Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উজ্জীবিত হচ্ছে খুলনা

উন্নয়নের স্বর্ণ ছোঁয়ায় মংলা বন্দর

| প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ভুটান আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে মংলা বন্দর ব্যবহার করবে, ছয় জেলায় অর্থনৈতিক করিডোর গড়ে তোলার উদ্যোগ
আবু হেনা মুক্তি : উন্নয়নের স্বর্ণ ছোঁয়ায় মংলা বন্দর। আর মংলা বন্দরের উন্নয়নের মধ্য দিয়ে পিছিয়ে পড়া খুলনাঞ্চলের শিল্পায়নকে উজ্জীবিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভুটানের বাণিজ্য মিশন সম্প্রসারণে শিগগিরই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হতে যাচ্ছে। আর ভুটান আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে মংলা বন্দর ব্যবহার করবে। এছাড়া শিল্প সম্ভাবনাময় খুলনা ও বাগেরহাট জেলার সমন্বয়ে অর্থনৈতিক করিডোর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বটিয়াঘাটা ও তেরখাদাকে অর্থনৈতিক জোন হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। সব মিলিয়ে বাণিজ্য প্রসারের রোডম্যাপে বৃহত্তর খুলনাঞ্চল।
সূত্রমতে, ভুটান ও বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আর মংলা বন্দর হবে দু’দেশের আমদানি-রফতানির সূতিকাগার। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আওতায় উভয় দেশ দ্বিপাক্ষিক পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমিয়ে আনবে। পাশাপাশি দূরীভূত হবে অন্যান্য সমস্যাও।
এছাড়া দেশটি ট্রানজিটের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরও ব্যবহার হবে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে ১১ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য সচিব শুভাশীস বসু। অন্যদিকে ভুটান প্রতিনিধিদলের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব দাশো ইয়েশি ওয়াংডি। ভুটান বাংলাদেশে পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত কিছু সুবিধা পেলেও নতুন করে তারা আরো ১৬টি পণ্যে এ সুবিধা চেয়েছে। ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৪ কোটি মার্কিন ডলারের মতো। এর বেশিরভাগই ভুটানের পক্ষে। দেশটি থেকে বাংলাদেশের বার্ষিক আমদানি সাড়ে তিন কোটি ডলারেরও বেশি। আর বাংলাদেশ রফতানি করে ৪০ থেকে ৫০ লাখ ডলারের পণ্য। ভুটান থেকে আমদানি পণ্যের তালিকায় বোল্ডার ও চুনাপাথর, ফেরো সিলিকন ও কমলা অন্যতম। অন্যদিকে বাংলাদেশ স্বল্প পরিমাণে কিছু তৈরী পোশাক রফতানি করে থাকে। চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফরকালে ট্রানজিটের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। এ কার্যক্রমকে দ্রæত এগিয়ে নেয়ার বিষয়েও উভয় পক্ষ একমত হয়েছে। এ লক্ষ্যে ভুটান ইতোমধ্যে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটি শিগগিরই বৈঠক করবে।
অপরদিকে, শিল্প সম্ভাবনাময় খুলনা-বাগেরহাটসহ ছয়টি জেলার সমন্বয়ে অর্থনৈতিক করিডোর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এসব জেলা হবে শিল্পপণ্য উৎপাদনের কেন্দ্র। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক জরিপ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, করিডোরটি হলে ওই অঞ্চলের উৎপাদনশীলতা ২০৫০ সালে ১৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে পৌঁছবে, যা বর্তমানের চেয়ে তিন গুণ বেশি হবে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এ সংক্রান্ত প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে সার্বিকভাবে এ অঞ্চলে প্রায় সাড়ে তিন কোটি লোকের কর্মসংস্থান হবে, যা ওই অঞ্চলের বর্তমানের কর্মসংস্থানের চেয়ে তিন গুণের বেশি। এই অর্থনৈতিক করিডোর তৈরি করতে সড়ক, রেল, বিমানবন্দর, নৌপথসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে আগামী ৩০ বছরে ১৪ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে হবে বলে জরিপে উঠে এসেছে।
এদিকে, পদ্মা সেতু এখন সূর্যের মতো বঞ্চিত এই জনপদকে আলোকবর্তিকা ছড়ানোর অপেক্ষায় যেন অপেক্ষমাণ। খুলনায় দুইটি সংযোগ সড়ক (নিরালা এভিনিউ ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এভিনিউ) নির্মাণ প্রকল্পে ১২৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকার প্রকল্পটি সম্প্রতি একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়। আর উন্নয়নের পূর্বশর্ত মংলা বন্দর ফুলে-ফলে সুশোভিত হবে এমন প্রায়শই চলছে। নেপাল ও ভুটান মংলা বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে রেলযোগে পণ্য আমদানি ও রফতানি করতে পারবে। সে লক্ষ্যে শিগগিরই ভারত বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগে খুলনা-মংলা রেললাইন নির্মাণকাজ দ্রæত চলছে। অন্যদিকে দ্রæত গতিতে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ। খুলনার বটিয়াঘাটা ও তেরখাদার দু’টি এলাকাকে অর্থনৈতিক জোন হিসেবে ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। সে লক্ষ্যে কাজও চলছে দ্রæত। এছাড়া শেষ পর্যায়ে খুলনার আধুনিক রেলস্টেশনের নির্মাণকাজ। স¤প্রতি খুলনা সফরকালে শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালকে দ্রæত পূর্ণতা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সাথে সাথে এগিয়ে চলছে ওয়াসার আড়াই হাজার কোটি টাকার কাজ। যার ফলে খুলনাঞ্চলের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে পানি। আর পাইপলাইনে গ্যাস সংযোগ এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সব মিলিয়ে খুলনার ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনরুজীবিত হচ্ছে।
এছাড়া, খুলনার বাগেরহাটে রামপাল উপজেলার ফয়লাহাটে নির্মাণাধীন খানজাহান আলী বিমান বন্দরের উন্নয়ন কাজ শেষ হলে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলার উন্নয়নের পাশাপাশি ঘুরে দাঁড়াবে দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের অর্থনীতির চাকা। মংলা বন্দরসহ সারা বছরই গোটা সুন্দরবনও থাকবে দেশি-বিদেশি পর্যটকে মুখরিত । পর্যটন খাতে প্রতি বছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে জানান এ খাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা।



 

Show all comments
  • SHAUKAUT ৩০ মার্চ, ২০১৮, ৯:৪২ পিএম says : 0
    JOGAJUG BEBOSTHAI BANGLADEHER PORJOTON BEBOSTHAR EKH MATRO ONTORAY VENEZUELAR MOTO AMADERKE JOGAJOG BEBOSTHAR UNNOYON KORTE HOBE ER SHATHE SHATHE DESHER JONOGONKE PORJOTONMUKHI KORTE HOBE TOBEI DESHER ORGON BERE FOKIROTAR MANOHIKOTA DUR HOBE
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উন্নয়নের


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ