Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ট্রেনের ত্রাহি অবস্থা

মহাসড়কে যানজট : যাত্রীরা ঝুঁকছে রেলপথে

নূরুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মহাসড়কের বেহাল অবস্থা। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ভয়াবহ যানজট। সড়কপথে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটেও যানজট। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট তো আছেই। ঘণ্টার পর ঘন্টা কেটে যাচ্ছে বাসের মধ্যে। চরম ভোগান্তি থেকে রেহাইয়ের আশায় যাত্রীরা ঝুঁকছে ট্রেনের দিকে। গত কয়েকদিন ধরে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে ট্রেনেরও ত্রাহি অবস্থা। রংপুর এক্সপ্রেস ঢাকায় পৌঁছার কথা সকাল সাড়ে ৭টায়। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় ট্রেনটি সবেমাত্র নাটোর স্টেশনে ঢুকছে। ঢাকা আসতে আরও কমপক্ষে ৭ ঘণ্টা লাগবে।
রেলওয়ে কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, ট্রেনটি ১৮ ঘণ্টা বিলম্বে চলছে। শুধু রংপুর এক্সপ্রেস নয়, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় সবগুলো ট্রেনের সিডিউলে বিপর্যয় চলছে গত কয়েক দিন ধরে। জানতে চাইলে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) বেলাল উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, সড়কপথে ভয়াবহ যানজটের কারনে যাত্রীরা ট্রেনের দিকে ঝুঁকছে। বাড়তি যাত্রীর চাপে ট্রেনগুলো বসে পড়ছে। তিনি বলেন, একদিকে উত্তরাঞ্চলে ঘন কুয়াশায় নির্ধারিত গতিতে ট্রেন চালানো যাচ্ছে না। এ ছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথ পুরোপুরি চলাচল উপযোগী করা যায়নি। সে কারনে গতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। এর মধ্যে বাড়তি যাত্রীর চাপে ট্রেনের সিডিউল লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি এটাকে কাটিয়ে ওঠার জন্য। আশা করছি শিগগিরি ঠিক হয়ে যাবে। ভাঙা-চোরা মহাসড়ক এবং ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গত কয়েক দিন ধরেই বিভিন্ন স্থানে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। শনিবারে এ যানজট ৬৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ছিল। এতে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গত শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে ঘন কুয়াশা থাকার কারণে যানজট আরও প্রকট আকার ধারণ করে। গতকাল রবিবার মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙা রাস্তায় যানবাহন আটকে এবং ঘন কুয়াশার কারণে যানজটে স্থবির হয়ে ছিল মহাসড়ক। পরিবহন শ্রমিক এবং যাত্রীদের অভিযোগ, রামনা বাইপাস, করটিয়া, নাটিয়াপাড়া, জামুর্কি, ইচাইল, ধেরুয়া, হাঁটুভাঙ্গা ও কালিয়াকৈর এলাকায় ৭-৮টি মালবাহী ট্রাক ও দুটি যাত্রীবাহী বাস ফেঁসে গিয়ে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। ভুক্তভোগি একজন যাত্রী জানান, তিনি শনিবার দুপুর ২টায় বঙ্গবন্ধু পূর্ব সেতু থেকে বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। ঢাকায় পৌঁছান রাত ২টায়। পথিমধ্যে এই ১২ ঘণ্টায় তাকে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বগুড়া রুটের বাসচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, মহাসড়কের যে অবস্থা তাতে বাস চালানোই মুশকিল হয়ে গেছে। জ্বালানী তেল পুড়ছে দ্বিগুণেরও বেশি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকার কারনে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ঈদের সময় এরকম ভোগান্তি যাত্রীরা মানতে পারে। এখনতো সারা বছরই ঈদের অবস্থা হচ্ছে। এটাকে মানুষ মানবে কিভাবে? শুধু ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক নয়, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট এবং ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের মহাসড়কেরও বেহাল দশা বহুদিন ধরেই। বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর মহাসড়কগুলো মেরামত করা হয়নি বললেই চলে। একই সাথে সড়কপথে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটেও দীর্ঘ যানজট লেগেই আছে।
রেলওয়ের কর্মকর্তাদের দাবি, মহাসড়কের বেহাল দশার কারনেই যাত্রীরা ট্রেনের দিকে ঝুঁকছে। এতে করে ট্রেনের যাত্রী বাড়তে বাড়তে ঈদের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনদিন আগে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে লালমনি এক্সপ্রেসের বগি বসে পড়ে। এর একদিন আগে রংপুর এক্সপ্রেসের কোচের হুইস পাইপ খুলে যায়। রেলওয়ে সূত্র জানায়, বাড়তি যাত্রী নিয়ে কোনো ট্রেনই সঠিক সময়ে চলতে পারছে না। গত কয়েক দিনে এ অবস্থা চলমান থাকায় উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ট্রেন গুলোর সিডিউল লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। মূলত দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল মিলে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল গঠিত। এই পশ্চিমাঞ্চলের সবগুলো ট্রেনই চলছে দেরিতে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ঢাকা-দিনাজপুর রেলপথের দ্রতযান এক্সপ্রেস চলছে সাড়ে চার ঘণ্টা দেরিতে। একই রেলপথের একতা এক্সপ্রেস চলছে আড়াই ঘণ্টা বিলম্বে। ঢাকা-চিলাহাটী রেলপথের নীলসাগর এক্সপ্রেস চলছে ৭ ঘণ্টা বিলম্বে। আর ঢাকা-লালমনিরহাট রেলপথের লালমনি এক্সপ্রেস চলছে সাড়ে ৪ ঘণ্টা বিলম্বে। ঢাকা-খুলনা রেলপথের চিত্রা এক্সপ্রেস চলছে ২ ঘণ্টা, এবং একই রুটের সুন্দরবন এক্সপ্রেস চলছে ৪ ঘণ্টা বিলম্বে। ঢাকা-রাজশাহী রেলপথে পদ্মা এক্সপ্রেস সঠিক সময়ে চললেও ধুমকেতু চলছে ৬ ঘণ্টা বিলম্বে। ট্রেনের এই সিডিউল বিপর্যয়ের কারনে কমলাপুর স্টেশনে ট্রেনের জন্য হাজার হাজার যাত্রীর অপেক্ষা যেনো আর শেষ হয় না। চিলাহাটীগামী নীলসাগর এক্সপ্রেসের এক যাত্রী হতাশা প্রকাশ করে বলেন, সকাল ৮টায় ট্রেন ছাড়বে, এজন্য ভোরে বাসা থেকে রওনা করে সাড়ে ৭টায় স্টেশনে পৌঁছেছি। সেই ট্রেন ছেড়েছে বেলা ৩টায়। এই সাত ঘণ্টা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে কি যে ভোগান্তি তা বলে বোঝানো যাবে না। শুক্রবার রংপুর এক্সপ্রেসের একজন যাত্রী টেলিফোনে জানান, যে ট্রেন ঢাকা থেকে সকাল ৯টায় ছাড়ার কথা সেই ট্রেন ছেড়েছে রাত সাড়ে ৮টায়। সকাল থেকে সারাদিন যাত্রীরা প্লাটফরমে অপেক্ষা করেছে। বাথরুমে যাওয়ার জন্য শত শত যাত্রীর লাইন লেগে ছিল। ওই যাত্রী বলেন, ট্রেনের জন্য কি যে দুর্দশা তা নিজের চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না।



 

Show all comments
  • আবির ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:৩০ এএম says : 0
    যানজট এড়াতে এছাড়া সাধারণ মানুষের কোন উপায় নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • M S Masum Sorowar ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০২ পিএম says : 0
    টাংগাইল বাসিদের এই বিপদ দেখার কেউ নেই,,,,,
    Total Reply(0) Reply
  • Abid Rahman ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০২ পিএম says : 0
    দেশের জন্য লজ্জা জনক
    Total Reply(0) Reply
  • Zaman ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০৩ পিএম says : 0
    Akai bole awamiliger unnon
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেল

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ