পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোঃ হাবিবুর রহমান হাবীব, শরীয়তপুর : বুধবার থেকে পানি কমতে থাকায় আবারও শুরু হয়েছে রাক্ষুসী পদ্মার তীব্র ভাঙন। নতুন করে শুরু হওয়ায় ভাঙনে গত রাতে কুন্ডেরচর আলহাজ ইসমাইল মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বি-তল ভবনসহ তিনটি একাডেমিক ভবন নদীবক্ষে হারিয়ে গেছে।
এলাকার একমাত্র উচ্চ বিদ্যালয়টি বিলীন হওয়ায় বিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। গত এক মাসের ভাঙনেই জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর ইউনিয়নে দেড় হাজার পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। বাড়ি-ঘর, মসজিদের পর এবার সর্বনাশা পদ্মা কেড়ে নিলো দুর্গম এই চরাঞ্চলের একমাত্র উচ্চ বিদ্যালয়ের পাকা ভবন তিনটি।
ফলে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জেএসসি, এসএসসি ও বার্ষিক পরীক্ষা সামনে রেখে মহাবিপাকে পড়েছে শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বলেছে বিকল্প ব্যবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া প্রয়োজনীয় সবই করা হবে।
বুধবার সকাল থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত শত শত ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকার অন্যান্য শিশুদের কলকাকলীতে মুখরিত ছিল কু-েরচর আলহাজ ইসমাইল মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণটি। বৃহস্পতিবার দিনের আলো ফোটার আগেই রাক্ষুসী পদ্মা গ্রাস করে নিয়েছে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর এ বিদ্যালয়। গভীর রাতে রাক্ষুসী পদ্মার ভয়াল থাবায় বিদ্যালয়ের নবনির্মিত পাকা ভবনটি ভেঙে দুমড়ে-মুচড়ে তলিয়ে যায় ¯্রােতস্বীনি ভয়াল পদ্মার ঘোলা জলের অতলে। বৃহস্পতিবার সূর্যোদয়ের সাথে সাথে শত শত শিক্ষার্থীর করুণ কান্নায় ভারি হয়ে উঠে কুন্ডেরচর পদ্মা পাড়ের বাতাস।
সরেজমিন পরিদর্শন করে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জুলাই মাসের ২৫ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর ইউনিয়নে পদ্মা নদীর ভয়াবহ ভাঙন। ইতিমধ্যে কুন্ডেরচর ইউনিয়নের ৬,৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের হাজী মকবুল খালাসীর কান্দি, হাজী মোহাম্মদ খালাসীর কান্দি, চোকদার কান্দি, মোমিন খালাসীর কান্দি, আহমদ মোল্যার কান্দিসহ ৬টি সম্পূর্ণভাবে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়াও, ইয়াকুব মাদবর কান্দি, ইউছুব বেপারীর কান্দি ও রিয়াজ উদ্দিন মাদবরের কান্দি গ্রামের আংশিক বিলীন হয়েছে। এর পার্শ্ববর্তী নড়িয়া উপজেলার মোক্তারেরচর ইউনিয়নের গফুর বেপারীর কান্দি গ্রামের একটি বিশাল অংশও ভাঙনের কবলে পড়ে বেশকিছু বসতবাড়ি ও স্থাপনা নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে।
নদী পাড়ের মানুষ জানিয়েছে, গত ৫০ বছরের মধ্যে এবারই পদ্মা তার ভয়াল রূপ ধারণ করেছে। প্রতিদিন রাক্ষুসী পদ্মাগর্ভে বিলীন হচ্ছে শত শত ঘর-বাড়ি, গাছ-পালাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। জুলাই মাসের ২৫ তারিখের পর থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৪২৩ পরিবার তাদের স্থাবর-অস্থাবর সবকিছু হারিয়েছেন। বিলীন হয়েছে ৯টি গ্রামের ৫টি পাকা জামে মসজিদ, দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি বড় বাজার, কয়েক কিলোমিটার পাকা সড়ক, বিদ্যুতের লাইন, শত শত একর ফসলি জমি। তারা জানিয়েছেন গত দুই মাসে থেমে থেমে এই ভাঙনযজ্ঞ চলে আসছে। গত সাত দিন বিরতি দেয়ার পর বুধবার গভীর রাতে বিলীন হয়েছে কুন্ডেরচর ইসমাইল মেমোরিয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবনটি। যে ভবনটি মাত্র ৬ মাস আগে ৬১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শিক্ষা প্রকৌশল নির্মাণ করে। নতুন করে ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে রিয়াজ উদ্দিন মাদবরকান্দি গ্রাম ও কয়েকটি পাকা স্থাপনা।
কুন্ডেরচর আলহাজ ইসমাইল মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার, বলে, আমরা মঙ্গলবারও ক্লাস করেছি নতুন ভবনে। সারা দিন কাটিয়েছি স্কুল চত্বরে। আমাদের স্কুলটি এভাবে ভেঙে যাওয়ায় আমরা সমস্যায় পড়েছি। আজ থেকে আমাদের মডেল টেস্ট পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। সামনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস। স্কুলের ভবন নাই এখন আমরা কোথায় ক্লাস করব। আমরা জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।
নদী ভাঙায় ক্ষতিগ্রস্ত ফিরোজা বেগম ও মতিউর রহমান খলিফা বলেন, সর্বনাশা পদ্মা নদী আমাদের বসতবাড়ি, জমিজমা সবইতো নিয়ে গেছে। এর আগে দুটি প্রাইমারি স্কুল বিলীন হয়েছে। এখন এলাকার একমাত্র হাই স্কুলটিও চলে গেল। দুই বেলা খাই না খাই, বাচ্চাদের পড়ালেখা যে করাব সেই নিশ্চয়তাটুকুও আমাদের কাছে নাই।
কলমিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহানারা বেগম বলেন, গত ২৭ আগস্ট আমাদের স্কুলটি বিলীন হয়ে যাওয়ায় ইসমাইল মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে অবস্থিত আবুল হাশেম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিচ তলায় তিন শতাধিক শিশু শিক্ষার্থীকে নিয়ে পাঠ কার্যক্রম কোনো রকমে চালিয়ে আসছিলাম। এখন সেই স্কুলটিও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। যে কোনো সময় স্কুল ভেঙে যেতে পারে বিদ্যালয় থেকে নদীর দূরত্ব মাত্র ২০ ফিট।
কুন্ডেরচর আলহাজ ইসমাইল মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপক কুমার দত্ত বলেন, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আমাদের স্কুলের নতুন ভবনটি আমাদের ব্যবহারের জন্য বুঝিয়ে দেয়া হয়। ৬১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। মাত্র ৫ মাস এই ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত করতে পেরেছি। বুধবার গভীর রাতে নতুন এই পাকা ভবন পদ্মা নদীতে বিলীন হয়।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম যাতে কোনো রকমের ব্যাহত না হয় সে জন্য পার্শ্ববর্তী স্কুলগুলোতে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি প্রাথমিক ও একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীকে শিফটিং পদ্ধতিতে হলেও শিক্ষা কার্যক্রম ও পরীক্ষা চালিয়ে নিতে ইউএনও এবং শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নতুন করে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালুর জন্য প্রয়োজনীয় সবই করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।