পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের রিয়াক্টর ভবনের প্রথম কংক্রিট ঢালাইয়ের মাধ্যমে মূল কাজের উদ্বোধন হচ্ছে আগামীকাল (৩০ নভেম্বর)। এ কাজের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রকল্পের কংক্রিট ঢালাইয়ের কাজের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব পরমাণু ক্লাব (নিউক্লিয়ার নেশন)-এ যুক্ত হবে। বাংলাদেশ হবে এই ক্লাবের ৩২তম দেশ। বর্তমানে বিশ্বের ৩১টি দেশে ৪৫০টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিট চালু আছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় কাজ আর হয়নি। আগামী ৩০ নভেম্বর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কংক্রিট ঢালাই উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব পরমাণু ক্লাবে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। এটা আমাদের একটা মাইলফলক অর্জন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এ কাজের উদ্বোধন করবেন। গতকাল মঙ্গলবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো: আনোয়ার হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, রাশিয়ার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, আর্থিক সহায়তা ও সার্বিক তত্ত¡াবধানে এই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংস্থা আণবিক শক্তি কর্পোরেশন-রোসাটম এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এএসই গ্রুপ অব কোম্পানিজ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে পাবনা জেলার রূপপুরে পদ্মার পাড়ে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প বাস্তবায়নের মোট ব্যয়ের ৯০ শতাংশ অর্থ ঋণে সরবরাহ করছে রাশিয়া। এ প্রকল্পে রাশিয়ার উদ্ভাবিত সর্বাধুনিক ৩+ প্রজন্মের (থ্রি প্লাস জেনারেশন) ভিভিইআর ১২০০ প্রযুক্তির পারমাণবিক চুল্লি ব্যবহার করা হবে। প্রতিটি ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দু’টি ইউনিট স্থাপন করা হবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে। আগামী ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট এবং পরের বছর ২০২৪ সালে দ্বিতীয় দ্বিতীয় ইউনিট চালু হবে। সরকারের ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পের অধীন এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ইতোমধ্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হয়েছে পাঁচ হাজার ৮৭ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ। চলছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজও শেষ। এরই অংশ হিসেবে ৩০ নভেম্বর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বিদ্যুৎ প্রকল্পের মূল স্থাপনার রিঅ্যাক্টর বিল্ডিং (উৎপাদন কেন্দ্র) নির্মাণকাজ। দুই পর্যায় মিলে এক লাখ ১৮ হাজার ১৮০ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটির কাজ ২০১৩ সালে শুরু হয়। প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে। দুই ইউনিটের এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২৪শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। প্রকল্পের জন্য থ্রি প্লাস রিঅ্যাক্টর বসবে। যেটি বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ ও আধুনিক প্রযুক্তি, যা কেবল রাশিয়ায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে রয়েছে। বাংলাদেশের রূপপুরেই হবে এর দ্বিতীয় ব্যবহার। ২০২০ সালের মধ্যে রিঅ্যাক্টর ভেসেলসহ সব যন্ত্রপাতিই রাশিয়া থেকে আসবে। পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয়ের কারণে এবং রাশিয়ান ফেডারেশনের নির্মিত প্রযুক্তির অ্যাকটিভ ও প্যাসিভ সেফটি সিস্টেমের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময় কোনো ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি নেই। এর পরও যদি অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, এর তেজষ্ক্রিয় পদার্থ জনগণের নাগালের মধ্যে যাবে না। এরই মধ্যে মূল স্থাপনার জন্য সয়েল স্টাবলিস্টমেন্টের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের মাটি তুলনামূলক নরম হওয়ায় যন্ত্রের সাহায্যে মাটির অনেক গভীর পর্যন্ত সিমেন্ট মিশিয়ে দেয়া হয়। এভাবে ১৭ হাজার ৪৫০ কিউবিক মিটার কংক্রিটিং করা হবে। প্রথম পর্যায়ে চার হাজার কিউবিক মিটারের কাজ শেষ হয়েছে। মূল স্থাপনার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হবে ৭০ মিটার করে, আর ফাউন্ডেশনের থিকনেস হবে ৩ মিটার। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রথম পর্যায়ে ২৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করা ছিল। কিন্তু তা পর্যাপ্ত না হওয়ায় ইতোমধ্যে ৮০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরো ২১৯ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। নতুনভাবে অধিগ্রহণ করা পদ্মার বিশাল চরে চলছে মাটি ভরাটের কাজ। অন্যদিকে মূল প্রকল্প এলাকার বাইরে তৈরি হচ্ছে গ্রিন সিটি আবাসন পল্লী। পাবনা গণপূর্ত অধিতদফতর এগুলো বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যে তিনটি সুউচ্চ ভবনের কাজ শেষ হয়েছে। এ এলাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২০তলা মোট ১১টি ভবন এবং ১৬তলা আটটি ভবনের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। মোট ২২টি সুউচ্চ ভবন নির্মিত হবে এ চত্বরে। এ ছাড়া থাকবে মাল্টিপারপাস হল, মসজিদ ও স্কুলসহ বিভিন্ন স্থাপনা। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. মো: শওকত আকবর ইনকিলাবকে জানান, প্রকল্পের সব কাজই মূল কাজ বলা চলে। এ কাজ শুরুর দিনটি দেশের পারমাণবিক বিদ্যুতের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য দিন হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।