পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, প্রবীণ আইনজ্ঞ, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তী সকল ঐতিহাসিক ঘটনার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ গত মঙ্গলবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিঙ্গাপুরে ইন্তেকাল করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় তাঁর লাশ বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমান সিঙ্গাপুর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে পৌঁছায়। এসময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী, ভাইস-প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রবীণ এই আইনজীবীর কফিন কফিন গ্রহণ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, জয়নাল আবদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আব্দুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, নাজিম উদ্দিন আলম, তাবিথ আউয়াল, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, এসএম জাহাঙ্গীর, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, শাহাদাত হোসেন সেলিম, বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান।
মরহুম মওদুদ আহমদের লাশ বিমান বন্দরে পৌঁছানোর আগে মির্জা ফখরুলসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ পৌঁছান। সেখানে এসে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, মওদুদ আহমদের নামে ৩২টি হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হয়েছে। তিনি দক্ষ একজন রাজনীতিক ছিলেন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের চলে যাওয়া দেশ ও জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তার চলে যাওয়া শুধু বিএনপি নয় সমগ্র জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। মওদুদ আহমদের মৃত্যুতে যে শূন্যতা তৈরি হলো, তা গণতান্ত্রিক আন্দোলন জোরদার করে পূরণের চেষ্টা করা হবে।
বিমান বন্দর থেকে মরহুমের লাশ গুলশানে তার বাসায় নেয়া হয়। সেখান থেকে নিয়ে রাতে রাজধানীর এভায়ার কেয়ার হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। আজ সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মরহুমের লাশ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। দেশে মরহুমের প্রথম জানাযার নামাজ হবে সকাল সাড়ে ১০টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে, দ্বিতীয় জানাযা সকাল ১১টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। সেখানে দলের পক্ষ থেকে মরহুমের কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। বেলা আড়াইটায় নোয়াখালীর কবিরহাট ডিগ্রি কলেজ মাঠে মরহুমের তৃতীয় নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। বিকাল ৪টায় বসুরহাট কোম্পানীগঞ্জ সরকারি মুজিব মহাবিদ্যালয় মাঠে হবে চতুর্থ নামাজে জানাযা। বিকাল সাড়ে ৫টায় মরহুমের নিজ বাসভবনের (মানিকপুর কোম্পানিগঞ্জ) সামনে মরহুমের সর্বশেষ নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে, বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন সম্পন্ন করা হবে।
সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় তার। ৮১ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিএনপির ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। সাবেক এমপি ও অষ্টম জাতীয় সংসদে তিনি আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ২৪ মে ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এবং মা বেগম আম্বিয়া খাতুন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মওদুদ আহমেদ চতুর্থ।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মান পাশ করে বৃটেনের লন্ডনস্থ লিঙ্কন্স ইন থেকে ব্যারিস্টার-এ্যাট-ল› ডিগ্রি অর্জন করেন। লন্ডনে পড়াশুনা করে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন। তিনি বøান্ড ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলনে।
দেশে ফিরে হাইকোর্টে ওকালতির একপর্যায়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শামিল হয়েছিলেন আইনি লড়াইয়ে।
এর আগে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মিছিলে যোগ দিয়ে পুলিশি নির্যাতনের পর মওদুদ আহমদের ঠাঁই হয়েছিল কারাগারে। এই ঘটনা মনের অজান্তেই তাকে করে তোলে রাজনীতি সচেতন। ঢাকা কলেজ ছাত্রসংসদের আপ্যায়ন সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় অ্যাডভোকেট ফরমান উল্লাহ খান প্রতিষ্ঠিত খেলাফত রব্বানীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশক্তির নেতা ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আইনি লড়াই করতে খ্যাতনামা ব্রিটিশ আইনজীবী স্যার টমাস উইলিয়ামস কিউসিকে বাংলাদেশে আনতে রেখেছিলেন ভূমিকা। ১৯৭১-এ ইয়াহিয়া খান আহূত গোলটেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠকের ভূমিকা ছাড়াও ব্যারিস্টার মওদুদকে পোস্টমাস্টার জেনারেল নিয়োগ করে মুজিবনগর সরকার। স্বাধীন বাংলাদেশের শুরুর দিকেও তাকে কারাভোগ করতে হয়েছে।
পেশাজীবী হিসেবে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর আইনজীবী, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে নানা ভূমিকায় নিজেকে রেখেছিলেন রাজনীতির কক্ষপথেই। বিএনপি আর জাতীয় পার্টি গঠনে পালন করেন মুখ্য ভূমিকা। কারাভোগ করেছেন পাকিস্তান আমল, বঙ্গবন্ধু, এরশাদ, ওয়ান ইলেভেন ও মহাজোট সরকারের আমলে।
১৯৭৭-৭৯ সালে তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৭৯ সালে তিনি প্রথম এমপি নির্বাচিত হন এবং তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮১ সালের মে মাসে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয় এবং এক বছরের ভেতর হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন। ১৯৮৫ এর নির্বাচনে মওদুদ আহমেদ আবারও এমপি নির্বাচিত হন এবং সরকারের তথ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এক বছর পর ১৯৮৬-এ তাকে আবার উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৮৯ সালে তাকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় এবং এরশাদ তাকে উপ-রাষ্ট্রপতি করেন। ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকার জনরোষের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১ সালে মওদুদ আহমেদ আবার এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালেও তিনি বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। পাঁচবার নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা থেকে নির্বাচিত হন মওদুদ আহমেদ। মওদুদ আহমদ পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের জামাতা।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।