Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিআরটি হচ্ছে বিমানবন্দর থেকে কেরানীগঞ্জ

নকশা চূড়ান্ত : ব্যয় হবে ৪৭৪৭ কোটি টাকা : প্রকল্পের মেয়াদ ৩ বছর

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাজধানীর যানজট নিরসনে বিমানবন্দর থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণ করা হবে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এটির নকশা চূড়ানÍ করা হয়েছে। বিমানবন্দর-কেরানীগঞ্জ (দক্ষিণ) বিআরটি প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দর সড়ক থেকে কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল পর্যন্ত ২২ দশমিক তিন কিলোমিটার দীর্ঘ বিআরটি নির্মাণে ব্যয় হবে ৪ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা। অথচ নকশা প্রণয়নকালে প্রাথমিক হিসাবে এ ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ নকশা চূড়ান্ত করতেই ইতোমধ্যে দুই হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা বা ১৩৭ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এ রুটে থাকা একাধিক ফ্লাইওভারের কারণে এটির নকশা তিন দফা পরিবর্তন করতে হয়। এতে নকশা চূড়ান্ত করতে বিলম্ব হয়েছে। আর এর মধ্যেই ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেছে। যদিও বিআরটি প্রকল্পে প্রস্তাবিত ফ্লাইওভারটি বাদ দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিআরটি ব্যবস্থা চালুতে খুব বেশি কাজের প্রয়োজন হয় না। বিদ্যমান সড়কের দুই পাশে ডিভাইডার দিয়ে বাসের জন্য পৃথক লেন করলেই চলে। আর বাসে ওঠানামার জন্য কিছু স্টপেজ তৈরি করতে হয়। এক্ষেত্রে ভূমি থেকে দুই-তিন ফুট উঁচুতে ছাউনির ব্যবস্থা করতে হয়। বাস স্টপেজের সামনে থামার পর সোজা হেঁটে তাতে ওঠে যান যাত্রীরা। আর চলাচলের রুটের মধ্যে কোনো জংশন (মোড়) থাকলে সেখানে বিআরটির বাসকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রতিটি মোড়ে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা স্থাপনের প্রয়োজন পড়ে। বাস মোড়ের কাছাকাছি আসার পর সিগন্যাল বাতি জ্বলে। এতে মোড়ে অন্যান্য যানবাহন বন্ধ করে বিআরটির বাসকে আগে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এসব কারণে বিআরটি নির্মাণে ব্যয় অনেক কম হয়। যদিও বাংলাদেশে বিআরটি নির্মাণ খুবই ব্যয়বহুল বলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মানদন্ডে বিআরটি নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হয় ১০ থেকে ৩০ লাখ ডলার। কিন্তু বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। সে হিসাবে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত বিআরটি নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হচ্ছে আড়াই কোটি ডলারের বেশি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পটির আওতায় বিআরটি লাইন ও বাস ডিপো নির্মাণে তিন দশমিক ৪৮ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে, যার প্রায় সম্পূর্ণটাই সরকারি। তবে বেসরকারি কিছু জমিও লাগবে। সব মিলিয়ে জমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে ১ হাজার ১০৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আর ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে ব্যয় হবে ২৬৭ কোটি ৬০ লাখ। এছাড়া বিআরটির জন্য আর্টিকুলেটেড (দুই বগির জোড়া লাগানো) বাস কেনায় ব্যয় হবে ৩৯২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ ছাড়া মূল বিআরটি লাইন, ইন্টারসেকশন মডিফিকেশন, স্টেশন, আন্ডারপাস, বক্স কালভার্ট, সেতু ও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণে ব্যয় হবে এক হাজার ১৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর পাশাপাশি ফিডার সড়ক উন্নয়ন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার ও ফুটপাত নির্মাণে ব্যয় হবে ৪৮৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় মহাখালী বাস টার্মিনাল সংস্কার ও বাস ডিপো নির্মাণে ব্যয় হবে এক হাজার ১৬৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা, কেরানীগঞ্জে বাস ডিপো নির্মাণে ১৩২ কোটি ৫০ লাখ, ইন্টালিজেস্ট ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম স্থাপনে ১২৩ কোটি, স্বয়ংক্রিয় ভাড়া আদায় ও টিকেটিং ব্যবস্থায় ৫২ কোটি টাকা ব্যয় হবে। সব মিলিয়ে ব্যয় হবে চার হাজার ৭৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। প্রকল্প সূত্র জানায়, বর্তমানে বিমানবন্দর সড়ক থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ২০ দশমিক দুই কিলোমিটার দীর্ঘ বিআরটি উত্তরের নির্মাণকাজ চলছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৩৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে প্রায় ১০১ কোটি টাকা। যদিও এর আওতায় আট লেনের টঙ্গী সেতুসহ সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। এর বাইরে আরও সাতটি ছোট ফ্লাইওভার রয়েছে। আবার প্রকল্পটির আওতায় বিশদ নকশা প্রণয়নও রয়েছে।
প্রকল্পের বিস্তারিত নকশায় বলা হয়েছে, বিমানবন্দর থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত রুটে দৈনিক সাড়ে ছয় লাখ মানুষ যাতায়াত করে। অনিয়ন্ত্রিত বাস রুটের কারণে এতে যানজট লেগেই থাকে। তাই এ রুটে বিআরটি নির্মাণ করা জরুরি। পুরো রুটে বাস স্টপেজ থাকবে ১৬টি। এগুলো হলো- খিলক্ষেত, কুড়িল, ক্যান্টনমেন্ট, কাকলী, আমতলী, মহাখালী বাস টার্মিনাল স্টেশন, বিজি প্রেস, মগবাজার, বেইলি রোড, কাকরাইল, পল্টন, গুলিস্তান, স্টেডিয়াম, নয়াবাজার, কদমতলী ও কেরানীগঞ্জ। এর মধ্যে আমতলী ও মহাখালী স্টপেজ হবে উড়ালপথে (এলিভেটেড)। বাকিগুলো হবে ভূমির সমতলে। ফ্লাইওভারসহ পুরো বিআরটি নির্মাণের সময়কাল ধরা হয়েছে তিন বছর। তবে প্রস্তাবিত শান্তিনগর-ঝিলমিল ফ্লাইওভারের জন্য এটি পুরোটা একবারে নির্মাণ করা যাবে না। এক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে বিমানবন্দর থেকে মহাখালী বাস টার্মিনাল পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে। আর সেখান থেকে দুই রুটে ফিডার বাস সার্ভিস চালু করা হবে। একটি ফিডার মহাখালী থেকে ফার্মগেট ও অন্যটি মহাখালী থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত যাতায়াত করবে।

 



 

Show all comments
  • তানিয়া ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ২:১৩ এএম says : 0
    নির্ভুলভাবে যেন প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়
    Total Reply(0) Reply
  • জহির ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:৩১ পিএম says : 0
    প্রকল্পতো ভালোই। এখন দেখা যাক বাস্তবায়ন কতটুকু হয়
    Total Reply(0) Reply
  • মাহমুদ ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ৪:৩৩ পিএম says : 0
    এই ধরনের আরো কিছু ভালো প্রকল্প হাতে নেয়া হোক
    Total Reply(0) Reply
  • নাঈম ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ৫:১০ পিএম says : 0
    ঢাকাকে নিয়ো আরো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা জরুরী। না হলে অল্প দিনের মধ্যে এই শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • শফিক ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ৫:১১ পিএম says : 0
    প্রকল্পের মেয়াদের মধ্যে যেন এটা শেষ হয়। আবার যেন মেয়াদি বুদ্ধি বাজেট বৃদ্ধি করা না হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • কাওসার আহমেদ ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ৫:১১ পিএম says : 0
    প্রকল্প হাতে নিলেই হবে না এটাকে যথাযথভাব যথা সময়ে বাস্তবায়ন করতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • SHAUKAUT ২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ২:৪৪ এএম says : 0
    dhonnobad aponader ekhane venezuelay pray protek jelay BRT diee transiter bebotha koray ekhane lokjon metro er moto tara tari gonttobboe pouche jete parchen ete shomoy nostho hoy kom.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ