পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, সন্ত্রাস, ভাংচুর কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি হতে পারে না। আমরা কখনোই এ ধরনের কাজ বরদাশ্ত করবো না। পুলিশকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘বাঘে ছুঁলে এক ঘা আর পুলিশে ছুঁলে ১৮ ঘা’ এই প্রবাদ আর শুনতে চাই না। জনগণের টাকায় বেতন-ভাতা থেকে শুরু করে সব কিছু হয় জানিয়ে, তাই জনগণের সেবায় নিয়োজিত হতে হবে। জনগণের আস্থা বিশ্বাস অর্জনই পুলিশের সবচেয়ে প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে জাতীয় পুলিশ সপ্তাহ ২০১৮ উপলক্ষে তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পুলিশের আইজি এ কেএম শহীদুল হক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন এবং অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. মোখলেসুর রহমান ধন্যবাদ জানান। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান মিয়া, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি খুরশীদ হোসেন, পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি মুনীরুজ্জামান, রাজবাড়ি জেলার পুলিশ সুপার সালমা বেগম এবং কুমিল্লার পুলিশ সুপার শাহ আলী হোসেনও এতে বক্তৃতা করেন। এসময় র্যাব এবং পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সদা সতর্ক থাকতে পুলিশ সদস্যদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতির নামে এ ধরনের জঘন্য নৃশংস কাজ যারা করবে তাদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে হবে। রাজনৈতিক দলের মানুষ পুড়িয়ে মারা কোন ধরনের রাজনীতি আমি জানি না।
বিএনপির প্রতি ঈঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা রাস্তা করি তারা রাস্তা কেটে দেয়, আমরা গাছ লাগাই তারা গাছ কেটে দেয়, রেলের লাইন তৈরি করি তারা উপড়ে ফেলে। মৃতপ্রায় রেলকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সরকার ইঞ্জিন-বগি সব কিনে আনার পড়ে সেগুলা পোড়াচ্ছে, নতুন নতুন কেনা বাস পোড়াচ্ছে, সাধারণ মানুষ যে ব্যবসা-বাণিজ্য করে খায় তাদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দিচ্ছে। ট্রাক পোড়াচ্ছে, সিএনজি চালককে সিএনজির সঙ্গে বেঁধে রেখে সিএনজি পুড়িয়ে দিচ্ছে বা একজন প্রাইভেট গাড়ীর চালককে নামিয়ে আগুন দিয়ে দিচ্ছে, পুলিশ হত্যা করছে। আন্দোলনের নামে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচি রুখে দেয়াতে পুলিশ বাহিনীর প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পুলিশ বাহিনী সদা তৎপর। তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতাতেই তারা এই জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এ জন্য আপনাদের মাধ্যমে সকল পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই।
জঙ্গিবাদ উচ্ছেদে পুলিশ, গোয়েন্দা এবং অন্যান্য বাহিনীর মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সবকাজ কিন্তু সবসময় এককভাবে করা যায় না। এখানে তথ্য আদান-প্রদান করে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে পরিকল্পিতভাবে যদি কাজ করা যায় তবে ক্যাজুয়ালিটি কম হবে এবং কাজের সাফল্যও বেশি আসবে।
পারস্পরিক তথ্য আদান-প্রদানে সকল গোয়েন্দা সংস্থাকে নিয়ে টিম করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে যখন যে তথ্য আসে তিনি তা অন্যদের জানানোরও নির্দেশ প্রদান করেছেন। সেই সঙ্গে এই টিমের নিয়মিত বৈঠক আয়োজনে স্বরাষ্ট্র সচিব এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও তিনি নির্দেশ প্রদান করেন।
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূলে গণমানুষকে সরকারের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণই কিন্তু ক্ষমতার মূল উৎস। তাই আমরা যদি এসব কাজে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারি তাহলে কাজগুলো আরো সহজ হয়ে যায়। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ উচ্ছেদে সারাদেশের মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, অভিভাবক, জনপ্রতিনিধিসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে গণসচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করার কারণেই আমরা এই সামাজিক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজে একটা সমস্যা এখন দেখা দিচ্ছে সেটাও ব্যাপক, জঙ্গিবাদের মতোই আরেকটা সমস্যা, সেটা হলো মাদকের সমস্যা-এই মাদকাশক্তি আজকে সমাজ ধ্বংস করছে। এটার নিরসনে আমাদের আরো কঠোর হতে হবে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীকে আরো তৎপর হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এই মাদক কোথা থেকে আসে, কারা এই মাদকের ব্যবসা করে, কারা গ্রহণ করে তাদের বিষয়ে আপনাদের আরো কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে বহু মেধাবী ছাত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তাদের পরিবারের ওপর রীতিমত জুলুম-অত্যাচার হচ্ছে। জঙ্গিবাদ যেভাবে দমন করেছেন, এভাবে মাদকের বিরুদ্ধেও অভিযান চালাতে হবে, মাদকের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। পুলিশের কাজ ঝুঁকির কাজ, এই ঝুঁকি সব সময় আপনারা নিচ্ছেন এবং জনগণকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, এই ক্ষেত্রেও আপনারা বেশি কাজ করবেন, এটাই আমরা চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়ন করতে হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও উন্নয়ন প্রয়োজন এবং তারা যেন নির্বিঘেœ দায়িত্ব পালন করতে পারে সে সুযোগটাও সৃষ্টি করা দরকার। শীতের জন্য ড্রেসের সঙ্গে হাফ স্লিভ সোয়েটার প্রদান এবং পুলিশের গ্রেড সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে সিনিয়র পুলিশ সদস্যদের দাবি সমাধানের আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা যতটা বাড়বে আমরা আপনাদের চাহিদাগুলোও ততটাই পূরণ করতে পারবো এবং আমরা যে এটা বাড়াচ্ছি তা আপনারা নিজেরাই টের পাচ্ছেন।
পুলিশকে আরো জনবান্ধব হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশের একটি পুরাতন প্রবাদ ‘বাঘে ছুঁলে এক ঘা, আর পুলিশে ছুঁলে আঠারো ঘা’- যেন মিথ্যা প্রমাণ হয়। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে তিনি পুলিশ সদস্যদের সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মানুষ যেন মনে করে, এই পুলিশ আমাকে সাহায্য করবে বা আমার পাশে আছে। সেই ভরসা ও বিশ্বাসের জায়গাটা পুলিশ ধীরে ধীরে অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে। পুলিশ বাহিনী তার আগের বদনাম থেকে অনেকটা বের হয়ে এসেছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। সেজন্য বাহিনীটিকে ধন্যবাদও জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা কিন্তু আগের মতো নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, মনে রাখবেন আপনারা জনগণের সেবক, জনগণের সেবা করতে এসেছেন। এই জনগণ কৃষক, কৃষক, শ্রমিক মেহনতি মানুষ, তাদের টাকায়ই আপনাদের বেতন, ভাতা সব কিছু। কাজেই তাদের সেবা করা সকলের দায়িত্ব। আপনাদের পরিবার পরিজন বা আপনাদের সবাই এই জনগণের মাঝেই তো বেঁচে আছে। এ কথাটা সব সময় আপনারা মনে রাখবেন।
দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধী, জাতির পিতার খুনিদের দোসর এবং বিএনপি-জামায়াত চক্রের অপপ্রচার অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা অযথা বিভিন্ন দেশে দেশে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু যারা বাংলাদেশে আসছে তারা এসে দেশের প্রকৃত অবস্থা দেখে বিস্মিত হচ্ছে।
সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে আরো তৎপর ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তি যেমন আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করে দিচ্ছে, আবার প্রযুক্তিই ক্ষেত্র বিশেষে সমস্যারও সৃষ্টি করছে। কাজেই এই সমস্যা সমাধানে আমাদের আরো উদ্যোগী হতে হবে। এটা কীভাবে দমন করা যায় এবং কীভাবে এর হাত থেকে জাতিকে মুক্ত রাখা যায়, সে ব্যবস্থাও আমাদেরকে নিতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তির সন্নিবেশের বিষয়ে পুলিশের বিভিন্ন দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, অনেকগুলো বিষয় আপনারা বলেছেন, আমি সেটা দেখব, কোথায় কতটুকু করা যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।