পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
জেরুজালেম ইস্যুতে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের জরুরি বৈঠকে অনুষ্ঠিত ভোটের ফলাফলে দারুন উচ্ছ¡সিত মুসলিম বিশ্ব। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের ঘোষণাকে বাতিল ও প্রত্যাখ্যান করে রেজ্যুলেশন পাস হওয়ায় ফিলিস্তিনের পক্ষাবলম্বনকারী দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানসহ মুসলিম বিশ্বের নেতারা। রাশিয়া বলেছে, এটা আমেরিকার জন্য বড় পরাজয়। তবে ক্ষোভে উন্মত্ত মার্কিন প্রশাসন এখন কী পদক্ষেপ নেয় তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। বৃহস্পতিবার রাতে ট্রাম্পের প্রস্তাব বাতিল চেয়ে উত্থাপিত প্রস্তাবের পক্ষে ১২৮টি দেশ ভোট দেয়। বিপক্ষে ভোট দেয় মাত্র ৯টি দেশ। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল ছাড়া বাকি দেশগুলো কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের উপনিবেশ। ভোটদান থেকে বিরত ছিল ৩৫ দেশ। এ প্রস্তাবের আইনি মূল্য কম হলেও প্রতীকী মূল্য ব্যাপক বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ওআইসির চেয়ারম্যান এবং তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে টুইটারে বলেছেন, আমরা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বিপুল সমর্থনকে ভীষণ আনন্দের সঙ্গে স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা আশা করি, ট্রাম্প প্রশাসন ওই দুর্ভাগ্যজনক সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করবে। এটা স্পষ্ট যে, এর কোনো বৈধতা নেই। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, আমেরিকার মধ্যস্থতা তার দেশ আর মানবে না। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে জেরুজালেম নিয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বেশিরভাগ দেশ। সাহায্য বন্ধে মার্কিন হুমকির তোয়াক্কা না করে এসব দেশ ভোট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র এখন কী ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সেটা নিয়ে চলছে আলোচনা। ট্রাম্পপন্থী বহু রাজনীতিবিদ ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, সহযোগিতা গ্রহণকারী দেশগুলো শাসানো উচিত। তাদের বলা উচিত, এমনটা যেন আর না হয়। কেউ কেউ বলছেন, মার্কিন কর্মকর্তারা যেন বিপক্ষে ভোট দেয়া দেশের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ বন্ধ করে দেন। তবে কঠিন পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে সংশয়ও রয়েছে তাদের মনে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জাতিসংঘে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি দুজনই আর্থিক সহায়তা বন্ধের হুমকি দিয়েছিলেন। সহযোগিতা বন্ধের হুমকি দিয়ে ভোটের আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, তাদের আমরা কোটি কোটি ডলার সহায়তা করি। আর তারা আমাদেরই বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে চায়। ভোট দিক তারা, আমাদের অনেক টাকা বাঁচবে। ভোটের আগ মুহূর্তে দেয়া ভাষণে নিকি হ্যালি বলেন, জাতিসংঘ ও এর বিভিন্ন সংস্থায় সবচেয়ে বেশি অর্থ দেয় আমেরিকা। ফলে এ সংস্থায় তাদের চাহিদা বা প্রত্যাশাও বেশি থাকবে। অথচ তার বদলে এখানে যুক্তরাষ্ট্রকে অপমানজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। নিকি হ্যালি বলেন, আমাদের বিনিয়োগের জন্য আরো বেশি চাওয়ার অধিকার রয়েছে। যদি আমাদের বিনিয়োগ ব্যর্থ হয় তাহলে আরও লাভজনক খাতে আমাদের বিনিয়োগ কাজে লাগানোর বাধ্যকতা আছে। যারা এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেবে তাদের বিষয়টি মনে রাখা উচিত। সাধারণ পরিষদের জরুরি বৈঠকে নিকি হ্যালি অঙ্গীকার করেন, যুক্তরাষ্ট্র জেরুজালেমেই দূতাবাস নিয়ে যাবে। এটাই চায় আমেরিকার মানুষ এবং এটা করা সঠিক। মার্কিন দূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে শান্তি প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মতো কিছু নেই। যুক্তরাষ্ট্র আজকের এ দিনটি মনে রাখবে। যেদিন জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণের শিকার হয়েছে। আমরা তখনও এ দিনটি মনে রাখব যখন অনেকে আমাদের কাছে সহযোগিতা চাইতে আসবে, যা তারা প্রায় সময়েই করে থাকে। হ্যালি ঘোষণা দিয়েছিলেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ভোট দেবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয় যুক্তরাষ্ট্র কেমন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। এক মার্কিন সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা এপি জানায়, ভোটের জন্য দেশগুলোকে ছাড় দেয়া হবে না। বরং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এর প্রভাব পড়তে পারে। তবে পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হেদার নরেট বলেছেন, এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। মার্কিন রাজনীতিবিদরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, মিসর ও জর্ডানের মতো মিত্ররাও যেখানে রয়েছে সেখানে কিভাবে এ পদক্ষেপ নেবে যুক্তরাষ্ট্র। রিগান ও বুশ প্রশাসনে শীর্ষ কমকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালন করা এলিয়ট আব্রাম বলেন, ওই দেশগুলোতে আর্থিক সহায়তা যুক্তরাষ্ট্রেরই জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখে। ট্রাম্পের পক্ষে যে কারণে ভোট : জেরুজালেমকে ইসরাইলি দখলদারিত্বের পক্ষে ভোট দেয় ৯টি দেশ। এ ৯ দেশের দুটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল। অর্থাৎ মাত্র সাতটি দেশ এ ইস্যুতে ট্রাম্পের পাশে ছিল। ওই সাতটি দেশের মধ্যে চারটিই আবার ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র। চার দেশের তিনটিই এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের উপনিবেশ ছিল। এখনও দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে তারা কার্যত মার্কিন শাসনাধীন। দেশ তিনটি হচ্ছে- মাইক্রোনেশিয়া, পালাউ এবং দ্য মার্শাল আইল্যান্ডস। এর মধ্যে ১০ হাজারের কম জনসংখ্যার দেশও আছে। কোনোটির মানুষ আবার চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতেও চাকরি করতে পারেন। ফলে পররাষ্ট্র নীতিতে মার্কিন সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ তাদের নেই বললেই চলে। বাকি দেশগুলোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াতেও যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া হুমকির প্রভাব ছিল। ট্রাম্পের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়া এবং ভোটদান থেকে বিরত থাকা দেশগুলোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ভীতি নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। ফলে এ দেশগুলোর নাম-পরিচয়ের ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সাধারণ পরিষদের ভোটাভুটিতে জেরুজালেম প্রশ্নে মার্কিন পদক্ষেপকে সমর্থন জানায় গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, পালাই, দ্য মার্শাল আইল্যান্ডস, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরু, টোগো, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলকে বাদ দিলে বাকি সাতটি দেশের মধ্যে চারটি দেশই প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র। মার্শাল আইল্যান্ডস প্রশান্ত মহাসাগরের কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ জারি হয়। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, এ দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে ৫৩ হাজার মানুষের বসবাস। ১৯৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্বাধীনতা পায় মার্শাল আইল্যান্ডস। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির করা এক চুক্তিতে ওয়াশিংটনকে মার্শাল আইল্যান্ডসের পররাষ্ট্র নীতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা দেয়া আছে। পালাউ রাষ্ট্রটিও প্রশান্ত মহাসাগরের একগুচ্ছ দ্বীপ নিয়ে গঠিত যা যুক্তরাষ্ট্রের শাসনাধীন ছিল। ১৯৯৪ সালে দেশটি স্বাধীনতা অর্জন করে। তবে এক চুক্তির আওতায় ৫০ বছর ধরে দেশটির প্রতিরক্ষা বিভাগ যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে আছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুকের তথ্য অনুযায়ী, পালাউয়ে ২১ হাজার ৪০০ মানুষের বসবাস। আরেক দ্বীপ রাষ্ট্র মাইক্রোনেশিয়ায় ১ লাখ ৪ হাজার মানুষ বাস করেন। ১৯৮৬ সাল নাউরু যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে না থাকলেও ২১ বর্গ কিলোমিটারের এ দেশটিতে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ১০ হাজারেরও কম। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও মেক্সিকোসহ যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র দেশগুলো ভোটদান থেকে বিরত ছিল। আর্জেন্টিনা ও মেক্সিকো এর আগে ফিলিস্তিনের সমর্থনে থাকলেও বৃহস্পতিবার ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এমনকি গুয়াতেমালা ও হন্ডুরাসের অবস্থানও একই রকম ছিল। কেনিয়ার মতো উগান্ডা ও দক্ষিণ সুদানের মতো আফ্রিকান দেশগুলোও ভোটদান থেকে বিরত ছিল। ওয়েবসাইট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।