চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
‘তারপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তুমি বলে দাও, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। আমি তাঁরই ওপর নির্ভর করি এবং তিনি মহাআরশের অধিপতি।’ (তওবা : ১২৯)। ‘তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক। সমগ্র বিশ্বজাহানের মালিকানা তাঁরই। তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, তাহলে তোমরা মুখ ফিরিয়ে কোথায় চলেছো?’ (যুমার : ৬)। ‘যিনি পাপ ক্ষমা করেন, তওবা কবুল করেন, শাস্তিদানে কঠোর শক্তিশালী, তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। ফিরে যেতে হবে তাঁরই কাছে।’ (মুমিন : ৩) । ‘তিনিই আল্লাহ। তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তিনিই অধিপতি, তিনিই পবিত্র, তিনিই শান্তি, তিনিই নিরাপত্তা বিধায়ক, তিনিই রক্ষক, তিনিই পরাক্রমশালী, তিনিই প্রবল, তিনিই অতি মহিমান্বিত। তারা যাকে শরীক করে তা থেকে তিনি পবিত্র মহান।’ (হাশর : ২৩)। ‘তিনিই পূর্ব ও পশ্চিমের অধিকর্তা, তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। কাজেই তাঁকেই গ্রহণ করো কর্মবিধায়ক রূপে।’ (মুয্যামমিল : ৯)। ‘বলো, আমি শরণ নিচ্ছি মানুষের প্রতিপালকের, মানুষের অধিপতির, মানুষের ইলাহর।’ (নাস : ১, ২, ৩)। ‘সে (মূসা) বলল, আল্লাহ ছাড়া তোমাদের জন্য কি আমি অন্য ইলাহ খুঁজবো, অথচ তিনি তোমাদের সমস্ত বিশ্বজগতের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন?’ (আ’রাফ : ১৪০)। ‘আমাদের প্রতিপালক আকাশমÐলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক। আমরা কখনো তাঁর পরিবর্তে অন্য কোনো ইলাহকে আহŸান করবো না। যদি করে বসি তাহলে তা হবে অত্যন্ত গর্হিত।’ (কাহ্ফ : ১৪)। একমাত্র আল্লাহই তোমাদের ইলাহ। তিনি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই। তাঁর জ্ঞান সর্ববিষয়ে ব্যাপ্ত।’ (তা-হা : ৯৮)। ‘আমি কি তাঁর পরিবর্তে অন্য ইলাহ গ্রহণ করবো? দয়াময় আমাকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে চাইলে তাদের সুপারিশ আমার কোনো কাজে লাগবে না এবং তারা আমাকে উদ্ধার করতেও পারবে না।’ (ইয়াসীন : ২৩)। কুরআনের এ আয়াতগুলোতে ইলাহর যে পরিচিতি ফুটে উঠেছে সংক্ষেপে বলতে গেলে তা হচ্ছে :
১. তিনি বিশ্বজাহান ও এর মধ্যকার সবকিছুর স্রষ্টা। সবার আহার যোগাচ্ছেন, বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি দান করছেন এবং প্রতিপালন করছেন। ২. তিনি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। বিশ্ব জাহানের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু মহাআরশ তাঁর একক কর্তৃত্বে পরিচালিত। সমগ্র বিশ্বজাহানের মালিকানা তাঁরই। তিনিই সমগ্র সৃষ্টি জগতের অধিকর্তা ও কর্মবিধায়ক। ৩. তিনি জীবন মৃত্যুর অধিকারী। তিনি পাপ ক্ষমা করেন, তওবা কবুল করেন, শাস্তি দান করেন। মানুষের জন্য তিনিই যথেষ্ট। তিনি কাউকে শাস্তি দিতে বা ক্ষতিগ্রস্থ করতে চাইলে কারোর সুপারিশ কোনো কাজে লাগে না। তাঁর কাছেই সবাইকে ফিরে যেতে হবে। ৪. সর্ববিষয়ে তাঁর জ্ঞান পরিব্যাপ্ত। ৫. তিনি পবিত্র। তিনি শান্তি। তিনি নিরাপত্তা। তিনি রক্ষক। তিনি পরাক্রমশালী প্রবল ও মহিমান্বিত। মানুষকে তিনিই শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন। ৬. তাঁর অহীর অনুসরণ করতে হবে। তাহলে মানুষ পৃথিবীতে সঠিক পথের সন্ধান পাবে। তাঁর কাছে পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করতে হবে। ৭. সমস্ত মানুষের তিনিই একমাত্র ইলাহ। একমাত্র তাঁরই ইবাদত বন্দেগী আরাধনা উপাসনা করতে হবে। আর কারো ইবাদত করা যাবে না। ৮. কিয়ামতের দিন তিনি সবাইকে একত্র করে তাদের কাজের হিসাব নেবেন।
যে ইলাহকে মেনে নিয়ে আমরা ইসলামে প্রবেশ করলাম তিনি কেবল আমাদের ইবাদত বন্দেগীর ইলাহ নন, তাঁকে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, বিশ্ব জাহানের সর্বময় কর্তৃত্বের মালিক মেনে নিয়ে তাঁর পাঠানো অহী তথা আল কুরআনের বিধান অনুযায়ী জীবন যাপনের অঙ্গীকারের ভিত্তিতেই, কেবলমাত্র তাঁর ইবাদত বন্দেগী গ্রহণযোগ্য হতে পারে। কারণ উল্লেখিত ক্ষমতা ও গুণাবলী বিযুক্ত যে ইলাহ সে ইলাহ আসলে কুরআন বিধৃত ইলাহ নয়। বরং সে ব্যক্তির মনগড়া ও প্রবৃত্তি তাড়িত ইলাহই হতে পারে। তের কোটি মুসলমানের এ দেশে আমরা আল কুরআনের ইলাহরই ইবাদত করতে চাই, কোনো মনগড়া বা প্রবৃত্তির ইলাহর নয়।
সচেতন গোষ্ঠীকে আল্লাহর আইনের শাসনের ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিতে থাকবে এবং অন্য দিকে সাধারণ মানুষকে তাদের অঙ্গীকার পাকাপোক্ত করার আহŸান জানাবো। বাংলাদেশে ইসলামী আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে জনপ্রিয় করে তোলা, আল্লাহ ও রসূলের প্রতি ঈমান ও ইসলামী আকীদার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা মুসলমানদের জীবনধারার সাথে ইসলামী আইনের সামঞ্জস্য বিধান এবং একই সাথে অনৈসলামী আইনের গলদগুলো চিহ্নিত করা হবে আমাদের প্রধানতম দায়িত্ব।
আসলে জীবন একটা বাস্তব সত্যের দিকে এগিয়ে যাবে। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে সত্যই, মিথ্যা নয়। ‘জীবনটা শুধু মিথ্যারই কারবার’Ñএটা কেবলমাত্র সাময়িকভাবেই হতে পারে। কিন্তু মিথ্যার সাথে সত্যের দ্ব›েদ্ব সত্যই অবশেষে এবং স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। আর আইন সত্যেরই প্রতিনিধি। সেক্ষেত্রে মানুষের তৈরি আইন জীবনের বাস্তবতার নিরীখে এগিয়ে গিয়েও সত্য থেকে বিচ্যুত হতে পারে কিন্তু সমগ্র বিশ্ব ও বিশ্বঘটনাবলীর স্রষ্টা ও নিয়ন্তা আল্লাহর আইন সত্যই সত্য, পুরোপুরি হক ও ইনসাফ। তার মধ্যে মিথ্যার লেশমাত্রও নেই। সে ক্ষেত্রে ইজাতিহাদের মাধ্যমে মানুষের ফয়সালার যে সংযোজন হয় তা কখনো ভুল হলেও আল্লাহ তাকে ‘একটি সওয়াবে’র তথা সত্যের একটি অংশের মর্যাদা দিয়েছেন আর সঠিক হলে ‘দশটি সওয়াব’ তথা পূর্ণ সত্যের ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা আল্লাহর এই পূর্ণ সত্যের মাধ্যমে সুসংগঠিত আইনের ভিত্তিতে জীবন যাপন করতে চাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।