Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় হতাশা

ঢাকা মহানগর বিএনপি

| প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন : দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে ঢাকা মহানগরকে উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগে বিভক্ত করে বিএনপি। উভয় অংশেই দেয়া হয় নতুন নেতৃত্ব। নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানায় ঢাকার তৃণমূল নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ ১০ থেকে ১২ বছর ধরে কমিটি না হওয়া ঢাকার থানা ও ওয়ার্ডগুলোতে আশার সঞ্চার হয়। দেখা দেয় উৎসাহ-উদ্দীপনা। নগর উত্তর-দক্ষিণের আংশিক কমিটি ঘোষণার পর এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে আংশিক কমিটি ঘোষণার ৮ মাস পরেও পূর্ণাঙ্গ ও থানা-ওয়ার্ড কমিটিগুলো পুনর্গঠন করতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ফলে হতাশ হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা। কমিটির শীর্ষ নেতাদের প্রতি ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে তাদের মাঝে। আর সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে দলের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার নিয়ে বাড়ছে কোন্দলও। ঘটছে হাতাহাতির ঘটনা। শুধু তাই নয় ঢাকা মহানগর বিএনপির উভয়াংশের নতুন নেতৃত্ব জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সমন্বিত কোনো কর্মসূচী পালন করতে পারেনি। দলীয় কর্মসূচীও পালন করেছে বিচ্ছিন্নভাবে। এসবের পেছনে কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় মূল কারণ বলে মনে করেন তৃণমূলের নেতারা। তাদের দাবি মহানগরীর এমনও থানা এবং ওয়ার্ড আছে যেগুলোর কমিটি পুনর্গঠন হয়নি দুই যুগ ধরে। আর কতদিন অপেক্ষা করলে কমিটি পুনর্গঠন হবে বা কমিটিতে পদ পাওয়া যাবে? পূর্ণাঙ্গ কমিটির ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, দ্রæততার সাথে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।
গত ১৮ এপ্রিল রাতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এবং উত্তরের নির্বাহী আংশিক কমিটি অনুমোদন করে বিএনপি। মহানগর দক্ষিণে বিএনপির ৭০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে হাবিব উন নবী খান সোহেল সভাপতি এবং কাজী আবুল বাশার সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ৬৬ সদস্য বিশিষ্ট মহানগর উত্তরে বিএনপির সভাপতি হন এম এ কাইয়ুম এবং সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান। এরমধ্যে উত্তরের সভাপতি এম এ কাইয়ুম মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। তার বিরুদ্ধে একজন বিদেশী নাগরকিকে ‘হত্যা’ মামলার চার্জশিট হয়েছে। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানও প্রায় সময় দেশের বাইরে অবস্থান করেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অনেক সময় তাকে পাননা বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে কমিটির দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি দেশের বাইরে যাননি বলে দাবি করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, বিগত সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থতার প্রধান কারণ হিসেবে ঢাকা মহানগর বিএনপির দুর্বল নেতৃত্বকে দায়ী করেন দলের সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ। এজন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ঢাকা মহানগর নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। মূলত ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা এবং মির্জা আব্বাসের আধিপত্য বিস্তার ও দলীয় কোন্দল থাকায় দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী ও সরকারবিরোধী আন্দোলন পরিচালনা করতে পারেনি মহানগর বিএনপি। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। এমন অবস্থার মধ্যেই বেগম খালেদা জিয়ার সম্মতিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণে ৭০ সদস্য এবং ঢাকা মহানগর উত্তরে ৬৬ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এরআগে ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে ৫২ সদস্যের ঢাকা মহানগর আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটি ঘোষণার পর দলীয় কোন্দল ও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি। পাশাপাশি সরকার বিরোধী কোনো আন্দোলনও গড়ে তুলতে পারেনি মহানগর বিএনপি
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় প্রায় কোন্দলে জড়াচ্ছেন নেতাকর্মীরা। কেউ কেউ নির্দেশও মানছেনা সিনিয়র নেতাদের। গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলিস্তানে ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ১০ম কারামুক্তি দিবসের সভায় মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল বক্তব্য দেয়ার সময় চেয়ারে বসা নিয়ে মহানগরীর নেতাকর্মীদের দুই গ্রæপের মাঝে চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়ি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে দলের নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে তা নিয়ন্ত্রণে আসে। কামরাঙ্গীচর থানার মনির চেয়ারম্যান ও সাবেক যুবদল নেতা নাইমের সমর্থকদের মাঝে এ ঘটনা ঘটে।
থানা ও ওয়ার্ড কমিটি নেই দীর্ঘদিন ধরে:
মহানগর বিএনপির ওয়ার্ড ও থানা কমিটিগুলো পুনর্গঠন নেই যুগ যুগ ধরে। এমনও ওয়ার্ড এবং থানা আছে যেগুলোর কমিটি গঠন হয়না ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ধানমন্ডি থানা বিএনপির ওয়ার্ড কমিটির হালনাগাদ হয়নি প্রায় ২৫ বছর ধরে। এই থানায় সর্বশেষ কমিটি হয় আবুল খায়ের বাবলু ও শেখ রবিউল আলম রবির সমন্বয়ে। ওয়ান ইলেভেনের পর থেকে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় আবুল খায়ের বাবুল। তিনি এখন দলীয় কোনো কর্মকান্ডে নেই। খিলগাঁও, মোহাম্মদপুর, মতিঝিলসহ বহু থানা এবং ওয়ার্ড কমিটির বয়স প্রায় পনের বছরের বেশি বলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। মহানগর কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে ঢাকা মহানগর বিএনপির একাধিক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মহানগর কমিটিই গঠণতন্ত্র লঙ্ঘন করে হয়েছে। যে কমিটি গঠনতন্ত্রকে প্রবঞ্চনা করে গঠিত হয় সে কমিটি দলকে ভালো কিছু দিতে পারেনা। যত দ্রুত সম্ভব ওয়ার্ড ও থানা কমিটিগুলো গঠন করা জরুরি। তা না হলে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপিসাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার বলেন, কমিটি দেয়ার কাজ সমাপ্তির পথে। দ্রæততম সময়ে দেয়ার জন্য কাজ করছি। ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন থানার সাথে মতবিনিময় করেছি। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কমিটি হয়নি তাই বড় গ্যাপ তৈরি হয়েছে। আবার আন্দোলন-সংগ্রামে যারা ভূমিকা রেখেছে, এতোদিন কাজ করেছে তাদের মূল্যায়ন করার চিন্তা রয়েছে। এজন্য কিছুটা সময় নিয়েছি। ###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি

১৩ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ