Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভাঙনে নিঃস্ব শতাধিক পরিবার

কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

| প্রকাশের সময় : ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আবুল কালাম আজাদ, বালাগঞ্জ (সিলেট) থেকে : সিলেটের বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে আবারো ভাঙতে দেখা দিয়েছে প্রমত্তা কুশিয়ারা নদীতে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও পানির গতিপথ বন্ধ করার কারণে এ ভাঙনের কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে বলে জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। দুটি উপজেলার ৩০টি পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে কুশিয়ারা নদীর ভাঙন। কুশিয়ারা নদী থেকে বালু উত্তোলনকালে গত রোববার পার্শ্ববর্তী নবীগঞ্জ থানা দু’টি বলগ্রেটসহ সাতজনকে আটক করে।
জানা যায়, গত ২০ দিন ধরে সিলেটের বালাগঞ্জ-ওসমানীনগরের অংশের কুশিয়ারা নদীতে ব্যাপকভাবে ভাঙন দেখা দেয়। এতে শতাধিক পরিবার ভাঙনের মুখে পড়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। মানবেতর জীবন যাবন করছেন তারা। দুটি উপজেলাধীন কুশিয়ারা নদীর ১৫ কিলোমিটার অংশে একাধিক স্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব বালু উত্তোলন করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে স্থানীয়রা জানান।
বালাগঞ্জ উপজেলার পূর্ব-গৌরীপুর ইউনিয়নের খাইস্তঘাট মাঝমহল­ গ্রামের আলমগীর মিয়া, আহমদ আলী, ময়ুরুন্নেছা, তাজিবুন নেছাসহ ১৫টি পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। এতে তারা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। বাড়িঘর হারানোদের অনেকে তাঁবু বা কুঁড়ে বানিয়ে রাস্তার উপর হাড়কাঁপানো শীতে রাত কাটাচ্ছেন।
বালাগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী উপজেলা সদর থেকে পশ্চিম দিকে অবস্থিত রাধাকোনা গ্রাম। এই গ্রামের অধিকাংশ হতদরিদ্র ও দিনমজুর। চলতি বছরের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে কুশিয়ারার উত্তর পাড়ে রাধাকোনা গ্রামের পূর্বদিকে ভাঙন দেখা দেয়। গত এক সপ্তাহে এই ভাঙন ভায়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এতে করে অর্ধশতাধিক পরিবারের বসতভিটা ঘরবাড়িসহ অধিকাংশ জায়গা ভেঙে নদীগর্ভে চলে গেছে। এভাবে প্রতিবছরই নদীর করাল গ্রাসে সর্বস্বান্ত হচ্ছে বালাগঞ্জে কুশিয়ারার পাড়ের মানুষ।
জানা যায়, বিগত বন্যায় কুশিয়ারা নদীর বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় দীর্ঘদিন পানিবন্দী ছিল পূর্ব ও লামা তাজপুর গ্রামবাসী। বর্ষার পানি নামতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই নদীর উত্তর পাড়ে অন্তত তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দেখা দেয় ভয়াবহ ভাঙন। নদীতে বিলীন হয়ে যায় লামা তাজপুর গামের অন্তত ১৫টি পরিবারের বসতভিটা। বর্তমানে ভাঙনের কবলে রয়েছে অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি ও একটি মসজিদ। যে কোনো সময় এগুলো নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। নদীভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধির জন্য নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনকে দায়ী করছেন এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা। বিগত প্রায় ৪০ বছরের ভাঙনের কবলে পড়ে তাজপুরের একেকটি পরিবার পাঁচ-ছয়বার করে ভিটেমাটি ছাড়া হয়েছে। ইতোমধ্যে গ্রামটির অধিকাংশ এলাকা কুশিয়ারা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধির জন্য বিবিয়ানা পাওয়ার প্ল্যান্টের নদীতে স্থাপিত পানির ফিল্টারকে দায়ী করেছেন স্থানীয়রা। বিশ্বব্যাংকের সার্ভে জরিপ প্রতিবেদনে পাওয়ার প্ল্যান্টের তিন কিলোমিটারের মধ্যে শব্দ ও বায়ুদূষণ এবং নদী ভাঙন রোধে প্ল্যান্টের কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না।
গত দেড় বছর যাবত নবীগঞ্জের আউশকান্দি ও ওসমানীনগরের সাদিপুরের স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের ছত্রছায়ায় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। এলাকাবাসী বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ দায়ের করলেও এর কোনো প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
অবৈধ বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে গত রোববার সকালে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারের (ভ‚মি) নেতৃত্বে নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের পাহাড়পুর এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকালে দু’টি বলগ্রেটসহ (ড্রেজার মেশিন) সাতজনকে আটক করা হয়েছে। ভয়াবহ নদী ভাঙনে ইতোমধ্যে বালাগঞ্জের বেতারী নদীর মুখ থেকে শেরপুর বাজার পর্যন্ত পূর্ব-গৌরীপুর, বালাগঞ্জ সদর, পূর্ব- পৈলনপুর, পশ্চিম পৈলনপুর ও সাদীপুর ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবারের কয়েক হাজার মানুষ ঘরবাড়ি, আবাদি জমি, দোকানপাঠ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে হারিয়ে নিঃস্বপ্রায়। প্রসিদ্ধ বালাগঞ্জ বাজারের প্রায় ৩০টি দোকান ইতোমধ্যে নদীভাঙনে তলিয়ে গেছে।
বালাগঞ্জ উপজেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক এম মুজিবুর রহমান ভাঙনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অসহায় এ পরিবারগুলোর করুণ অবস্থা দেখে বর্ণনা করার ভাষা পাচ্ছি না। তাদের কষ্ট দেখে আমার পরিবারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত খাইস্তঘাট মাঝমহল­ গ্রামের সাতটি পরিবারের বসবাসের জন্য ১০ শতক ভ‚মি দানের ঘোষণা দিয়েছি। ওসমানীনগর উপজেলা চেয়ারম্যান ময়নুল হক চৌধুরী বলেন, নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনকে দায়ী করে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম নদীভাঙনের জন্য অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনকে দায়ী করে বলেন, নদীভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভাঙনে


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ