পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকার প্রবেশমুখে যানজট কমাতে গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সাড়ে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) চালুর সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য ২০১২ সালের ডিসেম্বরে গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট (বিআরটি, গাজীপুর-বিমানবন্দর) অনুমোদন করে সরকার। তবে ৯ বছরে প্রকল্পটির বাস্তবায়নে কাঙ্খিত অগ্রগতি নেই। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছিল দুই হাজার ৩৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। পরে তা বেড়ে হয়েছে চার হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ডিজাইন সংশোধনের কারণে এ ব্যয় পাঁচ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত ৯ বছরে কয়েক দফা কাজ শেষ করার মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও আরও কত বছর সময় লাগবে, তা বলতে পারছেন না কেউই। এতে করে পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছেই না। এদিকে, যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও জনপ্রতিনিধিরা প্রশ্ন তুলেছেন প্রকল্পের কাজের মান ও নকশা নিয়ে। তাদের মতে, গাজীপুর করিডোর বিআরটির জন্য উপযুক্তই নয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, চারটি ভাগে এগিয়ে চলছে প্রকল্পের কাজ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি, এরই মধ্যে শেষ হয়েছে সড়কের পাশের ফুটপাত, ড্রেনেজ ও বাস ডিপো নির্মাণ। এখন চলছে বিমানবন্দর থেকে চেরাগআলী পর্যন্ত টানা উড়ালসড়ক, ২৫টি স্টেশন ও ভিন্ন ভিন্ন ৭টি মোড়ে ওভারপাস নির্মাণের কাজ। সড়ক বিশেষজ্ঞ ও জনপ্রতিনিধিরা মনে করছেন, ওভারপাস ও উড়ালসড়ক বিআরটির বৈশিষ্ট্যই নয়। এ ছাড়া মাত্র দুই লেনের বিআরটি, ৪ ফুট প্রশস্তের ফুটপাত, সরু ড্রেন আর পুরো প্রকল্পের মধ্যে থাকা ৩২টি ইউটার্ন ঘনবসতিপূর্ণ ওই এলাকায় জটিলতা আরও বাড়াবে। বুয়েটের শিক্ষক এবং যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, যে সড়কে বিআরটি নির্মাণ হচ্ছে সেটা বিআরটিবান্ধব সড়ক না। কেননা ওই এলাকায় প্রচুর মানুষ হেঁটে চলাচল করে, এপার-ওপার পারাপার হয়। জায়গা বাছাই করতেই সবচেয়ে বড় ভুল করেছে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পটিতে প্রচুর খরচের পাশাপাশি মানুষের ভোগান্তিও বাড়ছে। বিআরটির নকশা প্রসঙ্গে অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, এটা তো বাইবেল না যে পরিবর্তন করা যাবে না। এখনই পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
এদিকে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহসড়কের গাজীপুরের শিববাড়ি থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলছে গত ৯ বছর বছর ধরে। এই বিপুল কর্মযজ্ঞের জন্য সড়কের জায়গায় জায়গায় তৈরি হওয়া গর্ত ও ফেলে রাখা নির্মাণসামগ্রীর কারণে প্রতিদিনই তৈরি হয় যানজট। গত ৯ বছর ধরে প্রতিদিন এ কর্মযজ্ঞের ভোগান্তি পোহাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। মাসখানেক ধরে বৃষ্টিতে যানজট, ছোটখাটো দুর্ঘটনায় এই পথে চলাচলকারীদের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণ।
গত ৭ জুলাই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বাস্তবায়নাধীন বাস র্যাপিড ট্রান্সজিট (বিআরটি) প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সে সময় সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি, অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতা দেখে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন দুই মেয়র। প্রকল্প কর্মকর্তাদের কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডের কারণেই সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। এ সময় তিনি জনদুর্ভোগ লাঘবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জানতে চান বিআরটি প্রকল্পের কর্মকর্তাদের কাছে। কর্মকর্তারা তা জানাতে না পারায় ক্ষুব্ধ হন ডিএনসিসি মেয়র।
এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত এই ট্রানজিটের কোথায় কতটুকু জায়গায় টার্ন নেবে, কতটুকু পরিধি থাকবে, ট্রানজিটের সঙ্গে ট্রাফিক জ্যাম সাংঘর্ষিক হবে কিনা হবে না তারপর ট্রানজিটে চলাচলকারী বাসগুলো কিভাবে টার্ন নেবে এসবের নকশা চাওয়া হলে তারা (বিআরটি কর্মকর্তারা) বলে নকশা প্রস্তুত হয়নি। এ সময় বিআরটি প্রকল্প নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন গাজীপুর সিটি মেয়রও।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যে পরিমাণ গাড়ি ও জনগণ আমাদের নগরে আছে, তার সঙ্গে এই প্রকল্প ও প্রকল্পের যে নকশার বাস্তবিক কোনো মিল পাচ্ছি না। নকশাও যদি পরিবর্তন করতে হয়, তাহলেও যেন তা করে নেওয়া হয় এই অনুরোধ করছি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঢাকা-গাজীপুর সড়কে যে পরিমাণ গাড়ির চাপ সেখানে এক লেনের বাস চলাচল করে কোনো সমাধান আসবে না। এ ছাড়া প্রকল্প পরিচালক ও ইঞ্জিনিয়াররা কাজে গাফিলতি করেছে, তাই ভোগান্তি বেড়েছে। তিনি জানান, সড়কের দুই পাশ দিয়ে যে পরিমাণ পানি আসবে, প্রকল্পের আওতাধীন ড্রেন থেকে সে পরিামণ পানি বের হতে পারবে না। ওভারপাস ও উড়ালসড়কে এক লেনের হবে যা যানজট কমাতে সহায়ক হবে না। এখনই প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন না করলে সরকারের সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা বিফলে যাবে বলেও মনে করেন তারা। মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মাটির নিচে যেটা চলে গেছে সেটা যাক। এখন যেটা আছে, সেটা সংশোধন করলে এখানে লাখ লাখ মানুষের উপকার হবে। তবে বিআরটি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে ভাসাভাসা না বলে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ দিয়ে নকশার ভুল ধরিয়ে দিতে হবে। গাজীপুরে সড়কের সক্ষমতা কম বলেই সেখানে উড়ালসড়ক যুক্ত হয়েছে বলেও জানান তারা। বাস র্যাপিট ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটিড ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম বলেন, কেউ যদি আমাদের ডিজাইন ধরে ডেটা দিয়ে বলতে পারেন এখানে এখানে ভুল, তাহলে তাকে ওয়েলকাম করব। প্রয়োজনে তাকে টাকা দেব।
এদিকে, চুক্তি অনুযায়ী ২০২২ এর জুনে বিআরটি খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও তা ২০২৩-এর আগে তা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে খোদ প্রকল্পসংশ্লিষ্টরাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।