পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : লোকবল তথা দক্ষ কর্মী সঙ্কটে মানসম্পন্ন যাত্রীসেবা দিতে পারছে না রেলওয়ে। সারাদেশে মহাসড়কে বেহাল দশায় সড়কপথের যাত্রীরা রেলের দিকে ঝুঁকে পড়ায় বেশিরভাগ ট্রেনের এখন ত্রাহি অবস্থা। দক্ষ কর্মীদের অনেকেই অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ায় ট্রেন পরিচালনায় এখন কঠিন সময় পার করছে রেলওয়ে ।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, পূর্বাঞ্চলের মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। এর মধ্যে প্রায় ৭ হাজার পদই শূন্য পড়ে আছে। দীর্ঘদিন নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকার পর ২০১২ সালে শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ নেয়া হলেও অনিয়মের অভিযোগ, প্রশ্ন ফাঁস ও মামলায় আটকে আছে নিয়োগ প্রক্রিয়া। রেলওয়ের প্রকৌশলগত খাতগুলোয় লোকবল সংকট থাকায় হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। স¤প্রতি বেশ কয়েকটি নিয়োগের কার্যক্রম শুরু হলেও অনিয়মের অভিযোগ তুলে রেলের বেশ কয়েকটি সংগঠন আন্দোলন শুরু করেছে। অথচ রেলের দুর্নীতি অনিয়মের নেপথ্যে রয়েছে শ্রমিকলীগের একটা প্রভাবশালী অংশ। অনিয়ম দুর্নীতিতে ব্যর্থ হয়ে তারাই এখন রেলমন্ত্রীর নামে বদনাম ছড়াচ্ছে। এদিকে, রেলে লোকবল সংকট কাটাতে শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দিতে অনুশাসন জারি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তা বাস্তবায়নে গতকাল সোমবার রেলভবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক বলেন, বিভিন্ন কারণে রেলের নিয়োগে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। এখনো বেশকিছু নিয়োগ মামলার কারণে ঝুলে আছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সেগুলো নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবো।
তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী রেলের উন্নয়নে খুবই আন্তরিক। লোকবল সংকটের কারণে যাতে রেল সেবা ব্যাহত না হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রী দ্রুত নিয়োগ সম্পন্ন করতে বলেছেন।
জানা গেছে, ২০১৭ সাল পর্যন্ত রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ১৪টি বিভাগে মোট মঞ্জুরিকৃত পদ ছিল ১৯ হাজার ৬২৬টি। এর বিপরীতে কর্মরত ছিলেন ১২ হাজার ৯১৬ জন। সে হিসাবে শূন্য পড়ে আছে ৬ হাজার ৭১০টি পদ। অর্থাৎ মঞ্জুরিকৃত পদের বিপরীতে শূন্য পদ রয়েছে ৩৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শূন্য রয়েছে প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশল, চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট ও প্রধান প্রকৌশল বিভাগে। গুরুত্বপূর্ণ এ তিন বিভাগে লোকবল কম থাকায় রেলের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটছে।
পূর্বাঞ্চল রেলের হিসাবে প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগে মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ৫ হাজার ২০০। এর মধ্যে শূন্য পড়ে আছে ১ হাজার ৬৭৭টি। এছাড়া প্রধান প্রকৌশলীর বিভাগে ৪ হাজার ৮৮ পদের বিপরীতে শূন্য পদ ১ হাজার ৫০৪টি এবং প্রধান পরিবহন কর্মকর্তার বিভাগে ২ হাজার ৫৫০ পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ১ হাজার ১৪৮টি। অর্থাৎ তিন বিভাগে সর্বমোট ১১ হাজার ৮৩৮টি মঞ্জুরিকৃত পদ থাকলেও কর্মরত আছে ৭ হাজার ৫০৯ জন।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) দপ্তরের ৭০ মঞ্জুরিকৃত পদের বিপরীতে শূন্য পদের সংখ্যা ২০টি। সিপিও দপ্তরে ২২৭ পদের বিপরীতে ৮৪টি, সিসিএম দপ্তরে ১ হাজার ৩৯৩ পদের বিপরীতে ৬১৬টি, সিএসটিই দপ্তরে ৭৮৪ পদের বিপরীতে ২৪২টি, সিইই দপ্তরে ১ হাজার ২৩৯ পদের বিপরীতে ৪৫৩টি, সিইও দপ্তরে ৮৮ পদের বিপরীতে ২৯টি, সিওএস দপ্তরে ৩০৯ পদের বিপরীতে ১৫৮টি, সিএমও দপ্তরে ১ হাজার ৭২ পদের বিপরীতে ২৪২টি, রেলওয়ে স্কুলে ১৬২ পদের বিপরীতে ৪৯টি, সিসি (আরএনবি) দপ্তরে ১ হাজার ৬০৭ পদের বিপরীতে ১৩৫টি এবং এফএঅ্যান্ডসিএও দপ্তরে ৮৩৭ পদের বিপরীতে ৩৫৩টি পদ শূন্য। রেলওয়ের সংস্থাপন দফতরের তথ্য অনুযায়ী, পূর্বাঞ্চলের ৬ হাজার ৭১০টি শূন্য পদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শূন্য রয়েছে তৃতীয় শ্রেণির পদ। অন্যদিকে সবচেয়ে কম শূন্য রয়েছে প্রথম শ্রেণির পদ। সে হিসাবে প্রথম শ্রেণির শূন্য পদের সংখ্যা ৬৬টি, দ্বিতীয় শ্রেণির ২৪৯টি, তৃতীয় শ্রেণির ৩ হাজার ৬১১ এবং চতুর্থ শ্রেণির শূন্য পদ রয়েছে ২ হাজার ৭৮টি।
কর্মকর্তারা জানান, রেলওয়ে একটি প্রকৌশল ও ব্যবহারিক প্রতিষ্ঠান হলেও মোট শূন্য পদের ৯৫ দশমিক ৩১ শতাংশ (৬ হাজার ৩৯৫টি) তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদ হওয়ায় রেলের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কর্মী সংকটে নাজুক অবস্থায় রয়েছে।
রেলের নিয়োগ সংক্রান্ত সভার কার্যবিবরণী অনুসারে, ২০১৬ সালে রেলে ২৯ ক্যাটাগরির নিয়োগের ছাড়পত্র পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১৫ ক্যাটাগরিতে নিয়োগ সম্পন্ন করতে পেরেছে রেলওয়ে। ২০১২ সালে ছাড়পত্র পাওয়া ৮৬৫ খালাসী নিয়োগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালের ৬ ডিসেম্বর। এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সর্বমোট ৯৭ জন ব্যক্তি ৪টি মামলা দায়ের করে। ২০১৬ সালের নিয়োগের ছাড়পত্রের আওতায় ২১২জন সুইপার নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা একই বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হলেও নিয়োগ কমিটি গঠন নিয়ে সৃষ্ট তদন্ত কমিটির মতামত না থাকায় এখনো আটকে আছে এ নিয়োগ। ২০১২ সালে ছাড়পত্র পাওয়া ১৩৩ জন এলডিএ কাম কম্পিউটার অপারেটরের লিখিত পরীক্ষা ২০১৪ সালের ২২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হলেও আদালতের রায়ের কারণে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারছে না রেলওয়ে।
একাধিক সূত্র জানায়, রেলে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলেই শ্রমিকলীগের প্রভাবশালীদের তৎপরতা বেড়ে যায়। প্রভাবশালী নেতারা নানা অজুহাতে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে চাকরি দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এ নিয়ে রেলমন্ত্রী বহুবার কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। গত মাসে পশ্চিমাঞ্চলে কিছু নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে নিয়োগ কমিটি। তাতে কারো কারো স্বার্থে আঘাত লেগেছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামকেন্দ্রীক কতিপয় নেতা রেলের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন। রেলমন্ত্রীর নামে বদনাম ছড়াচ্ছেন। এতে করে রেলের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে আরও জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।