চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
প্রিয়নবীর (সা:) শুভবেলাদতের সময় আবু লাহাবের কৃতদাসী সুয়াইবা এসে আবু লাহাবকে সংবাদ দিল যে, আপনার ভাই আবদুল্লাহর ঘরে একটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহন করেছে। এতে আবু লাহাব খুশী হযে সুয়াইবাকে আজাদ ঘোষনা করল। প্রত্যেক মুসলমান এ বিষয়ে অবগত যে,আবু লাহাব কট্টর কাফির কুরআনে করীমের পূর্ণ একটি সূরা তার নিন্দায় অবতীর্ণ হয়েছে। এতদসত্বেও প্রিয় নবীর (সা:) আগমনে খুশী উদযাপনের কারণে তার যে উপকার হয়েছে তা একটু শুনুন- যখন আবু লাহাব মৃত্যুবরণ করল, তখন তাঁর ঘনিষ্ঠদের মধ্যে কেউ (হযরত আব্বাস (রা:) তাকে স্বপ্নে অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় দেখলেন। তিনি (হযরত আব্বাস (রা:) তাকে জিজ্ঞেস করলেন তুমি কোন অবস্থায় আছ? উত্তরে আবু লাহাব বলল, আমি তোমাদের থেকে পৃথক হওয়ার পর উত্তম কিছু পাইনি। তবে আমি ঐ আঙ্গুল হতে পানি পেয়ে থাকি (যা দ্বারা আমার শাস্তির মধ্যে একটু শীতলতা হয়) কেননা, সে আঙ্গুল ইসারা দ্বারা আমি সুয়াইবাকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছিলাম। (বুখারী শরীফ) আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী (রা:) বলেন- সুহায়লী বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আব্বাস (রা:) বলেন- যখন আবু লাহাব মারা গেল এক বৎসর পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখলাম, সে অত্যন্ত করুণ অবস্থায় আছে। অতঃপর সে আমাকে বলল, তোমাদের থেকে পৃথক হওয়ার পর আমি কোন শান্তি পাইনি। তবে প্রত্যেক সোমবারে আমার শাস্তিতে একটু শীতল করা হয়। হযরত আব্বাস (রা:) বলেন, এটা এ জন্য যে, যেহেতু নবী করিম (সা:) সোমবারে পৃথিবীতে এসেছেন। সুয়াইবা (আবু লাহাবের দাসী) আবু লাহাবকে তাঁর (সা:) জন্মের সুসংবাদ দিলে আবু লাহাব খুশী হয়ে তাকে আজাদ করে দেয়। (ফতহুল বারী শরহে বুখারী)
উক্ত হাদীসটি আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রা:) ও বোখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ওমাদাতুল কারীর মধ্যে দ্বিতীয় খন্ডের ৯৫ পৃষ্ঠায় নকল করেছেন। (উমদাতুল কারী শরহে বুখারী, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা নং-৯৫)
চিন্তা করুণ, আবু লাহাব ছিল কাফির, আমরা মুসলিম, সে দুশমন, আমরা গোলাম, সে ভাতিজার জন্মে খুশী হয়ে ছিল, আল্লাহর রাসুল (সা:) পৃথিবীতে এসেছেন সে কারনে নয়। আমার প্রিয় নবীর (সা:) বেলাদত শরীফে খুশী উদযাপন করি। একজন খাঁটি কাফির যদি খুশী উদযাপনের কারণে এতটুকু উপকারিতা লাভ করে তাহলে যারা গোলাম তারা কতটুকু ফায়দা হাসিল করবে। হযরত শাহ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (রা:) উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন- এখানে মীলাদুন্নবী (সা:) উদযাপনকারীদের সুস্পষ্ট দলীল হচ্ছে, যারা মীলাদুন্নবী (সা:) উপলক্ষে আনন্দ উদযাপন করে এবং অর্থ ব্যয় করে অর্থাৎ আবু লাহাব কাফির ছিল। এতদসত্বেও হুজুর (সা:) এর বেলাদতের খুশী এবং দাসী মুক্ত করার কারণে যদি তাকে পুরষ্কৃত করা হয়, তাহলে ঐ সমস্ত মুসলমানদের কী অবস্থা হবে, যারা মীল্লাদুনবী (সা:) উদযাপনের মাধ্যমে আনন্দচিত্তে সম্পদ ব্যয়ে তা পালন করে। তবে মিলাদে (সা:) শরীয়ত বিরোধী কোন বাদ্য বাজনা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়। (মাদারেজুন্নবুয়ত)
হাফেজুল হাদীস আল্লামা আবুল খায়ের শামসুদ্দীন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ আল জজরী (রা:) আবু লাহাবের ঘটনাটি লিখতে গিয়ে বললেন- অতঃপর যদি কাফির আবু লাহাব প্রিয় নবীর (সা:) জন্মের খুশীতে পুরস্কৃত হলে, তবে ঐ সমস্ত খাঁটি মুসলমানদের কি অবস্থা হবে যারা তাঁর (সা:) মীলাদুণœবীতে খুশী হয়ে সামর্থ অনুযায়ী ব্যয় (অর্থ) করে। তিনি বলেন- আমার প্রাণের শপথ! মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এর একমাত্র প্রতিদান হচ্ছে স্বীয় অনুগ্রহে জান্নাতে প্রবেশ করানো। (মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া, পৃষ্ঠা-১৩৯)। আল্লামা ইমাম আহমেদ ইবনে মুহাম্মদ আল কুসতুলানী (রা:) মীলাদ শরীফ সম্পর্কে বলেছেন- মুসলমানগন সর্বদা বেলাদত শরীফের মাসে মীলাদুন্নবী (সা:) উদযাপন করে আসছেন, আনন্দ সহকারে খাবারের আয়োজন করতেন , ঐ সমস্ত রাতে বিভিন্ন প্রকারের সদকা খায়রাত করতেন, খুশী উদযাপন করতেন, উত্তম কাজে প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহন করতেন এবং মীলাদুন্নবী (সা:) উদযাপনের বিশেষ আয়োজন করতেন। অতঃপর তাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ এবং বরকত প্রকাশিত হয়। আর এ কথা পরীক্ষিত সত্য যে, যে বৎসর মীলাদুন্নবী (সা:) উদযাপন করা হয়, সে বৎসর মুসলমানদের জন্য নিরাপত্তার বৎসরে পরিণত হয় এবং মনের আকাঙ্খা পূর্ণ হয়। সর্বোপরি আল্লাহ তা’য়ালা ঐ ব্যক্তির উপর রহমত নাযিল করেন, যে মীলাদুন্নবীকে (সা:) ঈদ বানিয়েছে, যাতে এ আনন্দ ঐ ব্যক্তির জন্য কষ্টের কারন হয় যে, এ বিষয়ে অন্তরে শত্রæতা লালন করে। (মাওয়াহেবে লাদুুন্নিয়া, পৃষ্ঠা-১৩৯)।
ইমাম কুসতুলানীর (রা:) উক্ত বক্তব্য থেকে বুঝা গেল যে, রবিউল আউয়াল মাসে মীলাদ (সা:) মাহফিল পালন করা, খাবারের আয়োজন করা বিভিন্নভাবে গরীব-মিসকীনকে দান করা এবং আনন্দ উদযাপন করা প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত। তজ্জন্য মুসলমানদের উপর আল্লাহ তায়ালা রহমত নাযিল করেন। মীলাদুন্নবীর (সা:) বরকতে আল্লাহ তা’য়ালা সারা বৎসর নিরাপদে রাখেন এবং অন্তরের বাসনা পূর্ণ করেন। সর্বোপরি রবিউল আউয়াল শরীফের আনন্দ উদযাপন করা ঐ সমস্ত লোকদের জন্য মসিবতের কারন হয়, যাদের অন্তরে নেফাক এবং প্রিয় নবীর (সা:) সাথে শত্রæতার ব্যাধি রয়েছে। মহান আল্লাহ ইমাম কুসতুলানীর (রা:) উপর রহমত বর্ষণ করুন। নিঃসন্দেহে তিনি সত্য বলেছেন। বিবেকেরও দাবী হচ্ছে মীলাদ শরীফের অনেক উপকারিতা রয়েছে। কেননা, হুজুরের (সা:) শান ও গুনাবলী শুনে ঈমান শক্তিশালী হয়, মুহাব্বত বৃদ্ধি পায়। অনুরূপ শিক্ষিত লোক পুস্তক অধ্যয়নের মাধ্যমে হুজুরের (সা:) মর্যাদা এবং ধর্মীয় জ্ঞান আয়ত্ত¡ করতে পারে । কিন্তু অশিক্ষিত ভাইয়েরা যারা পড়তে পারে না , তাদের সুযোগ এভাবে হতে পারে যে,মীলাদ শরীফ শুনে তারা হুজুর (সা:) এর শুভ জন্ম, বাল্যকালে লালন পালন, যৌবন কাল, নবুয়ত বৈশিষ্ট্যাবলী, সন্তান -সন্ততিগন সহ অনেক দ্বীনি মাসায়েল জানতে সক্ষম হয়, যা বর্তমান যুগে অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ ,যখন বাতিল ফেরকার লোকেরা নিজেদের বাতিল আকিদা প্রচার -প্রয়াসের পাশাপাশি হক তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদার উপর শত-কোটি আক্রমন এবং ভ্রান্ত অভিযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। যদি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ভাইয়েরা নিজেদের মাজহাব এবং আকিদা সম্পর্কে ধারনা না থাকে , তখন তাদেরকে কী উত্তর দিবে?
কুরআন-হাদীসে এবং বিবেকগ্রাহ্য দলীলের মাধ্যমে বুঝা গেল মীলাদ অত্যন্ত উপকারী এবং মহান আল্লাহর রহমতের কারণ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।