Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দিনাজপুরে হাবিপ্রবি শিক্ষার্থী-শ্রমিক সংঘর্ষে আহত ৪

দিনাজপুর অফিস | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দুই বাসে আগুন : সমঝোতা ছাড়াই জেলা প্রশাসনের বৈঠক সমাপ্ত
অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত : দুর্ভোগে জনসাধারণ
বিশ^বিদ্যালয় বাসের সাথে যাত্রীবাহী বাসে সামান্ন ধাক্কা লাগার ঘটনায় ছাত্র-শ্রমিকের সংঘর্ষের জেরে বুধবার রাত থেকে দিনাজপুর থেকে সকল রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। সংঘর্ষে আহত ৪ জনকে এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অগ্নিসংযোগ করা দুটি বাস ভস্মীভ‚ত হয়েছে। একদিকে পরিবহন ধর্মঘট অপরদিকে বিশ^বিদ্যালয়ের সামনের মহাসড়ক অবরোধের ঘটনায় সাধারন মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে।
গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের বিবাদমান গ্রুপগুলোর সাথে ত্রি-পক্ষীয় সভা আহবান করা হয়। জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় দীর্ঘ আলোচনা শেষে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন ও ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা ঘোষনা করে জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম। এরপর নিরাপত্তা প্রদানের শর্তে প্রশাসন ও শিক্ষকদের অনুরোধে ছাত্ররা তাদের অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু ভস্মীভ‚ত বাসের ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা না পাওয়ায় বাস মালিক ও শ্রমিকেরা আপাতত পরিবহন ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে সভাস্থল ত্যাগ করে। তবে উত্তরবঙ কমিটির সাথে আলোচনা সাপেক্ষে বাস মালিক ও শ্রমিকেরা দ্রুত তাদের সিদ্ধান্ত জানানোর আশ^াস দিয়েছে। ফলে এক প্রকার কোন ধরনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত ত্রি-পক্ষীয় সভা। অব্যাহত থাকে পরিবহন ধর্মঘট।
বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় শহরের মহারাজা মোড়ে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) একটি বাসকে সাইড না দেয়ায় যাত্রীবাহী বাসের হেলপার ও চালকের সাথে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়। এসময় উভয় পক্ষের সংঘর্ষে ২ জন ছাত্র ও ২ জন শ্রমিক আহত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসটি ক্যাম্পাসে পৌঁছালে শ্রমিকদের হাতে ছাত্র পেটানোর ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ছাত্ররা ক্যাম্পাসের সামনে দিনাজপুর-রংপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে জড়ো হয়ে যাত্রীবাহী বাস তৃপ্তি পরিবহন ও শাহী পরিবহনে আগুন দিলে বাস ২টির ব্যাপক ক্ষতি হয়। প্রায় ৪ ঘণ্টা পর পুলিশের সহায়তায় ফায়ার ব্রিগেডের সদস্যরা আগুন নেভান। অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে যায় যাত্রীবাহী বাস চলাচল। দিনাজপুর থেকে ঢাকাগামী সকল যাত্রীবাহী কোচ বাতিল করা হয়। পরদিন অর্থাৎ গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলার সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ ঘোষনা করেছে জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ ও মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন। অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন জনসাধারণ।
জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম উদ্ভুত পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে তাঁর সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বৈঠক করলেও কোন ধরনের সমঝোতা ছাড়াই সভা সমাপ্ত হয়। বৈঠকে পুলিশ সুপার মোঃ হামিদুল আলম, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার প্রফেসর ড. শফিউল আলম, ছাত্র পরামর্শ বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন খান, সহকারী প্রক্টর শহিদুল ইসলাম এবং সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি জাহিদ হোসেন রতন, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম শেলু, মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ রফিক, সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী, সহ-সভাপতি সাইফুর রাজ চৌধুরী, সহ-সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মোটর বাস মালিক গ্রæপ ও মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা গতকাল জেলা প্রশাসকের সম্বেলন কক্ষ থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের জানান, শ্রমিক ও যাত্রীদের নিরাপত্তা বিধানসহ ক্ষতিগ্রস্ত বাসের জন্য উপর্যুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যাপারে লিখিত সিদ্ধান্ত হতে হবে। আমরা কোন মৌখিক সিদ্ধান্ত মেনে নেব না।
পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত থাকায় সাধারণ মানুষের দূর্ভোগ চরমে উঠেছে। বিবাদমান গ্রুপগুলোকে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহবান জানান জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম ও পুলিশ সুপার মোঃ হামিদুল হক। তবে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের জানান, আমরা কমিটি গঠনের মাধ্যমে আগামী তিন দিনের মধ্যে দায়ীদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ নিরুপন করার আশ^াস দিয়েছি। ছাত্ররা আমাদের কথা শুনেছে। তাদের অবরোধ তুলে নিয়েছে। বাস মালিক ও শ্রমিকেরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবে। আশা করি দ্রুত সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আহত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ