Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি প্রতিষ্ঠায় রাসূল স.

মাওলানা এ এইচ এম আবুল কালাম আযাদ | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

\ তিন \

রাসূল (সা) বলেছেন, যদি আহলে কিতাবদের কেউ সালামের (আস্সালামু ‘আলাইকুম) মাধ্যমে তোমাদের অভিবাদন জানায়, তাহলে বল, ‘ওয়া ‘আলাইকুম। (আল-বুখারি- ৫৯০১; মুসলিম- ২১৬৫) তবে অমুসলিমদেরকে প্রথমে সম্ভাষণ জানানো মুসলিম ব্যক্তির উচিত নয়। নবী (সা) বলেছেন “ইয়াহুদী কিংবা খ্রীষ্টানদের প্রথমে তোমরা সালাম জানাবে না।” (সহীহ মুসলিম- ২১৬৭) অতএব, নিজে থেকে প্রথমেই কোনো কাফিরকে সালাম জানানো মুসলিমের উচিত নয়। তবে কোন কাফের, ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান যদি কোনো মুসলিমকে সালাম জানায়, তাহলে রাসূলের (সা) নির্দেশনা অনুযায়ী, “ওয়া ‘আলাইকুম” বলে উত্তর দেওয়া যাবে।

অমুসলিম প্রতিবেশীর অধিকার প্রতিষ্ঠা: ভালো প্রতিবেশী হওয়া মুসলিমদের উপর অমুসলিমদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার। কাজেই কোনো অমুসলিম আপনার প্রতিবেশী হলে তার প্রতি সদয় হউন। তাকে কোনোভাবে হয়রানি করবেন না। অসচ্ছল হলে তাকে সাহায্য করুন। উপহার দিয়ে, সুপরামর্শ দিয়ে তাকে সহায়তা করুন। এতে করে সে ইসলামের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হবে এবং মুসলমান হওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠবে। অধিকন্তু, প্রতিবেশী হিসেবে আপনার উপর তার অধিকার রয়েছে। রাসূল (সা) বলেছেন “জিব্রাঈল (আ) প্রতিবেশীর প্রতি সদয় হওয়ার জন্য আমাকে এতটাই তাগিদ দিতে থাকলেন যে, আমি ভাবলাম, তিনি হয়তো প্রতিবেশীকে আমার উত্তরাধিকারী বানিয়ে ফেলবেন।” (সহীহ বুখারি ও মুসলিম)
প্রতিবেশী কাফির হলেও প্রতিবেশী হিসেবে তার অধিকার রয়েছে। প্রতিবেশী যদি কাফির হওয়ার পাশাপাশি আত্মীয়ও হয়, তাহলে তার অধিকার দ্বিগুন: প্রতিবেশী হিসেবে এবং আত্মীয় হিসেবে। প্রতিবেশী দরিদ্র হলে তাকে যাকাত না দিয়ে আর্থিকভাবে সাহায্য করুন। কারণ প্রতিবেশী হিসেবে এই সাহায্য পাওয়ার অধিকার তার আছে। এই সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন- “দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ হতে বহিষ্কার করেনি, তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার ও ন্যায় বিচার করতে আল্লাহ্ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। আল্লাহ্ তো ন্যায়-পরায়ণদেরকে ভালোবাসেন।” (সূরা মুমতাহিনাহ্, আয়াত-৮) আস্মা বিন্তে আবি বকর (রা) থেকে বর্ণিত একটি বিশুদ্ধ বর্ণনানুযায়ী, মক্কার মুশরিক এবং রাসূলের (সা) মধ্যে যুদ্ধবিরতি চলাকালীন তার মা (যে তখনও মুশরিকা ছিল) তার সাথে দেখা করে সাহায্য চাইলো। মায়ের সাথে তার সম্পর্কের বন্ধনকে বহাল রাখবে কি না, সে বিষয়ে আস্মা রাসূলের (সা) কাছে অনুমতি চাইলেন। উত্তরে রাসূল (সা) বলেছিলেন, “তার সাথে রক্তের বন্ধনকে বহাল রাখো।”
অমুসলিমদের মৃত্যুতে শোক: অমুসলিমদের উৎসব-অনুষ্ঠান উদ্যাপনের ক্ষেত্রে বিধান হলো, কোনো মুসলিম সেগুলোতে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। বর্তমানে ইসলাম বিদ্ধেষীরা একটি শ্লোগান বের করেছে “ধর্ম যার যার উৎসব সবার”। এটি আদৌও সঠিক নয়। এটি সম্পূর্ণ ইসলাম বিদ্ধেষী শরীয়তের বিপরীত শ্লোগান। তবে তাদের কোনো প্রিয়জন মারা গেলে, সমবেদনা জ্ঞাপন করাতে দোষের কিছু নেই। যেমন: ‘আল্লাহ্ আপনার ক্ষতিপূরণ করুন’ বা এই জাতীয় সহানুভূতিপূর্ণ কথা বলা যেতে পারে। তবে মৃত ব্যক্তি কাফির হলে “আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করে দিন” বা ‘আল্লাহ্ তার উপর দয়া করুন’ ইত্যাদি বলা যাবে না এবং মৃতের জন্য কোনো দো‘আও করা যাবে না। কিন্তু মৃত ব্যক্তির জীবিত আত্মীয় স্বজনদের ক্ষতিপূরণের জন্য এবং তাদের হিদায়াতের জন্য দো‘আ করা যাবে। (ফাতাওয়া নূর ‘আলা আদ্-দারব, ১/২৮৯-২৯১)
ইহুদী বুড়ির সাথে রাসূলুল্লাহর স. আচরণ: অমুসলিমদের প্রতিও কোন অন্যায় আচরণ ইসলাম অনুমোদন করে না। শান্তি-সৌহার্দ্য ও সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি সুরক্ষায় ইসলামের রয়েছে শ্বাশত আদর্শ ও সুমহান ঐতিহ্য। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে মহানবী (স.)-এর প্রতিটি আচরণ সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির বিরল ও প্রোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এক অমুসলিম বৃদ্ধার ঘটনা ইতিহাসে আমরা জেনেছি। সে বৃদ্ধা প্রতিদিন মহানবী (স.)-এর চলার পথে কাঁটা দিত। একদিন রাসূল (স.) দেখলেন, পথে কাঁটা নেই, তখন তিনি ভাবলেন, হয়ত ওই বৃদ্ধা অসুস্থ হয়েছে বা কোন বিপদে আছে, তার খোঁজ নেয়া দরকার। এরপর দয়ার নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ওই বৃদ্ধার বাড়িতে পৌঁছে দেখেন ঠিকই সে অসুস্থ। তিনি বৃদ্ধাকে বললেন, আমি আপনাকে দেখতে এসেছি। এতে বৃদ্ধা অভিভূত হয়ে গেল যে, আমি যাকে কষ্ট দেয়ার জন্য পথে কাঁটা পুতে রাখতাম, সে-ই আজ আমার বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছে। ইনিই তো সত্যিকার অর্থে শান্তি ও মানবতার অগ্রদূত।
ইহুদী মেহমানের সাথে রাসূলুল্লাহর স. আচরণ: নবী (সা.) নিজেকে তিনটি বিষয় হতে সম্পূর্ণরূপে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন- ১. ঝগড়া-বিবাদ, ২. বেশি কথা বলা, ৩. অনর্থক বিষয়াদি হতে। অনুরূপ তিনটি বিষয় হইতে অন্যকেও বাঁচিয়ে রেখেছিলেন- ১. কারো নিন্দা করতেন না, ২. কাউকে লজ্জা দিতেন না, ৩. কারো দোষ তালাশ করতেন না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ