পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : শেষ হলো ২০১৭ সাল। বিশ্বজুড়ে ব্যবসা, অর্থনীতি আর প্রবৃদ্ধির জন্য মোটা দাগে একটি চমৎকার বছর হিসেবে এটি শেষ হতে চলেছে। প্রায় নয় ট্রিলিয়ন ডলার অর্জনের মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজার এ বছর নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। গোটা বিশ্বে প্রবৃদ্ধি ও ব্যবসায়িক আস্থা বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে এবং তা দীর্ঘমেয়াদি হওয়ার সব লক্ষণই প্রতীয়মান। একদিকে যেমন বেড়েছে ভোগ্যপণ্য বিশেষত বিলাসপণ্যের বাণিজ্য, তেমনি শ্রমবাজারেও কর্মসংস্থানের নতুন রেকর্ড হতে দেখা গেছে।
বিদায়ী বছরে বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি তিন দশমিক ছয় শতাংশ বলে হবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানা গেছে। এর আগের পূর্বাভাস ছিল দুই দশমিক চার শতাংশ। এশিয়ায় বাণিজ্যপ্রবাহের হার বৃদ্ধি এবং উত্তর আমেরিকার আমদানি চাহিদা গত বছরের বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে।
এ বছর বৈশ্বিক সমন্বিত শেয়ার সূচক এমএসসিআই ২২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ ৫১৪ দশমিক ৫৩-তে পৌঁছেছে। সিডনিভিত্তিক ফান্ড ম্যানেজার কমসেকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ক্রেইগ জেমস জানান, তারা বিশ্বব্যাপী যে ৭৩টি স্টক এক্সচেঞ্জের দিকে নজর রাখেন, সেগুলোর মধ্যে মাত্র নয়টি বাদে বাকিগুলো স্থানীয় মুদ্রায় মুনাফা করেছে।
ওইসিডির তথ্যমতে, এ বছর বৈশ্বিক প্রকৃত বাণিজ্য প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে চার দশমিক আট শতাংশ, যা গত বছর ছিল দুই দশমিক ছয় শতাংশ। এ বছর বৈশ্বিক জিডিপি বৃদ্ধি গত বছরের তিন দশমিক এক থেকে বেড়ে তিন দশমিক ছয় শতাংশে পৌঁছেছে।
যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ বিশ্বের বেশকিছু বৃহৎ অর্থনীতিতে ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাস রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে এবং এসব দেশে শ্রমবাজার শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রে কর কর্তন ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইতিবাচক মনোভাব বাজারকে চাঙ্গা করেছে। দেশটিতে এ বছর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প এ কর কর্তনের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি গ্রহণ করেছেন। অবশ্য এর ফলে অনেকে সে দেশে অবস্থিত বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন পরিবেশ দূষণ কমানোর দিকে নজর দিলেও এর প্রবৃদ্ধি বজায় ছিল। অন্যদিকে ইউরোপে কট্টরপন্থী দলগুলো ক্ষমতায় যেতে ব্যর্থ হওয়ায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় ছিল, যা একক মুদ্রার বøকটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে।
ব্রেক্সিট ছিল এ বছরের অন্যতম আলোচিত ঘটনা। এর ফলে পাউন্ডের ব্যাপক দরপতন হয়। তবে যুক্তরাজ্যের এফটিএসই ১০০ সূচক বৃদ্ধি পেয়েছে। অবশ্য জাপান ও জার্মানির প্রধান শেয়ারবাজারগুলো দুই অংকে বৃদ্ধি পেয়েছে। নিক্কেই ২২৫-এর বৃদ্ধি ছিল ১৯ শতাংশ আর ডাস্কের বৃদ্ধি ১২ শতাংশের বেশি।
ধনীদের জন্যও বছরটি ছিল চমৎকার। বিশ্বব্যাপী বিলাসবহুল পণ্যের ব্যয় বেড়েছে পাঁচ শতাংশ। কেস-শিলার হোম প্রাইস ইনডেক্সের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রে আবাসন খাতের মূল্য সর্বকালের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে, যা অবস্থাসম্পন্নদের জন্য সুবিধা করে দিয়েছে। ট্রাম্পের নতুন করনীতিও সবচেয়ে বেশি আয়ের মানুষদের সবচেয়ে বেশি সুবিধা প্রদান করবে।
যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় প্রান্তিকে কর-পরবর্তী করপোরেট মুনাফা এক দশমিক ৮৬ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছে নতুন রেকর্ড করেছে। এছাড়া এ বছর বৃহৎ একীভূতকরণের ধারা অব্যাহত ছিল। ডিজনির সঙ্গে রুপার্ট মারডকের ছয় হাজার ৬০০ কোটি ডলারের চুক্তি, ফ্রান্সের ইউনিবেইল রোদামকোর দুই হাজার ৫০০ কোটি ডলারে শপিং সেন্টার স্পেশালিস্ট ওয়েস্ট ফিল্ডকে কিনে নেয়া এবং জিভিসির লেডব্রোককে অধিগ্রহণ এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, এ ধারা মনোপলির মাধ্যমে ভোক্তার কাছ থেকে অধিক মুনাফা অর্জনে কোম্পানিগুলোকে সহায়তা করে। সংশ্লিষ্ট অনেকেই আশঙ্কা করছেন, সিভিএস ও ইন্স্যুরেন্স জায়ান্ট এটনার প্রস্তাবিত একীভূতকরণ গ্রাহকদের কোম্পানির বেঁধে দেয়া শর্তগুলো মানতে বাধ্য করবে কিংবা রাসায়নিক প্রস্তুতকারী কোম্পানি বেয়ারের মনসান্টোকে অধিগ্রহণ বীজের মূল্য বৃদ্ধি করতে পারে।
এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন কনজিউমার ফিন্যান্সিয়াল প্রটেকশন ব্যুরোর কিছু আইন বাতিল করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দায় থেকে অনেক ক্ষেত্রে রেহাই দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে বছরজুড়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দেশটিতে টানা ৮৬ মাসের মতো কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেল। শ্রম বিভাগের তথ্যমতে, ১৯৩৯ সালের পর এটি টানা কর্মসংস্থান বৃদ্ধির রেকর্ড।
যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার ২০০০ সালের পর সবচেয়ে কমে এ বছর চার দশমিক এক শতাংশে নেমে এসেছে। আর্থিক মন্দার পর ২০০৯ সালের অক্টোবরে এ হার সর্বোচ্চ ১০ শতাংশে পৌঁছেছিল। জেপি মরগান ফান্ডের প্রধান বৈশ্বিক স্ট্যাটেজিস্ট ডেভিড কেলি বলেন, শ্রমবাজারের তথ্য থেকে দেখা যায় অর্থনীতি পূর্ণ কর্মসংস্থান পর্যায়ে আছে। ১৯৭৩ সালের পর থেকে বেকার ভাতা দাবির হার সর্বনিম্নে পৌঁছেছে। তবে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়লেও বেতন বৃদ্ধি কিংবা আর্থিক বৈষম্য হ্রাসের হার ছিল শ্লথ। নিম্ন আয়ের শ্রমিকদের বৃদ্ধির হার কম হলেও উচ্চ আয়ের বেলায় এটি ছিল গতিশীল। ওয়াশিংটন সেন্টার ফর ইকুইটেবল গ্রোথের পরিচালক হিদার বুশে বলেন, উচ্চ আয়ের মানুষদের আরো সুবিধা দেয়া হচ্ছে এবং জনগণের ঘাড়ে আরো বেশি বোঝা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।