Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

লাখো মানুষের স্বপ্নপূরণ

উত্তরবঙ্গেও উন্নয়নের ছোঁয়া

কামাল আতাতুর্ক মিসেল : | প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০১ এএম

উত্তরাঞ্চলের অবহেলিত মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত তিস্তা সেতু অবশেষে নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। সেতুটি ২৯০টি পাইলের মধ্যে ১০১টি পাইল বসানো হয়েছে। এছাড়া গাইবান্ধা অংশে এক কিলোমিটার সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। সেতুটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে লাখো মানুষের স্বপ্নপূরণ যেমনি হবে তেমনি সেতুটি চালু হলে উত্তরাঞ্চলে অর্থনীতি দ্বার খুলে যাবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি)-এর পক্ষ থেকে বলা হয় সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
জানা যায়, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুরঘাট থেকে তিস্তা নদীর ওপর দিয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী পর্যন্ত ১ হাজার ৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। বৃহৎ এ সেতুটি গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের বাসিন্দা ছাড়াও কয়েক জেলার মানুষের স্বপ্ন ও দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ছিল। ২০০১ সালে শুরু হওয়া আন্দোলন-সংগ্রামের পর সেতু নির্মাণ আলোর মুখ দেখতে পায় ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি নদীপারের লাখো মানুষের স্বপ্নের দ্বিতীয় এই তিস্তা সেতুর আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এই সেতু হলে ঢাকা-কুড়িগ্রাম ও ঢাকা-গাইবান্ধার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে। তাছাড়া এতে সড়কপথের দূরত্ব কমে আসবে প্রায় ১০০ কিলোমিটার। এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। বরাদ্দের ২৭৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা মূলসেতু নির্মাণে ব্যয় হবে। আর সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এছাড়া নদী শাসনে ৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ও জমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে ৬ কোটি টাকা। এলজিইডির ব্যবস্থাপনায় নির্মিত সেতুটিতে পিলার স্থাপন হবে মোট ৩০টি। সেতুর উভয় পাশে নদীশাসন হবে ৩ দশমিক ১৫ কিলোমিটার করে। এছাড়া গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর-সুন্দরগঞ্জ-চিলমারী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ হবে ৮৬ কিলোমিটার।
তিস্তাপারের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সেতুর কাজ শেষ হলে এটি হবে উত্তরাঞ্চলের নদীপারের মানুষের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। যোগাযোগের পথ সুগম হবে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুরের মানুষের। একই সঙ্গে এসব জেলার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও করতোয়া নদীপারের হাজারও মানুষের ব্যবসার প্রসার ঘটবে। চিকিৎসা, শিক্ষাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাও বৃদ্ধি পাবে। হরিপুর এলাকার মমতাজ উদ্দিন বলেন, তিস্তা সেতু নির্মাণের দাবি ছিল স্বপ্নের কাঙ্খিত দাবি। প্রায় একযুগ পর সেই দাবি বাস্তবায়ন হওয়ায় আনন্দে ভাসছেন তিস্তাপারের বাসিন্দাসহ গোটা গাইবান্ধাবাসী। অনেকেই আবার সেতু ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছেন। কেউবা আবার অধিগ্রহণে জমির কাঙ্খিত দাম পেয়ে খুশি। একই এলাকার ব্যবসায়ী আবুল বাশার বলেন, গাইবান্ধা একটা অবহেলিত এলাকা। সেতুটা হলে এখানে অনেক উন্নয়ন হবে। সবদিকে সুযোগ সুবিধা বাড়বে। হঠাৎ করে একজন অসুস্থ রোগীকে হসপিটালে নিয়ে যেতে পারি না। কাঁধে করে বাড়ি থেকে ঘাট পর্যন্ত আনতে হয়। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আবুল মুনছুর আহম্মেদ জানান, সেতুটিতে ২৯০টি পাইল ও ৩০টি পিলার স্থাপন হবে। এরমধ্যে ১০১টি পাইল বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর উভয় পাশে নদীশাসন হবে ৩ দশমিক ১৫ কিলোমিটার ও সড়কের নির্মাণ কাজ হবে ৮৬ কিলোমিটার। সেতুটির নির্মাণ কাজের সঙ্গে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে অ্যাপ্রোস রোডের কাজও।
গাইবান্ধা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান কবির বলেন, প্রকল্পের আওতায় গাইবান্ধা এলজিইডি’র আওতায় ৬৫০ কোটি টাকার কাজ হবে। এরমধ্যে আছে ১০টি ব্রিজ, ৫৯টি কালভার্ট আর ৮৬ কিলোমিটার সড়ক। এছাড়াও জমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছ ১০০ কোটি টাকা। আমরা আশা করছি নিদিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজটি শেষ হবে।
চায়না স্টেট কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (সিএসসিইসি) পরিকল্পনা প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ যাবৎ আমাদের ১০১টি পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। গাইবান্ধা হরিপুর সাইটে এক কিলোমিটার এপ্রোচ সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছ। সব মিলিয়ে ২০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি ২০২৩ সালের মধ্যে জুনের আগেই সব কাজ শেষ হবে।
২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি নদীপারের লাখো মানুষের স্বপ্নের দ্বিতীয় এই তিস্ত সেতুর আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৮ সালে উপজেলার হরিপুর-চিলমারী তিস্তা সেতু নির্মাণসহ সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দাতা দেশ সউদী আরব প্রকল্পটি অনুমোদন দিতে দেরি করায় কাজ পিছিয়ে যায়। স্থানীয় এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরবর্তীতে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের ৬ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর-চিলমারী উপজেলা সদরের সঙ্গে সংযোগকারী সড়কে তিস্তা নদীর ওপর ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প অনুমোদন দেয়। শিডিউল মোতাবেক কাজ এগিয়ে গেলে ২০২৩ সালের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উন্নয়নের ছোঁয়া

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ