Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জনবল সঙ্কট , সীমানা প্রাচীর নেই, চুরি হচ্ছে দলিল-দস্তাবেজ, সেবা বিঘ্নিত

পীরগঞ্জের ভ‚মি অফিসগুলো অভিভাবকহীন!

| প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পীরগঞ্জ (রংপুর) থেকে মো. আবুল খায়ের : রংপুরের পীরগঞ্জের কয়েকটি ইউনিয়ন ভ‚মি অফিস শুরু থেকেই অভিভাবকহীন হয়ে আছে। অন্য দফতরের জমিতে তিনটি, একই চত্বরে আটটি এবং নিজস্ব জমিতে চারটি ইউনিয়ন ভ‚মি অফিস স্থাপন করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। অপরদিকে উপজেলা ভ‚মি অফিসসহ ইউনিয়ন ভ‚মি অফিসগুলোতে অসংখ্য শূন্য পদের কারণে সেবা বিঘিœত ও সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নৈশ্য প্রহরীর অভাবে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিটি ভ‚মি অফিসই চুরি হচ্ছে। জনবল সঙ্কটের কারণে শতভাগ রাজস্ব আদায় সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে জনবল সঙ্কটকে পুঁজি করে ভ‚মিসেবা প্রদানের নামে এক শ্রেণীর অসৎ কর্মচারী সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানাান, পীরগঞ্জের ১১টি তহশিল অফিস থেকে ১৫টি ইউনিয়ন ভ‚মি অফিসের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, তিনটি অফিস অন্যের জমিতে, চারটি অফিস নিজস্ব এবং যৌথভাবে দু’টি ইউনিয়ন করে একই ক্যাম্পাসে আটটি ভ‚মি অফিস রয়েছে। শুরুর পর থেকেই ভ‚মিহীন হয়ে থাকা ইউনিয়ন ভ‚মি অফিসগুলো হলো বড়দরগাহ্, বড়আলমপুর ও শানেরহাট। ওইসব ভ‚মি অফিস সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের জমিতে অফিস স্থাপন করে সেবা দেয়া হচ্ছে। শুধুমাত্র কুমেদপুর, পীরগঞ্জ, পাঁচগাছি ও মিঠিপুর ইউনিয়নে ইউনিয়ন ভ‚মি অফিস নিজস্ব জমিতে স্থাপিত। অপরদিকে যৌথভাবে চৈত্রকোল ও ভেÐাবাড়ী; মদনখালী ও টুকুরিয়া; রায়পুর ও রামনাথপুর এবং চতরা ও কাবিলপুর ইউনিয়নের ভ‚মি অফিস। এ অফিসগুলোর সীমানা প্রাচীর এবং নৈশ্য প্রহরী না থাকায় অরক্ষিত হয়ে আছে অবকাঠামো এবং দলিল ও যাবতীয় মূল্যবান রেকর্ডপত্র। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত প্রতিটি ভ‚মি অফিসই কমবেশি একাধিকবার চুরি গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। সূত্র মতে, ভ‚মি অফিসগুলোর প্রতিটিতে একজন তহশিলদার (১৫টি পদ শূন্য), একজন সহকারী তহশিলদার (১৫টি পদ শূন্য), দুইজন করে উপ-সহকারী তহশিলদার, এমএলএসএস এবং নৈশ্য প্রহরীর পদ রয়েছে। কিন্তু ১৫টি ইউনিয়নে ৩০টি পদ উপ-সহকারী তহশিলদারের পদের মধ্যে মাত্র ৯ জন কর্মরত রয়েছেন। একজন উপ-সহকারী তহশিলদারকে তিনটি ইউনিয়নের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এর মধ্যে রায়পুর, পীরগঞ্জ সদর ও রামনাথপুর ইউনিয়নের দায়িত্ব পালন করছেন একজন উপ-সহকারী তহশিলদার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভ‚মি অফিসের এক কর্মচারী জানান, অফিসগুলোতে লোকবল ও প্রয়োজনীয় ফরম সঙ্কটের কারণে অনেক সময় খারিজ কেসগুলো সম্পাদনে বিলম্ব হয়। এতে সাধারন মানুষ কাজকর্ম ফেলে এসে দিনের পর দিন উপজেলা ভ‚মি অফিসে এসে ধরণা দিচ্ছে। নৈশ্য প্রহরীর অভাবে সব ক’টি ভ‚মি অফিস থেকে মূল্যবান রেকর্ডপত্র চুরি গেছে। সূত্রটি দাবি করেছে, নৈশ প্রহরী এবং অফিসের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ নির্মিত হলে অফিসগুলোর কিছুটা নিরাপদ হতো। সূত্রটি আরো জানিয়েছে, পীরগঞ্জে মোট তিন হাজার ৭৫৬ দশমিক ৩৬ একর খাসজমি রয়েছে। এর মধ্যে বন্দোবস্তযোগ্য ৫০৬ একর কৃষি খাস জমির মধ্যে ৪৬৫ একর বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত তিন হাজার ১৯৬ দশমিক ৩০ একর জমিতে রাস্তাঘাট, নদীনালা, বিল-জলাশয়, কবরস্থান, শশ্বানঘাট, ঈদগাহ মাঠ, পীরোত্তর-দেবোত্তরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অপরদিকে খাজনা ও ভ‚মি উন্নয়ন কর (দাখিলা) আদায়, খাসজমি তদন্ত, অর্পিত জমি তদন্ত, মিস কেসের মামলার তদন্ত, খারিজের প্রতিবেদন প্রেরণ, সরকারি জমি ও সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ (নদীঘাট) সহ অনেক কাজ ভ‚মি অফিসগুলোতে হয়ে থাকে। পাশাপাশি রাজস্ব আদায়েও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সফলতা কম। গত ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ভ‚মি উন্নয়ন কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাধারণ- ৬৩ লাখ ৩২ হাজার ৩৭৮ টাকা এবং সংস্থার কাছে এক কোটি ৬৯ লাখ ৪৩ হাজার ১৫৬ টাকা। দুই কোটি ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৩৪ টাকার মধ্যে আদায় হয়েছে দুই কোটি ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৭১ টাকা। মোট ৯৩ শতাংশ ভ‚মি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ৪০৯ দশমিক তিন বর্গ কিমি আয়তনের পীরগঞ্জ উপজেলায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ৩৮ হাজার হেক্টর। স্থায়ী পতিত জমির পরিমাণ ছয় হাজার ৮১০ হেক্টর, বনাঞ্চল দুই শ’ হেক্টর, চরাঞ্চল ৫৬০ হেক্টর। এ সব জমির দেখভালের জন্য ভ‚মি অফিস থেকে মানুষ কাক্সিক্ষত সেবা না পাওয়ায় জমি ক্রয়-বিক্রয়েও নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জনবল

২০ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ