Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আখেরী মোনাজাতে দেশ, মুসলিম উম্মার শান্তি, মসজিদুল আকসা পুনরুদ্ধার ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য খোদায়ী হস্তক্ষেপ কামনা

নরসিংদী জেলা ইজতিমা সমাপ্তি

| প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : আখেরী মোনাজাতে লাখো মানুষের রুনাজারীর মধ্য দিয়ে পরিমাপ্তি ঘটেছে শিবপুরের সৈয়দনগরে অনুষ্ঠিত ৩ দিন ব্যাপী নরসিংদী জেলা ইজতেমা। মোনাজাতে অংশ নেয় লক্ষাধিক মানুষ। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বসহ দেশ, মাটি ও মানুষের শান্তি সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন তাবলীগ জামায়াতের মুরুব্বী মাওলানা ওমর ফারুক। মোনাজাত পরিচালনাকালে মুসিলম মিল্লাতের সংহতি, মুসলমানদের প্রথম ক্বেবলা পবিত্র মসজিদুল আকসা পুনরুদ্ধার, জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য খোদাই হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। এছাড়া রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে অংসান সূচী ও তার মগ সেনাদের অমানবিক অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা এবং তাদেরকে নিজ দেশে ফিরে যাবার সুযোগ সৃষ্টির জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করা হয়। মসজিদুল আকসা পুনরদ্ধার ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর অমানবিক নির্যাতন বন্ধের জন্য দোয়াকালে ইজতেমাস্থলে উপস্থিত হাজার হাজার মুসল্লী উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করতে থাকেন। মুসল্লীরা তখন কান্না বিজড়িত কন্ঠে আমীন আমীন বলে ধ্বনি দিতে থাকে। হাজারো মানুষের কান্নার সুরে ইজতেমাস্থলে এক আবেগপূর্ণ দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। হাজার হাজার মুসল্লীর গন্ড বেয়ে অশ্রæ ঝরতে দেখা যায়। ১২.৫০ মিনিট থেকে ১.১৩ মিনিট পর্যন্ত দীর্ঘ ২৩ মিনিট দোয়া পরিচালনাকালে মুসল্লীরা নিজেদের পাপ মোচন এবং রোগ, শোক জরা-জীর্ণতা থেকে মুক্তির জন্য কেঁদে কেঁদে জারজার হয়ে যায়। চোখের পানিতে অনেকের বুক ভেসে যায়। দোয়া শেষ করার পরও আবেগাপ্লুত অনেক মুসল্লী কান্না থামাতে পারেনি। অনেকে দীর্ঘক্ষণ ঢেকড়ে ঢেকড়ে কাঁদতে থাকেন। মোনাজাত উপলক্ষে নরসিংদী জেলা শহরসহ জেলার উপজেলা শহর ও বিভিন্ন গ্রোথ সেন্টারগুলো ছিল অনেটাই প্রায় জনশূণ্য। হাজার হাজার মানুষ দোয়ায় শামিল হবার জন্য ভোর রাত থেকেই ইজতেমাস্থলে জড়ো হতে থাকে। ভোর নাগাদ ৬৪ সহ¯্রাধিক লোক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ৭ লক্ষ ২৫ হাজার ৭৬০ বর্গফুট প্যান্ডেলটি কানায় কানায় ভরে যায়। সকাল নাগাদ লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় প্যান্ডেলের চতুর্দিক। দালানের ছাদ, ঘরের চালা, গাছ-গাছালির ডাল পালা, বিভিন্ন বাড়ীর আঙিনায়, দোকানপাট, হোটেল রেস্তোরা, ট্রাক, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে বসে হাজার হাজার মানুষ দোয়ায় অংশ নেয়। এছাড়া ইজতেমাস্থলের চতুর্দিকে বাড়ীগুলোতে হাজার হাজার মহিলা ঘরে ও উঠানে বসে দোয়ায় শামিল হয়। এ সময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দীর্ঘ আধ ঘন্টা থমকে থাকে। মোনাজাত শেষে ইজতেমাস্থলের চতুর্দিকে কয়েক কিলোামিটার এলাকা যানবাহন চলাচল প্রায় অচল হয়ে পড়ে। হাজার হাজার মুসল্লী দীর্ঘ পথ পায়ে হেটে গন্তব্যে যাত্রা করে। যেসব যানবাহন ইজতেমাস্থল থেকে যাত্রী নিয়ে যাত্রা সেগুলোও খুব ধীরগতিতে গন্তব্যে যাত্রা করতে হয়। ইজতেমা শেষ হবার কয়েক ঘন্টা পর এলাকায় যানবাহন ও লোক চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এর আগে ভোরে ফজরের নামাজের পর আখেরী বয়ান পেশ করেন কাকরাইল মারকাজের মুরুব্বী মাওলানা জাকির। তিনি বলেন, নামাজ হচ্ছে সর্বোত্তম ইবাদত। সকল ইবাদতের সেরা ইবাদত হিসেবে ৫ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতে আদায় করা হচ্ছে সবচেয়ে জরুরী। নামাজ বাদ দিয়ে অন্য কোন ইবাদত করে কামিয়াবী হাসিল করা সম্ভব নয়। অনেকে রাত জেগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে ফজরের নামাজ পড়তে পারেন না। ৫ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতে আদায় না করে শুধু তাহাজ্জুদ পড়লে কামিয়াবী আদায় হবেনা। তিনি বলেন, আল্লাহ ভয় না করলে পরকালে শান্তি নিশ্চিত হবে না। সারা পৃথিবীর মানুষ যেদিন আল্লাহ ভয় করবে সেদিনই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। পরকাল হবে শান্তি ও সুখ সমৃদ্ধির। এদিকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইসমাইল নূরপুরী জানিয়েছেন, খেলাফত মজলিসের ব্যবস্থাপনায় ইজতেমাস্থলে ৩ দিন ফ্রি মেডিকলে ক্লিনিক থেকে মুসল্লীদেরকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়েছে। ৩ দিনে ২ সহ¯্রাধিক মুসল্লী এই ফ্রি ক্লিনিক থেকে ঔষুধপত্রসহ ফ্রি চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। ফ্রি ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন ডা. কামাল উদ্দীন ও ডা. ফারুক আহাম্মেদ। ঔষুধ বিতরণ করেছেন খেলাফত মজলিসের নেতাকর্মীরা। চিকিৎসা ব্যয়ের একটি বড় অংশ বহন করেছেন মোক্তাদিন ডাইং এন্ড প্রিন্টি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ জাকির হোসেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মোনাজাত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ