Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাড়তি ভাড়াসহ নানা সমস্যায় যাত্রীদের আগ্রহ কম

খুলনা-কলকাতা বন্ধন এক্সপ্রেস

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বহু প্রতীক্ষিত খুলনা-কোলকাতা যাত্রীবাহী ট্রেন সার্ভিস-‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ চালু হলেও মাত্রাতিরিক্তি ভাড়াসহ নানা জটিলতায় তা এখনো দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাধারন যাত্রীদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। প্রথম ও দ্বিতীয় বানিজ্যিক ট্রিপে বন্ধন এক্সপ্রেসে আশাব্যঞ্জক যাত্রী মেলেনি। গত ১৬ নভেম্বর উদ্বোধনী ট্রিপের চেয়ে ২২ নভেম্বর দ্বিতীয় ট্রিপে যাত্রী সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশী হ্রাস পেয়েছে। অথচ খুলনা ও বাগেরহাট ছাড়াও বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার ভারতগামী যাত্রীদের কাছে বন্ধন এক্সপ্রেস জনপ্রিয়তা অর্জন করার কথা। বহু প্রতিক্ষিত এ ট্রেনটির সময়সূচী নিয়ে কোন অভিযোগ না থাকলেও ভাড়া নিয়ে সব শ্রেণীর যাত্রীই ক্ষুদ্ধ। উপরন্তু সপ্তাহে মাত্র একদিন ট্রেনটি চলাচল করায় যেসব যাত্রী কোলকাতায় যাচ্ছেন, তাদের অনেককেই সড়ক পথে ফিরতে হচ্ছে। ট্রেনে ফিরতে তাদের পুরো এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে যাত্রী সাধারণের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবারের সাথে সোমবার ট্রেনটি চালু রাখার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
খুলনা-কোলকাতার ১৭৫ কিলোমিটার রেলপথের এসি চেয়ারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫শ টাকা ভ্রমন কর ও ১২৬ টাকা ভ্যাটসহ ১হাজার ৫শটাকা। যার মধ্যে মূল ভাড়া ৮৭৪ টাকা। অপরদিকে, এসি কেবিন-এর প্রতি সিটের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫শ টাকা ভ্রমন কর ও ১৮৯ টাকা ভ্যাটসহ ২ হাজার টাকা। এতে করে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া পড়ছে এসি চেয়ারে ৫টাকা এবং এসি সিটে কিলোমিটার প্রতি সাড়ে ৭টাকা। অথচ ঢাকা-কোলকাতার ৫৩৮ কিলোমিটারে বর্তমানে ভাড়া রয়েছে এসি চেয়ারে ভ্যাট ও ভ্রমণকর সহ ১৬৩৩ টাকা। যা আগামী ৮ডিসেম্বর থেকে ২ হাজার ৫শ টাকায় বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
অপরদিকে, ওই রুটে এসি কেবিনের প্রতি সিটের বর্তমান ভাড়া রয়েছে ২ হাজার ৩৮৬টাকা, যা ৮ ডিসেম্বর থেকে ৩ হাজার ৪শ টাকায় বৃদ্ধি করা হচ্ছে। হিসেব অনুযায়ী ঢাকা-খুলনার তুলনায় ঢাকা-কোলকাতা রুটের বর্তমান ভাড়া অনেক কম। এমনকি ৮ডিসেম্বর থেকে বর্ধিত ভাড়া কার্যকর হবার পরেও খুলনা- কোলকাতা রুটরে তুলনায় কমই থাকবে।
তবে ঢাকা-কোলকাতা রুটের বর্ধিত ভাড়া কার্যকর হলে একজন কেবিন সিটের ট্রেন যাত্রীকে ঢাকা- কোলকাতা-ঢাকা রুটে যাতায়াতে ৮ হাজার টাকার বেশী গুনতে হবে। অথচ আকাশ পথে ঢাকা-কোলকাতা-ঢাকা রুটে বেসরকারী একটি এয়ারলাইন্স সাড়ে ৮ হাজার টাকায় আগামী জানুয়ারী থেকে জুন পর্যন্ত যাত্রী পরিবহনের ঘোষণা দিয়েছে।
গত ১৬ নভেম্বর উদ্বোধনী দিনে ৪৫৬ আসনের বন্ধন এক্সপ্রেসে কোলকাতা থেকে খুলনা এসেছে মাত্র ৫৩ জন যাত্রী। আর ফিরতি পথে খুলনা থেকে কোলকাতায় গেছেন ২৫৩ জন। অপরদিকে, গত ২৩ নভেম্বর দ্বিতীয় ট্রিপে ট্রেনটিতে কোলকাতা থেকে এসেছে মাত্র ৬৫ জন। খুলনা থেকে কোলকাতায় গেছেন ১২৭জন।

১৮৮৪ সালে বৃটিশ-ভারতের পূর্বাঞ্চলে বানিজ্যিক ট্রেন ও স্টিমার পরিচালনকারী বৃটিশ সরকারের অধিভূক্ত ‘আইজিএন’ ও ‘আরএসএন’ কোম্পানী কোলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন থেকে খুলনা পর্যন্ত ট্রেন সার্ভিস চালু করে। দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীগন খুলনা থেকে প্যাডেল স্টিমারযোগে বরিশাল-ঝালকাঠী-চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জ হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করতেন। ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হওয়া পর্যন্ত ঐ ট্রেন সার্ভিস চালু থাকলেও ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও তা আর চালু হয়নি।
তবে ভারত ও বাংলাদেশের বর্তমান দুই প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ৫২ বছর পর নতুন করে খুলনা-কোলকাতা রুটে পুনরায় যাত্রীবাহী ট্রেন সার্ভিস এ অঞ্চলের মানুষকে যথেষ্ঠ আশান্বিত করেছে। কিন্তু বর্ধিত ভাড়া এবং সপ্তাহে মাত্র একদিন চলাচলেল ব্যবস্থাসহ বেশ কিছু ত্রæটি-বিচ্যুতি অনেককে হতাশ করছে।
বন্ধন এক্সপ্রেস-এর ট্রেনের বগিগুলো খুলনা স্টেশনের প্লাটফর্মের চেয়ে প্রায় আড়াই ফুট উঁচু। বগির সাথে সংযূক্ত ছোট মাপের ঝুলন্ত সিঁড়ি বেয়ে শিশু ও বয়স্কদের ওঠানামা করা কষ্টকর। যা রোগীদের পক্ষে সম্পূর্ণ অসম্ভব। খুলনা জেলা প্রশাসন ট্রেনটির যাত্রীদের সুবিধার জন্য দুটি কাঠের সিঁড়ি তৈরী করে দিয়েছ। কিন্তু ট্রেনটিতে বগি ৮টি।
বাংলাদেশ ও ভারতের কাস্টমস-ইমিগ্রেশন চেকিং হচ্ছে যথাক্রমে বেনাপোল ও কোলকাতায়। কিন্তু বেনাপোল চেকপোস্টে এখনো কোন মানিচেঞ্জার-এর অফিস স্থাপন করা হয়নি। এতে ট্রেনটির যাত্রীরা কোলকাতার চিতপুর স্টেশনে পৌঁছে সেখানের একমাত্র মানিচেঞ্জারের নিজস্ব মর্জিমাফিক দরে ডলার বা বাংলাদেশী টাকা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন। যাত্রীদের অভিযোগ, চিতপুর স্টেশনের মানিচেঞ্জার তাদের নিজস্ব দরে ডলার থেকে ভারতীয় রূপী বিমিনয় হার নির্ধারণ করেন। এমনকি সেখানে দালাল চক্রও রয়েছে।
ট্রেনটির ক্যাটারিং সার্ভিসও মানসম্মত নয়। দামও বেশী। এমনিক ভারতীয় সীমান্তে প্রবেশের পরে ঐ দেশের ক্যাটারার ট্রেনটিতে আরোহন করে। তারা বাংলাদেশী মূদ্রায় কোন খাবার পরিবেশন করে না। এতে করে প্রায় আড়াই ঘন্টা বেশীরভাগ যাত্রীকেই অভূক্ত থাকতে হয় বলেও অনেকে অভিযোগ করেছেন। ভুক্তভোগিদের মতে, এসময়ে শিশু ও বয়স্ক যাত্রীদের নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
এসব বিষয়ে খুলনার স্টেশন মাষ্টারের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, শুরুতে কিছু সমস্যা হলেও তা নিরসনের চেষ্টা চলছে। যেসব বিষয় স্থানীয়ভাবে মেটানো সম্ভব আমরা তা চেষ্টা করছি। আর অন্য বিষয়গুলো রেল ভবনকেও জানানো হচ্ছে। তবে বর্ধিত ভাড়ার বিষয়টি অনেক ওপরের ব্যপার বলে এ প্রসঙ্গে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ