Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

এরশাদের পতন যেভাবে দেখলেন ব্যারিস্টার মওদুদ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

৬ ডিসেম্বর ছিল এরশাদের পতন দিবস। ১৯৯০ সালের এই দিনে গণআন্দোলনের মুখে পতদ্যাগ করতে বাধ্য হন এরশাদ। ২৭ বছর আগে এরশাদের এই পতন দিবস উপলক্ষ্যে বিবিসি বাংলা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে সেই সময়ে এরশাদ সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। ইনকিলাব পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো।
১৯৯০ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাস থেকে আঁচ করা যাচ্ছিল যে জেনারেল এইচএম এরশাদের সরকার বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। যে কোন সময় এরশাদ সরকারের পতন হতে পারে। এমন ধারণা প্রবল হয়ে উঠেছিল বিভিন্ন মহলে। সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। জেনারেল এরশাদের পতন তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে উঠেছিল। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন মোকাবেলার জন্য এরশাদ সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিরোধী রাজনৈতিক জোটগুলো এরশাদের সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
নভেম্বর মাসের শেষের দিকে জেনারেল এইচ এম এরশাদ বেতার ও টেলিভিশনে এক ভাষণের মাধ্যমে বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে তিনি পদত্যাগ করবেন। কিন্তু আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলগুলো জেনারেল এরশাদের সে বক্তব্য বিশ্বাস করতে পারছিল না। ডিসেম্বর মাসের চার তারিখে বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য তৎকালীন ভাইস- প্রেসিডেন্ট ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদকে টেলিভিশন সেন্টারে পাঠিয়েছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। উদ্দেশ্য ছিল, প্রেসিডেন্টের পরিকল্পিত নির্বাচন সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা তুলে ধরা। মিঃ এরশাদের নির্দেশ মতো ভাইস-প্রেিিসডেন্ট মওদুদ আহমদ সন্ধ্যার সময় বাংলাদেশ টেলিভিশনে গিয়েছিলেন ভাষণ রেকর্ড করার জন্য। সে ভাষণ তিনি রেকর্ডও করেছিলেন। ভাষণ রেকর্ড করার পর মওদুদ আহমদ যখন বাসায় ফিরে আসেন তখন তিনি জানতে পারেন প্রেসিডেন্ট এরশাদ পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এর কয়েক ঘণ্টা পর মধ্যরাতে মওদুদ আহমেদকে আবারো বাংলাদেশ টেলিভিশনে যেতে হয়েছিল প্রেসিডেন্ট এরশাদের পদত্যাগের ঘোষণা দেবার জন্য।
১৯৯০ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর রাতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘প্রথম ভাষণ রেকর্ড করে আমি যখন বাসায় ফিরে আসলাম, তখন আমার স্ত্রী বললেন, প্রেসিডেন্ট সাহেব ফোন করেছিলেন। তখন আমি ওনাকে ফোন করলাম। উনি তখন বললেন, আমি এখনই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তখন আমি ওনার বাসায় গেলাম। তখন রাতে নিউজের পরে ওনার পদত্যাগের ঘোষণা দেয়া হলো।’ মওদুদ আহমদের বর্ণনায় সেটা ছিল গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলনের একটি চরম পর্যায়।
রাজপথের আন্দোলনে বিচলিত হয়ে পড়ে জেনারেল এরশাদের সরকার তখন ধীরে-ধীরে ক্ষমতা হস্তান্তরের চিন্তা শুরু করেন বলে জানান মওদুদ আহমদ। তখনকার পরিস্থিতি বর্ণনা করে মিঃ আহমদ বলেন, ‘জোর করে ক্ষমতায় থাকার কোন অর্থ হয় না।’ সেনাবাহিনীর সমর্থন হারানোর পরেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন জেনারেল এরশাদ্
এরশাদ ক্ষমতা ছাড়লেও অন্তবর্তী সরকার প্রধান কে হবেন? এ বিষয়টি নিয়ে যখন প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছানোর পর জেনারেল এরশাদ পদত্যাগের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবউদ্দিন আহমদকে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে মেনে নিতে একমত হয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলো।
এরপর খুব দ্রæত প্রেসিডেন্টের পদ থেকে জেনারেল এরশাদের পদত্যাগের ঘটনা ঘটে। প্রথমে পদত্যাগ করেন তৎকালীন ভাইস- প্রেসিডেন্ট মওদুদ আহমদ। তিনি পদত্যাগের পর সাহাবউদ্দিন আহমদকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর প্রেসিডেন্ট পদ থেকে এইচ এম এরশাদ পদত্যাগ করে বিচারপতি সাহাব উদ্দিন আহমদের কাছে ক্ষমতা হন্তান্তর করেন। ‘পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সবকিছু হয়ে গেছে,’ বলছিলেন মিঃ আহমদ।
মওদুদ আহমদ দাবী করেন দেশে স্বাভাবিক অবস্থা এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি ‘আনন্দের সাথে’ পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ না করে জেনারেল এরশাদের সামনে আর বিকল্প কোন রাস্তা ছিল না বলে মনে করেন মি: আহমদ। কারণ সেনাবাহিনী এরশাদের সরকারকে আরে সমর্থন দিতে রাজী হয়নি। সেনাবাহিনীর তৎকালীন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জেনারেল এরশাদ সরকারের সাথে থাকতে চাননি।
ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চেয়েছিলেন দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক। সেজন্য তারা আর কোন হস্তক্ষেপ করতে রাজী হননি বলে মি: আহমদ উল্লেখ করেন। ১৯৮৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রাজনৈতিক জোট অংশ নেয়নি। মিঃ আহমদ বলেন, ‘তখনই বিষয়টা অনেকটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে কোন না কোন সময় সরকারকে সরে যেতে হবে।’ মওদুদ আহমদ আক্ষেপ করে বলেন, যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এতো আন্দোলন হলো সে স্বৈরাচার বর্তমান সরকারের অংশ হিসেবে কাজ করছে। ‘যে স্বৈরাচারের পতনের দিবস পালন করছি সে স্বৈরাচার এখন বহাল তবিয়তে আছেন এবং তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন বর্তমান সরকারের’ বলেন মওদুদ আহমদ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যারিস্টার মওদুদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ