পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সময় আবেদন নাকচ : জিজ্ঞাসাবাদে হাজির না হলে আইনগত ব্যবস্থা
মালেক মল্লিক : বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে বাচ্চুর অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য একজন উপ-পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে কমিশন। বেসিক ব্যাংকের সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনার তদন্তের স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে । অসুস্থতার কথা বলে এক মাসের সময় চেয়ে তার (বাচ্চুর) করা আবেদন নাকচ করেছে। আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় তদন্ত কর্মকর্তারা। দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুৃন তারিখ ধার্য করা হবে বলে দুদক সূত্রে জানা যায়। এর আগে দুই দফায় জিজ্ঞাসাবাদে তদন্ত কর্মকতার প্রশ্নের উপযুক্ত জবাব দিতে পারেনি উল্টো নিজের দোষ ঢাকতে ব্যাংকটির অপর কর্মকতার ওপর সব দোষ চাপানোর চেষ্টা করেন সাবেক এই চেয়ারম্যান। গত ১৭ ডিসেম্বর তৃতীয়বারের মতো জিজ্ঞাসাবাদের কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এক মাসের সময় চেয়ে আবেদন করেন বাচ্চু।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা (উপ-পরিচালক) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য ইনকিলাবকে বলেন, আব্দুল হাই বাচ্চুর অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনুসন্ধান করতে দুদকের উপ-পরিচালক শামসুল আলমকে নিয়োগ দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এক মাস সময় চেয়ে আবেদন করেন গ্রহণ করেননি কমিশন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে শিগগিরই নতুন নোটিস পাঠানো হবে। তিনি আরো বলেন, নির্ধারিত দিনে আব্দুল হাই বাচ্চু দুদকে হাজির না হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আবদুল হাই বাচ্চুকে ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় বর্তমান সরকার। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়নও হয়। কিন্তু ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করার পর চাপের মুখে থাকা বাচ্চু পদত্যাগ করেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতির ঘটনায় ৫৬টি মামলা করে দুদক। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের অভিযোগ ওঠার পর তদন্তে নামে দুদক। জালিয়াতির ঘটনায় মোট মামলা সংখ্যা হল ৫৭টি। আসামীর সংখ্যা অন্তত ১২৩জন। যদিও একটিতে আসামী করা হয়নি বাচ্চুকে। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদ থেতে উচ্চ আদালতে সমালোচনা হয়। গত অগাস্টে এক মামলার শুনানিতে আপিল বিভাগ বাচ্চু ও পরিচালনা পর্ষদের অন্য কাউকে আসামি না করায় উষ্মা প্রকাশ করে। ব্যক্তি যেই হোক না কেন- এ ধরনের মামলায় আসামি করার ক্ষেত্রে পিক অ্যান্ড চুজ যেন না হয় সে বিষয়ে দুদকে সে সময় সতর্ক করে আদালত। পরবর্তীতে দুদক এসব মামলায় ব্যাংকটির পরিচালানা কমিটিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদের পর এবার তার জ্ঞাত আয় বহিভূত সম্পদ ও অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। এজন্য বাচ্চুর সম্পদ নিয়ে অনুসন্ধান চালাতে দুদকের উপ-পরিচালক শামসুল আলমকে নিয়োগ দিয়েছে। এছাড়াও বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফের তলব করবে। তবে কবে নাগাদ এ বিষয়ে কোন তথ্য জানা যায়নি। তৃতীয় দিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ১৭ ডিসেম্বর সেগুন বাগিচায় দুদক কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি উপস্থিত না হয়ে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এক মাস সময় চেয়ে আবেদন করেন। গতকাল দুদক পক্ষ থেকে জানানো হয়, সময়ে চেয়ে আবেদন নাকচ করা হয়েছে। তাকে শিগগিরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিঠি দেয়া হবে। আব্দুল হাই বাচ্চু দুদকে হাজির না হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানা যায়। আবেদেন অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সময় চেয়ে দুদকে লিখিত আবেদন করেন আব্দুল হাই বাচ্চু। চিঠিতে তিনি রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায় ওই হাসপাতালে তিনি মাত্র একদিন ভর্তি ছিলেন। এ বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, অসুস্থ হয়ে আব্দুল হাই বাচ্চু রাজধানীর যে হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, সে হাসপাতালে তিনি মাত্র এক দিন ছিলেন। এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানকে প্রথম জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ওই দিন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিজেকে দোষী মনে করি না। এরপর গত ৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো প্রায় সাত ঘণ্টা আব্দুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা। তবে দ্বিতীয় দিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এড়িয়ে যান জাতীয় পার্টির এই সাবেক সংসদ এমপি। তবে সাংবাদিকদের জেরার মুখে এক পর্যায়ে তিনি বিড়বিড় করে বলেন, কী বিপদেই না পড়লাম।
এদিকে তদন্তের স্বার্থে আবদুল হাই বাচ্চুর বিদেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে দুদক। ঋণ জালিয়াতির ৫৬ মামলায় দুদকের তদন্তের আওতায় রয়েছেন বাচ্চু। তার বিদেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিমানবন্দরের বহির্গমনসহ দেশের সব ক’টি স্থলবন্দরে দুদক চিঠি পাঠাতে পারে বলে জানা যায়। দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদে বাচ্চু ব্যাংকের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তিনি দেশে না থাকলে মামলার তদন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে এমনটি জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
জানা যায়, এছাড়াও পরিচালনা কমিটির সদস্য ও ব্যাংকের কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তাকে বাচ্চুর মুখোমুখী করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। যাদের সম্পর্কে তিনি এরই মধ্যে মুখ খুলেছেন। এজন্য তদন্ত চলাকালে তাকে দুদকের নজরদারির মধ্যে থাকতে হবে। বাচ্চুর কাছে তদন্ত কর্মকর্তারা তার পাসপোর্ট চাইলে তিনি জানান, পরে তিনি তা দুদককে সরবরাহ করবেন। শুধু বাচ্চু নন, পর্ষদের ১০ সদস্যের পাসপোর্ট ও এনআইডি নম্বর চেয়েছে দুদক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।