Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ট্রাম্পের উত্থানে শুরু ঝাঁকিতেই শেষ

| প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : বিগত বছরে আন্তর্জাতিক বিশ্বে অনেক ঘটনা ঘটেছে, যেগুলো ২০১৮ সালেও প্রভাব বিস্তার করবে। তবে বলতে গেলে বছরটি নিতান্তই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তার উত্থানে ২০১৭ সালের শুরু এবং তার ঝাঁকিতেই বছরের শেষ হলো। ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ গ্রহণ করেন, যা তার প্রাতিষ্ঠানিক উত্থান। রাজনীতিক বা সামরিক বাহিনীর সদস্য না হয়েও তিনি-ই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন। ইন্ডিয়ানা রাজ্যের প্রাক্তন গভর্নর ট্রাম্পের রানিংমেট মাইক পেন্স দেশটির ৪৮তম ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। যুক্তরাষ্ট্রের এই দুই ব্যক্তির শাসন নিয়ে বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৭ সালে তারা বিতর্কিত অনেক ইস্যু তৈরি করেছেন, যা ২০১৮ সালেও প্রভাব বিস্তার করবে। ২১ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেওয়ার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে নারীরা পদযাত্রা ও বিক্ষোভ করে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেরই বিভিন্ন শহরে ৪২০টি এবং বিশ্বজুড়ে ১৬৮টি পদযাত্রা হয়। এটি একদিনে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পদযাত্রা এবং সা¤প্রতিক বিশ্ব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। ১১ ফেব্রæয়ারি জাপান সাগরে আন্তঃমহাদেশীয় বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কারণে বিশ্বজুড়ে নিন্দার মুখে পড়ে উত্তর কোরিয়া। ১০ মার্চ বিশ্বনেতাদের জাতিসংঘ সতর্ক করে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখে পড়েছে পৃথিবী। ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান, সোমালিয়া ও নাইজেরিয়া প্রায় ২ কোটি মানুষ ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে। ২৯ মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) গঠনের লিসবন চুক্তির ৫০ অনুচ্ছেদ রোধ করে ব্রেক্সিট সমঝোতা প্রক্রিয়া শুরু করে যুক্তরাজ্য। ৭ এপ্রিল বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে রাসায়নিক হামলা চালানোর অভিযোগে সিরিয়ার একটি বিমানঘাঁটিতে ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ৫৯ টমাহক ক্রুজ মিসাইল হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। একে সিরিয়ায় ‘আগ্রাসন’ উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অভাবনীয় অবনতির আশঙ্কা প্রকাশ করে রাশিয়া। ১৩ এপ্রিল আফগানিস্তানের নানগারহারে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আস্তানা লক্ষ্য করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অপারমাণবিক বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্র। বোমাটির নাম- জিবিইউ-৪৩/বি মোওএবি। ১২ মে বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশের লাখ লাখ কম্পিউটার র‌্যানসামওয়্যার সাইবার হামলার শিকার হয়, যার প্রভাব ২০১৮ সালেও থাকবে। ২২ মে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার শহরে আরিয়ানা গ্রান্ডের কনসার্টে এক সন্ত্রাসী হামলায় ২২ জন নিহত ও পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। ১ জুন ব্যাপক সমালোচনার মুখেই প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যথাসময়ে নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ৭ জুন ইরানের পার্লামেন্ট ও আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনির মাজারে পাঁচ সন্ত্রাসী হামলা চালায়। আইএস দাবি করে, এটি তারা করেছে এবং এটিই ইরানে আইএসের প্রথম হামলা। এতে ১৭ জন নিহত ও ৪৩ জন আহত হয়। ১০ জুন কাজাখস্তানের আস্তানায় ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০১৭-এর উদ্বোধন হয়। ২১ জুন ইরাকের মসুলে পবিত্র আল-নুরি মসজিদ ধ্বংস করে আইএস। ২৫ জুন ইয়েমেনে ২০ লাখ লোক কলেরায় আক্রান্ত বলে জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও)। ৪ জুলাই সফলতার সঙ্গে প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর চীন ও রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম বন্ধে উত্তর কোরিয়ার প্রতি আহŸান জানায়। ৭ জুলাই জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য দেশের মধ্যে ১২২টি দেশ পরমাণু নিষিদ্ধকরণ চুক্তির পক্ষে ভোট দেয়। ১০ জুলাই মসুলকে পুরোপুরি আইএস মুক্ত ঘোষণা করে ইরাকি বাহিনী। ৫ আগস্ট ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জবাবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সর্বসম্মতিতে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ‘জাতিগত নিধন’ অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। ২৫-৩০ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ওপর দিয়ে ৪ ক্যাটাগরির হারিকেন হার্ভে প্রবাহিত হওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় ও কমপক্ষে ৯০ জন মারা যায়। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হিসাবমতে, হারিকেন হার্ভের আঘাতে ১৯৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। ১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার জবাবে রাশিয়া থেকে ৭৫৫ মার্কিন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। ৩ সেপ্টেম্বর উত্তর কোরিয়া তাদের ষষ্ঠ ও সবচেয়ে শক্তিশালী পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। ৬-১০ সেপ্টেম্বর ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ ও যুক্তরাষ্ট্রের অংশবিশেষ হারিকেন ইরমার আঘাতে লÐভÐ হয়। এতে ১৩৪ মারা যায় এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয় ৬৩ বিলিয়ন ডলার। ১৯ সেপ্টেম্বর মেক্সিকোর মধ্যাঞ্চলে রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে ৩৫০ জন মারা যায় ও ৬ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়। সেপ্টেম্বর ১৯-২০ হারিকেন ইরমার দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই হারিকেন মারিয়া একই এলাকায় আঘাত হানে এবং ডোমিনিকায় ৫ ক্যাটাগরি ও পুয়ের্তো রিকোয় ৪ ক্যাটাগরিতে আঘাত করে। মারিয়ার আঘাতে ৯৩ জন মারা যায় এবং এতে ১০৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষয়ক্ষতি হয়। ২৫ সেপ্টেম্বর ইরাকের কুর্দিস্তানে স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট হয়। এ নিয়ে ইরাকি সরকার ও কুর্দিদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ১ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের জাঁকজমকের নগরী লাস ভেগাসে স্টিফেন প্যাডক নামে এক ব্যক্তির বন্দুক হামলায় ৫৮ জন নিহত ও ওই ঘটনায় ৫৪৬ জন আহত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণগুলির (মাস শুটিং) ঘটনা এটি। ১২ অক্টোবর ইউনেসকো থেকে সদস্যপদ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের অনুসরণ করে ইসরায়েলও একই ঘোষণা দেয়। ১৪ অক্টোবর সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসুতে ভয়াবহ ট্রাকবোমা বিস্ফোরণে ৫১২ জন নিহত ও ৩১৬ জন আহত হয়। ১৭ অক্টোবর রাকাকে পুরোপুরি আইএস মুক্ত ঘোষণা করা হয়। ২৫ অক্টোবর চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ১৯তম কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে মনোনিত হন শি জিনপিং এবং ‘শি জিনপিং থট’ নামে তার রাজনৈতিক দর্শন দলীয় গঠনতন্ত্রে যুক্ত করা হয়। এ সময় বলা হয়, মাও সেতুংয়ের পর চীনের সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট তিনি। ২৭ অক্টোবর কাতালান নেতা পুজদেমন কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন কিন্তু স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে। ৫ নভেম্বর পানামা পেপার্সের মতো প্যারাডাইস পেপার্স নাম দিয়ে গোপন অর্থবিত্তের তথ্যসংক্রান্ত ১৩ দশমিক ৪ মিলিয়ন নথি ফাঁস করে জার্মানির জিদদয়চে সাইটুং পত্রিকা। ব্রিটেনের রানি, পুতিনের জামাতাসহ বিশ্বের অনেক নামি-দামি ও প্রভাবশালী ব্যক্তির গোপন সম্পদের তথ্য উঠে আসে এতে। ১২ নভেম্বর ইরাক-ইরান সীমান্তে ৭ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পে ৫৩০ জন নিহত ও ৭০ হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়া হয়। ১৫ নভেম্বর রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবাট মুগাবেকে গৃহবন্দি করে সেনাবাহিনী। এর ছয় দিন পর পদত্যাগ করেন ৩৭ বছর ক্ষমতায় থাকা দেশটির স্বাধীনতা আন্দোলনের নায়ক মুগাবে। ৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের দীর্ঘদিনের নীতিগত অবস্থানে ঝাঁকি দেন। এর বিরোধিতায় মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। ট্রাম্পবিরোধী প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে মুসলিম বিশ্ব। ২০ ডিসেম্বর জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ট্রাম্প যে স্বীকৃতি দিয়েছেন, তা বাতিলের উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ২১ ডিসেম্বর উত্থাপিত প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলে সেইসব সদস্য দেশকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তিনি। তার এই হুংকারের মধ্য দিয়ে মূলত ২০১৭ সালের ক্যালেন্ডারের বড় ঘটনার ইতি ঘটে। ওয়েবসাইট।



 

Show all comments
  • মো. মহিউদ্দিন ১ জানুয়ারি, ২০১৮, ২:৫০ এএম says : 0
    বিশ্বে অশান্তির একটা বড় কারণ তিনি।
    Total Reply(0) Reply
  • তানবীর ১ জানুয়ারি, ২০১৮, ১:২৫ পিএম says : 0
    ট্রাম্প যদি এভাবে সারা বিশ্বে অশান্তি সৃষ্টি বন্ধ না করে তাহলে তার এবং তার দেশের জন্য শুধূ অকল্যাণই বয়ে আনবে
    Total Reply(0) Reply
  • Faysal Ahammed ১ জানুয়ারি, ২০১৮, ১:৩১ পিএম says : 0
    যুক্তরাষ্ট্র কখনো মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি চায়নি! বরং আরব বিশ্বে আজকের এই খারাপ পরিস্থিতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি দায়ী।
    Total Reply(0) Reply
  • MD.KANON SIKDER ৭ জানুয়ারি, ২০১৮, ৫:৩৯ পিএম says : 0
    AVOID USA REST OF THE WORLD, CHANGE UN HQ FROM USA TO ANOTHER.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রাম্পের


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ