পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সংক্ষিপ্ত মহাকাব্য বলে অভিহিত করছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে তারা বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা আসে। আমাদের সৌভাগ্য বঙ্গবন্ধু আমাদের দেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ যে শোনেনি ও অনুভব করতে পারেনি সে কখনো দেশের সুনাগরিক হতে পারবে না। এ ভাষণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ থেকে আমাদের স্বাধীনতা ঘোষণা এসেছে। আমি ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানাই, তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
দৈনিক সমকাল পত্রিকার সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিলো মহাকাব্য। ১৮ মিনিটের ভাষণে কোন তৎসম শব্দ ছিলো না। বঙ্গবন্ধু চলিত সহজ সরল ভাষায় পুরো বক্তব্য দিয়েছেন। আমি খুব কাছ থেকে সেই বক্তব্য শুনেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এটা নিয়ে কোনো আপস করা যাবে না। ষড়যন্ত্র চলছে, যেকোনো ভাবে এ ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে।
অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, বঙ্গবন্ধুর যখন ৭ মার্চের ভাষণের সময়ের শত্রুরা আজ নেই। কিন্তু এখন নতুন শত্রু আছে, তাদের মোকাবেলা করতে হবে। কলম সৈনিককে কলম দিয়ে, শিল্পীকে গান দিয়ে, যার যা কিছু আছে তা দিয়েই শত্রুদের মোকাবেলা করতে হবে। তিনি বলেন, আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই ৫০ থেকে ৬০জন ছাত্র আমার সামনে থাকে। সেখানে শ্লোগান দেয়ার ইচ্ছা থাকলেও দিতে পারি না। আজকে আমি সুযোগ পেয়েছি, তাই আমি শ্লোগান দিচ্ছি। আপনারাও আমার সঙ্গে শ্লোগান দেন। এসময় তিনি ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগানটি দিলে উপস্থিত সবাই তার সঙ্গে গলা মেলান।
জাফর ইকবাল বলেন, আজকে আমার জীবনটা ভরে গেলো, এ ঋণ শোধ করতে পারবো না। পৃথিবীতে খুব কম দেশেই আছে যেখানে দেশ ও একজন নেতা সমার্থক। আমরা সেই সৌভাগ্যবান জাতি, যেখানে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক। আমাদের সৌভাগ্য বঙ্গবন্ধু আমাদের দেশে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে অনুভব করতে হবে। না হলে কেউ সুনাগরিক হতে পারবে না। শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ২০১২ সাল থেকে ৭ মার্চের ভাষণ পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ১৮ মিনিটের এ ভাষণ পড়াতে ৬ টি ক্লাস নিতে হয় আমাদের। এ ভাষণ বুকে ধারণ করলে কেউ আর বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ফেলার সাহস করবে না।
নজরুল গবেষক শিক্ষাবিদ অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ৭ মার্চের ভাষণের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য সেই দিন আমরা খুব কাছ থেকে শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল। এ ভাষণ পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ ভাষণ। ৭ মার্চের ভাষণে বাঙালীর স্বাধীনতা ঘোষণা হয়েছিল।
নাগরিক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে প্রধান অতিথির আসন গ্রহণ করেন বেলা ২টা ৩৮ মিনিটে। এরপর ২টা ৪০ মিনিটে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। তারপর বঙ্গবন্ধুসহ সকল শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট দাড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়। এরপর বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। শিল্পকলা একাডেমীর শিল্পীরা দেশের গান পরিবেশন করেন। কবি নির্মলেন্দু গুন ঐতিহাসিক ৭ মার্চকে কেন্দ্র করে তার লেখা ‘স্বাধীনতা এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হল’ কবিতাটি নাগরিক সমাবেশে আবৃত্তি করেন। জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে সাজেদ আকবর পরিবেশন করেন ‘তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে’ শীর্ষক রবীন্দ্র সঙ্গীত।
সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে স্বীকৃতি দেয়ায় ধন্যবাদ জানিয়ে ধন্যবাদ ঢাকায় নিযুক্ত ইউনেস্কোর কান্ট্রি ডিরেক্টর বিয়েত্রিস কালদুনের হাতে স্মারক তুলে দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি সমাবেশে ধন্যবাদ স্মারকটি পড়ে শোনান। এর আগে নির্মলেন্দু গুণ-স্বাধীনতা- এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো এ কবিতাটি মঞ্চে আবৃত্তি করেন। স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী শাহীন সামাদ ‘তোরা সব জয়ের ধ্বনি কর’ এ নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর সব্যসাচী লেখক শামসুল হকের বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা ‘আমার পরিচয়’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন। এর বাইরে ইউনেস্কোর বাংলাদেশের কান্ট্রি পরিচালক বিয়েট্রিস কালদুন বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ৭ মার্চের বক্তব্য ছিল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের টার্নিং পয়েন্ট।
বিয়েত্রিসের পর ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ভাওয়াইয়া পরিবেশন করেন অনন্যা মুক্তি। ভাওয়াইয়ার পর বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। তার বক্তব্যের পর ফোক শিল্পী মমতাজ বেগম অন্নদাশঙ্কর রায়ের লেখা ‘যতদিন রবে পদ্ম-যমুনা-গৌরী-মেঘনা বহমান ততদিন রবে কীর্তি তোমার, শেখ মজিবুর রহমান’ গান করেন। মমতাজের গানের পর বক্তব্য রাখেন নজরুল গবেষক অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। এরপর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে স্বীকৃতি দেয়ায় ইউনেস্কোর মহাসচিব বরাবরে ধন্যবাদ প্রস্তাব পাঠ করেন। পরে তা ইউনেস্কোর কান্ট্রি ডিরেক্টর বিয়েত্রিসের কাছে হস্তান্তর করেন তিনি। তিনি থ্যাংকস ও ধন্যবাদ দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন রামেন্দু মজুমদার ও শহীদ আবদুল আলিম চৌধুরীর কন্যা নুজহাত চৌধুরী।
ওবায়দুল কাদেরের পর নাগরিক সমাবেশের সভাপতি এমিরেটস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সভাপতির বক্তব্য রাখেন।
নাগরিক সমাবেশে জনতার ঢল: নাগরিক সমাবেশে স্মরণকালের স্মরণীয় জনসমাগমের ঘোষণা আগেই দিয়েছিলো আওয়ামী লীগ। এই লক্ষে গতকাল শনিবার সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগ, এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন, বিভিন্ন সামাজিক ও ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যানার নিয়ে সমাবেশে আসতে শুরু করে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকা থেকে। সরেজমিনে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সুসজ্জিত পোশাকে ছোট-বড় মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে হাজির হতে। প্রতিটি প্রবেশ পথেই ছিল উপচেপড়া ভিড়। দুপুরের মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে এ বিশাল উদ্যান। একই সঙ্গে শিল্প-সংস্কৃতি ও পেশাজীবীসহ বিভিন্ন সংগঠনের মানুষজনও হাজির হন স্বাধীনতার ঘোষণার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির এই উদযাপনে। বেলা আড়াইটায় সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই নেতাকর্মী-সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভরে যায় পুরো সমাবেশস্থল।
এছাড়াও অনেক নেতাকর্মীদের মূল উদ্যানের ভিতরে প্রবেশ না করে আশপাশের রাস্তাগুলোতে মিছিল নিয়ে রাস্তায় শোডাউন দিতেও দেখা যায়। সোহরাওয়ার্দী ছাপিয়ে শাহবাগ, টিএসসি চত্বর, দোয়েল চত্বরেও মানুষের ভিড় দেখা গেছে। টিএসসি এলাকার জনস্রোত দেখে মনে হয়েছে এটি যেন আলাদা কোনো সমাবেশ। সমাবেশস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জায়গা না থাকায় অনেকে রাজু ভাস্কর্যের নিচে অবস্থান নেয়। অনেকেই আবার মিছিল নিয়ে শাহবাগ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশ করেন।
শ্লোগানে মুখরিত পুরো এলাকা: এদিকে সমাবেশে আগত নেতাকর্মীরা ‘জয় বাংলা’সহ বিভিন্ন শ্লোগানে মুখরিত করে পুরো সমাবেশস্থল ও এর আশপাশের এলাকা। বাদ্যযন্ত্রের পাশাপাশি এসব শ্লোগান ধরেন নাগরিক সমাবেশে আগতরা। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘কে বলে রে মুজিব নাই, মুজিব সারা বাংলায়’ ইত্যাদি শ্লোগানের পাশাপাশি নির্বাচনী ছাপও ফুটে ওঠে। শ্লোগানের তালে তালে বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রবেশ করে উদ্যানে। সমাবেশস্থলে জড়ো হওয়া মানুষের হাতে লাল-সবুজের পতাকা ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতীকও তুলে ধরতে দেখা যায়। কেউ বা আবার নিজেদের পছন্দের নেতাদের ছবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুনও তুলে ধরছেন হাতে।
লাল-সবুজের সমারোহ: সমাবেশকে নান্দনিক রূপ দেয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের নেতাকর্মীরা। সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের উদ্যোগে সমাবেশকে দৃষ্টি নন্দন করতে ৩০ হাজার সবুজ গেঞ্জি, সবুজ ক্যাপ ও ক্যাপ (টুপি) বিতরণ করা হয় যুবলীগের দক্ষিণের নেতাকর্মীদের মাঝে। সেই সবুজ গেঞ্জি, সবুজ ক্যাপ ও ক্যাপ পরে সমাবেশে উপস্থিত হন নেতাকর্মীরা। তাদের হাতে ছিল যুবলীগের পতাকা। শেখ হাসিনা যখন মঞ্চে আসার পর ও বক্তব্যের সময় তারা পতাকা নেড়ে অভিবাদন জানান। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব প্রার্থী সফিকুল বাহার মজুমদার টিপুর নেতৃত্বে সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত হন।
নাগরিক সমাবেশে এমপিদের শো-ডাউন: সমাবেশে শোডাউন করেছে ঢাকা ও আশপাশের জেলার আওয়ামী লীগের এমপিরা। প্রধানমন্ত্রীর আসার আগে আগে এমপিদের পোস্টার নিয়ে শোডাউন দিতে দেখা যায় তাদের কর্মী-সমর্থকদের। হাবিবুর রহমান মোল্লা এমপি, ইলিয়াস আলী মোল্লা এমপি, আসলামুল হক আসলাম এমপি, কামরুল ইসলাম এবং ঢাকার বাইরের এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী, ড. এনামুল হকসহ আরো বেশ কয়েকজন এমপি মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন।
কঠোর নিরাপত্তা: এদিকে নাগরিক সমাবেশকে ঘিরে কঠোর অবস্থানে ছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সমাবেশস্থলে প্রবেশ করা ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় সন্দেহভাজনদের দফায় দফায় তল্লাশি করা হয়। আশপাশের কয়েকটি সড়কে নিয়ন্ত্রণ করা হয় যান চলাচল। কাকরাইল ক্রসিং, মৎস্যভবন ক্রসিং, কদমফুল ক্রসিং এবং শাহবাগ ক্রসিং দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তন গেইট এবং আইইবি গেইট বন্ধ করে দেওয়া হয়। নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ প্রবেশ করেন উদ্যানের পশ্চিম দিকে ছবির হাট গেইট, টিএসসি গেইট, কালীমন্দির গেইট এবং তিন নেতার মাজার গেইট দিয়ে।
সমাবেশ ঘিরে আশপাশের রাস্তায় যানজট: সমাবেশের কারণে দুপুরের পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ ও আশেপাশের এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমাবেশে যোগ দেয়া নেতাকর্মীদের বাসসহ যানবাহন ঢাবি ক্যাম্পাস, সেগুন বাগিচা, প্রেসক্লাবের আশপাশ, দোয়েল চত্বর, সেগুনবাগিচা ও হাইকোর্ট এলাকায় বাস রেখে সমাবেশে যোগ দেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশেস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর থেকে মৎসভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে এই এলাকাগুলোতে যান চলাচল বিঘ্ন ঘটে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।