Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রূপপুর থেকে দেশের প্রয়োজনের ১০ ভাগ বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে -প্রধানমন্ত্রী

পাবনা থেকে মুরশাদ সুবহানী ও এসএম রাজা | প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০১৭, ৫:৫৮ পিএম

পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের  মূল স্থাপনার নির্মাণ  কাজ উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ বেশি হয়। কিন্তু একবার চালু হয়ে গেলে অনেক দিন চলে। রূপপুর কেন্দ্রে  থেকে দেশের প্রয়োজনের ১০ ভাগ বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। তিনি দেশের কতিপয় শিক্ষিত লোকের সমালোচনা করে বলেন,  কিছু লোক আছেন, যারা উচ্চ শিক্ষিত। তারা সব কিছুতে সরকারের বিরোধিতা করেন। বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে এমন লোকদের সম্পর্কে লিখেছেন, ‘পরশ্রীকাতর’। অর্থাৎ এরা অপরের ভালো দেখতে পারে না। এই সব লোকেরা আমাদের করে দেওয়া   টেলিভিশনে বসে সরকারের বিরোধিতায় ইচ্ছে মতো বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বিএনপি’র উদ্দেশ্যে বলেন, একজন ভালো কাজ করলে অপরজনের উৎসাহ থাকে না। তার গা জ্বালা করে। তারা অবান্তর প্রশ্ন করেন । জনগণকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু দেশের উন্নয়নের কথা কখনোই ভাবেন না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া নেই।’  জাতির জনক আমার পিতা  সপরিবারে জীবন দিয়েছেন। আমি আপনাদের জন্য কিছু করতে চাই। দিয়ে যেতে চাই আগামী প্রজন্মকে নতুন কিছু।’ তিনি বলেন, হাত পেতে নয়, ভিক্ষা নিয়ে নয়, নিজের যা আছে তাই নিয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে চাই,দাঁড়াতে চাই। তিনি আরো বলেন, ৬ বছর দেশে আসতে পারিনি। রিফিউজি হয়ে থাকতে হয়েছে দেশে দেশে।  দেশের মানুষের সকল অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশের মানুষের জন্য নিজের জীবন বাজি রেখেই দেশে পা রেখেছিলাম। ইনশাল্লাহ  দেশটাকে সোনার বাংলায় গড়ে তুলবো। ২০২১ সকালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী  পালন করবো বলে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।  

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে রূপপুরে এক সুধী সমাবেশে এ  কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি  সুধী সমাবেশে প্রায়  ২০ মিনিট বক্তব্য রাখেন ।

এই সংক্ষিপ্ত ভাষণে তিনি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ নানা বিষয়ে  বলেন। প্রধানমন্ত্রী   বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে  ‘আমরা নিরাপত্তার বিষয়টি খুব গুরুত্বেও  সঙ্গে নিয়েছি।’  এজন্য আমরা স্বাধীন পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠন করা হয়েছে। যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে। পরিবেশ ও মানুষের কোনও ক্ষতি না হয় সে ধরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে এগিয়েছি, পদক্ষেপ নিয়েছি।  এজন্য  সেনাবাহিনী, পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রকল্পের কাজে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের  ট্রেনিংয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু কিছু উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি আছেন যারা সব কিছুতেই ভয় পান। আমরা কিছু করতে গেলেই তারা প্রশ্ন তোলেন। তাদেরকে পরশ্রীকাতর  বলে তিনি পুনরায় মন্তব্য  করেন ।

ইউরোনিয়ামের বর্জ্য রাশিয়া নিয়ে যাবে বলে  তিনি উল্লেখ করেন। তিনি  আরও বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ  কেন্দ্রে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ  বিষয়। বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ  দেশ এ বর্জ্য বহন করতে পারবে না। এ জন্য ‘আমি রাশিয়াকে বলেছি- বর্জ্য তাদের নিয়ে যেতে হবে।’ তারা রাজি হয়েছে। বর্জ্য নিয়ে যাওয়ার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তিও হয়েছে।

সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, একটি স্বাধীন দেশ উন্নত, সমৃদ্ধশালী হবে। স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ  বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে । আমি এবং আমার সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধান মন্ত্রী বলেন, রূপপুরে বিদ্যুৎ  কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১৯৬৬ সালে সিদ্ধান্ত নেওয়া  হয়েছিল। কিন্তু এখানে না করে প্রকল্পটি পাকিস্তানে  নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর যুদ্ধ বিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেন। আমার বলতে দ্বিধা  নেই, সেই প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন বিশিষ্ট পারমাণবিক বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ২১ বছর যারা দেশের ক্ষমতায় ছিল তারা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কোনও উদ্যোগ নেয়নি। ৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে  পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেই। এ জন্য আর্ন্তজাতিক  কিছু নিয়ম কানুন মানতে হয়। সময় লাগে। এর মধ্যে আমাদের ৫ বছর শেষ হয়ে যায়। ২০০১ সালের নির্বাচনে স্বাভাবিকভাবে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসে। আবারও থেমে যাওয়া এই প্রকল্প।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ২০০৮ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা হয়। এর ভিত্তিতে নির্বাচনের পর ক্ষমতায় এসে আমরা আবারও উদ্যোগ নেই এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র্র স্থাপনের। ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর জাতীয় সংসদে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ জন্য আর্ন্তজাতিক  বিভিন্ন সংস্থার সাথে আলাপ-আলোচনা করা হয়। কিন্তু এ প্রকল্পে অনেক অর্থের প্রয়োজন। ‘আমি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট মি. পুতিনকে প্রস্তাব  দিলে তিনি  আমাদের আশ্বাস দিলেন একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে দেওয়ার। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালের ২ নভেম্বর রাশিয়ান ফেডারেশন ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে প্রকল্প নির্মাণে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতার পালাবদলের পর ক্ষমতাসীনরা প্রকল্পটি পরিত্যক্ত করে  দিলেও সত্যি আজ আনন্দের দিন। বাংলাদেশ পরমাণু বিদ্যুতে  বিশ্বে প্রবেশ করলো। ‘মূল কাঠামো তৈরির কাজ শুরু করলাম।’ রাশিয়ার অর্থায়ণে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে  আজ সেই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন হলো।’

এর আগে বৃহস্পতিবার  বেলা ১১ টা ৫০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কংক্রিট ঢালাইকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই  ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ টা ২মিনিটে স্মারক ডাক টিকিট অবমুক্ত করেন। একই সময়ে নির্মাণ কাজের ব্যবহৃত  বেলচা (স্থানীয় ভাষায় কূর্ণি) প্রকল্প সংশ্লিষ্ট রাশিয়ার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন স্মারক হিসেবে।  

সুধী সমাবেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ড. ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে প্রকল্প পরিচিতি তুলে ধরেন রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড.  সৌকত আকবর। স্বাগত বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আনোয়ার হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন,  আর্ন্তজাতিক  পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কমিশনের মহাপরিচালক দৌহি হান এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. আফম রুহুল হক।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন রোসাটম’র মহাপরিচালক আলেক্সি লিখেচিভ। তিনি বলেন, আধুনিক এবং নিরাপদ বিদ্যুৎ প¬ান্ট হচ্ছে রূপপুরে। এ ধরণের প্রকল্প রাশিয়াতে রয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার দেশকে নিউক্লিয়ার যুগে প্রবেশ করিয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি, নির্ধারিত সময় সীমার মধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। পাশাপাশি আর্ন্তজাতিক  মানের এই নিউক্লিয়ার ক্ষেত্র তৈরি হবে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. শওকত আকবর বলেন, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশন (রসাটমের) নেতৃত্বে ২০১৩ সালে শুরু  হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হয়েছে ৫ হাজার ৮৭  কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ। বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে শুরু  হলো ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয় বা শেষ পর্যায়ের কাজ। প্রকল্প পরিচালক আরো জানান, প্রথম ব্যাচের কংক্রিট ঢালাই এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রকল্পটির জেনারেল কন্ট্রাক্ট ও রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশন রসাটমের মহাপরিচালক আলেক্স্রি লিখাচোভ সহ অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ যোগ দেবেন। এ প্রকল্প নির্মাণে প্রতিদিন রাশিয়ার বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশী মিলে প্রায় ১ হাজারের বেশি দক্ষ মানুষ কাজ করছেন।

 

পাবনা থেকে মুরশাদ সুবহানী ও এসএম রাজারূপপুর থেকে দেশের প্রয়োজনের ১০ ভাগ বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে -প্রধানমন্ত্রী পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের  মূল স্থাপনার নির্মাণ  কাজ উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ বেশি হয়। কিন্তু একবার চালু হয়ে গেলে অনেক দিন চলে। রূপপুর কেন্দ্রে  থেকে দেশের প্রয়োজনের ১০ ভাগ বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। তিনি দেশের কতিপয় শিক্ষিত লোকের সমালোচনা করে বলেন,  কিছু লোক আছেন, যারা উচ্চ শিক্ষিত। তারা সব কিছুতে সরকারের বিরোধিতা করেন। বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে এমন লোকদের সম্পর্কে লিখেছেন, ‘পরশ্রীকাতর’। অর্থাৎ এরা অপরের ভালো দেখতে পারে না। এই সব লোকেরা আমাদের করে দেওয়া   টেলিভিশনে বসে সরকারের বিরোধিতায় ইচ্ছে মতো বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বিএনপি’র উদ্দেশ্যে বলেন, একজন ভালো কাজ করলে অপরজনের উৎসাহ থাকে না। তার গা জ্বালা করে। তারা অবান্তর প্রশ্ন করেন । জনগণকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু দেশের উন্নয়নের কথা কখনোই ভাবেন না।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া নেই।’  জাতির জনক আমার পিতা  সপরিবারে জীবন দিয়েছেন। আমি আপনাদের জন্য কিছু করতে চাই। দিয়ে যেতে চাই আগামী প্রজন্মকে নতুন কিছু।’ তিনি বলেন, হাত পেতে নয়, ভিক্ষা নিয়ে নয়, নিজের যা আছে তাই নিয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে চাই,দাঁড়াতে চাই। তিনি আরো বলেন, ৬ বছর দেশে আসতে পারিনি। রিফিউজি হয়ে থাকতে হয়েছে দেশে দেশে।  দেশের মানুষের সকল অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশের মানুষের জন্য নিজের জীবন বাজি রেখেই দেশে পা রেখেছিলাম। ইনশাল্লাহ  দেশটাকে সোনার বাংলায় গড়ে তুলবো। ২০২১ সকালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী  পালন করবো বলে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।  বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে রূপপুরে এক সুধী সমাবেশে এ  কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি  সুধী সমাবেশে প্রায়  ২০ মিনিট বক্তব্য রাখেন ।এই সংক্ষিপ্ত ভাষণে তিনি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ নানা বিষয়ে  বলেন। প্রধানমন্ত্রী   বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে  ‘আমরা নিরাপত্তার বিষয়টি খুব গুরুত্বেও  সঙ্গে নিয়েছি।’  এজন্য আমরা স্বাধীন পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠন করা হয়েছে। যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে। পরিবেশ ও মানুষের কোনও ক্ষতি না হয় সে ধরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে এগিয়েছি, পদক্ষেপ নিয়েছি।  এজন্য  সেনাবাহিনী, পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রকল্পের কাজে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের  ট্রেনিংয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু কিছু উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি আছেন যারা সব কিছুতেই ভয় পান। আমরা কিছু করতে গেলেই তারা প্রশ্ন তোলেন। তাদেরকে পরশ্রীকাতর  বলে তিনি পুনরায় মন্তব্য  করেন ।ইউরোনিয়ামের বর্জ্য রাশিয়া নিয়ে যাবে বলে  তিনি উল্লেখ করেন। তিনি  আরও বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ  কেন্দ্রে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ  বিষয়। বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ  দেশ এ বর্জ্য বহন করতে পারবে না। এ জন্য ‘আমি রাশিয়াকে বলেছি- বর্জ্য তাদের নিয়ে যেতে হবে।’ তারা রাজি হয়েছে। বর্জ্য নিয়ে যাওয়ার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তিও হয়েছে।সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, একটি স্বাধীন দেশ উন্নত, সমৃদ্ধশালী হবে। স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ  বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে । আমি এবং আমার সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধান মন্ত্রী বলেন, রূপপুরে বিদ্যুৎ  কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১৯৬৬ সালে সিদ্ধান্ত নেওয়া  হয়েছিল। কিন্তু এখানে না করে প্রকল্পটি পাকিস্তানে  নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর যুদ্ধ বিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেন। আমার বলতে দ্বিধা  নেই, সেই প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন বিশিষ্ট পারমাণবিক বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ২১ বছর যারা দেশের ক্ষমতায় ছিল তারা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কোনও উদ্যোগ নেয়নি। ৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে  পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেই। এ জন্য আর্ন্তজাতিক  কিছু নিয়ম কানুন মানতে হয়। সময় লাগে। এর মধ্যে আমাদের ৫ বছর শেষ হয়ে যায়। ২০০১ সালের নির্বাচনে স্বাভাবিকভাবে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসে। আবারও থেমে যাওয়া এই প্রকল্প।প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ২০০৮ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা হয়। এর ভিত্তিতে নির্বাচনের পর ক্ষমতায় এসে আমরা আবারও উদ্যোগ নেই এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র্র স্থাপনের। ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর জাতীয় সংসদে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ জন্য আর্ন্তজাতিক  বিভিন্ন সংস্থার সাথে আলাপ-আলোচনা করা হয়। কিন্তু এ প্রকল্পে অনেক অর্থের প্রয়োজন। ‘আমি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট মি. পুতিনকে প্রস্তাব  দিলে তিনি  আমাদের আশ্বাস দিলেন একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে দেওয়ার। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালের ২ নভেম্বর রাশিয়ান ফেডারেশন ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে প্রকল্প নির্মাণে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতার পালাবদলের পর ক্ষমতাসীনরা প্রকল্পটি পরিত্যক্ত করে  দিলেও সত্যি আজ আনন্দের দিন। বাংলাদেশ পরমাণু বিদ্যুতে  বিশ্বে প্রবেশ করলো। ‘মূল কাঠামো তৈরির কাজ শুরু করলাম।’ রাশিয়ার অর্থায়ণে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে  আজ সেই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন হলো।’এর আগে বৃহস্পতিবার  বেলা ১১ টা ৫০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কংক্রিট ঢালাইকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই  ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ টা ২মিনিটে স্মারক ডাক টিকিট অবমুক্ত করেন। একই সময়ে নির্মাণ কাজের ব্যবহৃত  বেলচা (স্থানীয় ভাষায় কূর্ণি) প্রকল্প সংশ্লিষ্ট রাশিয়ার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন স্মারক হিসেবে।  সুধী সমাবেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ড. ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে প্রকল্প পরিচিতি তুলে ধরেন রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড.  সৌকত আকবর। স্বাগত বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আনোয়ার হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন,  আর্ন্তজাতিক  পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কমিশনের মহাপরিচালক দৌহি হান এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. আফম রুহুল হক।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন রোসাটম’র মহাপরিচালক আলেক্সি লিখেচিভ। তিনি বলেন, আধুনিক এবং নিরাপদ বিদ্যুৎ প¬ান্ট হচ্ছে রূপপুরে। এ ধরণের প্রকল্প রাশিয়াতে রয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার দেশকে নিউক্লিয়ার যুগে প্রবেশ করিয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি, নির্ধারিত সময় সীমার মধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। পাশাপাশি আর্ন্তজাতিক  মানের এই নিউক্লিয়ার ক্ষেত্র তৈরি হবে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প।রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. শওকত আকবর বলেন, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশন (রসাটমের) নেতৃত্বে ২০১৩ সালে শুরু  হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হয়েছে ৫ হাজার ৮৭  কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ। বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে শুরু  হলো ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয় বা শেষ পর্যায়ের কাজ। প্রকল্প পরিচালক আরো জানান, প্রথম ব্যাচের কংক্রিট ঢালাই এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রকল্পটির জেনারেল কন্ট্রাক্ট ও রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশন রসাটমের মহাপরিচালক আলেক্স্রি লিখাচোভ সহ অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ যোগ দেবেন। এ প্রকল্প নির্মাণে প্রতিদিন রাশিয়ার বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশী মিলে প্রায় ১ হাজারের বেশি দক্ষ মানুষ কাজ করছেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ