Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রফতানি খাতকে সমৃদ্ধ করতে নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করুন

ব্যবসায়ীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ব্যবাসায়ীদের বিদেশে নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করে তাকে কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের রপ্তানি খাতকে সমৃদ্ধ করতেই এটি জরুরী মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের শুধু একদিকে তাকালে চলবে না। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য নতুন দেশ, নতুন নতুন জায়গা খুঁজে বের করতে হবে। নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে এবং সেইসব বাজারে কোন ধরনের পণ্য রপ্তানি করা যায় সেটাও খুঁজে বের করতে হবে।
গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা’র (ডিআইটিএফ) উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ বছর ওষুধ শিল্পকে ‘প্রডাক্ট অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা করেন। শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ইংরেজী নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান এবং নতুন বছর সবার জন্য আরো উন্নতি এবং প্রগতি নিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন। পরে তিনি বণিজ্য মেলার বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন।
দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশীয় উদ্যোক্তাগণ তাদের নতুন পণ্য প্রদর্শনীর সুযোগ পান। আবার দেশী-বিদেশী ক্রেতাদের রুচি ও চাহিদার একটি চিত্রও তারা পেয়ে থাকেন। ফলে পণ্যের মানোন্নয়ন ও বহুমুখী করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
উৎপাদিত পণ্যের মান নিশ্চিত করা, ব্রান্ডিং করা এবং এগুলোকে আকর্ষণীয় করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে যা যা সাহায্য করার তা সরকার করে যাচ্ছে এবং করে যাবে বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সবসময় মাথায় রাখতে হবে বর্তমান বিশ্ব অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। এই প্রতিযোগিতাময় বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তিনি ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকদের বলেন শুধু নিজেদের আর্থিক স্বচ্ছলতা আনলেই হবে না। সাথে সাথে মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও বাড়াতে হবে। আপনার উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে হলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন।
বহিঃবিশ্বে বর্তমান সরকারের ব্যবসা-বাণিজ্য স¤প্রসারণের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরো ১২ টি দেশে নতুন দূতাবাস এবং ১৭টি মিশন খোলা হয়েছে। সে সব দেশের অ্যাম্বাসেডর, হাইকমিশনারদের ডেকে ওয়ার্কশপ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং দেশে বিনিয়োগ কিভাবে বাড়ানো যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরফলে ব্যবসার দ্বার আরো উন্মুক্ত হবে।
জাতির পিতাই স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে মনোযোগের পাশাপাশি শিল্প-উৎপাদনের দিকে নজর দেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি পশ্চিমাদের ফেলে যাওয়া কলকারখানাগুলো জাতীয়করণ করেন। জাতির পিতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের রাষ্ট্র শাসনের সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার শতকরা ৭ ভাগের উপরে উঠে গিয়েছিল। অথচ ’৭৫-পরবর্তী সরকারগুলো সে সব কলকারখানা পানির দামে বিক্রি করে দিয়ে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নে ব্যস্ত পড়ে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকার বেসরকারি খাতের উন্নয়নে কাজ শুরু করে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেয়। তার সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল, সরকার নিজে ব্যবসা-বাণিজ্য করবে না, কিন্তু সহায়কের ভূমিকা পালন করবে। এই উদ্যোগের ফলেই আজ দেশে বেসরকারি খাত ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বিশ্বের ৪৬তম বৃহত্তম অর্থনীতি। গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.২৮ শতাংশ। এখন আমদানি ব্যয়ের ৭৫ শতাংশ অভ্যন্তরীণ আয় থেকে মেটানো হচ্ছে। মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থনীতি ও আর্থ-সামাজিক অধিকাংশ সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলিকে ছাড়িয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ১৯৯টি দেশে ৭৫০টি পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে। ২০১৬-২০১৭ সালে রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৪ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪১ বিলিয়ন ডলার। তিনি আশা করে বলেন, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আমাদের অবস্থান আরও সুসংহত হবে।
আমাদের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাভাবিকভাবেই একটা দেশকে উন্নয়ন করতে হলে শিল্পায়নে যেতে হবে। কিন্তু কৃষিকে কোনভাবেই অবহেলা করা যাবে না। কারণ কৃষির মধ্যদিয়েই আমাদের খাদ্য নিরপত্তা নিশ্চিত হয়। অর্থনীতি ত্বরান্বিত করতে শিল্পয়নটাও করতে হবে। আবার রপ্তানিও করতে হবে। তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে। যাতে আমরা স্বাধীরতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করতে পারি বাংলাদেশকে ক্ষুধা মুক্ত এবং দারিদ্র মুক্ত করে। আর ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি সমৃদ্ধ দেশ। সেভাবেই দেশকে আমরা গড়তে চাই।
আইসিটি খাতের সম্ভাবনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এখন ৮ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে এবং ১৬ কোটি মানুষের দেশে মোবাইল ফোনের ১৩ কোটি সিম সংযোগ রয়েছে। দেশে মোবাইল ফোন সংযোজনকে উৎসাহিত করে তিনি বলেন, এসব পণ্যতো আমরা নিজেরাই উৎপাদন করতে পারি। এখন দেশে কিছু কিছু অ্যাসেম্বিলিং হচ্ছে। এটাকে আরো আমরা গুরুত্ব দিতে পারি। সারাদেশে একশ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলায় সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে এই অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে যাতে, বিভিন্ন এলাকা ভিত্তিক উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাত করে দেশে ব্যবহার এবং বিদেশে রপ্তানী করা যায়।
মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে মামলা করে আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা অর্জনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশাল যে সমুদ্র এলাকা আমরা অর্জন করেছি তার সম্পদকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। এই সম্পদও আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সহ সবক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখতে পারে। চামড়া খাতের উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৭ সালে আমরা চামড়া খাতকে ‘প্রডাক্ট অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা করেছিলাম। সেইসাথে চামড়া শিল্পের উন্নয়নে আমরা ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছি।
এ বছর ওষুধ শিল্পকে ‘প্রডাক্ট অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ঔষধ শিল্প একটি উচ্চ প্রযুক্তির শিল্প। দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশ যোগান দিয়ে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অষ্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকাসহ শতাধিক দেশে ঔষধ রপ্তানি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ঔষধ শিল্পের উন্নতির লক্ষ্যে মুন্সিগঞ্জে এ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদন পার্ক স্থাপনের কাজ শুরু করেছি।
বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।
অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব সুভাশীষ বোস এবং ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বক্তৃতা করেন। রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য স্বাগত বক্তৃতা করেন। মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, জাতীয় সংসদের সদস্য, পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, কূটনীতিক, ব্যবসায়ী নেতা এবং মেলায় অংশ গ্রহণকারী দেশি-বিদেশী উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ