পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পাল্টাচ্ছে ষড়ঋতু, হেরফের হচ্ছে সময়কাল, আবাদ ও উৎপাদন ব্যাহত : চলতি বছর ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকা
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশের সামগ্রিক কৃষি এখন বিপর্যস্ত। কৃষক হচ্ছেন সর্বস্বান্ত। কৃষি বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরা বলেছেন, জলবায়ুর অস্বাভাবিক পরিবর্তনে খাদ্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে দেশে ক্রমাগত বাড়ছে খাদ্য ঘাটতি। চলতি বছরে আবহাওয়ার বিরূপ আচরণের ফলে বোরো এবং আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত এপ্রিলে পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় ভাটি অঞ্চলের ৮৩ হাজার ৬৫ হেক্টর জমির বোরো ধান। তলিয়ে গেছে অনেক মাছের খামার। এরপর অক্টেবরে অতিবৃষ্টিতে আমন চাষও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমন চাষের লক্ষমাত্রা ৫৩ লাখ হেক্টর ধরা হলেও অতিবৃষ্টির কারণে তা অর্ধেকও পূরণ হয়নি। এ ছাড়া রবিশস্যেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিরূপ আবহাওয়ার ছোবলে ধান, মাছ এবং রবিশস্যের ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে।
কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, জলবায়ুর বিরূপ আচরণ মোকাবেলায় গতানুগতিক পদ্ধতিতে আবদ্ধ না থেকে কৃষির সর্বক্ষেত্রে আধুনিক পদ্ধতির প্রয়োগ করতে হবে। গবেষণার মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবেলা, লবণসহিঞ্চু, খরাসহিঞ্চু, স্বল্পজীবনসম্পন্ন খাটো জাতসহ উপযোগী জাত উদ্ভাবন করতে হবে। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, বীজবর্ধন খামার ও মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিউটসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে কৃষি উন্নয়নে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
বিভাগগুলোর উদ্দেশ্য স্বল্প জমিতে আধুনিক প্রযুক্তিতে বেশি আবাদ ও উৎপাদন করে বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু কৃষির সকল বিভাগের মধ্যে সমন্বয় স্থাপন করে কৃষকপর্যায়ে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়টি বরাবরই অনুপস্থিত থাকছে। কৃষি বিশারদ ও বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষির গুণগত পরিবর্তন, আধুনিকায়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তোলার বিষয়টি বাস্তবে প্রতিফলিত হচ্ছে না। সূত্রমতে, নিত্যনতুন জাত, প্রযুক্তি ও কলাকৌশল আবিষ্কার কৃষি শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নয়, কৃষি উৎপাদন শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির বুনিয়াদ।
মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা ড. সুনীল কুমার রায় দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ’ এর ধাক্কা সামলানো কঠিন হচ্ছে কৃষক ও কৃষি বিভাগকে। চাষাবাদের সময়েরও হেরফের ঘটছে। কৃষির পরিচিত ও অভ্যস্ত নিয়ম অনেকটাই পাল্টে যাচ্ছে।
সূত্রমতে, অকাল বৃষ্টি, বন্যা, অনাবৃষ্টি, নিম্নচাপ ও কুয়াশা বৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন ঘন ঘন শুরু হয়েছে। নিকট অতীতে কর্মবীর কৃষক ও কৃষি বিভাগকে এতটা বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। প্রায় প্রতিটি মৌসুমে আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। এতে হচ্ছে খাদ্য উৎপাদন ঘাটতি। কৃষিনির্ভর অর্থনীতি হয়ে পড়ছে দুর্বল। অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে উদ্ভিদ, প্রাণীকুল, জলজ, বনজ ও মৎস্য সম্পদের।
সূত্র জানায়, আবহাওয়া বদলে যাচ্ছে দ্রুত। ঘটছে ষড়ঋতুর পরিবর্তন। আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণে পরিবেশবিদগণ উদ্বিগ্ন। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রফেসর ড. সাইবুর রহমান মোল্যা একান্ত সাক্ষাতকারে বলেন, গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাবে ভৌগলিক অবস্থার কারণে বাংলাদেশ ‘ভিকটিমাইজ’। কৃষি পরিবেশ স্বাস্থ্য সবকিছুই কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রকৃতি তার ভারসাম্য ধরে রাখতে পারছে না। শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষাসহ ষড়ঋতুর প্রচলিত সময়কাল অনেটাই ‘শিফটিং’ হয়ে যাচ্ছে। শীত ও গরমের হেরফেরে কৃষি, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। দিন দিন এর মাত্রা বাড়ছে। আবহাওয়ার জটিল প্রক্রিয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণশক্তি কৃষিখাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরা বলেছেন, যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা নয় তখন হচ্ছে বৃষ্টি। অসময়ে আকস্মিকভাবে বৃষ্টি হওয়ায় আবাদ ও উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একইভাবে যখন বৃষ্টি দরকার তখন বৃষ্টির দেখা মিলছে না। এতে কৃষক শুধু নয়, অন্যান্য স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষ একরকম বিপদের মধ্যে পড়েছেন। মারাত্মক প্রভাব ফেলছে তাদের জীবন জীবিকায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি আবাদ মৌসুমে যেমন. বন্যা ও বøাস্টে আক্রান্ত হয়ে বোরো ধান উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রোপা আমনে পাকা ধানে মই দেয় ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি, গম আবাদ একবারেই কম হয় বøাস্টের কারণে, আগাম শীতকালীন সবজির মারাত্মক ক্ষতি হয় অকাল বর্ষণে। সর্বশেষ নিম্নচাপে ক্ষতি হলো। ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার উদ্যোগ কৃষকরা যখন নেন, তখন আরেক দুর্যোগ সামনে এসে দাঁড়ায়। তার উপর কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্য না পাওয়া, বাজার বিশৃঙ্খলা, মুনাফালোভীদের অপ্রতিরোধ্য দাপট, লাভের চেয়ে লোকসানের পাল্লা ভারি হওয়া ও উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে বিরাজ করছে নাজুক অবস্থা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বোরোতে সারা দেশে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪৮ লাখ হেক্টর জমি। আবাদ হয় ৪৭ লাখ ৯৬ হাজার হেক্টর জমি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় এক কোটি ৯০ লাখ মেট্রিক টন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে আবাদ ও উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমির ধান। উৎপাদন ঘাটতিতে চালের মূল্য বেড়ে যায় অস্বাভাবিক। এরপর সারা দেশে ৪৮টি জেলার দুই লক্ষাধিক হেক্টর জমির রোপা আমন ধান আক্রান্ত হয় অকাল বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায়। যার মধ্যে শতকরা থেকে প্রায় ১৫ ভাগ সম্পূর্ণ ও ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ আংশিক ক্ষতি হয়েছে। অঝোর ধারার বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ভাগ পাকা ধান মাটিতে পড়ে যায়। এখানেও অর্ধলক্ষাধিক হেক্টর জমির ধান কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বøাস্ট রোগের কারণে সারা দেশে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে গম আবাদ হয়নি। দুই দফায় সবজির ক্ষতি হয় প্রায় ১৫ হেক্টর জমির। দুর্যোগের কারণে এবার সারাদেশে দেড় লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে তেল ও ডালজাতীয় ফসল আবাদ করা যায়নি।
গত দুই মৌসুমে কৃষির কি কি ক্ষতি হয়েছে তার তথ্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর অফিসিয়ালি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। তবে বলেছে জলবায়ু পরিবর্তনে কৃষির ক্ষতি হচ্ছে বিরাট।
সংশ্লিষ্ট সূত্র সর্বশেষ তথ্য দিয়ে জানায়, রোপা আমনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপতর বোরো আবাদ এরিয়া বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেয়। এ ব্যাপারে দেশের ১৪টি কৃষি সম্প্রসারণ রিজিয়নকে নির্দেশ দেয়া হয়। সে মোতাবেক প্রস্তুতি নেন কৃষক ও কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা। কিন্তু বোরোর বীজতলা তৈরির মুহূর্তে আবার নিম্নচাপ। নিম্নচাপের কবলে পড়ে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেক জমিতে আবাদ হওয়া তেল ও ডালজাতীয় ফসলের ক্ষতি হলো। ক্ষতি হলো শীতকালীন সবজির। কৃষকরা জানান, আবহাওয়ার হেরফেরের কারণে কৃষি উৎপাদনে অনেকটা এলোমেলো হয়ে গেছে। আমরা চলতি রবি মৌসুমে তেল ও ডালজাতীয় ফসল আবাদ ও উৎপাদন সময়মতো করতে পারিনি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, দেশে চলতি মৌসুমে পাঁচ লাখ ৬২ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা ও তিন লাখ ৩০ হাজার হেক্টরে মসুর ও মুগডাল আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কিন্তু আবাদ লক্ষ্যমাত্রা এর প্রায় অর্ধেক কম হয়েছে। দুর্যোগের কারণে মাটি উপযোগী না হওয়ায় বহু কৃষক তেল ও ডালজাতীয় ফসল আবাদ করতে পারেনি। কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দেন যে, যারা ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সরিষা ও মুসুর আবাদ করেননি তাদের আর তেল ও ডালজাতীয় ফসল আবাদ করার দরকার নেই। ওই আবাদ বোরোতে ‘কনভার্ট’ করতে বলা হয়। এ জন্য আবাদ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালকের দফতর থেকে জানানো হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, কৃষি মন্ত্রণালয় জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে কৃষিকে রক্ষায় কয়েকবছর আগে জাতীয় কৃষি প্রযুক্তি প্রকল্প (এনএটিপি) গ্রহণ করে। প্রথম পর্যায়ে দেশের ১২০টি উপজেলার কৃষকদের সচেতনতা সৃষ্টি ও প্রশিক্ষণ দেয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৫০টি উপজেলায় প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে গত জুন থেকে। অভিযোগ বহু কৃষকই জানেন না এই প্রকল্পের কর্মকান্ড সম্পর্কে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।