Inqilab Logo

রোববার, ০৯ জুন ২০২৪, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পাহাড় অশান্ত করতে মরিয়া অবৈধ অস্ত্রধারীরা

সাখাওয়াত হোসেন : | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

২০ বছরে সশস্ত্র গ্রুপের হাতে নিহত ২১৯৯ জন অপহৃত ২৩৯২ জন : ২৪০টি ক্যাম্প প্রত্যাহার
দেশের প্রাকৃতিক সম্পর্কে ভরপুর পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত করতে মরিয়া সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো। উপজাতীয় এসব সন্ত্রাসীদের হাতে দেশের বাইরে থেকে অবাধে আসছে অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরক। এর ফলে শান্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত হয়ে উঠার আশংকা করছে স্থানীয় বাসিন্দারা। শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের ২০ বছর পরও পার্বত্য চট্টগ্রামে পুরোপুরি সন্ত্রাস বন্ধ হয়নি। এখনও তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে প্রতিনিয়ত খুন, ধর্ষণ, অপহরণ ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধ ঘটছে। সশস্ত্র গ্রুপগুলোর সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ শান্তিপ্রিয় উপজাতি ও বাঙালিরা। জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ বলছেন, পার্বত্য অঞ্চলে এখনও বড় সমস্যা সন্ত্রাস। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে পার্বত্য অঞ্চলে সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেডসহ গভীর জঙ্গলে থাকা ক্যাম্প প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। রাখা হয়েছে সড়কের পাশের ক্যাম্পগুলো। খাগড়াছড়িতে মোট ৬৫টি সেনা ক্যাম্প ছিল। এখন আছে ৩৫টি। গুইমারায় ৪০টির মধ্যে আছে ১৮টি। রাঙামাটির ৫৮টি ক্যাম্পের মধ্যে আছে ৩২টি। আর বান্দরবানের ৬৯টি ক্যাম্পের মধ্যে আছে ২৮টি। অন্যান্য বাহিনীর আরো ১২১টি ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। শান্তি চুক্তির পর মোট ২৪০টি ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। সা¤প্রতিক সময়ের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, চুক্তির পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৯ বছর ১০ মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে দুই হাজার ১৯৯ জন নিহত হয়। আহত হয় দুই হাজার ২৯০ জন এবং অপহৃত হয় দুই হাজার ৩৯২ জন। এই সহিংসতার বেশির ভাগ শিকার বাঙালিরা এবং এক-তৃতীয়াংশ ক্ষুদ্রজাতি গোষ্ঠীর সদস্যরা। অস্ত্র উদ্ধারের পরিমাণও চুক্তির আগের তুলনায় বেড়েছে। চুক্তির আগে নিরাপত্তা বাহিনী ১৬ শতাধিক অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করেছিল। এসবের মধ্যে গ্রেনেড ৩৫৯টি, মর্টার ৭০টি, মাইন ১৩টি এবং অন্যান্য গোলাবারুদ সাড়ে চার লাখ। আর শান্তিচুক্তির পরে ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত দুই হাজার ৭৩০টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রাণহানি আগের তুলনায় কমলেও বন্ধ হয়নি। চুক্তির আগে শান্তিবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিরাপত্তা বাহিনীর ৩৪৩ জন সদস্য নিহত হয়েছিলেন। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর ১৭৩, বিজিবির ৯৬, পুলিশের ৬৪, আনসার-ভিডিপির ১০ জন। নিহত সেনা সদস্যদের মধ্যে কর্মকর্তা পাঁচজন, জেসিও তিনজন এবং বাকিরা সৈনিক। চুক্তির আগে শুধু ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১৬০ জন সদস্যের। আর চুক্তির পরে নানা কারণে নিরাপত্তা বাহিনীর মোট ৯৬ জন সদস্য মারা গেছেন। এর মধ্যে পাহাড়ি সশস্ত্র গ্রুপগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ১১ জন, পাঁচজন নিহত হয়েছেন রাঙামাটির ভূমিধসে। আর ম্যালেরিয়ায় মারা গেছেন ৮১ জন। পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, এই অঞ্চলে এখনও বড় সমস্যা সন্ত্রাস। জেএসএস ও ইউপিডিএফের ক্যাডাররা সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি করছে। প্রতিটি সেক্টর থেকে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা চাঁদা আদায় করছে। শুধু বাঙালিরা নয়, পাহাড়িরাও চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছে। গভীর জঙ্গলের কারনে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া যায় না সব সময়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পার্বত্য জেলাগুলোতে বিদ্যমান সশস্ত্র গ্রুপগুলোর আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও পারস্পরিক দ্বন্ধের কারণে পাহাড়ের পরিবেশ দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। নিজেদের স্বার্থের দ্বন্ধে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরকারী জনসংহতি সমিতি ভেঙে এখন চার টুকরা। এই চার সংগঠনের প্রভাবিত এলাকায় সাধারণ মানুষ নিষ্পেষিত জীবন-যাপন করছে। বিশেষজ্ঞ মতে, তিন পার্বত্য জেলায় প্রায় ১৫ লাখ মানুষের মধ্যে ৪৮ শতাংশ বাঙালি। বাকি ৫২ শতাংশ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অধিবাসী। অথচ ৪৮ শতাংশ বাঙালিকে পার্বত্য জেলা থেকে অন্যত্র সরিয়ে দিতে এবং পার্বত্য তিন জেলা পাহাড়িদের একক আধিপত্যে আনতে কাজ করছেন জনসংহতি সমিতিরি নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাগড়াছড়ি জেলা সদরের এক ব্যবসায়ী বলেন, পাহাড়ে সেনাবাহিনী না থাকলে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা বাঙালিদের মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মতোই কচুকাটা করে তাড়িয়ে দেবে। তিন জেলায় সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। কোনো সরকারি প্রশাসন থাকবে না যা তারা সব সময় চায়। স্থানীয় সূত্রের দেয়া তথ্য ও তার বক্তব্য থেকে জানা যায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন রাঙামাটি জেলার জুড়াছড়ি উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অরবিন্দু চাকমা। অন্যদিকে একইদিনে বিলাইছড়ি উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি রাসেল মারমার উপর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে তাকে ব্যাপক মারধর করে। গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অরবিন্দু চাকমাকে জেএসএস সন্ত্রাসীরাই গুলি করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। এদিকে, রাঙামাটি জেলার জুড়াছড়ি উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অরবিন্দু চাকমার হত্যাকারীসহ বিলাইছড়ি উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি রাসেল মারমার উপর হামলাকারীদের গ্রেফতারসহ হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাঙামাটি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ। রাঙামাটির পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান জানিয়েছেন, ঘটনাগুলির সাথে যারা জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করতে কাজ করছে পুলিশ। তিনি বলেন, কোনো একটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে।। তবে এসকল ঘটনা জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্তিতিতে প্রভাব ফেলবে না। পুলিশ সক্রিয় রয়েছে।



 

Show all comments
  • অমল দাস ৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:১৩ এএম says : 0
    সরকারকে এই ব্যাপারে সুদূরপ্রসারী সিন্ধান্ত নিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাহাড়

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ