Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সউদী আরবে পাঁচ তারা হোটেল মানের জিহাদি পুনর্বাসন কেন্দ্র

শুধু নির্যাতন দিয়ে উগ্রবাদের সমাধান হয় না

এএফপি | প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনডোর সুইমিং পুল, সূর্যালোকিত আঙ্গিনা ও ঊর্দিপরা স্টাফ সমন্বিত সউদী কমপ্লেক্সটিতে পাঁচতারকা হোটেলের জাঁকজমক রয়েছে, কিন্তু আসলে এটি হচ্ছে সহিংস জিহাদিদের পুনর্বাসন কেন্দ্র।
কারাগার ও স্বাধীন জীবনের মাঝামাঝি একটি আরামদায়ক বাড়ি রিয়াদের মোহাম্মদ বিন নায়েফ কাউন্সেলিং ও কেয়ার সেন্টার দেশীয় উগ্রপন্থীদের মোকাবেলায় এক বিতর্কিত কৌশলের কথা তুলে ধরে। ড্রোন হামলা ও নির্যাতন যখন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ^ব্যাপী লড়াইয়ের প্রায় অঙ্গে পরিণত হয়েছে সেখানে এই কেন্দ্রের দর্শন হচ্ছে শুধু নির্যাতন দিয়ে উগ্রবাদের সমাধান হয় না, প্রয়োজন মতাদর্শগত নিরাময়। ধর্মীয় নেতা ও মনস্তাত্তি¡কদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ সেন্টার জিহাদ থেকে ফিরে আসা দন্ডভোগকারী ব্যক্তিদের ধর্মীয় কাউন্সেলিং ও মতাদর্শগত বিষমুক্ত করার জন্য কাজ করে।
সেন্টারের একজন পরিচালক ইয়াহিয়া আবু মাগায়েদ বলেন, আমরা তাদের চিন্তা, ভুল ধারণা সংশোধন, ইসলাম থেকে তাদের বিচ্যুতি সংশোধনের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করেছি।
কম উচ্চতা বিশিষ্ট বাড়িগুলোতে বড় পর্দার টেলিভিশন ও বিশাল সাইজের খাট সজ্জিত কক্ষে দন্ডিত ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে। ঘরের বাইরে রয়েছে সুসজ্জিত লন।
আল কায়েদা ও তালিবানের সাথে মত গ্রæপগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট দন্ডিত এ সব ব্যক্তি সাদা পোশাক পরে অবাধে সর্বত্র ঘুরে বেড়ায়। বিরাট জিম, ব্যাংকোয়েট হলে তাদের প্রবেশাধিকার রয়েছে। তাদের স্ত্রীরা পরিদর্শনে এলে রয়েছে তাদের জন্য আছে সুসজ্জিত অ্যাপার্টমেন্ট।
আবু মাগায়েদ বলেন, আমরা তাদের স্বাভাবিক জীবনের পরিবেশ দিয়েছি। তাদের এখনো সমাজে ফিরে যাওয়ার সুযোগ আছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সেন্টার তাদের কাউেেক বন্দী বা কয়েদী বলে ডাকে না।
যে সউদী আরবের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে বিশ^্যাপী উগ্ররক্ষণশীল ওয়াহাবিবাদী সুন্নী মতবাদ রফতানির অভিযোগ রয়েছে সেই সউদী আরব নিজেই দেশী সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার।
দেশে উগ্ররক্ষণশীল ধর্মীয় মহলের প্রভাব খর্ব করতে ইচ্ছুক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এ সপ্তাহে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গঠিত ৪১ জাতি ইসলামী সামরিক জোটের বৈঠক উদ্বোধন কালে পৃথিবী থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের শপথ ব্যক্ত করেন।
দেশে সহিংস উগ্রপন্থা নির্মূলে সউদী আরবের কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ২০০৪ সালে এ পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখানে গুয়ান্তানামো বে’র আটক ব্যক্তিরাসহ সন্ত্রাস সংশ্লিষ্ট অপরাধে দন্ডিত ৩ হাজার ৩শ’রও বেশি ব্যক্তির চিকিৎসা করা হয়েছে।
মাগায়েদ বলেন, সেন্টারের সাফল্যের হার ৮৬ শতাংশ। যে সব ব্যক্তি এ সেন্টার থেকে স্নাতক হওয়ার পর কমপক্ষে এক দশক জিহাদে প্রত্যাবর্তন করেননি তাদের ভিত্তিতেই এ হিসাব করা।
তিনি বলেন, বাকিদের মধ্যে অধিকাংশই বিপথগামী আচরণের লক্ষণ প্রদর্শন এং অতি ক্ষুদ্র সংখ্যক সহিংস জিহাদে ফিরে যেতে চেয়েছে।
সউদী কৌশল খুব ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন এমন একজন আমেরিকান সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ আবার যুদ্ধক্ষেত্রে দেখা যাওয়া সেন্টারের স্নাতকদের সম্পর্কে সংবাদপত্রের খবরের উল্লেখ করে বলেন, অপরাধ প্রবণতার হার উচ্চ।
জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির আরেকজন বিশেষজ্ঞ জন হোরগান এএফপিকে বলেন, সউদীরা যে ভিন্ন কিছু করছে এ জন্য তাদের প্রশংসা করতে হয়। তারা অন্যতম প্রথম যারা কথা বলার মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসবাদমুক্ত করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, অংশগ্রহণকারীদের ব্যাপারে বৃহত্তর স্বচ্ছতা ছাড়া তাদের মধ্যে মূলবোধ সঞ্চারের বিষয়টি বা এ কর্মসূচি সন্ত্রাসবাদে পুনরায় তাদের জড়িত করেছে কিনা তা জানা অসম্ভব।
এএফপিকে এ সেন্টারে চিকিৎসা গ্রহণকারীদের সাথে তাদের সম্মতি সাপেক্ষে সাক্ষাতকার গ্রহণের একটি সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু দু’জন দাড়িওয়ালা, জিমে শরীর চর্চাকারী ব্যক্তিকে সাক্ষাতকারের জন্য অনুরোধ করলে তারা অস্বীকৃতি জানান।
সমালোচকরা বলেন, জিহাদিদের অনেকেরই হাত রক্তরঞ্জিত। বিলাস সুবিধায় থাকা ও আর্থিক সমর্থন প্রাপ্ত জিহাদিদের সাথে আচরণে নৈতিক সমস্যা রয়েছে।
কিন্তু সউদী কর্মকর্তারা বলেন, তাদের উপর সব সময় নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি ঝুলছে।
সেন্টারে অবস্থানের ন্যূনতম তিন মাসেও যদি কেউ নিজেকে বদলাতে না চায় তাদেরকে বিচার প্রক্রিয়ার সম্মুখীন করা হয়। তবে তাদের উপর নির্যাতন চালানোর বদলে সেন্টার তাদের পারিবারিক বন্ধন বাড়ানো, বিয়ে ও সন্তান গ্রহণে উৎসাহিত করে যাতে সহিংসতার পথে আবার ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে তারা মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়।
সেন্টারের শিক্ষাগত মনস্তত্ত¡ বিশেষজ্ঞ আলি আল -আফনান বলেন, আপনি শক্তি দিয়ে সন্ত্রাস মোকাবেলা করতে পারবেন না।
সেন্টার তাদের উপকরণ হিসেবে আর্ট থেরাপিও ব্যবহার করে। দন্ডিতদের মধ্যে যারা ছবি আাঁকা জানেন তাদের সে সুযোগ দেয়া হয়। তাদের মনের পরিস্থিতি বোঝার জন্য তাদের কারারুদ্ধ হওয়ার আগের ও পরের ছবিগুলোর তুলনা করা হয়। মাগায়েদ এএফপিকে আগের একটি ছবি দেখান যাতে কমলা রঙের আঁচড় দিয়ে বিষন্ন ‘গুয়ান্তানামো মানসিকতা’ প্রদর্শিত হয়েছে। কুখ্যাত ঐ কারাগারে কমলা ছিল জাম্পস্যুটের রং।
কয়েক সপ্তাহ পর ক্যানভাসে আঁকা তাদের ছবিতে তুলির আঁচড় ও রঙের ব্যবহারে ঔজ্জ্বল্য চোখে পড়ে যা আশাবাদের পরিচায়ক।
আফনান সেন্টারে থাকা সুফলপ্রাপ্ত এক ব্যক্তির টেলিফোনের কথা উল্লেখ করেন। ঐ ব্যক্তি লড়াই করতে গিয়েছিল আফগানিস্তানে। এখন সে বিবাহিত ও তার সন্তান আছে। সে স্নাতক কর্মসূচিতে বিশ^বিদ্যালয়ে ফেরার ব্যাপারে তার সাথে পরামর্শ করে। আফনান বলেন, এ ব্যক্তি আমাদের রোল মডেল। তিনি বলেন, বন্দীরা যে দ্বিতীয় একটি সুযোগ চায়, এ ব্যক্তি তার প্রমাণ।



 

Show all comments
  • রেজবুল হক ৩০ নভেম্বর, ২০১৭, ১:৫১ এএম says : 0
    উদ্যোগটি আমার কাছে ভালোই মনে হচ্ছে
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul wakil ৩০ নভেম্বর, ২০১৭, ৪:৫০ এএম says : 0
    Thanks election comition
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সউদী আরব


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ