Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি

নি ব ন্ধ

মহিউদ্দিন খান মোহন | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

‘ভূতের মতন চেহারা তাহার নির্বোধ অতি ঘোর, যা কিছু হারায় গিন্নি বলেন কেষ্টা বেটাই চোর।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সেই পুরাতন ভৃত্য’ কবিতার প্রথম দু’টি লাইন। এ কবিতায় কবি তার বোকা কিসিমের অতিশয় মনিবভক্ত ভৃত্য কেষ্টার কাহিনী বর্ণনা করেছেন। যারা কবিতাটি পড়েছেন তারা জানেন, মনিবের সেবা করতে করতে মনিবের স্ত্রীর কাছ থেকে চোর আখ্যা পাওয়া সেই কেষ্টা নিজের জীবন দিয়েছিল। চাকর বাকরদের সন্দেহের চোখে দেখার প্রবণতা এখনও আমাদের অনেকের মধ্যে বিদ্যমান। তাই অনেক সময় পত্রিকার শিরোনাম হতে দেখা যায়, চোর সন্দেহে গৃহকর্মীকে অমানুষিক নির্যাতন, কখনো কখনো হত্যার খবর। অথচ এমনও দৃষ্টান্ত আছে মনিবের বিপদে গৃহকর্মীরা নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে সামনে এগিয়ে যায়, এমনকি নিজের জীবন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। তবে, গৃহকর্মীদের মধ্যে হাত সাফাইয়ে অভ্যস্তের সংখ্যাও কম নয়। সুযোগ পেলেই তারা টাকা-পয়সা, এটা-ওটা সরিয়ে ফেলতে কুণ্ঠিত হয় না। বোধকরি কবিগুরুর কবিতার গিন্নি ওই ধরনের গৃহভৃত্যদের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন বলেই বোকাসোকা কেষ্টাকেও তাদের দলেই ফেলেছিলেন। 

না, কবিগুরুর কবিতা বা গৃহভৃত্যদের চরিত্র বিশ্লেষণ আমার এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য নয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সরকারের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাম্প্রতিক একটি মন্তব্য এবং তৎপ্রেক্ষিতে দেশের বিশিষ্টজনদের অভিমত পত্রিকায় পড়ে কবিতাটির কথা মনে পড়ল। গত ২৫ নভেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা রাজনীতিকরা যদি দুর্নীতিমুক্ত থাকি, তবে দেশের দুর্নীতি অটোমেটিক্যালি অর্ধেক কমে যাবে’। এমনিতেই আমাদের দেশের মানুষ রাজনীতিকদের নামে এক লোকমা (মুঠো) ভাত বেশি খায়, সুযোগ পেলেই রাজনীতিকদের ওপর হা হা করে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তারা এখন সুযোগ পেয়েছে রাজনীতিবিদদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধারের। পত্র পত্রিকায় টিভি টক শো’র আলোচনায় এখন এ বিষয়ে নানান জন নানান মন্তব্য করছেন। লক্ষণীয় বিষয় হলো, তারা প্রায় সবাই দেশে সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য রাজনীতিকদের দায়ী করছেন। কিন্তু বাস্তবিকই কি সব দুর্নীতি- অনিয়মের জন্য শুধু রাজনীতিকরাই দায়ী? দেশ বা সমাজের অন্য কারোই কি এ ক্ষেত্রে কোনো দায় নেই?
এ বিষয়ে গত ২৭ নভেম্বর দৈনিক যুগান্তরের এক প্রতিবেদনে দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির অভিমত তুলে ধরা হয়েছে। তারা দুর্নীতির জন্য রাজনীতিকদের দায়ী করার পাশাপাশি আমলাসহ অন্যান্যদের কথাও বলেছেন। তারা এও বলেছেন, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সে দলের নেতাকর্মীরাই দুর্নীতির সাথে বেশি সম্পৃক্ত থাকে। তাই ক্ষমতাসীন দলকেই দুর্নীতি প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ‘উনি (ওবায়দুল কাদের) সত্য কথা বলেছেন। কারণ, রাজনীতিবিদরাই রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করেন। তারা অনেক ক্ষমতা রাখেন। যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আছেন বা যাবেন, তারা যদি দুর্নীতি না করেন তাহলে কতভাগ দুর্নীতি কমবে বলা সম্ভব না হলেও দুর্নীতি যে কমবে এটা নিশ্চিত বলা যায়।’ বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, ‘আমলাদের সহযোগিতা ছাড়া রাজনীতিবিদরা দুর্নীতি করতে পারেন না। উভয়ের যোগসাজশেই দুর্নীতি হয়। সুতরাং রাজনীতিবিদরা শুধু দুর্নীতিমুক্ত হলে হবে না এর সঙ্গে আমলারা যদি দুর্নীতিমুক্ত থাকেন, তাহলে দেশে বারো আনা দুর্নীতি কমে যাবে।’ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘শুধু রাজনীতিবিদ নয়, যারাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সবারই এ উপলব্ধি হওয়া উচিত। তবে, যেহেতু রাজনীতিবিদরা ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন, তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলে অন্যরা দুর্নীতি করতে সাহস পাবে না।’
উপর্যুক্ত মন্তব্যগুলো সেসব বিশিষ্ট নাগরিকদের, যারা দেশ ও জাতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভাবেন, উপলব্ধি করেন, এবং সময়ে সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে তাদের অভিমত প্রকাশ করে থাকেন। তাদের সে অভিমতের সঙ্গে সবাই একমত হবেন এমন কোনো কথা নেই। তবে, তাদের অভিমতকে অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। উপরোল্লিখিত বিশিষ্ট নাগরিকরা দুর্নীতি বিষয়ে যে অভিমত দিয়েছেন, তা যে যথার্থ সে বিষয়ে দ্বি-মত প্রকাশের অবকাশ আছে বলে মনে হয় না। আমাদের দেশে যেসব দুর্নীতি সংঘটিত হয়, তার পেছনে রাজনীতিকদের আশ্রয়-প্রশ্রয়-মদদের কথা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। আমলা, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, কমিশন এজেন্টসহ সমাজের নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষের একটি অংশ ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ব্যবহার করে থাকে। এরা অর্থের লোভ দেখিয়ে অনেক রাজনৈতিক নেতাকে দুর্নীতি করতে প্রলুব্ধ করে থাকে। যাদের অর্থ-বিত্তের প্রতি লোভ আছে তারা সহজেই দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে।
আজ রাজনীতিকদের দিকে সাধারণ মানুষ বাঁকা দৃষ্টিতে তাকায়। রাজনীতি করেন, অথচ দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই- এ কথা কেউই বিশ্বাস করতে চান না। যদি এমন কাউকে পাওয়াও যায়, তাহলে মন্তব্য শোনা যায় এ রকম- ‘লোকটা হয় বোকা, বুদ্ধিশুদ্ধি নেই, না হয় সুযোগের অভাবে সৎ।’ রাজনীতির ধরনও পাল্টেছে। এখন টাকা পয়সা না থাকলে রাজনীতি করা যায় না। নির্বাচন করতে হলে লাগে কাড়ি কাড়ি টাকা। কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইলেই প্রথমে জানতে চাওয়া হয় টাকা পয়সা কেমন আছে। লোকটা ভালো কি মন্দ, সৎ না অসৎ, জনগণ তথা ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে কিনা, এসব তথ্য জানার প্রয়োজন বোধ করে না রাজনৈতিক দলগুলো। তারা খোঁজে টাকাওয়ালা লোক, যে কেন্দ্রে টাকা ঢালতে পারবে, টাকা দিয়ে গুন্ডা পুষতে পারবে, সর্বোপরি টাকার বিনিময়ে ভোট কিনতে পারবে। সুশীল সমাজ এবং বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করা হচ্ছে বার বার। কিন্তু রাজনীতি বা নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ তো হয়নি, বরং এর অনাকাক্সিক্ষত প্রবণতা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।
এভাবেই রাজনীতি আজ দুর্বৃত্তায়িত। যে লোকটি টাকার বিনিময়ে এমপি পদে মনোনয়ন পায়, নির্বাচিত হলে সে তার বিনিয়োগ কড়ায়গন্ডায় আদায় করে নেয়ার চেষ্টা করে। আর তখনই তাকে নেমে পড়তে হয় দুর্নীতির পঙ্কিল পথে। আর রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীর অভাব নেই আমাদের দেশে। পছন্দের বা জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন প্রার্থীর পেছনে টাকা ঢালতে বিনিয়োগকারীরা দ্বিধা করেন না। কারণ, তারা জানেন, নির্বাচিত হলে তিনি এর কয়েকগুণ তুলে নিতে পারবেন। দুঃখজনক বিষয় হলো, ভোটের বাজারে আজ একজন সৎ এবং নিবেদিতপ্রাণ নেতার চেয়ে কালোটাকার মালিকের সমাদর বেশি। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো, জনসাধারণের একটি বিরাট অংশকে ওইসব বিতর্কিত ব্যক্তিদের পক্ষ নিতে দেখা যায়। এমনও দেখা যায়, চোরা কারবারি, সন্ত্রাসের গডফাদার, চরিত্রহীন বলে যে লোকটাকে যারা গালাগালি করছে, তারাই আবার শ্লোগান দিচ্ছে- ‘অমুক ভাইয়ের চরিত্র, ফুলের মতো পবিত্র’। চরিত্রহীনের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর বস্তু টাকা। টাকার বিনিময়ে এখন দুর্বৃত্তকে সাধু আর সাধুকে দুর্র্বৃত্ত হিসেবে চিহ্নিত করা অতি সহজ কাজ।
অথচ এক সময় এমন ছিল না। রাজনীতিকরা ছিলেন সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। তাদের দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, জনকল্যাণমুখী চিন্তা ভাবনা এবং সততা ছিল অন্যদের কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তারা রাজনীতি করতেন দেশ ও জাতির কল্যাণচিন্তা থেকে। ব্যক্তিগত লাভালাভের বিষয় সেখানে স্থান পায়নি। রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাবার জন্য তারা চেষ্টা করেছেন নিরন্তর। তবে, তা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে নয়; জনগণের কল্যাণে ভূমিকা রাখার সৎ উদ্দেশ্যে।
বস্তুত জনকল্যাণ বলুন, আর দেশ সেবা বলুন- এর জন্য সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম হলো রাজনীতি। আসলে রাজনীতি তো আয়যোগ্য কোনো পেশাও নয়, ব্যবসায়ও নয়। রাজনীতি হচ্ছে ব্রত। আর তা দেশ ও মানব সেবার লক্ষ্যেই। কিন্তু আমাদের দেশে এখন যে রাজনীতি চর্চা হচ্ছে, তা কতটুকু জনকল্যাণ আর মানবসেবার লক্ষ্যে তা নিয়ে বিতর্ক আছে। রাজনীতি এখন চলে গেছে ব্যবসায়ীদের দখলে। বেশিরভাগ সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীরা রাজনীতি করবেন না, বা করতে পারবেন না, এমন কথা বলছি না। যদি কেউ দীর্ঘদিন রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার পাশাপাশি ব্যবসাও করেন, তাহলে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু সংসদ নির্বাচনের আগে কোনো একজন ব্যবসায়ীর হঠাৎ করে রাজনীতিক বনে যাওয়া প্রশ্নের সৃষ্টি করে। যে লোক রাজনীতির অ আ ক খও জীবনে চর্চা করেনি, সে রাজনীতি, সংসদ এসব সম্পর্কে জানবেই বা কতটুকু? সে তো ভাববে টাকা দিয়ে মনোনয়ন কিনেছি, টাকা দিয়েই সব ম্যানেজ করে ফেলব। ফলে নব্যরাজনীতিকের কাছ থেকে কেউই রাজনৈতিক আচরণ পায় না। তা জনগণই হোক, কিংবা দলের কর্মী। এসব ব্যবসায়ী রাজনীতিকে ব্যবসায়ের নতুন একটি ক্ষেত্র হিসেবেই বিবেচনা করে থাকেন। তাদের দেখাদেখি রাজনীতিবিদদের কারো কারো মধ্যে ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার খায়েশ জন্মাতে দেখা যায়। আর তাই তারা নিজে সম্ভব না হলে স্ত্রী-পুত্র-কন্যা কিংবা আত্মীয়-স্বজনের নামে ব্যবসা শুরু করে দেন। আর এ থেকেই শুরু হয় দুর্নীতির বিষবৃক্ষের ডালপালার বিস্তার।
এতক্ষণ দুর্নীতির জন্য রাজনীতিকদেরই শুধু দোষারোপ করা হলো। কিন্তু এ বিষবৃক্ষের পত্র-পল্লবে মহীরুহ হয়ে ওঠার পেছনে যে রাষ্ট্র ও সমাজের আরো অনেক শ্রেণি-পেশার মানুষ জড়িত তা কি অস্বীকার করা যাবে? এটা ঠিক যে- আমলা, ব্যবসায়ী বা পেশাজীবীদের মধ্যে যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের পেছনে এক শ্রেণির রাজনীতিকের আশীর্বাদ রয়েছে। কেউ চাকরি পাবার জন্য রাজনীতিবিদদের দ্বারস্থ হন, কেউ প্রমোশনের জন্য, কেউবা বড় বড় ব্যবসা বাগিয়ে নিতে রাজনীতিকদের ব্যবহার করেন। নিজেরা অনৈতিক কাজ করেন, রাজনীতিকদেরও তাতে সম্পৃক্ত করে নেন। একটি কথা বেশ প্রচলিত এবং আলোচ্য নিবন্ধে উল্লিখিত বিশিষ্টজনেরাও বলেছেন যে, আমলাদের সহযোগিতা ছাড়া রাজনীতিবিদরা দুর্নীতি করতে পারেন না। এটা সর্বজনবিদিত একটি বিষয়। অথচ দুর্নীতির দায়ে একজন রাজনীতিকের বিরুদ্ধে মামলা হলেও আমলারা হয়ে যান ধোয়া তুলসীপাতা। সব দায় রাজনীতিক অর্থাৎ মন্ত্রীর কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে তারা নিরাপদ দূরত্বে বসে থাকেন। এ জন্য অবশ্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বা রাজনীতিকের অদূরদর্শিতা বা অপরিণামদর্শিতাই দায়ী। কেননা, আমলারা তাকে ব্যবহার করে ফায়দা লুটতে পারে- এ কথাটা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নেয়া উচিত। কিন্তু অর্থলোভ যখন মগজে বাসা বাঁধে, বিবেক বিবেচনার বোধশক্তি তখন আর কাজ করে না।
সর্বগ্রাসী দুর্নীতি আজ আমাদের সমাজকে বিষিয়ে তুলেছে। দুর্নীতি যেন এখন স্বতঃসিদ্ধ নিয়মে পরিণত হয়েছে। এজন্য যদি শুধু রাজনীতিবিদদের দায়ী করা হয়, তাহলে তা অন্যায় হবে। যখন তিতাস গ্যাস কোম্পানি বা বিদ্যুৎ বিভাগের একজন মিটার রিডারের রাজধানীতে একাধিক বাড়ি থাকার খবর পত্রিকায় ছাপা হয়, কিংবা একজন পুলিশ কর্মকর্তার একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, শিল্প প্রতিষ্ঠান থাকার খবর পাওয়া যায়, তখন সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন জাগে- এ জন্যও কি রাজনীতিকরা দায়ী? ওই মিটার রিডার বা পুলিশ কর্মকর্তাকে দুর্নীতি করতে কি কোনো রাজনীতিবিদ উৎসাহিত করেছেন? তবে, একজন রাজনৈতিক নেতার সতর্ক থাকা দরকার কোনো দুর্নীতিবাজ যেন তাকে ব্যবহার করতে না পারে। আর একজন রাজনীতিকের পক্ষে এটা তখনই সম্ভব, যখন তিনি নিজে থাকবেন দুর্নীতির ঊর্ধ্বে।
রাষ্ট্র বা সমাজকে যদি দুর্নীতিমুক্ত করতে হয়, তাহলে শুধু রাজনীতিবিদই নয়, সর্বস্তরের মানুষকেই দুর্নীতি পরিহার করতে হবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করতে হবে। সর্বব্যাপী একটি মন্দ কাজের জন্য কেবল রাজনীতিকদের ওপর দোষ চাপিয়ে দায়িত্ব শেষ করা যাবে না। দুর্নীতির জন্য যেমন রাজনীতিকদের দায় রয়েছে, তেমনি এর সর্বব্যাপী বিস্তারে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষেরও দায় রয়েছে। সে দায় এড়ানোর কোনো উপায় নেই। সমাজ থেকে যদি দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে হয়, তাহলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তা না করে যদি রাজনীতিবিদ নামক ‘কেষ্টা’র ঘাড়ে সব দোষ চাপিয়ে আমরা দায়িত্ব শেষ করি, তাহলে অবস্থার কোনো হেরফের হবে বলে মনে হয় না।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্নীতি

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন