পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মো. আবদুর রহিম : আজ ১২ রবিউল আউয়াল। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। ঈদে মিলাদুন্নবী আরবি তিনটি শব্দের সম্মিলিত রূপ। ঈদ, মিলাদ ও নবী এই তিনটি শব্দ নিয়ে এটি গঠিত। আভিধানিক অর্থে ঈদ অর্থ খুশি, মিলাদ অর্থ জন্ম, নবী অর্থ বার্তাবাহক। পারিভাষিক অর্থে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মের আনন্দকে ঈদে মিলাদুন্নবী বলা হয়। অন্য কথায়, ঈদে মিলাদুন্নবী হলো, রাহমাতুল্লিল আলামিন হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) এর পবিত্র ‘বেলাদত শরিফ’ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা। আর মুহাম্মদ (সা.) এর শুভাগমন স্মরণে খুশি প্রকাশ করে মিলাদ শরিফ মাহফিলের ব্যবস্থা করা, শান-মান, মর্যাদা-মর্তবা আলোচনা করা, কুরআন তেলাওয়াত, দরুদ শরিফ পাঠ, তাওয়াল্লুদ বা জন্মকালীন ঘটনা মজলিস করে আলোচনা করা, দাঁড়িয়ে সালাম, কাসিদা বা প্রশংসামূলক কবিতা, ওয়াজ-নসিহত, দোয়া-মোনাজাত, সম্ভব মতো মেহমান নেওয়াজির সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান করা। হাদিস শরিফে মহানবী (সা.) এর জন্মকাল সম্পর্কে জানা যায়। হজরত আবু কাতাদা আল আনসারি (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) কে সোমবার দিন রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এ দিনে (সোমবারে) আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এ দিনেই আমি নবুয়ত পেয়েছি।’ (মুসলিম)। ঐতিহাসিক মুহাম্মদ বিন ইসহাক (রহ.) এর মতে, রাসূল (সা.) হাতি সালের (৫৭০ খ্রি.) রবিউল আউয়াল মাসে ১২ তারিখ সোমবার জন্মগ্রহণ করেন। নবী করিম (সা.) সোমবার রোজা রেখে নিজের জন্মদিন স্মরণ করতেন। এর দ্বারা ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের গুরুত্ব প্রমাণিত হয়।
এ মুবারক মাসের ১২ তারিখ উম্মাহর জন্য শ্রেষ্ঠতম দিন। কারণ, এ মুবারক দিনটি যদি আল্লাহ পাকের হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুভাগমনের অন্তর্ভুক্ত না হতো তাহলে শবে ক্বদর, শবে বরাত, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, জুমা ইত্যাদি ফযীলতপূর্ণ কোন দিন-রাতেরই আগমন ঘটতো না। শুধু তাই নয়, কুরআন শরীফ নাযিল হতো না, দ্বীন ইসলাম আসতো না এবং কোন মমিন-মুসলমানের অস্তিত্বও থাকতো না। এ প্রসঙ্গে স্বয়ং আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআরে ইরশাদ করেন, ‘হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, আল্লাহ পাক ফযল-করম হিসেবে তাদেরকে যে দ্বীন ইসলাম দিয়েছেন, কুরআন শরীফ দিয়েছেন এবং রহমত হিসেবে উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দিয়েছেন, সেজন্য তারা যেন খুশী প্রকাশ করে।’ (সূরা ইউনুস-৫৮)
মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন সূরা কাওছার-এ ইরশাদ করেন, (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাওছার দান করেছি।’ ‘কাওছার’-এর অনেক অর্থ রয়েছে, তার মধ্যে একটি অর্থ হচ্ছে খইরে কাছির অর্থাৎ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ পাক সমস্ত ভাল উত্তম এবং শ্রেষ্ঠ বিষয় ও জিনিসগুলো হাদিয়া করেছেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত ও সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ই সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই মুসলমান সম্প্রদায় দিনটি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) হিসেবে পালন করেন ।
ইবনে কাছির তাফসীর গ্রন্থের মিলাদে মোস্তফা অধ্যায়ে (পৃ. ২৯/৩০) উল্লেখ করা হয়েছে, নবম হিজরিতে তাবুকের যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে রাসূল (সা.) দেখতে পেলেন, হজরত আব্বাস (রা.) তার হুজরায় মিলাদুন্নবী (সা.) (সম্ভবত) কবিতা আকারে পাঠ করছেন। রাসূল (সা.) তা দেখে মন্তব্য করেন, ‘তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত অনিবার্য হয়ে গেল।’ রাসূল (সা.)-এর এ মন্তব্য থেকেই বোঝা গেল, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আনন্দ ও আলোচনা করলে রাসূল (সা.)-এর শাফায়াত পাওয়া যাবে নিশ্চিতভাবে। অন্য কোনো পন্থায় এত সহজে শাফায়াত পাওয়ার পদ্ধতি বিরল। বক্তারা বলেন, আবু লাহাব ছিল রাসূল (সা.)-এর প্রকাশ্য ও বড় শত্রু, যার ধ্বংসের কথা আল্লাহ স্বয়ং সূরা লাহাবে বলেছেন। কিন্তু রাসূল (সা.)-এর জন্মের খবরে খুশি হয়ে আবু লাহাব এক নির্দেশে তার এক দাসীকে মুক্ত করে দিয়েছিল। এ কারণে আবু লাহাব কবরে প্রতি সোমবার তার নির্দেশ দেয়া আঙুল থেকে প্রবাহিত পানি পানের সুযোগ পায় এবং কবরের আজাব হাল্কা হয়। রাসূল (সা.) সমগ্র সৃষ্টির মূল এবং আল্লাহর প্রদত্ত নেয়ামতে আকবর। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সর্বোচ্চ এ নেয়ামতের জন্য খুশি প্রকাশের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, এ নিয়ামতের খুশি সঞ্চিত সকল এবাদত হতে উত্তম। এরপরও এজিদের উত্তরসুরিরা ঈদে মিলাদুন্নবী (স:)-কে বিদায়াত বলে গলাবাজি করে সাধারণ মুসলমানদেরকে নাজাতের বড় ওছিলা থেকে বঞ্চিত করছে।
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। এসব বাণীতে তাঁরা দেশবাসীসহ মুসলিম উম্মাহর সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। একই সঙ্গে তাঁরা মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শ (সুন্নাহ) অনুসরণ করে ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবকল্যাণে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানান।
যথাযথ মর্যাদায় ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন সহ, বিভিন্ন দরবার খানকাহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর ওপর আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আজ শনিবার সরকারী ছুটির দিন। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার যথাযোগ্য গুরুত্বসহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।
আজ নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলী জৈনপুরী দরবার শরীফের উদ্যোগে মহাসম্মেলন বাদ আসর থেকে গভীর রাত পযর্ন্ত। আজ বদরপুর দরবার শরীফের উদ্যেগে সদরঘাটে মাহফিফের আগে জশনে জুলুস বের হবে।
মহানবী (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণে দূর হবে ঘন অমানিশা Ñখালেদা জিয়া
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, মহান আল্লাহ তা›য়ালা বিশ্বজগতের রহমত স্বরূপ হজরত মুহম্মদ (স.)-কে এই জগতে প্রেরণ করেন। বিশ্বনবীর আবির্ভাবে পৃথিবীতে মানুষ ইহলৌকিক ও পরলৌকিক জগতের মুক্তির সন্ধান পায় এবং নিজেদের কল্যাণ ও শান্তির নিশ্চয়তা লাভ করে। সমাজে বিদ্যমান শত অনাচার ও কদর্যতার গøানি উপেক্ষা করে মহানবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (স.) মানুষের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) উপলক্ষে এক বাণীতে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। গতকাল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য গণমাধ্যমে জানানো হয়।
বিএনপি চেয়ারপার্সন আরো বলেন, মহানবী (স.) মানবজাতির জন্য এক উজ্জ্বল অনুসরণীয় আদর্শ। নিজ যোগ্যতা, সততা, মহানুভবতা, সহনশীলতা, কঠোর পরিশ্রম, আত্মপ্রত্যয়, অসীম সাহস, ধৈর্য, সৃষ্টিকর্তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস, নিষ্ঠা ও অপরিসীম দুঃখ-যন্ত্রণা ভোগ করে তার ওপর অবতীর্ণ সর্বশ্রেষ্ঠ মহাগ্রন্থ আল কোরআনের বাণী তথা তওহীদ প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বলেন, মহানবী মুহম্মদ (স.) আইয়ামে জাহেলিয়াতের অন্ধকার যুগ দূর করে অত্যাচার ও জুলুম-নির্যাতন বরণ করে সত্য এবং ন্যায়কে সুপ্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে বিশ্বকে আলোয় উদ্ভাসিত করেছিলেন। সমাজে অবহেলিত-নির্যাতিত, বঞ্চিত ও দুঃখী মানুষের সেবা, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, পরমতসহিষ্ণুতা, দয়া ও ক্ষমাগুণ, শিশুদের প্রতি দায়িত্ব এবং নারী জাতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় মহানবী (স.)-এর আদর্শ অতুলনীয় এবং তাই তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হিসেবে অভিষিক্ত।
বিএনপি চেয়ারপারসন আরো বলেন, আমি আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের নিকট প্রার্থনা করি- মহানবী (স.)-এর শিক্ষা, আদর্শ ও ত্যাগের মহিমা আমরা সবাই যেন নিজেদের জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে পারি। আমরা যদি রাসুল (স.)-এর বাণী ও আদর্শ অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে পারি তা হলে বর্তমান দুঃসময়ের ঘন অমানিশা দুরীভূত করে হারানো অধিকার ফিরে পেতে সক্ষম হব।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন, আমি পবিত্র মিলাদুন্নবী উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলিম ভাইবোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।