পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর ফ্লাইওভারে উঠতে গেলেই চালক বা যাত্রীরা আশঙ্কায় থাকেন নামার সময় না জানি কতোটা ভয়াবহ যানজটে পড়তে হয়। শুধু তাই নয়, ফ্লাইওভারে উঠতে গিয়েও যানজটে আটকে থাকতে হয়। যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে এ চিত্র প্রতিদিনের। অথচ ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছিল যনজটের ভোগান্তি থেকে রেহাইয়ের জন্য। যানজট কমাতে ২০০১ সালে ফ্লাইওভারের যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। এরপর একে একে আরও ছয়টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে ঢাকায়। কিন্তু যানজটের ভোগান্তি কমেনি, বরং বেড়েছে। বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে, আর গত এক দশকে রাজধানীতে যানবাহনের গড় গতিবেগ ২১ কিলোমিটার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৬ কিলোমিটারে। অর্থাৎ অপরিকল্পিত ফ্লাইওভার নির্মাণ বাস্তবে কোনো কাজে আসেনি। তবে ঢাকা শহরে ফ্লাইওভারগুলোর মধ্যে ব্যতিক্রম শুধু কুড়িল ফ্লাইওভার তথা ইন্টারচেঞ্জ। এটি মাটির কোনো স্পর্শ ছাড়াই আট প্রান্তে গাড়ি পারাপারের ব্যবস্থা করে কুড়িল-বিশ্বরোড এলাকায় যানজটের সমাধান করেছে। তিন দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ইন্টারচেঞ্জটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩০৩ কোটি টাকা। যা অন্যান্য ফ্লাইওভারের তুলনায় অনেক কম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ও আশেপাশের এলাকার যানজট কমাতে ২০০৫ সালে প্রণয়ন করা হয় কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি)। এতে তিনটি মেট্রোরেল ও তিনটি বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু এগুলোর সঙ্গে দুটি ফ্লাইওভারের রুটের সাংঘর্ষিক অবস্থা ছিল। এজন্য মেট্রোরেলের রুট পরিবর্তন করতে হয়েছে। পরে ২০১৬ সালে এসটিপি সংশোধন করে পাঁচটি মেট্রোরেল ও দুটি বিআরটি নির্মাণের সুপারিশ করা হয়। তবে এর সঙ্গেও একাধিক ফ্লাইওভারের সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হয়েছে।
১৯৯৯ সালে ঢাকার একটি রেলক্রসিং ও একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে যানজট কমাতে দুটি ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মহাখালী ও যাত্রাবাড়ীতে ফ্লাইওভার দুটি নির্মাণের সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়েছিল বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায়। এ দুটো ফ্লাইওভার নির্মাণে অর্থায়নের কথাও ছিল দাতা সংস্থাটির। তবে পরে শুধু মহাখালী ফ্লাইওভার নির্মাণে অর্থায়ন করে বিশ্বব্যাংক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যে ধারণার ভিত্তিতে মহাখালী ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছিল, তা শুরুতেই ব্যর্থ হয়। কারণ বহু সংখ্যক গাড়ি ফ্লাইওভারটির নিচ দিয়েই চলাচল করে। আবার ফ্লাইওভারে ওঠানামার র্যাম্পেও মাঝে মাঝে যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া গণপরিবহনগুলো এ ফ্লাইওভার এড়িয়েই চলে। নির্মাণ শেষে ২০০৭ সালে বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় এ ব্যর্থতার চিত্র উঠে আসে, যা এখনও বহাল আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য বিমোচনসহ বিভিন্ন খাতে বিশ্বব্যাংক ঋণ দিয়ে আসছে। এতে সামাজিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ উন্নতিও করেছে। তবে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে কিছু ভুল প্রকল্পও বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে অন্যতম হলো ঢাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণ শুরু করা।
১৯৯৯ সালে মহাখালী ও যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার নির্মাণে সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর মহাখালী ও ঢাকা সিটি করপোরেশন যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভারের সমীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বে ছিল। সমীক্ষা শেষে ২০০১ সালের ১৯ ডিসেম্বর শুরু হয় মহাখালী ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ। এক দশমিক ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারটি ২০০৪ সালের নভেম্বরে যান চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এটি নির্মাণে ব্যয় হয় ১১৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৮৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। সূত্রমতে, মহাখালী ফ্লাইওভারটি যানজট নিরসনে খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারছে না। এটি মূলত মহাখালী রেলগেইটে ওভারপাস হিসাবে কাজ করে। যানজট এড়াতে মহাখালী ফ্লাইওভারে উঠলে একদিকে বনানী অন্যদিকে তেজগাঁওয়ে ভয়াবহ যানজটে পড়তে হয়। এই ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে বহু সংখ্যক যানবাহন চলাচল করে।
দ্বিতীয় দফায় ঢাকায় এক দশমিক ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ খিলগাঁওয়ে ৮১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভারটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০১ সালের জুনে। এটি নির্মাণ করে এলজিইডি। যান চলাচলের জন্য এই ফ্লাইওভার খুলে দেওয়া হয় ২০০৫ সালের মার্চে। এই ফ্লাইওভারও যানজট নিরসনে খুব একটা কাজে আসছে না।
২০০৩ সালে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে দরপত্র মূল্যায়নে অনিয়মের অভিযোগে সরকার পরিবর্তনের পর তা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার পুনরায় নির্মাণ শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১০ সালের ২২ জুন এটির নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়। ১১ দশমিক সাত কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে দুই হাজার ৩৭৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে পিপিপিতে নির্মিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের নামে নামকরণ করে এ ফ্লাইওভারটি ২০১৩ সালের অক্টোবরে উদ্বোধন করা হয়। বেসরকারি কোম্পানী অরিয়ন গ্রæপ এ ফ্লাইওভারের অংশীদার। তারা এটি পরিচালনা করতে গিয়ে ইতোমধ্যে নানা অভিযোগে অভিযুক্ত। গণপরিবহনগুলোকে ফ্লাইওভার ব্যবহার করতে বাধ্য করানোর জন্য এর দুপাশের রাস্তার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হয়নি। এমনকি নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকে এই ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা সংস্কার করা হয়নি। গত বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাস্তাগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও আজ সেগুলো সম্পন্ন হয়নি। ফ্লাইওভারে বাস ও টেম্পু দাঁড়ানোর জন্য সাতটি স্ট্যান্ড করে যাত্রীদের ওঠানামার জন্য সাতটি সিঁড়ি লাগানো হয়েছিল। তাতে দুর্ঘটনা অনেকাংশে বেড়ে যায়। এরপর হাইকোর্টের নির্দেশে সিঁড়িগুলো অপসারণ করে সিটি কর্পোরেশন। হানিফ ফ্লাইওভারে উঠতে যানজট নামতেও যানজট। ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়করে ৮ লেন এসে মিলেছে এই ফ্লাইওভারে। উঠতে গিয়ে শনিরআখড়া পর্যন্ত ভয়াবহ যানজট লেগেই থাকে। নামতে গিয়ে গুলিস্তান ও ঢাকা মেডিকেলের প্রান্তে এতোটাই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যে ফ্লাইওভারের টোলঘরও বন্ধ হয়ে যায়। ভুক্তাভোগিরা জানান, সপ্তাহের প্রতিদিনই ফ্লাইওভারের নামার যানজট দীর্ঘ হয়ে ফ্লাইওভারের উপরে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ হয়। একে অনেকে টাকা দিয়ে ভোগান্তি কেনার সাথে তুলনা করে থাকেন।
রাজধানীর বনানী লেভেল ক্রসিং এলাকার যানজট নিরসন ও মিরপুরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে ২০১০ সালের মার্চে বনানী ওভারপাস ও বনানী-মিরপুর ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১১ সালের জানুয়ারিতে। ৩৬০ কোটি ১৬ লাখ টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। দু’দফায় ২০১২ ও ২০১৩ সালে দুটি অংশ উদ্বোধন করা হয়। যানজট নিরসনে এই ফ্লাইওভারের ভূমিকা বেশ কার্যকর।
এদিকে ১১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বিজয় সরণি-তেজগাঁও রোড রেল ওভারপাসের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০৭ সালের আগস্টে। ২০১০ সালের ১৬ এপ্রিল এটি খুলে দেওয়া হয়। এলজিইডির অধীনে ৮০৪ মিটার দীর্ঘ ওভারপাসটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ১০০ কোটি টাকার কিছু কম। ওভারপাস হিসাবে এটিও কার্যকর বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সর্বশেষ নির্মিত মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারটির সমীক্ষা পরিচালনা হয় ২০০৫ সালে কুয়েত ফান্ডের আওতায়। তবে সে সময় এটির নির্মাণকাজ আর শুরু করা হয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে প্রকল্পটি পুনরায় চালু করা হয়। ৮ দশমিক ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ২১৮ কোটি টাকা। এতেও নিয়মিত যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে রামপুরা প্রান্তে নামতে গিয়ে গাড়িগুলোকে কখনও কখনও ঘন্টাব্যাপী আটকে থাকতে হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীর যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হলেও তা সাধারণ মানুষের কাজে আসছে না। এতে করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সুফলও মিলছে না। বিশ্বের কোনো দেশেই ফ্লাইওভার নির্মাণ করে যানজট কমানোর নজির নেই। বরং যানজট কমাতে বিভিন্ন শহরে ফ্লাইওভার ভাঙা হচ্ছে। ভবিষ্যতে ঢাকায়ও যানজট কমাতে উল্টো ফ্লাইওভার ভাঙার উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।