পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জমে উঠেছে রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারনা। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রত্যেকেই গণসংযোগে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন তারা। শুধু মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরাই নন, সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরাও ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট ও দোয়া চেয়ে নিচ্ছেন। তবে সাধারণ কাউন্সিলরদের চেয়ে সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীদের গনসংযোগে বেশ বেগ হতে হচ্ছে। সাধারণ কাউন্সিলরদের চেয়ে নির্বাচনী এলাকা বড় (৩টি ওয়ার্ড) হওয়ায় গণসংযোগ করতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরদের। তবুও পিছিয়ে নেই তারা। অস্তিত্বের লড়াইয়ে পুরুষ কাউন্সিলরদের পাশাপাশি তারাও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে কাউন্সিলরদের তেমন কোন অভিযোগ-অনুযোগ না থাকলেও ৩ মেয়র প্রার্থীর পরস্পর বিরোধী অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে। শুধু পরস্পরের বিরুদ্ধে নয়, কখনও কখনও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলে চলেছেন মেয়র প্রার্থীরা।
তার ওপর স্টিমরোলার চালানো হচ্ছে-ঝন্টু
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে বলেছেন, তিনিই সবচেয়ে বেশি আচরণবিধি মেনে চলেন। অথচ তার পরও তার ওপর স্টিম রোলার চালানো হচ্ছে। আমার ওপর এক রকম আইন অন্যদের ওপর এক রকম আইন তা ঠিক নয়। তিনি বুধবার নগরীর বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন। তিনি আরও বলেন,
জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার প্রতি ইঙ্গিত করেন আচরণবিধি লঙ্ঘনের। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘মঙ্গলবার লাঙ্গল মার্কার একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে সাতমাথা এলাকায়। তারা স্টেজ ব্যবহার করেছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে কিন্তু সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট যায়নি। কিন্তু আমি স্টেজ কেন, চেয়ারে বসে মিটিং করতে গেলেই তারা বাধা দিচ্ছে। আচরণবিধি মেনে চলার পরও তাদের ডিস্টার্ব করা হচ্ছে। তার মানে নির্বাচনটা অন্যদিকে নেয়ার চেষ্টা চলছে।
বিএনপি প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা এবং বাসদ-সিপিবির প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুস ঝন্টুর বিরুদ্ধে ক্ষমতার দাপট কালোটাকার ব্যবহারের অভিযোগ প্রসঙ্গে সাবেক মেয়র ঝন্টু বলেন, এসব মিথ্যা কথা। কালো টাকা কী আর সাদা টাকা কী আমি তা জানি না। টাকার অভাবে নির্বাচন করতে পারছি না। বরং কালো টাকা যাদের কাছে আছে তারাই এই টাকার ব্যবহার জানেন। আমি অনুরোধ করব তারা যে কালো টাকার ব্যবহার মানুষকে শিখিয়েছেন তার ব্যবহার তারা বাদ দিক।
নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে ‘বিহাইন্ড দ্যা স্ক্রিন’- মোস্তফা
জাতীয় পার্টির লাঙ্গল সমর্থিত প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দাবি করেছেন। অন্যথায় তাদের ‘বিহাইন্ড দ্যা স্ক্রিন’ প্রস্তুতি আছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনিও নির্বাচনী গণসংযোগের সময় সাংবাদিকদের এ কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি রংপুর সিটিতে একটি পরিচ্ছন্ন নির্বাচন হবে। যদি কমিশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও পরিচ্ছন্ন করে তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। আর কমিশন নির্বাচন পরিচ্ছন্ন না করলে আমাদের বিহাইন্ড দ্য স্ক্রিন অর্থাৎ পর্দার আড়ালে আমাদের একটা প্রিপারেশন আছে। অন্যায়ভাবে এখানে কোনো কিছুই করতে দেয়া হবে না। কোনোভাবে কোনো সেন্টার দখল, ভোট জালিয়াতি কিংবা টেম্পারিং করতে দেয়া হবে না বলে নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের প্রতি হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেছেন আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতে তা হতে দেব না। সে কারণে আমরা চাইব কমিশন আইনানুগভাবে নির্বাচন উপহার দেবে। এই কালচার করতে পারলে আগামী জাতীয নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বে, সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।
তিনি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘণ করছেন মর্মে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা কোনো স্টেজ করে সভা করি না, এমনকি সামিয়ানাও টানানো হয় না। সুতরাং নির্বাচনের আচরণবিধি কোনোভাবেই লঙ্ঘন হয় না আমাদের। বরং ঝন্টুর পায়ের তলায় মাটি নেই। উনি (ঝন্টু) বুঝতে পেরেছেন রংপুরের মানুষ তাকে চায় না। আসছে ২১ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মানুষ তাকে লজ্জা উপহার দেবেন।
নির্বাচনে কালো টাকার ব্যয়ের অভিযোগ নাকচ করে তিনি বলেন, তাকে নির্বাচন করার জন্য পান দোকানদার, চায়ের স্টলের দোকানদার, ফুটপাতের ব্যবসায়ী এমনকি রিকশাচালকরাও তার বাসায় গিয়ে দু-চার হাজার টাকা দিয়ে আসছেন, যা তিনি ব্যয় করছেন।
এবারের নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ঝন্টুর পায়ের তলায় মাটি নেই, সেটা সবাই যেমন জানে, তেমনি তিনিও জানেন। আর সেজন্যই আবোল-তাবোল বকছেন। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কমিশন ও প্রশাসনকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে জাপা প্রার্থী মোস্তফা বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এই নির্বাচন একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবে কমিশন।
পুরনো মামলা ও পুলিশী হয়রানীর কারণে দলীয় কর্মীরা কাজ করতে পারছে না- বাবলা
ঋণ খেলাপির অভিযোগে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী কাওসার জামান বাবলার মনোনয়ন বাতিল চেয়ে সোনালী ব্যাংকের করা রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন।
গত ৩০ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের আবেদন খারিজ করে দেয় নির্বাচন কর্তৃপক্ষ। এরপর গত মঙ্গলবার এ আদেশের বিরুদ্ধে রিট আবেদন করে সোনালী ব্যাংক। বিএনপির মেয়র প্রার্থী কাওছার জামান বাবলার আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল জানিয়েছেন, রিটটি আউট অব লিস্ট করে দিয়েছে। কোনো রুল বা স্টে দেয়নি। তবে এই আদেশের অপেক্ষায় বসে ছিলেন না বাবলা। খেলাপি ঋণের কারণ দেখিয়ে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের আবেদন খারিজ হওয়ার পর থেকে বেশ জোরে সোরেই মাঠে নামেন তিনি। দলীয় গ্রæপিংয়ের কারণে দলীয় নেতাকর্মীদের পুরোপুরি সহযোগিতা না পেলেও তিনি নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াতে থাকেন। গুটি কয়েক দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ইতিমধ্যেই বেশ শক্ত অবস্থান করে নিয়েছেন। তবে তিনি একাধিকবার অভিযোগ করেছেন, তাদের দলীয় কর্মীদের পুলিশী হয়রানী করা হচ্ছে। রাতে কর্মীদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে পুলিশ। পুরনো মামলার কারনে অনেক নেতাকর্মী তার সাথে নির্বাচনী কাজ করতে পারছে না। বিএনপি প্রার্থী হওয়ায় তিনি নিজেও ঠিক মত গণসংযোগ করতে পারছেন না। তিনি ঝন্টুর বিরুদ্ধে ক্ষমতার দাপট এবং কালো টাকা ব্যবহারের অভিযোগ করেন।
নগরবাসী এবার যোগ্য প্রার্থী বেছে নেবে-আসিফ
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের নির্দেশ উপেক্ষা করে স্বতন্ত্র প্রার্র্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তার ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ার। দলীয় চেয়ারম্যানের নির্দেশ উপেক্ষা এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে ইতিমধ্যে তাকে দল থেকে বহিস্কারও করা হয়েছে। কিন্তু তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল থেকে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি দ্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছেন, নগরবাসী এবার তাদের যোগ্য প্রার্র্থী বেছে নেবেন এবং তাদের ‘স্যার’ কে (এরশাদ) ‘না’ জানিয়ে দেবেন। তিনিও বিভিন্ন প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরনবিধি লঙ্ঘন, কালো টাকা ব্যবহার এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ করেছেন। তিনিও নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমি আশা করি নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ. সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেবেন। সে লক্ষ্যে এখন থেকেই সকল প্রার্থীকে সমদৃষ্টিতে দেখবেন।
উল্লেখ্য, আগামী ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতাকারী মেয়র প্রার্থীরা হলেন-আওয়ামী লীগের সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টু, বিএনপির কাওসার জামান বাবলা, জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এ টি এম গোলাম মোস্তফা বাবু, বাসদের আবদুল কুদ্দুস, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সেলিম আখতার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ। এছাড়া ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ পদে ২১১ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৫টি জন প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এর মধ্যে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে একজন তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী রয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।