Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পিইসি পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রে নম্বর বাড়ানোর চেষ্টা

৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

| প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : পঞ্চম শ্রেণির সমাপনীর (পিইসি) উত্তরপত্রে প্রাপ্ত নম্বরের চেয়ে বেশি নম্বর যোগ করে শিক্ষার্থীকে ভালো ফলাফল পায়িয়ে দেওয়ার জন্য কারসাজি করার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষক মামার বিরুদ্ধে।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ডাউটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক পিইসি শিক্ষার্থীর উত্তরপত্রে প্রাপ্ত নম্বরের চেয়ে বেশি নম্বর যোগ করার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। কোড নম্বর অনুযায়ী নিরীক্ষককে খুঁজে বের করে ওই পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রে ৬১ থেকে ৮২ নম্বর করা হয়। নিরীক্ষার দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষক এতে আপত্তি দিলে বিষয়টি জানাজানি হয়। গোপনীয় এ কোড নম্বর পরীক্ষার্থীর স্বজনদের কাছে কীভাবে গেল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ঘটনা তদন্তে গতকাল বুধবার সাটুরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা শেষে প্রতিটি উত্তরপত্রের একটি করে কোড নম্বর দেওয়া হয়। কোড নম্বর দেন সংশ্লিষ্ট উপজেলার ১৫ সদস্যের পরীক্ষা কমিটি। এর প্রধান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সদস্যসচিব উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। কোড নম্বরটি সংরক্ষিত থাকে এই দুজনের কাছে। সাধারণত একটি উপজেলার খাতা (উত্তরপত্র) অন্য একটি উপজেলার শিক্ষক দিয়ে নিরীক্ষা করা হয়। নিরীক্ষক কোড নম্বর না জানার ফলে তিনি কোনো পরীক্ষার্থীর জন্য বিশেষ সুবিধা দিতে পারেন না। নম্বর দেওয়ার পর তিনি অনুস্বাক্ষর করেন। এরপর প্রধান নিরীক্ষকের দুজনের একটি প্যানেল ওই উত্তরপত্র নিরীক্ষা করেন। তারাও নিরীক্ষা করে অনুস্বাক্ষর করেন। পরে সেই উত্তরপত্র উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার হাত ঘুরে পৌঁছে যায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে।
জানা যায়, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ডাউটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীর মামা আলম হোসেন সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তিনি কৌশলে তার ওই আত্মীয়ের (শিক্ষার্থী) ইংরেজি বিষয়ে উত্তরপত্রের কোড নম্বর জেনে নেন এবং ওই খাতার নিরীক্ষক পাট তিল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক টিপু সুলতানের খোঁজ বের করেন। আলম তার আত্মীয়ের কোড নম্বর দিয়ে টিপু সুলতানকে অনুরোধ করেন ৮০ এর বেশি নম্বর দেয়ার জন্য। অনুরোধ রক্ষা হলে টিপুকে বিশেষ সুযোগ দেয়ার লোভ দেখানোও হয়। কিন্তু টিপু এতে রাজি হননি। তিনি ওই শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র নিরীক্ষা করে ৬১ নম্বর দিয়ে অনুস্বাক্ষর করে প্রধান নিরীক্ষক শিক্ষক সাইদুর রহমান ও কামতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেনের কাছে পাঠান।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কয়েক কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের একটি সিন্ডিকেট। একটির প্রমাণ পাওয়া গেলেও এই সিন্ডিকেট টাকা নিয়ে এমন অনেক ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি।
শিক্ষক টিপু সুলতান জানায়, তিনি সব উত্তরপত্র নিরীক্ষা শেষে গত ২৯ নভেম্বর প্রধান নিরীক্ষক সাইদুর রহমান ও মোশারফ হোসেনের কাছে পৌঁছে দেন। কিন্তু পরের দিন (৩০ নভেম্বর) জরুরিভাবে তাকে ডেকে পাঠান সাইদুর। টিপু উপস্থিত হলে তাঁকে ওই শিক্ষার্থীর উত্তরপত্রে নম্বর বাড়ানোর অনুরোধ করেন সাইদুর। তিনি দেখেন, উত্তরপত্রে তার অনুস্বাক্ষর করা ৬১ নম্বর কেটে ভিন্ন কালিতে ৮০ করা হয়েছে। সাইদুর উত্তরপত্রের কাটাকুটি স্থানে অনুস্বাক্ষর করতে অনুরোধ করেন। তিনি এতে রাজি হননি। বরং উত্তরপত্রে কাটাকুটি করে কেন নম্বর বেশি দেওয়া হয়েছে, এ নিয়ে অভিযোগ করেন। তাকে রাজি করাতে না পেরে সাইদুর বাধ্য হয়ে ৮০ নম্বর কেটে আবার ৬১ লিখে তাতে অনুস্বাক্ষর করতে বলেন। টিপু জানান, এ সময় উপস্থিত বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সামনে তিনি নতুন করে লেখা ৬১ নম্বরের পাশে অনুস্বাক্ষর করেন।
এ ব্যাপারে আরেক প্রধান নিরীক্ষক মোশারফ হোসেন জানায়, টিপু সুলতানকে নম্বর বেশি দেওয়ার জন্য সাইদুর রহমানের অনুরোধের বিষয়টি তিনি জানেন। তাকেও এ বিষয়ে সহযোগিতার অনুরোধ করেন সাইদুর।
যোগাযোগ করা হলে সাইদুর রহমান বলেন, তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আলম হোসেন তার ওই আত্মীয়র উত্তরপত্রে নম্বর বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করেন। আলমকে তিনি নিরীক্ষক টিপু সুলতানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। উত্তরপত্রে নম্বর বাড়ানোর সঙ্গে তিনি তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করলেও কে নাম্বার বাড়িয়েছে, সে ব্যাপারে সদুত্তর দিতে পারেননি। আলম কিভাবে কোড নম্বর পেলেন এবং তা জানার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন কি না, সে ব্যাপারেও সাইদুর সদুত্তর দিতে পারেন নি।
সাটুরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: মাইনুল ইসলাম বুধবার দুপুরে জানায়, সাটুরিয়ায় পিইসি পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রে নম্বর বাড়ানোর চেষ্টার ঘটনা তদন্তে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ