ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
১৯৭২ সালে ১০ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানিদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে আসেন। দিনটি বাঙালি জতির ইতিহাসের এক স্মরণীয় দিন। পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বন্দীশালা থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু হানাদারমুক্ত পবিত্র বাংলার মাটিতে ফিরে আসলে কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-জনতার হৃদয়ে নজিরবিহীন আনন্দের প্লাবন সৃষ্টি হয়েছিল। মাত্র ২৪ দিন আগে পাকিস্তানি খুনি জল্লাদ হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শোচনীয় পরাজয় বরণ করে যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করে। ত্রিশ লাখ শহীদের পবিত্র রক্তে বিধৌত বাংলার মাটি তখন স্বাধীনতার রক্তিম কিরণে উদ্ভাসিত। আমাদের ইতিহাসের সেই অবিস্মরণীয় মাহেন্দ্রক্ষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বন্দীদশা হতে মুক্ত হয়ে ফিরে আসেন হানাদারমুক্ত বাংলার মাটিতে। মহান নেতাকে বিরোচিত সম্বর্ধনা জানাতে এবং এক নজরে দেখার জন্য নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ-যুবক নির্বিশেষে লাখ লাখ মানুষ ভীড় জমায় ঢাকা শহরে। তেজগাঁও বিমান বন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকে লাখ লাখ মানুষ। রাস্তার দু’ধারের বাসাবাড়ি ও দালান কোঠার ছাদে বারান্দায় এবং গাছের ডালে পর্যন্ত উঠে থাকে বহু মানুষ তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে দেখার জন্য।
রাইফেল কাঁধে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা আকাশের দিকে মুহুর্মুহু গুলি বর্ষণ করে মুক্ত স্বদেশ ভূমিতে মহানায়কের ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনকে বিরোচিত স্বাগত জানায়। তারা জানায় বঙ্গবন্ধুকে সম্বর্ধনা। সম্বর্ধনা সভায় নির্দিষ্ট স্থান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সেদিন পরিণত হয়েছিল বাঙালির তীর্থভূমিতে। বিশাল ময়দানের কোনস্থানে তিল ধরণের স্থান ছিল না। তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রেসকোর্স ময়দানের সম্বর্ধনা সভার মঞ্চে এসে আসন গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু। দীর্ঘ নয় মাস পর প্রিয় নেতাকে দেখামাত্র লাখ লাখ মানুষের কন্ঠে উচ্চারিত হয় গগন বিদারি শ্লোগান। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। জাতির পিতা দীর্ঘজীবি হোক, মুজিব ভাই দীর্ঘজীবি হোক। সেদিন আরো শ্লোগান উঠে বাঙালির কন্ঠে বিশ্বে এলো নতুন বাদ, মুজিববাদ, মুজিববাদ। লাখ লাখ বাঙালির কন্ঠের শ্লোগানের গর্জনে সেদিন ঢাকার আকাশ বাতাস ছিল মুখরিত। মুহূর্মুহু শ্লোগান আর করতালির মধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৪০ মিনিট সময় ভাষণ দেন। তিনি ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী ও জনগণকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানায়। ধন্যবাদ জানান সোভিয়েত ইউনিয়ন রাশিয়াকে। তিনি আমেরিকাসহ যেসমস্ত দেশের জনসাধারণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দিয়েছিল তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান। বঙ্গবন্ধু তাঁর দেশের এক কোটি গৃহহীন মানুষকে খাদ্য ও আশ্রয় দিয়ে প্রতিপালন করার জন্য ভারতের ভূয়ষী প্রশংসা করেন। তিনি দলীয় নেতা-কর্মী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা যদি আমাদের জনসাধারণের অন্ন, বস্ত্র ও কাজের সংস্থান করতে না পারি তাহলে আমাদের এই কষ্টার্জিত স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে পড়বে। দীর্ঘ নয় মাস পর রেসকোর্স ময়দানের বিশাল জনসমুদ্রকে লক্ষ্য করে বঙ্গবন্ধু আবেগজড়িত কন্ঠে ভাষণ দেন। আজীবন সংগ্রাম সাধনার চূড়ান্ত লক্ষ্যে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে জীবন্ত অবস্থায় ফিরে আসতে পেরে স্বভাবতই তাঁর কন্ঠ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু তবুও আগের মতই তাঁর কন্ঠে ছিল বজ্রের মত কঠোরতা, ইস্পাতের ধারণ ও পর্বতের গাম্ভীর্য। আর তাঁর বুকে ছিল আকাশের মত ভালবাসা। অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষটির স্মৃতি কেউ কোনদিন ভুলতে পারবে না। স্বদেশে ফিরে এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করেন। ঐদিনই বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে মন্ত্রী পরিষদ পুনর্গঠিত করে দেশ পরিচালনা শুরু করেন।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ক্ষতবিক্ষত অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত, প্রশাসনিক বিহীন একটি দেশের দায়িত্ব গ্রহণের পর তা পরিচালনার সুকঠিন চ্যালেঞ্জ তিনি সাহসিকতার সাথে গ্রহণ এবং মোকাবিলা করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশকে মাত্র এক বছরের মধ্যে একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের উপযোগী সংবিধান উপহার দেন। ইংরেজ বিদায়ের পর যা ভারত, পাকিস্তানের পক্ষে সম্ভব হয়নি তা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব করেছেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৯ বৎসর পর ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান রচিত হয়। আর ভারত তার সংবিধান রচনা করে স্বাধীনতার ৩ বছর পর ১৯৫০ সালে। আর বাংলাদেশ স্বাধীনতার মাত্র ১ বছর পর ১৯৭২ সালে সংবিধান রচনা করে। এই সংবিধানের চারটি মূল নীতি ছিল গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম-নিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতিয়তাবাদ। জাতিসংঘসহ সকল আন্তর্জাতিক সদস্যপদসহ পাকিস্তান ও আর ১৩৯টি দেশের স্বীকৃত লাভ বঙ্গবন্ধু সরকারের কৃতিত্ব। বঙ্গবন্ধু বড় আরেক কৃতিত্ব অতি অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে অবস্থান গ্রহণকারী বন্ধুপ্রতিম ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সৈন্য প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করা। তিনি পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালি সৈন্য ও সাধারণ নারিকদের স্বদেশে ফিরিয়ে আনেন। বন্ধুপ্রতিম ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী এক কোটি শরণার্থীর পুনর্বাসন করেন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গের জন্য আর্থিক সাহয্য প্রদান ও নির্যাতিত মা-বোনদের দায়িত্ব গ্রহণ করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা এবং মুক্তিযোদ্ধাদে জন্য কল্যাণ ট্রাষ্ট গঠন ও আহত পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেশে টিকিৎসার ব্যবস্থাসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন বঙ্গবন্ধুর সরকার। চাকরির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার প্রদান করে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধার চাকরির ব্যবস্থা করেন।
মুক্তিযোদ্ধের সময় দেশের যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে পড়েছিল। মুজিব সরকার দায়িত্ব¡ গ্রহণের পর দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন রেকর্ড সময়ের মধ্যে। মুজিব সরকারের আমলেই সকল অচল বন্দর চালু করা হয়। ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থব্যবস্থাকে মুজিব সরকার সচল করেন। পাকিস্তানীদের পরিত্যাক্ত ব্যাংক, বীমা, ও ৫৮০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করে চালু করার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কর্মচারীদের অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা করে। নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করে। দেশের পরিকল্পিত উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজনৈতিক অধিকারের প্রতিফলন ঘটিয়ে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় কৃষি ও শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। জিডিপি বৃদ্ধির হার তখন ছিল পাঁচ ভাগের বেশি। সরকারী কর্মচারীদের নতুন বেতন স্কেল ও সাংবাদিকদের বেতন রোয়েদাদ বঙ্গবন্ধুই প্রথম ঘোষণা করেন। শিক্ষার উন্নয়নের জন্য বৈজ্ঞানিক ডঃ কুদরত-ই খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। যে শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট আজো এদেশের শিক্ষার জন্য অত্যন্ত মূল্যবান বলে মনে করা হয়। জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমীকে তিনি ঢেলে সাজান। দেশের সাংস্কৃতিক বিকাশ ছিল তার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধু সরকারই সেনাবাহিনী, বিডিআর ও পুলিশ বাহিনী পুনঃগঠন করে। তাঁর সরকারই মিলিটারী একাডেমী স্থাপিত করে। পুলিশের প্রশিক্ষণের জন্য কয়েকটি পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে। তাঁর আমলেই স্থাপিত হয় তৎকালীন পিজি হাসপাতাল।
স্বাধীনতার পর দেশে খাদ্য ঘাটতি ছিল প্রায় ৩৫ লক্ষ টন। বঙ্গবন্ধুর সরকার সেই খাদ্য ঘাটতি পূরণের জন্য প্রায় ২৭ লক্ষ টন খাদ্য বিদেশ থেকে আনার ব্যবস্থা করে। দেশের শতকরা ৪৪ জনকে রেশনের মাধ্যমে খাদ্য প্রদানের ব্যবস্থা চালু করে। ১৯৭৪ সালের প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ফলে দেশের খাদ্য সংকট দেখা দেয়। তার মোকাবিলার জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে লঙ্গরখানা স্থাপন করে বঙ্গবন্ধু। সরকার বাহিরের কোন প্রকার সাহায্য ছাড়াই যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে তা ইতিহাসের পাতায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। বঙ্গবন্ধু দেশের খাদ্য উৎপাদন বিকাশের লক্ষে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খজনা মাফ করে দেন এবং জমির মালিকানা ১০০ বিঘায় নির্ধাণ করে দেন। ভূমিহীন কৃষক যাতে বাঁচতে পারে তার জন্য ভূমিবন্টন ব্যবস্থা পরিবর্তন করেন। কৃষকদের ঋণ মওকুফ করেন এবং কৃষকরা যাতে অল্প মূল্যে বীজ সারসহ সকল প্রকার কৃষি উপকরণ পায় সেজন্য ব্যবস্থা নেন।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে বঙ্গবন্দু সরকার অত্যন্ত গৌরবজনক অবস্থায় নিয়ে যান। তাঁর সরকারের নীতি ছিল সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব সুলভ মনোভাব গড়ে তোলা। কারো সঙ্গে শত্রুতা না করা ছিল তার পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম দিক। তাঁর শক্তিশালী পররাষ্ট্রণীতির জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ন্যায্য পাওনা আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন। তার উদাহরণ ভারতের কাছ থেকে মুজিব সরকার ৪৪ হাজার কিউসেক পানি আনেন। লাঠিটিলাসহ একাধিক ছিটমহল আদায় ও সীমানা চিহ্নিতকরণ এবং দহগ্রাম আঙ্গুরপোতার চুক্তি বঙ্গবন্ধুরই কৃতিত্ব।
আমেরিকার চাপ সত্তে¡ও তিনি কিউবার সঙ্গে বাণিজ্য স্থাপন করেন। ১৯৭৪ সালে কমনওয়েলথ ও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধু বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে অভিনন্দন ও বীরোচিত সম্বর্ধনা লাভ করেন। জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দানের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে তিনি আন্তর্জাতিক মর্যাদায় ভূষিত করেন। বিশ্ব ফোরামে বঙ্গবন্ধুই প্রথম উচ্চারিত করেন বাংলা ভাষা। রবীন্দ্রনাথের পরে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার মর্যাদাকে আর কেউ বৃদ্ধি করতে পারেনি। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করেন। সেখানে তাকে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ বীরোচিত সম্বর্ধনা দেন।
এভাবেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর স্বপ্নের সোনার বংলা গড়ার ক্ষেত্রে যখন সফলতার দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী দেশী-বিদেশী চক্র তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে। ঘাতকরা সেদিন শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি তারা সেদিন হত্যা করে বাংলার মানুষের হাজার বছরের স্বপ্নের সোনালী ফসল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে। ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে দৈহিকভাবে হত্যা করলেও তারা হত্যা করতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, আদর্শ ও চিন্তা-চেতনাকে। তাই বঙ্গবন্ধুর মহান আদর্শ ও চিন্তা-চেতনাকে ধারণ করে তাঁর রক্তের উত্তরসূরী জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি অর্থনৈতিক, শিক্ষা, শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি, চিকিৎসাসহ বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হন। তিনি ইতিমধ্যেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেকটা সফল হয়েছেন। তিনি উন্নয়ন, সন্ত্রাস দমন, অসা¤প্রদায়িক দেশ বিনির্মানের ক্ষেত্রে যেমন দৃঢ়ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন ঠিক তেমনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়ে, সংঘাতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মানবিক আহ্বান নিয়ে। শান্তির জননী হিসেবে আজকে তিনি দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে যে অবস্থান নিয়েছেন সেটি আমাদের দেশ ও জাতির জন্য যেমন শিক্ষণীয় ঠিক তেমনি আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে একটি শ্রেষ্ঠ মানবিক উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে আমার বিশ্বাস। বিশ্ব দরবারে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উদাহরণ তৈরি করে যাচ্ছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে, শিশুমৃত্যুর ও মার্তৃমৃত্যুর হার কমিয়ে, গড় আয়ু বাড়িয়ে, শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়নের মাধ্যমে এবং ক্রমবর্ধমান জিডিপিকে অব্যাহত রেখে। বাংলাদেশের উদাহরণ সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি বাংলাদেশকে যেমন সঠিক পথে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন তেমনি বিশ্ব মানবতা এবং শান্তির পক্ষে তিনি নেতৃত্বের ভুমিকায় থাকবেন। বিশ্বে একজন অনন্য মানবিক গুণ সম্পন্ন শান্তির পক্ষের নেতা হিসেবে তিনি যে উদাহরণ রেখেছেন তা অব্যাহত রাখবেন বলে আমি আশা করি। তার হাতে সবসময় শান্তির পতাকা থাকবে। বাংলাদেশের মানুষ তার হাতে শান্তির পতাকা দেখে উৎসাহিত হবেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষ রক্ত দিয়েছেন। পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নপূরণের জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করে যাচ্ছে। সে লক্ষ্য পুরণে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাঙালি জাতি সফল হবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রাখি। তিনি বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তির প্রতিক হয়ে থাকবেন। যদিও তিনি জাতির উন্নয়ন করে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছেন তবু আজো স্বাধীনতা বিরোধী দেশী-বিদেশী চক্র তাঁর বিরুদ্ধে নানা ধরণের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাই আমি দেশবাসীকে অনুরোধ করব সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে মুজিব কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রুখে দাড়ানোর জন্য। এ লক্ষ্যেই ১৪ দলীয় জোটসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে এক মঞ্চে আসতে হবে, এটাই ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি স্বরণে আমার একান্ত কাম্য।
লেখক : প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।