হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
কথায় বলে: চোখের দেখা, মুখের কথা, কে করেছে মানা। একথার সরল অর্থ হলো, বিরোধ-বিসংবাদ-দ্বন্দ¦-সংঘাত যতই থাকুক, একে অপরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, কথাবার্তা ও কুশল বিনিময়ে কারোরই আপত্তি থাকা উচিত নয়। এটা স্বাভাবিক সৌজন্যের প্রকাশ। অত্যন্ত দু:খজনক হলেও বলতে হচ্ছে, আমাদের রাজনীতিতে এই স্বাভাবিক সৌজন্যের নিদারুন অভাবই নয়, রীতিমত দুর্ভিক্ষ চলছে। দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল-আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরের প্রতিদ্ব›দ্বী। নীতি-আদর্শের দিক দিয়ে এ দুটি দলের মধ্যে যেমন সুস্পষ্ট অমিল ও পার্থক্য রয়েছে তেমনি এরা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার দিক দিয়ে একে অপরের অনিবার্য প্রতিপক্ষ। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত, বড়জোর ১০-১২ বছর মাঝখানে বাদ দিলে, এ দুটি দলই রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছে। দেশে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। অনেকে বলেন, এত রাজনৈতিক দল অন্য কোনো দেশে দেখা যায় না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, হয় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাবে, না হয় বিএনপি। আসলে বহুদল থাকলেও দ্বিদলীয় রাজনীতিই দেশে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। আশ্চর্যের বিষয়, এ দুটি দলের পারস্পরিক সম্পর্ক ‘খারাপ’ বললে, অতি অল্পই বলা হয়। এরা একে অপরকে ‘জানি দুশমন’ বলে মনে করে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শ্রদ্ধাপূর্ণ ও সহাবস্থানমূলক সম্পর্ক থাকা অপরিহার্য বলে গণ্য হলেও এ দুটি দলের মধ্যে তার লেশমাত্র নেই। তাদের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ এতটাই প্রবল যে, তারা একে অপরের অস্তিত্বই স্বীকার করতে চায় না। একের লক্ষ্য যেন অন্যের নির্মূল বা উৎসাদন; অণ্যের লক্ষ্যও তাই। এক দল অন্য দলের রাজনীতি করার অধিকার পর্যন্ত স্বীকার করতে নারাজ। তারা এমনকি একে অন্যের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলতেও দ্বিধা করে না। গণতান্ত্রিক বিশ্বের অধিকাংশ দেশে দ্বিদলীয় রাজনীতি লক্ষ্য করা যায়। সে সব দেশে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে একদল ক্ষমতায় আসে, অন্যদল সংসদে বিরোধী দলের আসন অলংকৃত করে। কোনো কোনো দেশে দ্বিজোটীয় রাজনীতিও প্রত্যক্ষ করা যায়। সেখানে এক জোট নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় অধিষ্টিত হয়, অন্য জোট বিরোধী অবস্থানে থেকে ভূমিকা পালন করে। লক্ষ্য করার বিষয়, আমাদের দেশের মতো ক্ষমতার প্রতিদ্ব›দ্বী দল বা জোটের মধ্যে এতো হিংসা-বিদ্বেষ ও দ্ব›দ্ব-সংঘাত বিশ্বের আর কোনো দেশে দেখা যায় না।
সবচেয়ে উদ্বেগের দিকটি হলো, আমাদের দেশের প্রধান দুটি দলের মধ্যকার বৈরি ও সংঘাতপূর্ণ সম্পর্ক দু’দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও সম্প্রসারিত হয়ে গেছে। তারা পরস্পরবিরোধী সমাজ বা সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এবং বলাই বাহুল্য, জনগণও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। অতীতের বিভিন্ন নির্বাচনে দেখা গেছে, জনসমর্থন দু’দলের প্রায় সমান সমান। সেই হিসাবে জাতিও বস্তুত দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। যেখানে সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য স্বাধীনতা-সর্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ সংরক্ষণে অত্যাবশ্যক যেখানে গোটা জাতির বিভক্ত হয়ে পরস্পর শত্রæভাবাপন্ন হয়ে পড়া কতটা বিপদজনক, সহজই অনুমেয়।
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে শেষ করে দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে, অনেকেরই তা স্মরণ করা মুসকিল। আগে দু’য়েকটি রাষ্ট্রীয় বা প্রতিষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে দেখা-সাক্ষাতের যে সুযোগ বা সম্ভাবনা ছিল, সম্প্রতিক বছরগুলোতে সেটাও আর দেখা যাচ্ছে না। ঈদ বা অন্য দুয়েকটি উপলক্ষে শুভেচ্ছা কার্ড বিনিময়ের মধ্যে তাদের সম্পর্ক সীমিত হয়ে পড়েছে। সম্ভবত তাদের শেষ কথাবার্তা, তাও টেলিফোনে, হয়েছিল ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে। দুই নেত্রীর মধ্যে এই বিশাল দূরত্বের প্রভাব দু’দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের মধ্যে পড়া খুবই স্বাভাবিক। তাদের মধ্যেও চোখের দেখা, মুখের কথা প্রায় বন্ধ। তারা নিয়ত বাঁকযুদ্ধে রত থাকলেও তাদের মধ্যে সদালাপ ও কুশল বিনিময় ব্যতিক্রম বাদে বড় একটা দেখা যায় না। তারা একে অন্যকে এড়িয়ে চলার নীতিই অনুসরণ করেন। এভাবেই তারা আলাদা আলাদা জগতের বাসিন্দা হয়ে পড়েছেন। নিজেদের আটকে ফেলেছেন নিজ নিজ গন্ডির মধ্যে।
বাস্তবতার এই প্রেক্ষাপটে ‘হঠাৎ আলোর ঝলকানির’ মতো একটা ব্যাপার ঘটে গেছে ক’দিন আগে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অনেকটা কাঁকতালীয়ভাবে দেখা হয়ে যায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মধ্যে। ওইদিন তারা দু’জনই সৈয়দপুর থেকে ঢাকা আসছিলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটু আগেই এসেছিলেন। অপেক্ষা করছিলেন ভিআইপি লাউঞ্জে। পরে আসেন ওবায়দুল কাদের এবং ভিআইপি লাউঞ্জেই তাদের মধ্যে সাক্ষাৎ ও কথাবার্তা হয়। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ওবায়দুল কাদের মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিতির কথা জানতে পেরে তার দিকে, এগিয়ে যান এবং বলেন, ‘ভাই কেমন আছেন?’ তখন সহাস্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ভালোই আছি, আপনি কেমন?’ এরপর ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সকালে ঢাকা থেকে সৈয়দপুর আসার সময় একই সময় আপনার আসার, কথা শুনেছিলাম। একই ফ্লাইটে এলে কথা বলা যেতো।’ জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, তার স্ত্রী অসুস্থ হওয়ার কারণে ফ্লাইট বদলাতে হয়েছে। এক পর্যায়ে ওবায়দুল কাদের মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক পথ ভিন্ন হতে পারে। তবে স্বাভাবিক সৌজন্যবোধ ওপেন রাখা উচিত।’ এরপর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,‘ আপনি পারফেক্ট জেন্টেলম্যানের মতো কাজ করেছেন, আমার সঙ্গে কথা বলেছেন।’
এই সাক্ষাৎ আকস্মিক হলেও তাদের মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ কথাবার্তা হয়েছে। তাদের এই কথাবার্তা সৌজন্যমূলক হলেও এর রাজনৈতিক গুরুত্ব কম নয়। উভয় দলের পক্ষেই স্বীকার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে কুশল বিনিময় হয়েছে এবং এটা ছিল সৌজন্যমূলক। সৌজন্যের যখন এতই আকাল তখন দু’দলের দ্বিতীয় শীর্ষ দু’নেতার সৌজন্যবোধের এই প্রকাশ প্রভাবক ভূমিকা রাখতে পারে দু’দলের অন্যান্য নেতার মধ্যে। পর্যবেক্ষক মহল এতে উৎসাহবোধ করছেন এই ভেবে যে, এই কুশল বিনিময়, এই সৌজন্যবোধের পরিচয় ব্যাপক ভিত্তিতে সম্প্রসারিত হলে দু’দলের মধ্যকার বিরোধ-বৈরিতা সংকুচিত হয়ে আসতে পারে। এই সৌজন্যের চর্চা তাই আরো বাড়ানো উচিৎ।
অনেকেই এ প্রসঙ্গে বলেছেন, দুই নেতা যে সৌজন্যবোধ দেখিয়েছেন, তা ইতিবাচক। তারা দু’দলের মধ্যে জমাটবদ্ধ বরফ গলার অভাস হিসাবেই একে বিবেচনা করছেন। অবশ্য এই আশাবাদ কতটা সঠিক সেটা আগামীতেই বুঝা যাবে। বলার অপেক্ষা রাখেনা, দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট দু’দলের বৈরি সম্পর্কে, আপোসহীন অবস্থান ও জেদের কারণেই সৃষ্টি হতে পেরেছে। অতীতে রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য আন্তর্জাতিক উদ্যোগও সফল হয়নি। ২০০৬ সালে দু’দলের মহাসচিব ও সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ে উপযুপরি আলোচনা-সংলাপও কোনো ফল দিতে পারেনি। এই প্রেক্ষাপটটি সামনে রাখলে, হতাশার দিকটি এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তবে ২০০৬ এবং ২০১৭ এক নয়। এর মধ্যে নতুন উপদানও অনেক সংযুক্ত হয়েছে। যে কোনো মূল্যায়ণ ও বিশ্লেষণে স্পষ্টতই প্রতিভাত হবে যে, দু নেত্রীই মূলত দু’দলের রাজনীতির কান্ডারি; তারা সদিচ্ছা পোষণ করলে, বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে আন্তরিক হলে সংকটের দ্রুতই নিরসন হতে পারে। তারাও যদি সৌজন্য দেখান, আলাপ-আলোচনা করেন তাহলে জাতি সংকট থেকে উদ্ধার পাবে। সেই সম্ভাবনা কতটা বা কতদূর আছে, সেটাই প্রশ্ন।
সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তার আগেই সংকট নিরসনের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংবিধানের নিয়ম রক্ষার জন্য হলেও তা যথাযথ গণতান্ত্রিক পন্থায় হয়নি। ওই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ হয়নি। দেশে-বিদেশে তার গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও তা মেনে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার বলেছেন, কোনো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন তিনি দেখতে চান না। সব দলের এবং জনগণের অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন এখন জাতির প্রধান দাবি। এই দাবি পূরণে দু’দলের মধ্যে সমঝোতা ও ঐকমত্য জরুরি। এ জন্য দল পর্যায়ে এবং দু’নেত্রী পর্যায়ে আলোচনা-সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। বিএনপি আলোচনা-সংলাপের দাবি জানালেও আওয়ামী লীগের তরফে বারবারই বলা হচ্ছে, বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়। আওয়ামী লীগ তার অবস্থানে শেষ পর্যন্ত অনড় থাকলে নির্বাচন আদৌ হবে কিনা, হলে অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা সে প্রশ্ন খুবই সঙ্গত ও প্রাসঙ্গিক।
কয়েকটি বিষয়ে নিষ্পত্তি ও সমঝোতা না হলে অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে না। এর একটি হলো, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা কেমন হবে। সরকার বলছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগেরও অভিন্ন মত। অর্থাৎ বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। বিএনপি বলছে, দলীয় সরকারের অধীনে, বিশেষত শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে না। সেরকম কোনো নির্বাচনের আয়োজন হলে দলটি তাতে অংশগ্রহগণ করবে না। বিএনপির দাবি, নির্বাচনকালীন সরকার হতে হবে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ। সরকার বা আওয়ামী লীগ এ দাবির মানতে নারাজ। সুতরাং অর্থবহ ও প্রত্যাশিত নির্বাচন করতে হলে এ বিষয়ে একটা সমঝোতায় উপনীত হতে হবে।
দ্বিতীয়ত, নির্বাচনের আগে সংসদ থাকবে কি, থাকবে না। সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচনের সময়ও বর্তমান সংসদ বহাল থাকবে। সরকার বা আওয়ামী লীগের মতামতও তাই। বিএনপি বলেছ, সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে সব দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। অধিকাংশ দলেরও একই অভিমত। বিদ্বৎ সমাজও মনে করে, সংসদ বহাল রেখে কোনো নির্বাচন হতে পারেনা। গণতান্ত্রিক বিশ্বে এর কোনো নজির নেই। অতএব, এই ব্যাপারেও একটা সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
তৃতীয়ত, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে কিনা, হলে কিভাবে হবে। সেনাবাহিনী মোতায়েনে অধিকাংশ দলের ইতিবাচক অভিমত রয়েছে। বিদ্বৎ সমাজের মতও অভিন্ন। এমনকি আওয়ামী লীগও এ বিষয়ে একমত। তবে দলটি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে সেনাবাহিনী মোতায়েন চায়। বিএনবিসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দলের দাবি, সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মোতায়েন করতে হবে। তাদের মতে, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলে ভোটকেন্দ্রের শান্তি-শৃংখলা এবং ভোটারদের নির্বিঘেœ ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী কার্যকর ভূমিকা অবদান রাখতে পারবে না। পক্ষান্তরে ভোটকেন্দ্রে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও তার বিচারিক ক্ষমতা দেয়া হলে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা ও দুর্বৃত্তাচার বহুলাংশে হ্রাস পাবে। মানুষের মধ্যে স্বস্তি ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে। বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনার দাবি রাখে। এক্ষেত্রেও সমঝোতা ও ঐকমত্য দরকার।
চতুর্থত, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের নিশ্চয়তা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্বশর্ত। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের মনোয়ন ও কমিশন গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন আছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, সরকারের পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়েই কমিশন গঠিত হয়েছে। ফলে শুরু থেকেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জনের চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে কমিশন। বিএনপির আশঙ্কা, এই নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারবে না। এই আশঙ্কা অপনোদন করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব এবং কর্মের মধ্য দিয়েই সেটা সম্ভব। নির্বাচন কমিশন অবশ্য আশাবাদী, তার পক্ষে অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভবপর হবে। বিএনপির অভিযোগ, সরকারের অবস্থানের পক্ষেই কমিশন কাজ করছে। সেনাবাহিনী মোতায়েন ও ইভিএম ব্যবহার নিয়ে সম্প্রতি এক কমিশনার ও প্রধান নির্বাচন কমিশনের মধ্যে যে মতভিন্নতা লক্ষ্য করা গেছে, তাতে বুঝা যায়, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কমিশন দ্বিধা-দ্ব›েদ্ব ভুগছে। এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার যখন বলেন, সরকার যেভাবে আইন করবে কমিশন সে মোতাবেকই নির্বাচন করবে, কিংবা যখন বলেন, এখনই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা নির্বাচন কমিশনের কাজ নয় অথবা যখন বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের কোনো উদ্যোগ কমিশন নেবে না তখন অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি নির্বাচন কমিশন কতটা রক্ষা করতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। অতএব নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও একটি রাজনৈতিক সমঝোতার প্রয়োজন। সরকার বা অন্য কোনো মহল যাতে নির্বাচন কমিশনের কাজে কোনো প্রকার প্রভাব বিস্তার, হস্তক্ষেপ কিংবা অসহযোগিতা প্রদর্শন করতে না পারে সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।
আরও নানা বিষয় ও প্রসঙ্গ রয়েছে যা এখানে তেমনভাবে উল্লেখ করার দরকার নেই। মোটামুটি কথিত চারটি বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতা ও ঐকমত্য না হলে কাঙ্খিত নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ জন্য আলোচনা অপরিহার্য। ক্ষমতা প্রদর্শন নয়, বা তার মাধ্যমে নয় বরং শান্তিপূর্ণ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই যে কোনো বিরোধ ও মতপার্থকের অবসান সম্ভব। আলোচনার পথ পরিহার করা তাই কোনোভাবেই ঠিক হবে না। দুই দলের বিরোধের নিষ্পত্তি এবং তাদের মধ্যে সৌজন্য ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক জাতির একান্ত প্রত্যাশা। এ প্রত্যাশা থেকে তারা জাতিকে বঞ্চিত রাখতে পারে না। এক্ষেত্রে কাদের-ফখরুল সাক্ষাৎ ‘শুরুর সূচনা’ হতে পারে কি? আমরা আশা করি, দু’দল এই সূচনা থেকে সামনে অগ্রসর হবে এবং একটি অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য আলোচনা করবে, সমঝোতা ও সিদ্ধান্তে উপনীত হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।