চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের প্রথম ও প্রধান স্তম্ভ ঈমান। তাই ঈমান শিক্ষা ও ঈমানের চর্চা খুবই জরুরি। ঈমান শিক্ষার জন্য নিরলস সাধনা আবশ্যক। সাধনার অভাবে ঈমান দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে যায়। দুর্বল ঈমানের কারণে জীবন থেকে আল্লাহ্ তা’য়ালার রহমত ও বরকত উঠে যায়। ঈমান বিষয়ে অজ্ঞতা, অসচেতনতা ও অনুশীলনহীনতার কারণে সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয়, দুর্নীতি, অরাজকতা ব্যাপকভাবে দেখা দেয়। যতই দিন যায় এই অবস্থা আরো খারাপের দিকে যেতে থাকে যদি ঈমানদার হওয়ার জন্য দৃঢ় প্রত্যয় না থাকে। ঈমানদার বানানোর জন্য শিশুকাল থেকেই ঈমান শিক্ষা দিতে হয়। ছোটদের বুঝার ক্ষমতা মাথায় রেখে তাদের অন্তরে ঈমানের বীজ বপন করার গুরুদায়িত্বটুকু কাউকে না কাউকে নিতে হবে।
জনাব শাকির উদ্দিন আহমদ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঈমান শেখানোর জন্য একটি কার্যকর পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। প্রশ্নোত্তরে ছোটদের ঈমান শিক্ষা” বইটিতে তিনি ইসলামের মূলভিত্তি- ঈমান অত্যন্ত সহজ ও শাবলীল ভাষায় স্কুলগামী শিশুদের উপযোগী করে উপস্থাপন করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত মসজিদের ফটোগ্রাফে কোরআনের আয়াত ও হাদিছ এবং প্রাসঙ্গিক কিছু ছবি বিষয়বস্তুকে আরো প্রাণবন্ত ও হৃদয়গ্রাহী করেছে। প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে ঈমানী বিষয়গুলো উপস্থাপন করায় শিশুদের মনে রাখা অনেক সহজ হবে।
বর্তমান প্রজন্ম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর প্রজন্ম। এরা বিজ্ঞানের আবিস্কার নিয়ে পড়তে ভালবাসে। জনাব শাকির উদ্দিন আহমদ কোরআন ও বিজ্ঞানের কিছু বিষয় শিশুদের সামনে সহজভাবে তুলে ধরেছেন। শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে কেউ শৈশবেই যেন নাস্তিক্য চিন্তার কবলে না পড়ে যায় সেজন্য খুব সহজে বুঝিয়ে দিয়েছেন- সকল সৃষ্টি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এবং একমাত্র তিনিই এ বিশ্বজগত নিয়ন্ত্রণ করছেন। মানুষকে আল্লাহ তায়ালার দাসত্ব ও আনুগত্যে উদ্বুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ তা’য়ালা লক্ষাধিক নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। বিখ্যাত কয়েকজন নবী রাসুলগণের সঙ্গে শিশুদেরকে পরিচয় করে দেওয়ার জন্য তাঁদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি বইটিতে উল্লেখিত হয়েছে।
আল্লাহ্র তা’য়ালার হুকুম ও রাসুলের তরীকা মেনে ভালো কাজ করার পুরস্কার ও এর বিপরীতে মন্দ কাজ করার শাস্তি সম্পর্কে লেখক বইটিতে ধারনা দেবার চেষ্টা করেছেন। বেহেশতের অন্তহীন সুখের জীবন ও দোযখের দুর্বিসহ কষ্টের লোমহর্ষক কিছুটা বর্ণনা তিনি টেনেছেন। দ্বীনী কাজে উৎসাহিত করার জন্য ও মন্দকাজ থেকে দূরে থাকার জন্য বইটিতে বেহেশত-দোযখের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত ইসলামী জীবন যাপন পদ্ধতি আমাদের নবী করীম (সাঃ) সাহাবীগণকে হাতে কলমে শিখিয়েছেন। ছোটবেলায় ইসলামী জীবন যাপন পদ্ধতি আয়ত্ত করে ফেললে সারা জীবন সে পথেই চলা সহজ। প্রাত্যহিক জীবনের সকল কার্যাদি নবী (সাঃ) এর সুন্নাহ অনুসারে সম্পাদন করলে জীবন হয়ে উঠে সুন্দর ও দামী। জনাব শাকির উদ্দিন আহমদ আকর্ষণীয়ভাবে বিষয়গুলো বইটিতে তুলে ধরেছেন।
কেবল ঈমান, নামাজ, রোজা, যাকাত, হজ্জ এর মত ব্যক্তিগত কয়টি ইবাদতের মধ্যে ইসলাম সীমাবদ্ধ নয়। ইসলামের পরিধি অনেক ব্যাপক ও সার্বজনীন। ইসলাম কোন নির্দিষ্ট ভূখÐের জন্য আসেনি বরং এর আবেদন বৈশ্বিক। কোরআন নিছক একটি ধর্মগ্রন্থ নয় বরং অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, সমাজনীতি, সমরনীতি ও নৈতিকতার এক মহাগ্রন্থ। এ মহাপবিত্র গ্রন্থের আলোকে এক সুসভ্য সমাজ গড়ার কারিগর ছিলেন মহানবী (সাঃ) এবং তাঁর সতীর্থগণ। তাঁদের জীবনাচার, ব্যবহার, সুবিচার, সৎচরিত্র, দানশীলতা দুনিয়ার মানুসের কাছে আজও অতুলনীয় আদর্শ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। বিশাল ভূখÐ, বিস্তর সম্পদ আর বেশুমার ক্ষমতার অধিকারী হয়েও মুসলিম জাহানের অধিপতিগণ ছিলেন নিরহংকার। অত্যন্ত সাদামাঠা ছিলো তাদের যাপিত জীবন। তাদের নিষ্ঠা, সততা, দয়া, সুবিচার লাখো-কোটি মানুষকে আকর্ষণ করেছিলো। ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় পেয়ে তারা নিজেদেরকে ধন্য মনে করেছিলেন। তরবারি দিয়ে ইসলাম আসেনি। ইসলাম এসেছে সাম্য দিয়ে ভালোবাসা দিয়ে। সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সাঃ), তাঁর খলিফাগণ এবং সাহাবীগণের হাজারো ঘটনা আমাদেরকে আন্দোলিত করে। এমনই বেশ কয়েকটি ঘটনা জনাব শাকির উদ্দিন আহমদ তুলে এনেছেন তার বইয়ে। সহজ সরল লেখায় বিমূর্ত হয়ে উঠেছে প্রতিটি চরিত্র।
এছাড়া, ঈমান ওয়ালাদের প্রতি আল্লাহ্ তা’য়ালার অপরিসীম রহমত ও বরকতের বেশ কয়েকটি ঘটনা বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে। এসব ঘটনা জানার মাধ্যমে শিশুমন নিঃসন্দেহে ঈমানওয়ালা হয়ে গড়ে উঠতে আগ্রহী হবে।
জানতে পারলাম জনাব শাকির উদ্দিন আহমদ তার বইটি বিনামূলে তুলে দিচ্ছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে। শর্ত একটাই- বইটি প্রাপ্তির কিছুদিন পর নির্দিষ্ট তারিখে এক ঘন্টার একটি পরীক্ষায় বসতে হবে। সব প্রশ্নের উত্তর থাকছে বইটিতেই। ছাত্র-ছাত্রীরা কতটুকু মনোযোগ দিয়ে বইটি পড়েছে তা যাচাই করার জন্যই এ প্রতিযোগিতার আয়োজন। প্রতিযোগিতায় যারা কৃতিত্ব প্রদর্শন করে তাদেরকে তিনি পুরস্কৃত করেন। এমন উদ্দোগী দ্বায়ী আজ আমাদের খুবই প্রয়োজন।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঈমান বিষয়ক রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের এই উদ্দোগটি আরও বিস্তৃত হওয়ার দাবী রাখে। ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে দ্বীনী চেতনা বিকাশের লক্ষে প্রতিটি জেলায় বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউÐেশনের বিভিন্ন কর্মকাÐ দীর্ঘদিন যাবৎ চালু রয়েছে। এই কার্মকাÐে অন্তর্ভূক্ত করে প্রতিটি জেলায় ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে এই বইটির ভিত্তিতে ঈমান বিষয়ক সংক্ষিপ্ত রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ঈমানী বলে বলীয়ান হবে। সমাজে আলোকিত মানুষের প্রাচুর্য বৃদ্ধি পাবে। দেশ ও জাতি উন্নতমনা মানুষে সমৃদ্ধ হবে।
লেখক : সাবেক সচিব, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।