পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চায় পানি উন্নয়ন বোর্ড
ঢাকা শরহরক্ষা বেড়িবাঁধের দৈর্ঘ্য ৩৫ কিলোমিটার। বন্যা থেকে রক্ষার জন্য নির্মিত এই বেড়িবাঁধের ৩২ কিলোমিটারের দু’পাশ দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। প্রায় ১৫শ’ প্রভাবশালী ব্যক্তি অবৈধভাবে বেড়িবাঁধ দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করায় বাঁধ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে প্রতি বছর উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে তা বাস্তবায়ন হয় না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা না থাকায় এসব জমি উদ্ধার করা যাচ্ছে না। এসব জমির মূল্য দশ হাজার কোটি টাকা হবে। এদিকে ঢাকা শহর রক্ষার জন্য অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় ঢাকা জেলা প্রশাসককে ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে চিঠি দিলেও সাড়া পায়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। ইতোমধ্যে ঢাকা জেলা প্রশাসক ও সিটি কর্পোরেশন যৌথভাবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ৪শ’ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করেছে বলে ডিসি অফিস সূত্রে জানা গেছে।
১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বন্যা হয়। তখন যমুনার পানি বিপদসীমার ১১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অবশ্য এবার সেটি ১২২ সেন্টিমিটার উঠে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। তাতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৯৫ শতাংশ পানিতে তলিয়ে যায়। তখন ঢাকা মহানগরীকে বন্যার হাত থেকে রক্ষার জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নব্বই দশকের শুরুতে দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতুর পাদদেশ বাদামতলী-বাবুবাজার, সোয়ারীঘাট, রায়েরবাজার, বসিলা, মোহাম্মদপুর তিন রাস্তা, গাবতলী হয়ে টঙ্গীর আবদুল্লাহপুর ব্রিজ পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করে। ঢাকা শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণের পর একশ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা- কর্মীরা বাঁধের উভয় পাশে অবৈধভাবে দখল করে গড়ে তোলেন ব্যক্তিগত দোকান, বাসা-বাড়ি, স্কুল-কলেজ, গরুর খামার, হাউজিং কোম্পানী, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং বড় বড় শিল্প কারখানা।
ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো বেড়িবাঁধের অবৈধ দখলদার ও প্রতিষ্ঠানের মালিকরা হলেন- জাকের ডেইরি ফার্মের মালিক মো: আনোয়ার হোসেন; তার দখলে ৩ দশমিক ৬৮৯ শতাংশ। মেসার্স এমকে খান টিআর অ্যান্ড স’মিল মালিক মো: মোশারফ হোসেন খানের দখলে ৬ দশমিক ৪২৮ শতাংশ। মো: রফিক মিয়া মৌজা রামচন্দ্রপুর ১ দশমিক ৩৭৭ শতাংশ। মেসার্স ওয়েলকাম টিআর অ্যান্ড স’মিলের মালিক মো: সাইফুল ইসলাম, তার দখলে ৪ দশমিক ৮২১ শতাংশ জমি। মেসার্স ওকে টিআর স’মিলের মালিক মো: বরকত মিয়া ৪ দশমিক ৮২২ শতাংশ দখল করেছেন। মো: দাউদ হোসেন, পিতা-মরহুম মো: আবুল হোসেন ৪৫৯ শতাংশ দখল করে টিনশেড স’মিল করা হয়, সিরাজ মিয়া দখলে ৫৫১ শতাংশ এর মধ্যে টিনশেড বাড়ি। মো: সিরাজ, পিতা-মরহুম আবুল হাসেম ২৭৫ শতাংশ দখল করে চা দোকান করেছেন। আন্তঃট্রাক চালক ইউনিয়ন দখল করেছে ৬৮৯ শতাংশ, মেসার্স জসিম অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ ৫৬৯ শতাংশ। মিসেস নাজমা বেগম, স্বামী-মো: আবুল কাশেম ১ দশমিক ৩৭৭ শতাংশ। খোকন মিয়া ২৩০ শতাংশ। মোহাম্মদ হোসেন, পিতা- মরহুম মো: হাফেজ ১ দশমিক ৩৭৭ শতাংশ দখল নিয়েছেন। শহিদুল ইসলাম অবৈধ দখল নিয়েছেন ২৭৫ শতাংশ। ফয়সাল হোসেন, পিতা-ফারুক হোসেন ১৪৭ শতাংশসহ তারা সকলেই রামচন্দ্রপুর মৌজার জমি দখলে নিয়েছেন। মোহাম্মদপুর এলাকার মো: হানিফ অ্যান্ড কোম্পানির মালিক হাজী মো: নান্নু মিয়া ৮ দশমিক ০৩৫ শতাংশ জমিতে ৭ম তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তবে তাকে নোটিশ দেয়া হয়েছে অনেকবার, তাতেও কাজ হয়নি। হাজী মো: আবু হানিফ কোম্পানী গং পিতা-হাজী নান্নু মিয়া ২ দশমিক ৭৫৫ শতাংশ জমি অবৈধ দখলে নিয়েছেন। মেসার্স আনিসা অটোমোবইল ওয়ার্কশপের মালিক মো: নাসিম আহম্মেদ বুলু। তার দখলে ১ দশমিক ৩৭৭ শতাংশ। মেসার্স মোল্লা এন্টারপ্রাইজের মালিক মো: আবু সাঈদ ২ দশমিক ৬৬ শতাংশসহ অনেকেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাজধানী মোহাম্মদপুরের বরাব মৌজার জমি দখল নিয়েছেন। মো: লোকমান হোসেন ভুইয়া গোড়ান চটবাড়ি লালটেক শাহআলী পাকা বাড়ী নির্মাণ করেছেন ৩৪৪ শতাংশ জমিতে। কৃষিবিদ নার্সারি বিক্রয় কেন্দ্র-১ কৃষিবিদ গার্ডেন সিটি চটবাড়ি মিরপুর ১ দশমিক ১৪৮ শতাংশসহ তিন শতাধিক ব্যক্তি গোড়ান চটবাড়ি মৌজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে।
মেগা স্টিল সিস্টেম লি:-এর মালিক মো: কাওসার হোসেন, নবাবেরবাগ শাহ আলী থানা এলাকার ২ দশমিক ৮৭০ শতাংশ জমি অবৈধভাবে দখল করেছেন। শাহিদা বেগম, স্বামী-আসলাম উদ্দিন নবাবেরবাগ এলাকায় ৬৮৯ শতাংশ জমি দখলে নিয়েছেন। মো: এমদাদ বিশিল শাহআলী মৌজার ৬ দশমিক ১৮৯ শতাংশ জমি দখলে নিয়েছেন।
এদিকে, ২০০২ সালে প্রথম পাউবো বাঁধের ওপর সড়ক নির্মাণ করে। তখন এর দায়িত্ব ছিল পাউবোর। পরে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০০৮ সালে বেড়িবাঁধ সড়কটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর থেকে বেড়িবাঁধ সড়কের দেখাশোনা করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। ২০১০ সালের শুরুতে সওজ অধিদপ্তর প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ সড়কের বাবুবাজার-গাবতলী অংশ মেরামত করে। কিন্তু নিম্নমানের মেরামত সামগ্রী হওয়ায় কিছুদিন পরই সড়কটি ভাঙতে শুরু করে। এখনো সড়কটি ভাঙা ও বড় বড় গর্ত হয়ে আছে। ২০১১ সালে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন রাস্তার ওপর গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ঢাকা জেলার একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চলে। উচ্ছেদ অভিযানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় উপস্থিত ছিল মোহাম্মদপুর থানা ও রায়েরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ হয়ে হাজারীবাগ ও গাবতলী যাওয়ার রাস্তাগুলো দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে বস্তিবাসীরা।
এদিকে অবৈধ দখলে থাকা মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার জাকের ডেইরি ফার্মের মালিক মো: আনোয়ার হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকা সঠিকভাবে হয়নি। কারণ আমি দখল করেছি ঠিক, কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডে লিজের জন্য আবেদন করছি। তারা আমাকে এখনো কোনো চিঠি দেয়নি।
সদরঘাটে গাবতলী থেকে বাসযাত্রী শিক্ষক ফাতেমা বলেন, বেড়িবাঁধের রাস্তা এখন চলাচল উপযোগী নয়, বালু আর দুই পাশে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তার জন্য বেড়িবাঁধ আর চেনার উপায় নেই।
ঢাকা পওর বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আইনুল হক ইনকিলাবকে জানান, ঢাকা শহর সমন্বিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ১৫শ’ কিলোমিটার খেকে ১৮৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য চলতি বছর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে আরো বৃদ্ধি করা হবে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম মমতাজ উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, আমি আজকে দায়িত্ব নিয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি বিভিন্ন ব্যক্তি অবৈধভাবে দখল করেছে। দখল হওয়া জমি উদ্ধারে কাজ চলছে। ঢাকা শহরে যারা জমি দখল করেছে তারা অনেক প্রভাবশালী। তাদের কাছ থেকে জমি উদ্ধার করতে হলে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রয়োজন। আমরা এসব জমি উদ্ধারের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।