Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে মহা প্রকল্পে ধীরগতি

পূরণ হচ্ছে না ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে দেয়া প্রতিশ্রæতি, বাড়ছে উন্নয়ন ব্যয়, বাড়ছে মানুষের ভোগান্তিও

| প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শফিউল আলম ও রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের প্রকল্প নেয়া হয় অর্ধযুগ আগে। এখনও প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয়নি। এরমধ্যে প্রকল্প ব্যয় দশগুন বেড়েছে। অর্থ ছাড়ে জটিলতার কারণে এক বছরেও মূল কাজে হাত দেয়া যায়নি দেশের প্রথম টানেল কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পের। এ দু’টি প্রকল্পের মতো বৃহত্তর চট্টগ্রামে সরকারের বেশ কয়েকটি উন্নয়ন মহাপ্রকল্পের বাস্তবায়নে চলছে ধীরগতি। চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা পানিবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া পাঁচ হাজার ছয়‘শ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রামসহ সারা দেশের চলমান গ্যাস, বিদ্যুৎসহ জ্বালানি সঙ্কট নিরসনে কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে ৫৫ হাজার কোটি টাকায় ‘জ্বালানি হাব’ গড়ে তোলার প্রকল্প বাস্তায়নও চলছে ধীরলয়ে। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে উন্নয়ন ব্যয় বাড়ছে, বাড়ছে মানুষের ভোগান্তিও। আরও একটি জাতীয় নির্বাচন সমাগত। অথচ এক দশক আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে দেয়া প্রতিশ্রæতির বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্পও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এ নিয়ে সরকারি দলের নীতি-নির্ধারকরা বিব্রত। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী এসব মহাপ্রকল্প হাতে নেয় সরকার। বিদেশি অর্থ সহায়তা প্রাপ্তি এবং ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতাসহ নানা কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন ধীরলয়ে চলছে। নির্ধারিত সময়ের পরে হলেও এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
সেনাবাহিনীর তত্ত¡াবধানে পানিবদ্ধতা নিরসন মহাপ্রকল্প
দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা পানিবদ্ধতা। বৃষ্টি আর সামুদ্রিক জোয়ারের পানিতে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় মহানগরীর ব্যাপক এলাকা তলিয়ে যায়। অবাধে দখল ভরাট ও দূষণে ‘চট্টগ্রামের দুঃখে’ পরিণত হয়েছে চাক্তাই খালসহ সবক’টি খাল-ছরা, নালা-নর্দমা। পানি নিষ্কাশনের স্বাভাবিক পথ প্রায় রুদ্ধ। নগরীর অন্তত ২৫ লাখ মানুষ পানিবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগের শিকার। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিগত ৯ আগস্ট একনেকে সরকারি অর্থায়নে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার একটি মহাপ্রকল্প অনুমোদিত হয়। ‘চট্টগ্রাম শহরের পানিবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণকল্পে খাল পুনঃখনন, স¤প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক এ মেগাপ্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য গোড়াতে দায়িত্ব দেয়া হয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ)। তবে সিডিএর কোনো ধরনের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই কিংবা কারিগরি সমীক্ষা ছাড়াই সংস্থাটিকে (সিডিএ) এককভাবে দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার বিষয়টির যৌক্তিকতা নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে চট্টগ্রামের সচেতন নাগরিকমহল, পরিকল্পনাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মাঝে সঙ্গত কারণেই তীব্র সমালোচনা, প্রশ্ন-সংশয়-হতাশা প্রকাশ পায়।
নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞগণ অভিমত ব্যক্ত করেন, স্বঘোষিত ‘কর্মবীর’ সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের পদে পদে যথেচ্ছ ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন জঞ্জালের কারণে চট্টগ্রামবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেখানে পানিবদ্ধতা নিরসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ মেগাপ্রকল্পটি সিডিএকে ছেড়ে দেয়ার ফলে প্রধানমন্ত্রীর একটি ঐকান্তিক সদিচ্ছার অপচয় ঘটতে পারে। তাছাড়া ইতোপূর্বে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন পানিবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে আগামী একশ’ বছর বিবেচনায় রেখে ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ মাস যাবত সমীক্ষা চালিয়ে ৫ হাজার কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ করে ‘বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানিবদ্ধতা ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক একটি মেগাপ্রকল্প সরকারের পরিকল্পনা কমিশনে পেশ করেন। ‘পাওয়ার চায়না’র অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তায় মেগাপ্রকল্পটি বাস্তবায়নেরও প্রস্তাব দেয়া হয়। তাছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ২ হাজার ৭শ’ কোটি টাকার আরও একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠায়।
অবশেষে চট্টগ্রামের বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীর তত্ত¡াবধানে মহানগরীর পানিবদ্ধতা সমস্যা নিরসনের মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সিডিএর একক বা একতরফা দায়িত্বের পরিবর্তে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থা বা বিভাগগুলোর সঙ্গে বাস্তবায়ন কাজে সমন্বয় করা হবে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত চৌকস প্রকৌশলীরা সিডিএ, চসিকসহ সেবা ও উন্নয়ন সংস্থা বা বিভাগের সাথে সমন্বয় সাধন করেছেন। শুরু হয়েছে মেগাপ্রকল্পের প্রাথমিক বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া।
চট্টগ্রাম মহানগরীর পানিবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্পটি ২০২০ সালের জুন নাগাদ বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। চট্টগ্রামে পানিবদ্ধতা সমস্যা নিরসনের দাবি দীর্ঘদিনের। আর এটি এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এর পরিপ্রেক্ষিতে জনমনে আশার সঞ্চার হচ্ছে, চট্টগ্রাম এবার হয়তো পানিবদ্ধতার দূর্গতিমুক্ত হবে।
জাপানের সহায়তায় জ্বালানি হাব
বঙ্গোপসাগরের মোহনায় পাহাড় ও সমতলে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী দ্বীপের মাতারবাড়ীতে গড়ে তোলা হচ্ছে জ্বালানি কেন্দ্র তথা এনার্জি হাব। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা- জাইকার আর্থিক সহায়তায় সেখানে মেগাপ্রকল্প-গুচ্ছ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই মহাপরিকল্পনার আওতায় প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। মেগাপ্রকল্প-সমূহের মধ্যে রয়েছে- এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) ও জ্বালানি তেল টার্মিনাল, কয়লাভিত্তিক সর্বাধুনিক প্রযুক্তির তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র এবং বহুমুখী সুবিধা সম্বলিত সমুদ্র বন্দর। জ্বালানি সুবিধা কাজে লাগিয়ে সেখানে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক, পর্যটন জোনসহ উপশহর স্থাপন করা হবে। এই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জাইকা কারিগরি সমীক্ষা সম্পন্ন করেছে। ‘বাংলাদেশ-জাপান ক¤িপ্রহেনসিভ পার্টনারশিপ’ সমঝোতার আওতায় জ্বালানি হাবের মূল অবকাঠামো বিনির্মাণে সহায়তা করছে জাপান। তাছাড়া যৌথ ও একক বিনিয়োগে অর্থায়ন ও কারিগরি সহযোগিতায় আগ্রহ ব্যক্ত করেছে চীন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারত ও তাইওয়ান। মহাপ্রকল্পে আগামী ১০ বছরে অন্তত আড়াই লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগের ব্যাপারে সরকার আশাবাদী। সেখানে বর্তমানে ভূমি অধিগ্রহণ শেষে মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে।
মাতারবাড়ী এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালী-পেকুয়া হয়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারা-ফৌজদারহাট পর্যন্ত জাতীয় গ্রিড লাইনে সরবরাহ করা হবে। এখন অবকাঠামো স্থাপনের কাজ চলছে। প্রায় ৯৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্যাস পাইপলাইন তৈরি হচ্ছে। দৈনিক ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। ৬ হাজার ৭শ’ মিটার দীর্ঘ মূল পাইপলাইন মহেশখালীর ধলঘাট হয়ে পশ্চিমে এলএনজি টার্মিনালকে যুক্ত করবে। মহেশখালী-পেকুয়া থেকে আনোয়ারা ও পরবর্তীতে ফৌজদারহাট অবধি পাইপলাইন চট্টগ্রাম গ্রিড পয়েন্টে যুক্ত হবে। দেশে গ্যাসের ঘাটতি নিরসনে এলএনজি আমদানির মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। চাহিদার বিপরীতে দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। মাতারবাড়ী এনার্জি হাবে ৩টি এলএনজি টার্মিনাল এবং আমদানিকৃত পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল হ্যান্ডলিং ও পরিবহনের জন্য সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। দৈনিক ১শ’ কোটি ঘনফুট গ্যাস হ্যান্ডলিং ও ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ল্যান্ড বেইসড এলএনজি টার্মিনাল নির্মিত হবে। এনার্জি হাব বাস্তবায়নে ধাপে ধাপে ব্যয় হবে ২ লাখ ৫ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। আগামী বছর ২০১৮ সালের শেষ দিকে এলএনজি সরবরাহ প্রাথমিকভাবে শুরু করার টার্গেট রেখে কাজ চলছে।
এনার্জি হাব নিয়ে জরিপ-গবেষণাকালে মাতারবাড়ীতে বহুমুখী সমুদ্র বন্দরের সম্ভাবনা দেখতে পায় জাইকা। ফলে সেখানে বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কন্টেইনার ও বহুমুখী সুবিধায় ৪টি জেটি-বার্থ স্থাপন করা হবে। ২০২৩ সাল নাগাদ জেটিতে ১৬ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বা ট্যাংকার ভিড়ানো লক্ষ্য রাখা হয়েছে। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাথে সমন্বিত বহুমুখী বন্দর নির্মাণ করা হবে। যার সিংহভাগ জোগান দেবে জাইকা।
মাতারবাড়ী এনার্জি হাবে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। সিংহভাগ জাপান অর্থায়ন করবে। প্রথম ধাপে ৬শ’ মেগাওয়াটের দুই ইউনিট থেকে ১ হাজার ২শ’ মে.ও. বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে পরিবেশবান্ধব হিসেবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করা হবে। তাপীয় দক্ষতা (থার্মাল এফিসিয়েন্সি) থাকবে সাড়ে ৪১ শতাংশ। এলএনজি টার্মিনাল, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ জ্বালানি হাব বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে।
কর্ণফুলী টানেল
চীনের এক্সিম ব্যাংকের অর্থ ছাড়ে ধীরগতির কারণে গতি আসেনি কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেইন টানেল নির্মাণ কাজের। চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরকালে গত বছরের নভেম্বরে প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নে যে কয়টি প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কর্ণফুলী টানেল। সম্প্রতি চায়না এক্সিম ব্যাংক প্রকল্পে অর্থ ছাড় শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ঠিকাদারকে ১৪১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এর ফলে কাজে খুব শিগগির গতি আসবে। ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াও তরান্বিত হবে। প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি আর্থিক সহায়তা দেবে চীন। এদিকে প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হচ্ছে অথচ এখনও শেষ হয়নি ভূমি অধিগ্রহণ। এটি শেষ না হলে কাজে গতি আসবে না বলে মনে করেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টানেলের পশ্চিম প্রান্তে দক্ষিণ পতেঙ্গা মৌজার ব্যক্তি মালিকানাধীন ৩৩.৪৮৫২ একর ভূমি স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখলের প্রক্রিয়া চলছে। বিভিন্ন সংস্থার ৩৬.৪১৫৩ একর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত ও অনাপত্তি এবং চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। তবে উক্ত ভূমিসহ পতেঙ্গা প্রান্তে মোট ৫৪.১৪৫৮ একর ভূমি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিকট আলোচনাক্রমে হস্তান্তর করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের পূর্বপ্রান্তের টানেল ও এপ্রোচ রোড নির্মাণের জন্য ৯০.২৭৩ একর এবং পুনর্বাসনের জন্য ১৯.৭৬ একর ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পের সার্ভিস এরিয়া নির্মাণের জন্য ৮৫.৮৯০১ একর ভূমি দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত পাওয়া গেছে যা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার পাশাপাশি প্রকল্পের মূল কাজও এগিয়ে নেয়া হবে। আর এতে করে নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যাবে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ কাজ।
কক্সবাজারমুখী রেললাইন
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ছয় বছর পার হলেও শুরু হয়নি কক্সবাজারমুখী রেললাইন প্রকল্পের মূলকাজ। তবে জানুয়ারি মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেলের কর্মকর্তারা। প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ মূল কাজ শুরু হবে। তবে ভূমি অধিগ্রহণসহ অনেক কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করা হবে। বিগত ২০০৮ সালের কক্সবাজারমুখী রেললাইন নির্মাণের অঙ্গীকার করে আওয়ামী লীগ। ২০১১ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। তবে বিদেশি আর্থিক সহযোগিতা না পাওয়ায় প্রকল্পের কাজ থমকে যায়। বর্তমানে প্রকল্পে আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছে এডিবি। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু ও কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণে ২০১০ সালে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক। তবে এখন তা বেড়ে ১৮ হাজার কোটিতে উন্নীত হয়েছে। প্রথমে পরিকল্পনায় এ প্রকল্পে একটি মিটার গেজ রেললাইন তৈরির নির্দেশনা ছিল। পরে সেটিকে ডুয়েল গেজে উন্নীত করা হয়েছে। একইসঙ্গে ডাবল লাইনের জন্য জমিও অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সময়ের সঙ্গে ব্যয় বৃদ্ধির প্রবণতা যুক্ত হয়ে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি এখন ১৮ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে। ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ২০১৯ সালের মধ্যে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত অংশ শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মানুষ

২৭ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ