পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় গিয়ে সমবেদনা
মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় গিয়ে কাঁদলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চশমাহিলের বাসার আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। এরপর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী স্মৃতি বিজড়িত ঘরে প্রবেশ করেন তিনি। সেখানে গিয়ে চোখের পানি মোছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে কাছে পেয়ে কেঁদেছেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের শোকাহত সদস্যরাও। এসময় সেখানে এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের সদস্যদের সান্ত¦না দিতে গতকাল (রোববার) তার চশমাহিলের বাসায় যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকালে চট্টগ্রামে পৌঁছে নৌ বাহিনীর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। প্রায় ৪০ মিনিট তিনি সেখানে অবস্থান করেন।
১৫ ডিসেম্বর ভোরে ইন্তেকাল করেন চট্টগ্রামের গণমানুষের নেতা চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। চট্টগ্রাম অঞ্চলে আওয়ামী লীগের এ কান্ডারীর চিরবিদায়ে অভিভাবক হারানোর শোকে আচ্ছন্ন হয় সমগ্র চট্টগ্রাম। তার ইন্তেকালের নয় দিনের মাথায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে এলেন। বন্দরনগরীর ষোলশহর ২নং গেইট এলাকার মেয়র গলির আশপাশে মহিউদ্দিন চৌধুরীর জন্য শোকগাঁথার অসংখ্য ব্যানার, ফেস্টুন শোভা পাচ্ছে। মূল সড়ক থেকে শুরু করে শোকের ব্যানার বিস্তৃত হয়েছে চশমাহিলের বাসা পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী গাড়িটি গিয়ে দাঁড়ায় মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাড়ির আঙ্গিনায়। গাড়ি থেকে নেমেই নিরবে আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে চারিদিকে তাকান প্রধানমন্ত্রী। এসময় তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। মহিউদ্দিন চৌধুরীর দুই ছেলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন প্রধানমন্ত্রীকে কদমবুচি করেন। তিনি তাদের দু’জনকে জড়িয়ে ধরে সান্ত¦না দেন। তাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মৃতি বিজড়িত বৈঠকখানায় প্রবেশ করেন।
সেখানে গিয়েই তিনি মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী ও মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনকে জড়িয়ে ধরে সান্ত¦না দেন। তখন প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের সব সদস্য। বৈঠকখানায় টাঙ্গানো মহিউদ্দিন চৌধুরীর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাবহুল বেশ কয়েকটি ছবি। প্রধানমন্ত্রীর সাথেও মহিউদ্দিন চৌধুরীর বেশ কয়েকটি ছবি ছিল সেখানে। স্মৃতিকাতর প্রধানমন্ত্রী এসব ছবির দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলেন। এসময় তাকে বারবার চোখ মুছতে দেখা যায়। এরপর তিনি পরিবারের সদস্যদের সাথে বসে তাদের পরিবারের খোঁজখবর নেন। প্রধানমন্ত্রী মহিউদ্দিন চৌধুরীর নাতিকে কোলে নিয়ে আদরও করেন।
প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় দেয়ার পর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন হাসিনা মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, আমাদের সান্ত¦না দিতে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা থেকে ছুটে এসেছেন এতে আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, আমি আমার দুই পুত্রকে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীও তাদের দায়িত্ব নিয়েছেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন তিনি আমাদের সাথেই আছেন। হাসিনা মহিউদ্দিন জানান, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মহিউদ্দিন চৌধুরীর দীর্ঘ বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন স্মৃতি তুলে ধরে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক প্রতিটি আন্দোলনে মহিউদ্দিন চৌধুরী অবদান তুলে ধরেন। তিনি আমাদের সান্ত¦না দিয়েছেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ভাই বলে সম্বোধন করতেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর প্রতিবাদী হন মহিউদ্দিন চৌধুরী। একপর্যায়ে তিনি ভারতে চলে যান। সেখান থেকে দেশে ফিরে ফেরারী জীবনযাপন করেন। করেন কারাবরণও। রাজপথের প্রতিটি আন্দোলনে মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন অগ্রগামী। এ ধারবাহিকতায় ১৯৯৪ সালের চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন তিনি। চট্টগ্রামে তিনি এবং ঢাকায় মেয়র নির্বাচিত হন মোহাম্মদ হানিফ। মূলত ওই দুই সিটি নির্বাচনে বিজয়ের ধারাবাহিকতায় ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সরকার।
টানা তিনবারে ১৭ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম মহানগরীর ব্যাপক উন্নয়ন করেছিলেন। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে তার প্রশংসা করেছেন। আওয়ামী লীগের কান্ডারী হিসেবে পরিচিত মহিউদ্দিন চৌধুরী দলের সংকট ও দুঃসময়ে হাল ধরেছেন শক্তভাবে। শেখ হাসিনার অতি আপনজন মহিউদ্দিন চৌধুরীর চিরবিদায়ের খবরে অঝোরে কেঁদেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিনই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ছুটে আসেন চট্টগ্রামে। তিনি তাৎক্ষণিক চট্টগ্রাম না আসলেও মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের সদস্যদের টেলিফোনে সান্ত¦না দিয়েছেন এবং তাদের খোঁজখবর নিয়েছেন। অবশেষে রাষ্ট্রীয় সফরের সুযোগে এবার তিনি নিজেও মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় আসলেন। হাসিনা মহিউদ্দিন জানান, ১৯৮৬ সালে প্রথমবার চশমাহিলের বাসায় এসেছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল তিনি সেদিনের স্মৃতিও তুলে ধরেন।
এদিকে গত ১৮ ডিসেম্বর মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানির মেজবানে নগরীর রীমা কনভেনশন সেন্টারে পদপিষ্ট হয়ে নিহত ১০ জনের পরিবারের সদস্যদেরও সান্ত¦না দেন শেখ হাসিনা। মহিউদ্দিন চৌধুরীর চশমাহিলের বাসায় ওই ১০ জনের পরিবারের সদস্যদের কাছে ৫ লাখ টাকা করে অনুদানও হস্তান্তর করেন তিনি। মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি ওই ১০ পরিবারের শোকাহত সদস্যদেরও সান্ত¦না দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন এবং তাদের পরিবারের খোঁজখবর নেন। মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাড়ি থেকে বিমানবন্দরে যান প্রধানমন্ত্রী। সন্ধ্যায় তিনি ঢাকা ফিরে যান। প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে চশমাহিলের আশপাশের প্রতিটি সড়ক থেকে শুরু করে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে ছিল অসংখ্য মানুষের ভিড়। প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির বহর চশমাহিল এলাকা ত্যাগ করলে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় মানুষের ঢল নামে। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে ঘিরে বিমানবন্দর থেকে ষোলশহর ২নং গেইট পর্যন্ত সড়কে কয়েক ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ লোকজন দুর্ভোগের শিকার হন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।