পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে একটি গণকবরের সন্ধান পেয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তারা বলেছে, ইন ডিন নামের গ্রামের একপাশে ওই গণকবর পাওয়া গেছে। তবে তাতে কি পরিমাণ মানুষকে কবর দেয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি। এ বিষয়ে সেনাবাহিনী তদন্ত করছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। গত সোমবার মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইয় ফেসবুকে এ নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, ইন ডিন গ্রামের একটি কবরস্থানে ওই গণকবর পাওয়া গেছে। তাতে কি পরিমাণ মানুষকে কবর দেয়া হয়েছে তা অনিশ্চিত। উল্লেখ্য, ওই গ্রামটি রাখাইনের রাজধানী সিতওয়ে থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তরে। এতে আরো বলা হয়, প্রাথমিক তদন্ত করেছে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। অপর এক খবরে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চুক্তি করার পরও রাখাইনে সংখ্যালঘু মুসলমান স¤প্রদায়টির বাড়িঘর পুড়িয়েছে মিয়ানমারের সেনারা। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণ করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ তথ্য জানিয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে গত ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে মিয়ানমার। চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে ধাপে ধাপে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৬ লাখ ৫৫ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা মিয়ানমারের। প্রসঙ্গত, গত আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধন অভিযানে নামে। সেনাদের অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে প্রাণে বাঁচতে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুরা বাংলাদেশ পালিয়ে আসতে শুরু করে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের গ্রাম পুড়িয়েছে। স্যাটেলাইট পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে, অক্টোবর ও নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের ৪০টি গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সংবাদ মাধ্যম জানায়, নাম প্রকাশ করতে চান না এমন একজন এ বিষয়ে রিপোর্ট করার পর নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা ওই গণকবরের তদন্ত করে। বলা হয়, মানুষ হত্যা করে সেখানে কবর দেয়া হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, ২৫ শে আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে নৃশংসতা শুরুর পর থেকে দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর চালায় অকথ্য নির্যাতন। তাদেরকে গণহত্যা, গণধর্ষণ ও গণহারে তাদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। অকাতরে হত্যা করা হয় সাধারণ মানুষ। এর জন্য দায়ী মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এ জন্য ওই নৃশংসতা যখন চরম আকারে তখন রাখাইনে কোনো সাংবাদিক, সাহায্যকর্মী বা আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এ জন্য অনেকেই আশঙ্কা করেন, সেনাবাহিনী যে নৃশংসতা চালিয়েছে ওই সময়ে তা ধামাচাপা দেয়ার জন্য এমন বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। মানুষ হত্যা করে তাদেরকে পুঁতে রেখে তা যখন নিঃশেষ হয়ে যায় তখনই হয়তো তাদেরকে সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হতে পারে। ফলে ওই গণকবরে যেসব মানুষকে সমাহিত করা হয়েছে তাদের পরিচয় বা তাদেরকে কে হত্যা করেছে তা নিয়ে বড় প্রশ্নের সৃষ্টি হতে পারে। সেনাপ্রধানের ফেসবুকের পোস্টে বলা হয়েছে, ইন ডিন গ্রামের ওই কবরস্থানের গণকবরে অজ্ঞাত সংখ্যক মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে সত্য অনুসন্ধানের জন্য করা হবে বিস্তৃত তদন্ত। এ বিষয়ে সেনা মুখপাত্র কর্নেল মিয়াত মিন ও’র সঙ্গে যোগাযোগ করেন সাংবাদিকরা। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানান। উল্লেখ্য, ইন ডিন গ্রামটি মংডু এলাকায়। ওই এলাকাটি নৃশংসতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তের অন্যতম। এমন নৃশংসতার কারণে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কর্মকর্তারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে দায়ী করেছেন। কন্তু সব চাপ এসে পড়েছে মিয়ানমারের বেসামরিক শাসক স্টেট কাউন্সেল অং সান সুচির ওপর। আন্তর্জাতিক মহলের কড়া সমালোচনায় প্রতিনিয়ত জ্বলছেন তিনি। বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের রক্ষায় কিছুই করতে পারেননি তিনি। তাই তাকে দেয়া সম্মানসূচক একাধিক ব্রিটিশ পুরস্কার, পদক কেড়ে নেয়া হয়েছে। শান্তিতে পাওয়া নোবেল পুরস্কার কেড়ে নেয়ার দাবি জোরালো হয়েছে। কিন্তু নোবেল কমিটি বলেছে, কাউকে এ পুরস্কার দেয়া হয়ে গেলে তা ফিরিয়ে নেয়ার কোনো রীতি তাদের নেই। হিউম্যান রাইটসের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্যাড অ্যাডামস বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের দিনগুলোর মধ্যে বার্মার সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো পুড়িয়ে দেওয়ায় এটাই দেখা যাচ্ছে যে, এটা গ্রেফ জনসংযোগের জন্য একটা স্টান্টবাজি ছিল। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী অস্বীকার করলেও স্যাটেলাইট ছবিতে রোহিঙ্গা গ্রামগুলো যে ধ্বংস করা অব্যাহত রয়েছে তাই দেখা যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বার্মার সরকার যে অঙ্গীকার করেছে তা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া যায় না। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, ছবিতে দেখা গেছে আগস্টে রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর ৩৫৪টি গ্রাম আংশিক বা পুরোপুরি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দেশটির নেত্রী অং সান সু চি ৫ সেপ্টেম্বর রাখাইনে সেনা অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। অথচ এরপরেই পোড়ানো হয়েছে কমপক্ষে ১১৮টি গ্রাম। রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।