। সেখানে কর্মরত দেশীয় মেরিন প্রকৌশলীদের মেধা ও বুদ্ধি, কারিগরদের কঠোর শ্রম অভিজ্ঞতার বিনিময়ে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ৩৫ কোটি থেকে ৮৫ কোটি টাকা মূল্যের একেকটি সমুদ্রগামী জাহাজ নৌযান নির্মাণের মতো অসাধ্য সাধন হচ্ছে। তবে জাহাজ তৈরীর জন্য যেসব উপকরণ দরকার সেগুলো প্রধানত আমদানি নির্ভর। অল্পকিছু নির্মাণ সামগ্রীর যোগান মিলছে স্থানীয় উৎস থেকে। এতে করে দেশে জাহাজ তৈরী করে যা আয় আসছে, জাহাজ নির্মাণের কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ অর্থাৎ একসেসরিজ বিদেশ থেকে আমদানি ব্যয় বাবদ সেই আয়ের সিংহভাগ বিদেশেই চলে যাচ্ছে। এ কারণে প্রকৃতপক্ষে এ মুহূর্তে জাহাজ ব্যবসায় রফতানিতে প্রকৃত মূল্য সংযোজন আয় কম। তবে এই শিল্পখাতের ভবিষ্যতের দিকে তাকালে সম্ভাবনার পাল্লা অনেক ভারী।
কেননা জাহাজ নির্মাণ শিল্পের অত্যাবশ্যকীয় সব উপকরণ, যন্ত্রাংশ ও মালামালের এক বিরাট অংশ দেশেই পাওয়া বা তৈরী সম্ভব। এগুলোর একাংশ দেশে যোগান পাওয়া যায়। এরজন্য গার্মেন্টস শিল্পখাতের মতো কম্পোজিট শিল্পায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা এখনই প্রয়োজন। তাহলে
খুব সামান্য কিছু একসেসরিজ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হলেও বেশিরভাগ দেশীয় উপকরণ দিয়ে সমুদ্রগামী রফতানির উপযুক্ত মানের জাহাজ দেশের ইয়ার্ডে নির্মাণ সম্ভব হবে। এরফলে জাহাজ নির্মাণ শিল্পখাতকে ঘিরে গড়ে উঠবে ১০ থেকে ১৫ ধরনের কম্পোজিট উপখাত বা লিংকেজ খাত। সমুদ্র উপকূলভাগ এবং নদ-নদী অববাহিকায় সুবিধাজনক স্থানগুলোতে জাহাজ তৈরীর একসেসরিজ উৎপাদনের জন্য কম্পোজিট, বিভিন্ন উপখাত, লিংকেজ গড়ে তোলা সম্ভব হলে এর মধ্য দিয়ে বিকাশ লাভ করবে বিরাট কর্মক্ষেত্র। সেখানে কয়েক লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে নিশ্চিতভাবে।
পুরো বিষয়টা রফতানিমুখী গার্মেন্টস খাতের মতোই। এককালে গার্মেন্টস শিল্পের জন্য কাপড় (ফেব্রিক্স), সুতা-বুতামসহ যাবতীয় কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকেই আমদানি করতে হতো। এই খাতের গোড়াতে আয়ের ৮০-৯০ শতাংশ বিদেশেই চলে যেত। কিন্তু গত তিন দশকে রফতানিমুখী গার্মেন্টস ও নিটওয়্যার শিল্পখাতের জন্য প্রয়োজনীয় একসেসরিজ কম্পোজিট সেক্টরসহ বিভিন্ন উৎস থেকে বেশিরভাগ দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। এতে মূল্য সংযোজন আয় ধীরে ধীরে বেড়ে গেছে।
চট্টগ্রাম, ঢাকা, বরিশাল, খুলনাসহ দেশের শিপইয়ার্ডে আন্তর্জাতিকমানের সমুদ্রগামী জাহাজ তৈরীর কর্মকান্ড চলছে কোনো তোড়জোড় ছাড়াই। ঘটে চলেছে এক নীরব শিল্প বিপ্লব। বাংলাদেশের সামনে খুলে গেছে সম্ভাবনার দুয়ার। এর প্রতি ধাপেই আছে অর্থনৈতিক গুরুত্ব। জাহাজ নির্মাণের জন্য জাহাজের আকার-প্রকার বা ধরণভেদে লোহা-লক্কর ছাড়াও ৩২ থেকে ১২৮ ধরনের যন্ত্রাংশ বা উপকরণ প্রয়োজন হয়। আইসক্লাস মানসম্মত সাধারণ সমুদ্রগামী কার্গোজাহাজ, কোস্টার, হাইস্পিড, সার্ভিস টাগবোট, কন্টেইনার ফিডার জাহাজ, ওশেন-গোয়িং টাগ, ট্যাংকার, প্যাসেঞ্জার ভেসেলসহ একেক জাহাজে একেক ধরনের সংযোজনী উপকরণ সামগ্রীর প্রয়োজন হয়। এরমধ্যে রয়েছে- লোহা, ইস্পাত ও এলুমিনিয়ামের পাত, কাঠামো ও যন্ত্রাংশ, ছোট-বড় সাইজের যন্ত্রপাতি, হরেক রকমের ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, ডিজিটাল যন্ত্রাংশ, পাইপ, আসবাবপত্র, টিভি-ফ্রিজ, রাডার, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন উপকরণ, কাপড়, প্লাস্টিক ও রাবারের নির্মাণ উপকরণ, লাইট, সেনিটারি সামগ্রী, টালি বা টাইলস, কাঠের আসবাব, জমাটবদ্ধ ও প্রক্রিয়াজাত করা কাঠ, মাটি ও পাথরের বিভিন্ন উপকরণ। এছাড়া আরো বিভিন্ন ধরনের একসেসরিজ ও কাঁচামাল জাহাজ নির্মাণের কাজে ধাপে ধাপে দরকার হয়। এসব কাঁচামাল বা একসেসরিজ সংযোজন করা হয় প্রতিটি জাহাজ নির্মাণের লে-আউট, ড্যামি, কাঠামো (লাইনপ্ল্যান) অনুযায়ী।
জাহাজ-নির্মাণের বিশাল এই শিল্পখাত এখন পর্যন্ত বলতে গেলে আঁতুরঘর থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। কেননা জাহাজ নির্মাণে অপরিহার্য যাবতীয় একসেসরিজ ও কাঁচামালের ৫৫ থেকে ৮০ শতাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়। আর সেই জাহাজ ডেনমার্ক, জার্মানী, লিবিয়া, সিঙ্গাপুর, মোজাম্বিক, হল্যান্ড, দুবাইসহ ইউরোপ, পূর্ব-এশীয়, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকান অঞ্চলের দেশগুলোর বায়ারদের কাছে তাদের অর্ডার অনুসারে সরবরাহ করা হয়। জাহাজ তৈরীর মালসামানা বা একসেসরিজের গড়ে ৭০-৭৫ শতাংশ যেহেতু আমদানি নির্ভর সেহেতু নির্মাণ ব্যয় এবং রফতানি আয়ের মাঝখানে প্রকৃত লাভ বা মুনাফার পরিমান আপাতত যৎসামান্য। কেননা একসেসরিজের পেছনে মূল ব্যয় দেশের বাইরে চলে গিয়ে অবশিষ্ট মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ পর্যন্ত মূল্য সংযোজিত আয় পাচ্ছেন দেশের জাহাজ নির্মাতা তথা রফতানিকারকগণ।
দেশের ইয়ার্ডে বেশিরভাগই ২৯০০ টনী থেকে ৬১০০ টনী (ডেডওয়েট টন) জাহাজ রফতানির জন্য তৈরি হচ্ছে। চাহিদা থাকলেও পর্যাপ্ত ইয়ার্ডেও অভাব ও অন্যান্য সীমাবদ্ধতার কারণে বেশি অর্ডার নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে ভিয়েতনামের মতো মাঝারি আকৃতির জাহাজ নির্মাণের সক্ষমতা ও অবকাঠামো প্রসারিত হলে তখন বাংলাদেশের পক্ষে এ শিল্পের জন্য পর্যাপ্ত একসেসরিজ যোগান দেয়া দুঃসাধ্য হবে। এ প্রসঙ্গে প্রকৌশলী এনামুল বাকি ইনকিলাবকে জানান, জাহাজ তৈরীর জন্য যেসব উপকরণের প্রয়োজন হয় তার সিংহভাগ পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশেই উৎপাদন করে জোগান দেয়া সম্ভব। এরফলে এই শিল্পের উপর নির্ভর করে অসংখ্য খাত-উপখাত, লিংকেজ, ব্যবসা-বাণিজ্য বিকাশ লাভ করবে। এসব উপখাত ঘিরে ব্যাপক কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বিশাল পরিসরে বিস্তৃত হবে। এখন দেশের ইয়ার্ডে জাহাজ নির্মাণের জন্য বিদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের উপকরণ আনা হলেও পাইপ, সিরামিক ও সেনিটারি সামগ্রী, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স উপকরণ, টিভি, ফ্রিজ, লোহাজাত সামগ্রী, আসবাবপত্র প্রভৃতি অনেক কিছুই বর্তমানে দেশে বেশ ভাল মান বজায় রেখেই উৎপাদিত হচ্ছে। বিদেশি ক্রেতারা (বায়ার) সন্তুষ্ট থাকলে এসব দেশীয় উৎপাদিত উপকরণ ব্যবহার করে জাহাজ নির্মাণ করা যাবে। এরফলে জাহাজ রফতানি বাবদ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বেশিরভাগই দেশে থেকে যাবে। অর্থাৎ রফতানি মূল্য সংযোজন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। একই সাথে কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রসারিত হবে।
সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা জানান, সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হলে জাহাজ নির্মাণ শিল্পখাতকে ঘিরে অনেকগুলো খাত-উপখাত গড়ে উঠবে। দেশের ফার্নিচার নির্মাণ, টিভি, বৈদ্যুতিক সামগ্রী, প্লাস্টিকজাত দ্রব্য ও পাইপ নির্মাণ, লোহাজাত নির্মাণ উপকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদনে যথেষ্ট সফলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশীয় এই উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সমন্বয় করা হলে অদূর ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হরেক ধরনের খাত, উপখাত ও লিংকেজ ভিত্তিক ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ ঘটবে। খুলবে কর্মসংস্থানের নতুন নতুন দিগন্ত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।