Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নৌকার পাশে থাকুন

যশোরের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

| প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মিজানুর রহমান তোতা : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যশোরের বিশাল জনসভায় নৌকায় ভোট চেয়ে বলেন, নৌকার পাশে থাকুন, নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে সেবা করার সুযোগ দিন। এসময় জনসভায় অংশ নেওয়া জনতাকে হাত তুলে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার সাড়া দিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। জবাবে জনতাও একযোগে হাত তুলে সাড়া দেন আওয়ামী লীগ সভাপতিকে। তিনি বলেন, আমি চাওয়া পাওয়ার জন্য রাজনীতি করি না। দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্ন নয়, এখন বাস্তব। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হয়, জনগণের কল্যাণ হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভিক্ষা চেয়ে বাঙালি জাতি চলে না। আমরা বিশ্বের দরবারে মাথা উচু করে দাঁড়াতে চাই। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির মিথ্যা অপবাদ দিতে চেয়েছিল। পারেনি। পদ্মা সেতু নিজেদের টাকায় হচ্ছে। আমি জনগণের কল্যাণে কাজ করতে এসেছি, দুর্নীতি করতে আসিনি। পদ্মা সেতুতে রেল লাইন হবে, ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তথা যশোরের সঙ্গে সংযোগ হবে। তিনি বলেন, দেশের প্রত্যেকটি গ্রামের মানুষ যাতে নাগরিক সুবিধা পরিপুর্ণভাবে পায়, প্রত্যেক ঘর যাতে আলোকিত হয়, আমরা সেই লক্ষেই কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশ সামনে নয়, পিছনের দিকে যায়। কথায় আছে ভুতের পা নাকি পিছনের দিকে যায়। বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি হত্যা, খুন, জ্বালাও পোড়াও, ধ্বংসের আর লুটপাটের।
গতকাল (রোববার) যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে শেখ হাসিনা একথা বলেন। জনসভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ ছাড়াও আশেপাশের এলাকা প্রেসক্লাব ও আইনজীবী সমিতির মোড়, কোর্টচত্বর, পোস্ট অফিস মোড়, মুজিব সড়কের অংশজুড়ে ছিল মানুষ আর মানুষ। আগে জনসভাস্থল ছিল শামস-উল হুদা স্টেডিয়াম। সেটি পরিবর্তন করে জনসভার স্থান নির্ধারণ হয় ঈদগাহ ময়দানে। জনসভায় আসা ?েলাকজনের অনেকেই বলেছেন এই স্থানটি জনসভার জন্য ভালো হয়েছে। জনসভাস্থলের আশেপাশেও তিলধারণের ঠাই ছিল না। প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখার জন্য যশোর শহরের আরবপুর মোড় থেকে শহীদ মসিয়ুর রহমান সড়ক হয়ে ঈদগাহ ময়দান পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারা হাত নেড়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে সপ্তাহজুড়ে যশোরকে সাজানো হয়েছিল অন্য রকম। পোস্টার-ব্যানার এবং ফেস্টুনে ছেয়ে গিয়েছিল গোটা শহরের সড়কগুলো। মনে হচ্ছিল এটা নির্বাচনী জনসভা।
যশোরের জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই ছেলে দেশের মানুষের টাকা মেরে বিদেশে পাচার করেছে। এটা বিদেশি সংস্থার লোক এসে সাক্ষী দিয়ে গেছে। তাদের মা-ও কম যান না। এতিমের টাকা মেরে খান। এতিমের টাকা এতিমখানায় যায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের কথা উল্লেখ করে বলেন, আপনারা যেভাবে যশোরের সবক’টি আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়ী করেছিলেন, আমি এর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি বলেন ‘জাতির জনককে হত্যার পর এ দেশ পরিণত হয়েছিল হত্যা, ক্যু, কারফিউর দেশ। লুটপাটের রাজত্বে কায়েম করা হয়েছিলো। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা কারফিউ জারি করে দেশ চালাতো। জিয়া কারফিউ দিয়ে ভীতিকর পরিবেশে দেশ চালাতেন। জিয়ার গণতন্ত্র ছিলো যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে। যে যুদ্ধাপরাধীরা এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি, এ দেশের মা-বোনদের সম্ভ্রমহানি করেছে, পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে তুলে দিয়েছে, নৃশংসভাবে গণহত্যা চালিয়েছে, সেই যুদ্ধাপরাধীদের বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করে পুরস্কৃত করাটা ছিল জিয়ার বহুদলীয় গণতন্ত্র।’
বিএনপি জোটের কারবারই হচ্ছে খুন সন্ত্রাস বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেই দেশে শান্তি ফিরে আসে, দেশের উন্নয়ন হয়। তিনি বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। প্রতিটি ইউনিয়নে ই-সেবা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। সেখানে মানুষ সেবা পাচ্ছে। এসময় তিনি তার সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে বিএনপি সরকারের শাসনামলের সমালোচনা করে বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশের মানুষের ভাগ্য বদলাতে শুরু করে। দেশের উন্নয়ন হয়। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে খুন, গুম জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বাংলা ভাইয়ের রাজত্ব হয়। আমরা উন্নয়ন চাই। বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্যমুক্ত, সুখী সমৃদ্ধ উন্নত দেশ করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা। কিন্তু ঘাতকরা সেই আশা আকাঙ্খা স্বপ্ন পূরণ করতে দেয়নি। পচাত্তর পরবর্তীতে জিয়া ক্ষমতা দখল করে। জিয়ার গণতন্ত্র ছিল যুদ্ধাপরাধীরে পুর্নবাসন আর প্রতি রাতে কারফিউ জারি করে দেশ শাসন। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে সারাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেয়। তিনি বলেন, জিয়ার বহুদলীয় গণতন্ত্র ছিল যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিষ্ঠা করা। যুদ্ধাপরাধীর দায়ে যাদের ফাঁসি হয়েছে সেই জামায়াত নেতা আলবদরদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তাদের হাতে দেশের পতাকা তুলে দিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে দেশ পরিচালনা করি। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করা হবে। দেশ দরিদ্র্যমুক্ত হবে। এদেশে আর দরিদ্র্য থাকবে না। তিনি বলেন, আমরা স্বাস্থ্যসেবা আজ মানুষের দোর গোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। ১৮০০০ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরি করেছি। আর ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়। আমরা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আবার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছি।
জনসভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পীয়ুষ কান্তি ভট্টাচার্যসহ নেতৃবৃন্দ। সঞ্চালন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদার। জনসভায় কয়েকজন মন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন যশোর ছাড়াও খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া জেলার বেশ কয়েকজন এমপি।
যশোরে প্রধানমন্ত্রী ঈদগাহ ময়দান থেকে ২৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এগুলো হলো ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প’র অধীনে ভৈরব নদ খনন, যশোর-বেনাপোল ও যশোর-খুলনা জাতীয় মহাসড়কের যশোর অংশ (পালবাড়ী হতে রাজঘাট অংশ) প্রশস্তকরণ প্রকল্প, কেশবপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ, যশোর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ, শহরের ২৫ কিলোমিটার সড়ক ও ২৪ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ কাজ, ঝুমঝুমপুর কম্পোস্ট প্ল্যান্ট, প্রি-ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট এবং কন্ট্রোল ল্যান্ডফিল সেল নির্মাণ, ঝিকরগছা উপজেলা পরিষদের স¤প্রসারিত প্রশাসনিক ভবন ও হলরুম নির্মাণ, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের ম্যুরাল স্থাপন এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ রাসেল জিমনেসিয়াম ভবন ও ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রর (টিএসসি)কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প (প্রথম পর্যায়), তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ‘নির্বাচিত বেসরকারি কলেজগুলোর উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলার আমদাবাদ কলেজ, শার্শা উপজেলার পাকশিয়া আইডিয়াল কলেজ ও বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজে নির্মিত দোতলা ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলার স¤প্রসারণ কাজ, মনিরামপুর উপজেলায় ৫০০ আসনের শহীদ মশিয়ুর রহমান অডিটোরিয়াম-কাম মাল্টি পারপাস হল নির্মাণ, যশোর পাবলিক লাইব্রেরির উন্নয়ন প্রকল্প; যশোর মেডিকেল কলেজের এ্যাকাডেমিক ভবন, হৈবতপুর, নরেন্দ্রপুর, মহাকাল ও পাতিবিলা ইউনিয়ন ভূমি অফিস ভবন, যশোরের পুলিশ সুপার ভবন ও পুলিশ হাসপাতাল, শেখ রাসেল ভাস্কর্য, শহরের ১৩ কিলোমিটার সড়ক ও ২২ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ কাজ, ঝিকরগাছা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন এবং অভয়নগরের মালোপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজ। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে মালোপাড়ায় মালো সম্প্রদায়ের উপর হামলা হলে সেখানে তাদের দেখতে আসেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে সেখানে মালোপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে।



 

Show all comments
  • খোরশেদ আলম ১ জানুয়ারি, ২০১৮, ২:৫০ এএম says : 0
    ভোট দেয়া সুযোগ পাবো তো !
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ