Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প?

| প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস ভবনের নকশা চূড়ান্ত!
বুধবার জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করা হলে ‘পরিণাম গুরুতর’ হতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছেন জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আয়মান সাফাদি বলেছেন, এমন সিদ্ধান্তে আরব ও মুসলিম বিশ্বে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়বে। এবিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট রেক্স টিলারসনের সাথে আগেই কথা হয়েছে তার। ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছুদিনের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে ছিল এ বিষয়টি।
এক টুইটে মি. সাফাদি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করা হলে তা শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
মি. ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার বলেছেন এবিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এবিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। মি. ট্রাম্পকে এমন ঘোষণা থেকে বিরত রাখতে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
তার অফিসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, রোববার ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ আর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানসহ অন্যান্য বিশ্বনেতাদের ফোন করেছেন তিনি।
তিনি ‘জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে বা সেখানে আমেরিকান দূতাবাস স্থাপন করলে সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে ধারণা দিতে’ আান্তর্জাতিক নেতাদের সাথে কথা বলেছেন বলে এএফপি’কে জানিয়েছেন মি. আব্বাসের উপদেষ্টা মাজদি আল-খালিদি। এমন সিদ্ধান্ত ইসরায়েল আর ফিলিস্তিনকে দুটি আলাদা রাষ্ট্র হওয়ার পথে আরো বাধা সৃষ্টি করবে বলে ফিলিস্তিনের নেতারা আগেই সতর্ক করেছেন।
১৯৬৭’র মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের সময় থেকে পূর্ব জেরুজালেম দখল করে রেখেছে ইসরায়েল। ১৯৮০-তে তারা এই এলাকা আত্মসাৎ করে ও নিজেদের এলাকা বলে দাবী করে। আন্তর্জাতিক আইনে এই এলাকাকে দখল হওয়া অঞ্চল বলে অভিহিত করা হয়। অবিভক্ত জেরুজালেমকে স্থায়ী রাজধানী হিসেবে চায় ইসরায়েল। আর পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে চায় ফিলিস্তিনিরা।
১৯৪৮ এর পর থেকে আলোচনার মাধ্যমে জেরুজালেম দ্বন্দ্বের সমাধানের কথা বলে এসেছে সব আমেরিকান প্রশাসন। তারা এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়ার পক্ষপাতী নন যাতে আলোচনার সিদ্ধান্তে প্রভাব পড়তে পারে।
গত বছরের নির্বাচনী প্রচারণার সময় ইসরায়েলের প্রতি স্পষ্ট সমর্থন প্রকাশ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম দিনেই তেল আভিভ থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেবেন তিনি। তারপর থেকে এবিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও ধারণা করা হচ্ছে বুধবার বক্তব্যে তিনিএই ঘোষণা দেবেন। রোববার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের নেতাদের এক সভায় মি. ট্রাম্পের অন্যতম উপদেষ্টা মি. কুশনার বলেন, প্রেসিডেন্ট যথাযথ সময়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট বিষয়টির খুঁটিনাটি যাচাই করছেন। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে তিনিই আপনাদের জানাবেন।
জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস ভবনের নকশা চূড়ান্ত!
যুক্তরাষ্ট্র এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের তেল আবিব থেকে দূতাবাস সরানোর ঘোষণা না দিলেও জেরুজালেমে দূতাবাস স্থাপনের জন্য ভবনের নকশা চূড়ান্ত করে ফেলেছে বলে দাবি করেছে মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল ডবিøউএসবি। তারা জানায় ইতোমধ্যে ভবনের নকশা চূড়ান্ত করেছেন এক মার্কিন স্থপতি। সোমবার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও দূতাবাস স্থানান্তরের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন বলে জানানো হলেও নতুন দূতাবাস ভবনের পরিকল্পনা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে একজন মার্কিন স্থপতিকে জেরুজালেমে পাঠানো হয়। তিনিই সেখানে দূতাবাস স্থাপনের জায়গাগুলো পরীক্ষা করেন।
বর্তমানে তেল আবিবে মার্কিন দূতাবাসটি হোটেলের মতো হলেও নতুন পরিকল্পনায় বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন ভবনে থাকার জায়গা, জরুরি বহির্গমন, নিরাপদ কক্ষ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।
ইহুদি-খ্রিস্টান ও মুসলিম; তিন স¤প্রদায়ের মানুষের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ ধর্মীয় তীর্থস্থান জেরুজালেম। শুক্রবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্টসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে জানায় চলতি মাসের ৬ তারিখেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পশ্চিম জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থাপনের ঘোষণা করতে পারেন। নির্দিষ্ট ওই দিনটিতেই ট্রাম্পের পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হবে কিনা, তবে আল জাজিরার সোমবারের প্রতিবেদনে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। ট্রাম্পের জামাতা বলেন, ‘ট্রাম্প যখন সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন, তখন নিজে থেকেই তা ঘোষণা করবেন। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট এখনও বিকল্প চিন্তা করছেন।’
ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচআর ম্যাকমাস্টারও সোমবার বলেছেন, তিনি এখনও জানেন না তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নেওয়া হবে কীনা। তিনি জানান, এই বিষয়ে ট্রাম্পকে তার পরামর্শকরা বেশকিছু বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন।
নিজের নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে নেবেন। তবে এখনও সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেননি তিনি। এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলেই জেরুজালেম ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতি পাবে। ট্রাম্পের পদক্ষেপ রুখতেই আরব লিগ আর ওআইসিকে বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। রয়টার্স শীর্ষ একজন মার্কিন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ট্রাম্পের পদক্ষেপ ঠেকাতেই বৈঠক আয়োজনে তৎপর হয়েছে জর্ডান। শুক্রবার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে দূতাবাস সরানোর প্রক্রিয়া আরও দেরী হতে পারে। তবে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে ঘোষণা দিতে পারে তারা। সেক্ষেত্রে অনেক দিনের মার্কিন নীতি থেকে সরে আসবে যুক্তরাষ্ট্র।
অনেকের ধারণা তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নিলে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা আরও বাড়বে এবং ফিলিস্তিনিরা অসন্তুষ্ট হবে। ১৯৮০ সালে জেরুজালেমকে রাজধানী ঘোষণা করেছিল ইসরাযয়েল। তবে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় এর সমর্থন দেয়নি। ফিলিস্তিনিরা চায় দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেম যেন রাজধানী হয়। এখনও কোনও দেশের দূতাবাসই জেরুজালেমে নেই। সবগুলো দূতাবাসই তেল আবিবে অবস্থিত। প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন এর সাধারণ সম্পাদক সায়েব এরেকাত এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে জেরুজালেম। সূত্র : জেরুজালেম অনলাইন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জেরুজালেম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ