Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা

সড়ক ও রেলের পতিত জমিতে খেজুর গাছ লাগানোর উদ্যোগ

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গ্রামবাংলার ঐতিহ্য আর গৌরবের প্রতীক খেজুর গাছ। যা ‘মধুবৃক্ষ’ নামে পরচিত। আল্লাহপাকের নিয়ামক খেজুরগাছ থেকে ফোঁটা ফোঁটা রস সংগ্রহ করে পুরো শীত মৌসুমে খেজুরের রসে ভিজানো পিঠা ও পায়েস খাওয়ার ধুম পড়ে গ্রাম জনপদে। একসময় খেজুর রস, গুড় ও পাটালির বিরাট খ্যাতি ছিল। তখন গ্রামে মাঠে সারি সারি ছিল খেজুরের গাছ। এখন একবারেই কমে গেছে। খেজুর গাছ চোখে পড়ে খুব কম। যার জন্য সেই খেজুর গুড় আর নেই। কিছু কিছু এলাকায় পাওয়া যায় ঠিকই কিন্তু পর্যাপ্ত নয়। গুড় ও পাটালিতে ভেজালের কারবারও শুরু হয়েছে। খেজুরের এককাট রসের তৈরী দানা, ঝোলা ও নলেন গুড়ের স্বাদ ও ঘ্রাণই আলাদা। রসনা তৃপ্তিতে এর জুড়ি নেই। গৌরব আর ঐতিহ্য এখনো ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
দরকার শুধু সরকারী উদ্যোগের। সরকারী পৃষ্টপোষকতা ও উদ্যোগ নেয়া হলে দেশের চাহিদাপূরণ ছাড়াও প্রতিবছর বিদেশে গুড় ও পাটালি রফতানী করে কাড়ি কাড়ি টাকা আয় করা সম্ভব বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তাদের কথা, এর জন্য বাড়তি খরচ কিংবা আবাদী জমি নষ্ট করার প্রয়োজন পড়বে না। দেশের সড়ক পথ, রেল পথ, জমির আইল, পতিত জমি ও বাড়ীর আঙ্গিনায় কোটি কোটি খেজুর গাছ লাগানো সম্ভব। তাতে সমৃদ্ধ হবে গুড় শিল্প। উম্মোচিত হবে দেশের অর্থনীতির এক নতুন দ্বার।
দেশের মধ্যে যশোর অঞ্চলে খেজুরের রস গুড় পাটালির জন্য বরাবরই বিখ্যাত। এই বিখ্যাত হওয়ার কারণ এখানে একসময় খেজুরের গুড় থেকে ব্রাউন সুগার ‘বাদামী চিনি’ উৎপাদন হতো। শুধু দেশে নয়, বাংলার খেজুর গুড়, পাটালি ও বাদামী চিনির দারুণ ও খ্যাতি ছিল সারা বিশ্বেই। যা এখন শুধুই ইতিহাস। চিনি তো দুরের কথা, সরকারী উদ্যোগের অভাবে খেজুর গুড় শিল্পটি চলছে খুঁড়িয়ে। বর্তমান অবস্থায় চললে নিকট ভবিষ্যতেই শিল্পটির অপমৃত্যু ঘটবে। তাই এখনো সময় আছে সব শেষ হয়ে যাবার আগেই একটা পরিকল্পনা নেয়া দরকার। কিভাবে শিল্পটির রমরমা অবস্থা ফিরিয়ে আনা যায় তার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের অভিমত খুব সহজেই খেজুর গাছ লাগিয়ে গুড় ও পাটালি উৎপাদন করা সম্ভব। অতীতে অপরিকল্পিতভাবেই জন্মানো খেজুর গাছ থেকে পর্যাপ্ত রস সংগ্রহ হতো। যা থেকে উৎপাদন হতো পাটালি, গুড় ও চিনি। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় বিশ্বের কোথাও কখনো বাদামী চিনি উৎপাদন সম্ভব হয়নি। শুধুমাত্র বাংলাদেশে উৎপাদন হতো। ১৮৬১ সালে যশোরের চৌগাছার তাহেরপুরে কপোতাক্ষ নদের পাড়ে ইংল্যান্ডের মিঃ নিউ হাউস কারখানা স্থাপন করে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ব্রাউন সুগার উৎপাদন করে বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হন।
যশোর গেজেটিয়ারের এক তথ্যে জানা যায়, ১৮৭৪ সালে চৌগাছা-কোটচাঁদপুরের কারখানাগুলো থেকেই ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪শ’ ৭৫ মন চিনি পাওয়া যেত। ১৯০১ সালের দিকে বাংলাদেশে মোট ২১ লাখ ৮০ হাজার ৫শ’ ৫০ মন চিনি উৎপাদিত হত। এরমধ্যে শুধু যশোরেই উৎপাদিত হত ১৭ লাখ ৯ হাজার ৬০ মন চিনি। তখন খেজুরের গুড়ে ব্রাউন সুগার উৎপাদনকে ঘিরে বিশাল বাণিজ্য চলতো। তাহেরপুরে কপোতাক্ষ নদের ঘাটে এসে ভীড় করত দেশী বিদেশী জাহাজ। মূলত একটি বাণিজ্যিক নগর হিসাবে গড়ে ওঠে তাহেরপুর। ১৮৮০ সাল পর্যন্ত মিঃ নিউ হাউসের ব্রাউন সুগার কারখানাটি চলে। পরে তিনি কারখানাটি বিক্রি করে স্বদেশে ফিরে যান। কারখানাটি ক্রয় করে ইংল্যান্ডের ‘এমেট এ্যান্ড চেম্বার্স কোম্পানি’। তারাও নানা কারণে ১৮৮৪ সালে বিক্রি করে দেন বালুচরের জমিদার রায় বাহাদুর ধনপতি সিংহের কাছে। ১৯০৬ সালে তাঁর মৃত্যু হলে তাঁর বংশধররা এটি চালাতে ব্যর্থ হন। এরপর ১৯০৯ সালে কাশিমবাজারের মহারাজ মনীন্দ্রচন্দ্র, নাড়াজোলের রাজ্যবাহাদুর ও কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সারদাচারণ মিত্রসহ কয়েকজন মিলে কারখানাটি ক্রয় করে নাম দেন ‘তাহেরপুর চিনি কারখানা’। নতুন ব্যবস্থাপনায় বৃটেন, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশেষজ্ঞ আনা হয় কারখানাটিতে। ১৯১৫ সালের দিকে এটি বন্ধ ঘোষনা করা হয়। এরপর আর কোনদিন কারখানাটি উৎপাদনের মুখ দেখেনি। কালেরগর্ভে হারিয়ে যাওয়া বাংলার ঐতিহ্য ব্রাউন সুগার কারখানা চালু করা সম্ভব না হলেও খেজুরের গুড় ও পাটালির ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞদের কথা,অযত্ম ও অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছের জন্য বাড়তি জমির প্রয়োজন হয় না। কোন খরচ নেই কিন্তু পুরোটাই লাভ। উপরন্তু ভূমি ক্ষয়, আবহাওয়ার ভারসাম্য রক্ষা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগরোধে ভুমিকা রাখে খেজুর গাছ। দেশের সড়ক পথ, রেল পথ, জমির আইল, পতিত জমি ও বাড়ীর আঙ্গিনায় কোটি কোটি খেজুর গাছ লাগানোর সুযোগকে লাগানো হচ্ছে না।



 

Show all comments
  • আমিনুল ইসলাম ৩০ নভেম্বর, ২০১৭, ১:৪৫ এএম says : 0
    খুবই ভালো উদ্যোগ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেল

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ