নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শামীম চৌধুরী ব্যাঙ্গালুরু (ভারত) থেকে : মাশরাফির ক্যাপ্টেনসির মাইলস্টোন ম্যাচ। আজ স্টিভেন স্মিথের সঙ্গে টসে নেমেই তিন ফরমেটের ক্রিকেট মিলিয়ে ক্যাপ্টেনসি’র হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করবেন মাশরাফি। এমন এক ম্যাচের সামনে দাঁড়িয়ে নস্টালজিয়ায় ফিরে যাবেন কি, উল্টো বুকের জমাট কষ্ট, ক্ষোভটা পেলো প্রকাশ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে অবতীর্ণ হওয়ার আগে রণপ্রস্তুতি নিবেন কিভাবে, তাসকিন, আরাফাত সানিকে ম্যাচের ৫০ ঘণ্টা আগে নিষিদ্ধ করে যে ধাক্কা দিয়েছে বাংলাদেশ দলকে, তাতেই যে এলোমেলো হয়ে গেছে সব কিছু। সংবাদ সম্মেলনে ম্যাচ পূর্ব প্রশ্নোত্তরের অধিকাংশ তাসকিন, আরাফাত সানির নিষেধাজ্ঞাদেশ নিয়ে। এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে সংবাদ সম্মেলনে আবেগী হয়ে পড়েছেন মাশরাফি, চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে পানি। তা দেখে কোলকাতার বাংলা দৈনিক ‘বর্তমান’ থেকে বিশ্বকাপ কভার করতে এসে রবীন্দ্রনাথ চৌধুরীও কেঁদেছেন অঝোরে!
কঠিন হৃদয়ের মানুষ হয়েও সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে সামাল দিতে পারেননি মাশরাফি। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়েছে। সংবাদ সম্মেলন শেষে টীম হোটেলের উদ্দেশ্যে ম্যানেজার খালেদ মেহমুদ সুজনের সঙ্গে গাড়ীতে ওঠার সময় আবেগকে চাপা রাখতে পারেননি, কেঁদেছেন ডুকরে ডুকরে।
হাঁটুর লিগামেন্টে একবার, দু’বার নয়Ñ পাঁচ পাঁচবার অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে। প্রতিবারই ভয়ানক যন্ত্রণায় মুখোমুখি হতে হয়েছে মাশরাফিকে। যন্ত্রণাটা আরো বড় হয়েছে ইনজুরিতে বার বার দলের বাইরে থাকায়। এসব যন্ত্রণায় পর্যন্ত মাশরাফিকে কাঁদতে দেখেনি কেউ। মিডিয়ার সামনে কেঁদেছে মাশরাফি এই নিয়ে দু’বার। ২০১১ বিশ্বকাপে ১৫ সদস্যের ঘোষিত দলে নিজের নাম না দেখে কেঁদেছিলেন প্রথম। গতকাল কাঁদলেন তাসকিনের জন্য। আগের দিন অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের রিপোর্টে নিষিদ্ধ বাংলাদেশের ২ বোলার তাসকিন, আরাফাত সানির বিশ্বকাপ হয়ে গেছে শেষ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যাঙ্গালুরে সুপার টেনের ম্যাচকে সামনে রেখে আইসিসির এই রায়টি কোনমতেই মেনে নিতে পারছেন না মাশরাফি। আরাফাত সানির বোলিং অ্যাকশনের রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। তবে চেন্নাইয়ের রামচন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে তাসকিনের বায়ো মেকানিক্স পরীক্ষার পদ্ধতিগত ত্রæটি নিয়েই প্রশ্ন মাশরাফির।
সংবাদ সম্মেলনে আইসিসি’র কাছে ন্যায্য বিচার চেয়েছেন মাশরাফিÑ ‘আমরা বিশ্বাস করি তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন ঠিক আছে। আমরা আমাদের বলাটা বিসিবিকে বলতে পারি, বিসিবি যেভাবেই হোক আইসিসির সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবে। আইসিসি সবসময় তরুণ ক্রিকেটারদের উৎসীহিত করে। তাসকিন ন্যায্য বিচার পাবে, এই মুহূর্তে আইসিসি’র কাছ থেকে এটাই আশা করছি।’
ধর্মশালায় নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে ২৪টি ডেলিভারীর মধ্যে একটিও বাউন্সার দেননি তাসকিন। আইসিসি’র বৈধ বোলিং নিয়মের লংঘন হয়নি ওই ম্যাচে তার একটি ডেলিভারীও। তারপরও কেন চেন্নাইয়ের পরীক্ষাগারে সন্দেহ থাকা ডেলিভারীর পরিবর্তে বাউন্সার পরীক্ষা করা হলো? ভারত আম্পায়ার সুন্দরম রবি এবং অস্ট্রেলিয়ান আম্পায়ার রড টাকার কি তাহলে সুপার টেনে অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অবতীর্ণ হওয়ার আগে বাংলাদেশ দলকে বড় ধরনের ধাক্কা দিতে ধর্মশালায় ৯ মার্চের ম্যাচে ষড়যন্ত্র করেছেন? আইসিসিও কি চেন্নাইয়ের পরীক্ষায় ত্রæটি ধরতে একটু বেশি তৎপর হয়নি? সন্দেজনক বোলিং অ্যাকশনে ৯ মার্চে রিপোর্টেড আরাফাত সানি, তাসকিন। ১২ মার্চ আরাফাত দিয়ে এসেছেন চেন্নাইয়ে পরীক্ষা, ১৫ তারিখে তাসকিনের পরীক্ষাও হয়েছে সম্পন্ন। অথচ একই দিনে দু’জনের পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে, তাসকিনের পরীক্ষার ফল বেরুতে লেগেছে মাত্র ৪ দিন। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে একটিও বাউন্সার দেননি, অথচ গত ১৫ মার্চে পরীক্ষায় ৯টি ডেলিভারীর মধ্যে তাসকিনের তিনটি বাউন্সারের পরীক্ষা নেয়া হয়েছে! এবং ওই তিনটি ডেলিভারীতেই খুঁত ধরেছে আইসিসি! তাসকিনের বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষায় পদ্ধতিগত ত্রæটিকে একটা ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছেন মাশরাফি। বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচকে সামনে রেখে সংবাদ সম্মেলনজুড়ে মাশরাফিকে ঘুরে ফিরে একটি প্রশ্নের মুখেই পড়তে হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচকে সামনে রেখে এতো বড় ধাক্কা! তাই আইসিসি’র এই রায়কে অন্যায় বলে ন্যায্য বিচার চেয়েছেন মাশরাফিÑ ‘যে ম্যাচের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠানো হয়েছে, ওই ম্যাচটার সঙ্গে মিলিয়ে যে সব পরীক্ষা নেয়া হয়েছে, সেখানে কিন্তু ওই ম্যাচের একটা বলও অবৈধ ছিলো না। ম্যাচে বোলিংয়ে যেখানে অবৈধ অ্যাকশন খুঁজে পাওয়া যায়নি, সেখানে কিভাবে তাকে সাসপেন্ড করা হয়? টেস্টে তার ফুল লেন্থ ডেলিভারিতে কোন সমস্যা দেখা যায়নি। অনেকই তো বাউন্সার ছাড়া বল করছে। যে ম্যাচের বোলিংয়ের উপর ভিত্তি করে পরীক্ষা দিতে হয়েছে, ওখানে তাসকিনের কোন সমস্যা না পাওয়ার পরও কি তাকে আঁটকিয়ে রাখা যায়?’
২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের বিস্ময়কর উন্থান পর্বে মাশরাফির বোলিং আক্রমণ পরিকল্পনা যাকে ঘিরে হচ্ছে আবর্তিত, নতুন বলে শুরুটা যার হাতে মানাচ্ছে বেশ, বিশ্বকাপ এবং এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলের অপ্রত্যাশিত সাফল্যের অবদান রাখা ২০ বছর বয়সী সেই ছেলেটির উপর এতো নির্দয় হলো কিভাবে আইসিসি? এটাই প্রশ্ন মাশরাফিরÑ ‘এই ছেলে দু’টি আমাদের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটিয়েছে। কিন্তু এই ছেলে দু’টিকে এই মুহূর্তে দেশে ফিরে যেতে হবে। আরফাত সানির ব্যাপারটা না হয় মেনে নেয়া গেলো, কিন্তু তাসকিনের বোলিং বৈধ, এই বিশ্বাস আমাদের মধ্যে আছে। তারপরও এখন তাকে চলে যেতে হবে, চাইলেও তাই এই ঘটনা ভুলে থাকা কঠিন।’
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে নিয়মিত একাদশের ২ বোলারকে হারিয়ে পুরো দলই যে ভেঙ্গে পড়েছে, যে মাইলস্টোন ম্যাচকে সামনে রেখে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানিয়েছেন তা মাশরাফিÑ ‘আমার নিজস্ব জীবন দিয়ে অনেক কিছু দেখেছি। আমার জন্য হয়তো এটা মেনে নেয়া অনেক সহজ। এখন কথা হচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিশ্রæতিশীল খেলোয়াড় তাসকিনকে নিয়ে। সর্বশেষ ৮টি টুয়েন্টি-২০ ম্যাচে তার বোলিংয়ের কথা ভাবুন, আমরা যে সব ম্যাচে জিতেছি, প্রতিটি ম্যাচে ওর প্রথম ওভারটাই আমাদেরকে ছন্দ এনে দিয়েছে। যে ছেলেটি কিনা আগামী ১০ বছর বাংলাদেশ দশকে সার্ভিস দিবে, সেই ছেলেটিকেই কিনা এই বয়সে তাকে এতো বড় ধাক্কা খেতে হলো। ঘরের দুইজন ছেলের যদি সমস্যা হয়, আপনি যে কোন কাজই ভালোভাবে করতে পারবেন না। সেই উদ্যমটা আর পাবেন না। আমাদের মানসিক অবস্থা এখন তাই আগের মতো নেই।’
বাংলাদেশ দলকে এতো বড় ধাক্কা দেয়ার পেছনে ষড়যন্ত্রটা যাদের, ক্রিকেট কি তাদের কাছে নিরাপদ? শ্রীলংকার গ্রেট স্পিনার মুরালী ধরনের বোলিং অ্যাকশনকে বার বার সন্দেহের তালিকায় এনে শ্রীলংকানদের গণশত্রæ অস্ট্রেলিয়ান আম্পায়ার ড্যারেল হেয়ার। তাসকিন, আরাফাত সানির বোলিং অ্যাকশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এই দুই বোলারের টি-২০ বিশ্বকাপ শেষ করে দেয়ায় এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে গণশত্রæ রবি সুন্দরম ও রড টাকার। সর্বশেষ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে পক্ষপাতিত্বমূলক আম্পায়ারিং মেনে নিতে না পেরে মিডিয়ায় মুখ খুলেছিলেন আইসিসি’র তৎকালীন সভাপতি আ.হ.ম মোস্তফা কামাল (লোটাস কামাল)। মেলবোর্ন অবিচারের এক বছর পূর্তির একদিন পর আর একটি অবিচার! প্রভাবিত আম্পায়ারিং এবং প্রথা ভেঙ্গে আইসিসি’র সভাপতিকে দিয়ে বিশ্বকাপ জয়ী দলের হাতে ট্রফি দিতে না দেয়ার নেপথ্যে কলকাঠি নেড়ে আইসিসি’র বিতর্কিত চেয়ারম্যান শ্রীনিবাসন পরবর্তীতে পেয়েছেন প্রকৃতির সাজা, হারিয়েছেন আইসিসি’র চেয়ারম্যানের পদ। রড টাকার, সুন্দরম রবি এবং নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছেন যারা, তাদের জন্য যে প্রকৃতির অভিশাপটা প্রাপ্য। চোখের পানি, আর কান্নায় প্রকারান্তরে সে অভিশাপটাই যে দিয়েছেন মাশরাফি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।