Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রেলের আয় বৃদ্ধির সুযোগ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সারাদেশে সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশা। সড়কপথে যাত্রা মানেই সীমাহীন ভোগান্তি। বর্ষার আগে থেকেই একই অবস্থা চলছে। ভোগান্তি এড়াতে যাত্রীরা ঝুঁকছে ট্রেনের দিকে। প্রতিটি ট্রেনে এখন উপচে পড়া ভিড়। অন্যদিকে, মহাসড়কে ভারী যানবাহনে নির্দিষ্ট ওজনের পণ্য পরিবহন নিয়েও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এতে করে ভারী পণ্য পরিবহনে মালবাহী ট্রেনকে বেছে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। মাস খানেক ধরে চট্টগ্রাম থেকে কন্টেইনারবাহী ট্রেনে মালামাল বুকিং দিতে বেশ ভিড় দেখা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা এটাকে রেলের আয় বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখছেন।
সারাদেশে সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশা। বর্ষা মৌসুমের আগে থেকে দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলছে। সওজের হিসাবে, গত জুলাই-আগস্টে টানা বৃষ্টি এবং বন্যায় প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়কের ক্ষতি হয়েছে। এজন্য ১৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। সওজ সূত্র জানায়, বরাদ্দ না পাওয়ায় এখনও শুরু হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত। এতে জনসাধারণের চলাচলে ভোগান্তি সীমা ছাড়িয়েছে। সূত্র জানায়, সারা দেশে সওজের অধীনে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়কের দৈর্ঘ্য ২১ হাজার ৩০২ কিলোমিটার। এবারের বন্যায় সওজের ১০ শতাংশ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংস্থাটির পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ উইংয়ের তথ্যানুযায়ী, দুই হাজার ৩০ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক বন্যায় নষ্ট হয়েছে। এসব সড়ক মেরামত করে যানচলাচলের উপযোগী করতে জরুরি ভিত্তিতে ১৯৩ কোটি ৪৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। স¤প্রতি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সড়ক-মহাসড়ক মেরামতের কাজ শুরু না হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। বৈঠকে জানানো হয়, বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে নভেম্বরের প্রথমার্ধ পর্যন্ত কাজ করা যায়নি। তবে চলতি মাসে কিছু এলাকায় কাজ শুরু হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে কাঙ্খিত অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হবে। তবে সড়ক-মহাসড়কগুলোর স্থায়ী মেরামতে কত টাকা লাগতে পারে, সে হিসাব এখনও করা হয়নি। সওজ কর্মকর্তাদের ধারণা, এ ক্ষেত্রে আড়াই হাজার কোটি টাকা লাগতে পারে। কারণ স্থায়ীভাবে মেরামত করতে গেলে কোথাও কোথাও নতুন করে সড়ক নির্মাণ করতে হবে। কোথাও পুরো ড্রেনেজ ব্যবস্থা পাল্টে ফেলতে হবে। অনেক স্থানে সেতু-কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে। সূত্র জানায়, এবারের বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোর সড়কের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। রংপুরের ১ জেলায় বন্যায় ৭৯টি সড়ক-মহাসড়কের ক্ষতি হয়েছে, যার দৈর্ঘ্য ৫৭২ দশমিক তিন কিলোমিটার। এর তাৎক্ষণিক সংস্কারে প্রয়োজন ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। মধ্যমেয়াদি সংস্কারে প্রয়োজন ৭৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। স্থায়ী মেরামতে বরাদ্দ প্রয়োজন ৫৮৮ কোটি ২১ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে দরকার ৬৮১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। উত্তরাঞ্চলের সড়ক-মহাসড়কের এই দুর্দশার ঘানি টানছে সাধারণ যাত্রীরা। ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের যে কোনো জেলায় যেতে এখন ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা সময় লাগে। ভাঙাচোরা সড়কের সাথে এখন যোগ হয়েছে ঘন কুয়াশা। যাতে যানজট, ভোগান্তি দুটোই বেড়েছে। এসব কারনে যাত্রীরা ঝুঁকছেন ট্রেনের দিকে। ট্রেনের টিকিট এখন সোনার হরিণের মতো। প্রতিটি ট্রেনেই উপচে পড়া ভিড়। রেলের হিসাব বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক মাসে ট্রেনে যাত্রী পরিবহনে রেলের আয় আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।
অন্যদিকে, একসময় দেশে ভারী পণ্য পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম ছিল রেলওয়ে। কিন্তু রেলকে অবহেলিত রেখে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় রেলপথে পণ্য পরিবহন কমে যায়। হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পরও পণ্য পরিবহন খাতে আয় বাড়াতে ব্যর্থ হয় রেলওয়ে। তবে স¤প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেইনার পরিবহনের জন্য আলাদা একটি সংস্থাও গঠন করেছে রেলওয়ে। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেলের মোট রাজস্ব আয় আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বাড়লেও পণ্য পরিবহন খাতে আয় প্রবৃদ্ধি ছিল হতাশাজনক।
অন্যদিকে, দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো রক্ষার জন্য এক্সেল লোড ব্যবস্থাপনার নীতিমালা একদমই মানা হতো না। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসা যাওয়ার পথে মেঘনা সেতুর টোলপ্লাজায় এক্সেল লোড নিয়ে ঘুষ-দুর্নীতি অনেকটা ওপেন সিক্রেট। সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের ভোগান্তি তো আছেই। তবে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্দিষ্ট এক্সেল লোডসম্পন্ন যানবাহনে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনের ওপর উচ্চহারে জরিমানার বিধান করেছে মন্ত্রণালয়। কর্মকর্তাদের দাবি, গত ১ ডিসেম্বর থেকে চালুকৃত এ নিয়ম বাস্তবায়নের ফলে নির্দিষ্ট এক্সেলের চেয়ে বেশি ওজনের যানবাহন চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে অনেকেই মালবাহী ট্রেনে পণ্য পরিবহনে আগ্রহী হয়ে থাকতে পারেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা মনে করেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্য পরিবহনে এখন রেলের মতোই সময় লাগে। আর সময় কিছুটা বেশি লাগলেও অর্থসাশ্রয় ও হয়রানী থেকে রেহাই পেতে অনেকেই রেলে পণ্য পরিবহনে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। এভাবে কম খরচে মূলধনি যন্ত্রপাতি, ভারী পণ্য পরিবহনে রেলের ওপরই নির্ভরশীল হয়ে উঠবেন তারা। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দুটি কন্টেইনারবাহী ট্রেন ঢাকায় কমলাপুর আইসিডির উদ্দেশে ছেড়ে আসে। এছাড়া আরো দুটি ট্রেন কমলাপুর আইসিডি থেকে পণ্য অথবা খালি কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। একটি ট্রেন প্রতিদিন চট্টগ্রামের সিজিপিওয়াই ইয়ার্ডে কন্টেইনার লোডিংয়ে নিয়োজিত থাকে। এছাড়া প্রতিদিন চার-পাঁচটি ট্রেন খাদ্যপণ্য, জ্বালানি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে সারা দেশে চলাচল করে।
রেলের হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ মৌসুমে রেলের মোট আয় হয়েছে ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর আগের অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৯০৪ কোটি ১ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে সংস্থাটির আয় বেড়েছে ৩৯৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেলের পণ্য পরিবহন খাতে আয় হয়েছিল ১৭৪ কোটি, ২০১৫-১৬ সালে ১৭৭ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরে রেলের পণ্য পরিবহন বাবদ আয় বেড়েছে ৮৭ কোটি ৪৬ লাখ ৫ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেলের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা। এ লক্ষ্য পূরণের জন্য রেলের পণ্য পরিবহন বাবদ আয় বৃদ্ধির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।



 

Show all comments
  • md. mahbubul haque ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:১৩ পিএম says : 0
    এবার পণ্যবাহী ট্রাক পরিবহনের উপযোগী রেলের র‌্যাক আমদানী করা হোক। যাতে করে দেশের নির্দিষ্ট অঞ্চলকে লক্ষ্য করে পণ্যবাহী ট্রাক রেলের মাধ্যমে বহন করে তাঁদের গন্তব্যস্থলে পৌছিয়ে দিয়ে অধিকতর রাজস্ব আহরণ করা যায়। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এই ব্যবস্থা রয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdur Rahman ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ৫:৫১ পিএম says : 0
    This is not a comment. This is own thinking about our Ralway sector, if the government keep 50% under them the other 50% sale shear of company or Private sector than it is growth and shall be benefited sectors, Also needed modernize the all platforms including line, services, manpower, cleaning, ticketing system, booking system and good communication. Than see the income is more than remitans.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেলের


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ