Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৭ মার্চের ভাষণ শোষিত বঞ্চিতদের প্রেরণা যোগাবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৪ পিএম, ১২ মার্চ, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ মার্চের ভাষণকে বাঙালি রাজনৈতিক সংস্কৃতির এক অনন্য দলিল আখ্যায়িত করে বলেছেন, এর আবেদন কোনদিন শেষ হবে না। এই ভাষণ অক্ষয় হয়ে থাকবে। যুগ যুগ ধরে শোষিত-বঞ্চিত মানুষকে প্রেরণা ও শক্তি জোগাবে, মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সাহস দেবে। তিনি বলেন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ স্থান পেয়েছে। অথচ এ ভাষণের ওপর বাংলাদেশে একদিন অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। এ কারণে একটি প্রজন্ম সত্য জানা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটস্থ কৃষিবিদ মিলনায়তনে ‘কালোত্তীর্ণ ভাষণ প্রস্তুতি ও প্রভাব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের ওপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত লেখক ও সাংবাদিক আব্দুল মোমেন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ওপর ‘কালোত্তীর্ণ ভাষণ প্রস্তুতি ও প্রভাব’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, অধ্যাপক ড. মো. মসিউর রহমান। ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী মাশহুরা হোসেন অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, শিল্পী হাশেম খান, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক ড. শামসুজ্জামান খান, মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের সামরিক ও বেসামরিক দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, শিল্পী, কবি-লেখক, সাহিত্যিক, গবেষক, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭ই মার্চের ভাষণ আমাদের প্রেরণা, এই ভাষণই আমাদের পথ দেখিয়ে গেছে। ৭ মার্চের ভাষণের প্রতিটি শব্দ আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এই ভাষণ আমাদের সেই প্রেরণাটা এনে দেয়-মাথা উঁচু করে চলার। মনে সাহস দেয় যে কোন অবস্থা মোকাবেলো করার, শত্রুকে দমন করার। এই ভাষণের আবেদন কোনদিন শেষ হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আমরা আজকের অবস্থানে এসেছি। পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মারা, মানুষ খুন করা, কষ্ট দেয়া, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ-বাংলা ভাই কত বাধা, কত কিছুকে আমরা মোকাবেলা করেছি। সবকিছু মোকাবেলা করেই আজকের বাংলাদেশ সারাবিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে। এই মর্যাদা তৈরী করে নেবার যে আমরা শক্তি পেয়েছি এই শক্তি জাতির পিতাই আমাদেরকে দিয়েছেন। ৭ই মার্চের এই ভাষণই আমাদের এই পথ দেখিয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৮১ সালে আমি দেশে ফেরার পর দেখেছি এই ভাষণ প্রচার এমনকি বঙ্গবন্ধুর নাম নেয়া বা জয়বাংলা শ্লোগান নিষিদ্ধ ছিল। ৭ মার্চের ভাষণ বাজাতে গিয়ে অনেককে জীবনও দিতে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সে সময়ে টেলিভিশনে একটি অনুষ্ঠান প্রচারের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘একটি বই ধরে কিছু উদ্ধৃতি করা হচ্ছিল, বইয়ে অনেকগুলো ছবির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছবিও থাকায় সেটি যেন পর্দায় দেখতে না পাওয়া যায় তাই আঙুল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল। তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতির অহংকার ছিল। আর বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর সেই অহংকার থেকেই আমাদের দূরে সরিয়ে রাখার অপচেষ্টা করা হয়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যে বলেছিলেন আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না, তাই দাবায়ে রাখতে পারেনি। এই ভাষণ আবারও ফিরে এসেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী ৭ মার্চের ভাষণের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছেন কিন্তুু এই রাজনীতির পেছনে তাঁর মা, বাবা বিশেষ করে আমার মাকে আজীবন পাশে পেয়েছেন, প্রেরণা পেয়েছেন এখন সৌভাগ্য অনেক কম মানুষেরই হয়।
বঙ্গবন্ধু মেমেরিয়াল ট্রাস্টের সভাপতি বলেন, পরিবারের বড় সন্তানের ওপর অনেক দায়িত্ব থাকলেও বঙ্গবন্ধু তাঁর মা-বাবার কাছে মৃত্যুর আগ পর্যন্তই ছোট্ট খোকাটিই ছিলেন। খোকা যেভাবে চলেছে, যা চেয়েছে তাতে তাঁরা কোন বাধা দেননি, এই যে মনের একটা সাহস ও শক্তি পেয়েছিলেন তিনি পরিবারের কাছ থেকে, তা অসাধারণ, জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমার মা প্রতিটি কাজে যেভাবে আমার বাবার পাশে থেকেছেন। সংসারের সকল দায় থেকে তাঁকে মুক্ত করেছেন-বলেছেন ভাবতে হবে না। তিনি নিজেই দায়িত্ব নিয়েছেন। আমাদেরকে মানুষ করা লেখাপড়া শেখানো থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যত মামলা সে সব তদারকি করা উকিলের বাসায় দৌড়ানো তার কাগজপত্র তৈরী করা কোর্টে যাওয়া-সবই তিনি একাই সামলেছেন। আমি দেখিনি তাঁকে হতাশ হতে। আমিতো বড় সন্তান হিসেবে নিজেই এই ঘটনার সবচেয়ে বড়ো সাক্ষি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ই মার্চের ভাষণের আগ মুহূর্তের কথা আমার মনে পড়ে, একটা জাতিকে কিভাবে তৈরী করা হয়। প্রথমে পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য মুসলিম লীগ গঠন করা, তারপর বঙ্গবন্ধু যখন বুঝলেন এই ১২শ’ মাইলের ব্যবধান এবং যেখানে কোন সাংস্কৃতিক মিল নাই তাদের সাথে এক হয়ে থাকা বা চলা সম্ভব নয়। শুধু বাংলাদেশকে শোষণ আর মানুষের সম্পদ হনন এই ছিল পাকিস্তানীদের প্রবৃত্তি। সেখান থেকে বাঙালিকে আলাদা একটা জাতিসত্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এটাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল।
বক্তৃতার দিনটি স্মরণ করে তিনি বলেন, সেদিন অনেক নেতাই বাড়িতে এসেছিলেন, অনেক লম্বা লম্বা পয়েন্ট লিখে বা হাতে কাগজ ধরিয়ে দিয়ে গেছেন, এই কথা বলতেই হবে, না বললে মানুষ হতাশ হয়ে ফিরে যাবে। আজকে সেই দিন, বিষয়টি এমন যে, আজকে না বললে আর কথনও বলা যাবেনা। এরকম নানা পরামর্শ দিয়ে ব্যতিব্যস্ত আমাদের বাসাতো সবার জন্য খোলামেলা, সকলে আসছেন আর পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। বস্তা বস্তা কাগজ এসে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী স্মৃতির পাতা হাতড়ে বলেন, ‘প্রতিটি ভাষণ বা সভার আগে মা, বাবাকে একটু চিন্তা করা সময় দিতে ঘুমাবার সুযোগ করে দিতেন। সেদিনও তিনি বঙ্গবন্ধুকে ডেকে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিতে বললেন।’
শেখ হাসিনা বললেন, বাবার মাথার কাছে তিনি বসেছেন আর মা বেগম মুজিব খাটের পাশে একটা মোড়া নিয়ে বসেছেন।’বেগম মুজিব বললেন,অনেকে অনেক কথাই বলবে,এই মানুষদের জন্য তুমি সারাজীবন কষ্ট করেছো,তুমি জান কি বলতে হবে। তোমার মানুষদের যে কথাটা বলতে ইচ্ছা করবে সেই কথাটাই তুমি বলবে..কারো কথা শোনার দরকার নাই।’
তিনি বলেন, রেসকোর্সের জনসমুদ্রে দেয়া জাতির পিতার এই কালজয়ী ভাষণে ধ্বনিত হয়েছিল বাংলার গণমানুষের প্রাণের দাবি। এই ভাষণে তিনি বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ করেন। আবার সশস্ত্র সংগ্রামের দিক নির্দেশনাও দিয়ে যান।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেফতার হবার আগে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধুর জাতীয় পতাকার ডিজাইন প্রণয়ন, জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন এমনকি বাংলাদেশ নামে এ ভূখ-ের নামকরণের ও অনেক অজানা ইতিহাস স্মৃতি রোমন্থনে তুলে আনেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করবো আজকে যারা যুব সমাজ ছাত্র তরুণ আগামীতে যারা কর্ণধার হবেন তারা এই ভাষণটাকে আরো বারবার শুনবে প্রেরণা পাবে, নিজেদেরকেই তৈরী করবে, যেকোন অবস্থাকে মোকাবেলা করবার মত শক্তি সাহস নিয়ে এদেশকে গড়ে তুলবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা যে দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, বাঙালি জাতি বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলবে। ক্ষুধা মুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে এই বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। ইনশাল্লাহ আমরা তা করতে পারবো সে বিশ্বাস আমার আছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ৭ মার্চের ভাষণ শোষিত বঞ্চিতদের প্রেরণা যোগাবে : প্রধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ